সুপ্রিম কোর্ট গত ৫ এপ্রিল এক আদেশে কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়। তবে ১৯ মে থেকে পুরনো পোশাকে ফিরে যেতে হয়েছে আইনজীবীদের।
Published : 23 May 2024, 10:47 PM
গরমের কারণে আরও তিন মাস কালো কোট ও গাউন ছাড়া আদালতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি।
বৃহস্পতিবার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত শাওন স্বাক্ষরিত চিঠিটি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হয়।
এতে পুরুষ আইনজীবীদের সাদা শার্ট,কালো টাই ও সাদা নেক ব্যান্ড এবং নারী আইনজীবীদের সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরে মামলা পরিচালনার অনুমতি চাওয়া হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি চিঠি পাঠানোরতথ্য দিয়ে বলেন, “চিঠিটি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।”
চিঠিতে বলা হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিমাত্রায় উষ্ণতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনজীবীরা গরমে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছেন।
চারটি এজলাস কক্ষ ছাড়া অন্য এজলাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় অনেক গরম অনুভূত হয় জানিয়ে এতে বলা হয়, “মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।”
গত এপ্রিলেও তীব্র দাবদাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী শীত ও গরমের জন্য আদালতে পৃথক ‘ড্রেস কোড’ করার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতির কাছে।
এরপর ৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলেছিল,তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশের অধস্তন আদালতে বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন পরার আবশ্যকতা নেই।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলেও সেই আদেশে বলা হয়।
এরপর গত ১৯ মে থেকে আইনজীবীদের আবার কালো কোট ও গাউনে ফিরে যেতে বলা হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি চাইছে, কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতা আগামী ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত তুলে দেওয়া হোক।
এআবেদনে ২০২৩ সালে প্রচণ্ড গরমে কোর্ট অঙ্গনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হিট স্ট্রোকেআইনজীবী শফিউল আলমের মৃত্যুর কথাও তুলে ধরাহয়।
বলা হয়, তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিনিয়ত আইনজীবীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং আইনজীবীদের মধ্যে হিট স্ট্রোকের ভীতি তৈরিহচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহ আরও বাড়তেপারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কথাও তুলে ধরা হয় ঢাকা আইনজীবী সমিতির আবেদনে।
২০২১ সালেও তালিকাভুক্ত এক আইনজীবীর মৃত্যুর পর পোশাকের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
গরমের দিন এই কালো পোশাক পাল্টানোর দাবি নিয়ে এরপর থেকে বিভিন্ন জেলা আদালত ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা।
কীভাবে এই পোশাক এল?
বাংলাদেশের আদালতের কার্যক্রম সংক্রান্ত অন্তত তিনটি বিধান বা আচরণবিধিতে এই ‘ড্রেস কোড’র কথা বলা আছে। ফলে এটি নিছক প্রথা নয়।
১৬৮৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য আদালতে আইনজীবী ও বিচারকেরা কালো কোট ও গাউন পরা শুরু করেন। এরপর থেকে শোকের এই পোশাক হয়ে যায় আইনজীবী ও বিচারকদের স্থায়ী পরিধেয়।
ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেও চালু হয় এই প্রথা। ব্রিটিশ শাসন অবসান হলেও কমনওয়েলথভুক্ত প্রায় সব দেশেই এই রীতি রয়ে গেছে।
তবে কানাডার দেশে আইনজীবীরা লাল ও সাদা ইউনিফর্ম পরেন। ইউরোপের দেশগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবেই কালো বা নেভি ব্লু কোট এবং সাদা শার্ট পরা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের সব দেশেই এই ড্রেস কোড মানার বাধ্যবাধকতা আছে। বিভিন্ন আইন ও রীতিনীতি যুগের প্রয়োজনে নানাভাবে সংশোধন হলেও আইনজীবী ও বিচারকদের পোশাকের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাংলাদেশের বিধি-বিধানে একজন আইনজীবীকে কালো কোট ও সাদা রঙের গলাবন্ধনী পরার কথা বলা হয়েছে।
এ আইনগুলো হচ্ছে: দ্য সুপ্রিম কোর্ট অববাংলাদেশ (অ্যাপিলেট ডিভিশন) রুলস, দ্য সুপ্রিম কোর্ট অববাংলাদেশ (হাই কোর্ট ডিভিশন), সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস এবং দ্য ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস (প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর অবসাবঅর্ডিনেট কোর্টস)।
আরও পড়ুন
এই গরমে আইনজীবীদের কোট-গাউনে হাঁসফাঁস আর কতদিন?