গত ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দুই কিস্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর আর্টস-এ প্রকাশিত হয়েছিলো লীসা গাজীর রৌরব উপন্যাসটি। সম্পতি এই উপন্যাসটির কাহিনী অবলম্বলে স্বপ্নের দিন শীর্ষক টেলিফিল্মের কাজ শেষ করেছেন পরিচালক পার্থিব রাশেদ। অনুমতি ছাড়াই তার উপন্যাস অবলম্বনে টেলিফিল্ম নির্মান করায় লীসা গাজী এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এখানে তার প্রতিক্রিয়াটি হুবহু প্রকাশ করা হলো। বি.স.
এটা ছিলো তরুণ চিত্র-পরিচালক পার্থিব রাশেদের আমার প্রতি আকুল আবেদন। আমি তাকে জ্বালিয়েছি তো বটেই। কিন্তু কেন জ্বালিয়েছি সেই কারণটা ব্যক্ত করার তাড়না অনুভব করছি।
গত ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ বন্ধু ব্রাত্য রাইসুর কাছ থেকে আমি একটা এফবি ম্যাসেজ পাই, ওই একই ম্যাসেজে মোহাম্মদ আরজুও যুক্ত ছিলেন। যেখানে রাইসু আমাকে জানায় যে আরজু আমার লেখা উপন্যাস রৌরব অবলম্বনে ছবি বানাতে চান। লেখক হিসাবে আমি যার পর নাই আহ্লাদিত বোধ করি। পরবর্তিতে আমার সাথে আরজুর টেলিছবি নির্মাণ বিষয়ক কথাবার্তা এগোতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে একটা খসড়া চিত্রনাট্য পাঠান যা পড়ে আমার ভালই লেগেছিল, যদিও কিছু বিষয়ে দ্বিমত ছিল। আমি সেই বিষয়গুলি নিয়ে আরজুর সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে আশ্বাস দেন যে সেগুলি শোধরানো হবে। সেই খসড়া চিত্রনাট্যে টেলিছবির নাম 'রৌরব'ই ছিল এবং তা সম্পূর্ণভাবেই উপন্যাস নির্ভর ছিল।
যেহেতু উপন্যাসটার গল্প নিয়ে এক ঘণ্টার টেলিছবি নির্মাণের কথা হচ্ছিল যার কারণে আমার ভাবনা ছিল যে চরিত্রগুলি যথেস্ট বিকশিত হবার সুযোগ পাবে না। ফলে স্বভাবতই চরিত্রগুলির নানান কার্যকলাপের পিছনের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন জাগবে এবং এর যৌক্তিকতা পাওয়া কঠিন হবে। আমার এই অস্বস্তি আমি আরজুর সাথে শেয়ার করি। তিনি তখন বলেন তার এমনিতেই 'রৌরব' নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। সেই ক্ষেত্রে টেলিছবির নাম 'রৌরব'-এর পরিবর্তে অন্য কিছু রাখতে আমি পরামর্শ দেই। যদিও একই গল্প নিয়ে দু'টা প্রোডাকশনের মানে আমি বুঝি নাই। আরজু আমাকে বোঝালেন যে, কাজ যেহেতু অনেক দূর এগিয়ে গেছে আমি যাতে আপত্তি না করি। আমিও ভাবলাম যেহেতু এর পিছনে অনেক শ্রম ব্যয় হয়েছে কাজটা বরং হোক, পরেরটা পরে ভাবা যাবে। একেই বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু!
তারপর গত ১৩ জানুয়ারি আরজু মেইলে জানালো উপন্যাস থেকে আরও কিছু সংলাপ যোগ করে শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে অচিরেই। তার পর দিন আরজুর সাথে আমার কথা হয়। সেদিন জানতে পারি চিত্রনাট্যকার টেলিছবির নাম রাখতে চাইছেন 'স্বপ্নের দিন'। এই নামের ব্যাপারে আমার অবস্থান খুবই স্পস্ট এবং দৃঢ় ছিল। 'রৌরব' উপন্যাস-নির্ভর ছবির নাম যে 'স্বপ্নের দিন' হতে পারে না, বিষয়টা আরজুকে বোঝাবার চেষ্টা করি। তিনি আমার যুক্তি বুঝতে পারেন এবং পরবর্তিতে জানান এই নামটি আর রাখা হচ্ছে না।
এরপর গত ২৩ জানুয়ারি আরজু আমাকে জানান যে চিত্রনাট্যকার রাশেদ 'স্বপ্নের দিন' নামটি রাখার ব্যাপারে একরোখা হয়েছেন এবং তিনি এভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত নন যার কারণে এই কাজের সাথে আর সম্পৃক্ত থাকছেন না — কাজটা থেকে সরে এসেছেন এবং পার্থিব রাশেদকে তার নাম (মোহাম্মদ আরজু), লেখকের নাম (লীসা গাজী) এবং 'রৌরব'এর কাহিনী ব্যবহার না করতে সুস্পস্টভাবে বলে দিয়েছেন। আমি ভাবলাম সাপে বর হয়েছে। তক্ষুণি আমি আরজুকে ধন্যবাদ দিয়ে ম্যাসেজ পাঠাই এবং অনুরোধ করি যাতে কাহিনীটা ব্যবহার না করা হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে। তিনি বলেন অবশ্যই এবং পুরা ঘটনাটার এই পরিণতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। অবশ্য 'রৌরব' উপন্যাস নিয়ে ছবি নির্মাণের ইচ্ছা তিনি আবারও ব্যক্ত করেন এবং আমি সাথে থাকব বলে তাকে আশ্বাস দেই।
গত ২৯ জানুয়ারি আমার এক বন্ধু bdnews24.com-এর http://bangla.bdnews24.com/glitz/article584092.bdnews এই খবরটা আমার নজরে আনেন। আমি তৎক্ষণাৎ আরজুর সাথে যোগাযোগ করি এবং তিনি আমার কাছ থেকেই প্রথম খবরটা পান, পরে তার সাহায্যেই আমি bdnews24.com-এর উল্লিখিত খবরের সংবাদদাতা তোফাজ্জল লিটনের সাথে কথা বলি। তিনি এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে একটা রিজয়েন্ডার পাঠাবার পরামর্শ দেন।
এর মধ্যে ছবির পরিচালক পার্থিব রাশেদ ফেস বুকের মাধ্যমে আমার বন্ধু হবার খায়েস ব্যক্ত করেন। আমি সেই আবদারে সাড়া না দিয়ে তাকে ফেস বুক ম্যাসেজ পাঠাই, যে ম্যাসেজে আমার এক আইনজীবী বন্ধুকে জুড়ে দেই। সেখানে আমি রাশেদকে bdnews24.com-এর প্রকাশিত খবরটার পরিপ্রেক্ষিতে লিখি যে, তার সাথে 'রৌরব' বিষয়ে আমার কখনই কোন ধরণের আলাপ বিনিময় হয় নাই। আমি তাকে কখনই মৌখিক কি লিখিতভাবে 'রৌরব' নিয়ে ছবি বানাবার অনুমতি দেই নাই। সত্যি কথা বলতে কি তার সাথে আমার কখনও পরিচয় হয় নাই, কথা হয় নাই – এমনকি তিনিও আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন নাই। অথচ আমার নাম, 'রৌরব'এর গল্প ব্যবহার করে টেলিছবি নির্মাণ শেষ করেছেন। শুধু তাই না তিনি এখন সেটা ফলাও করে প্রচারও করছেন।
আমি তাকে অনুরোধ করি, আমার লিখিত অনুমতি এবং আমার সাথে যথাযথ চুক্তি ব্যতীত আমার নাম এবং 'রৌরব' উপন্যাসের গল্প ব্যবহার থেকে তিনি যেন বিরত থাকেন। অন্যথায় আমি আইনের সাহায্য নিতে বাধ্য হব।
পার্থিব রাশেদ এর জবাবে দাবি করেন যে তিনি নাকি আমার উপন্যাস থেকে একটা অংশ নিয়েছেন এবং যা তিনি আমাকে মেইল করেছিলেন। আমি তখন কোন আপত্তি করি নাই। নাম নিয়ে আমার অসন্তোসের কথা তিনি নাকি অনেক পরে জানতে পারেন। তারপর তিনি আমাকে দীর্ঘ জ্ঞান দান করেন। যার মোদ্দা কথা ছিল, ফিল্ম মেকার হিসাবে নাম পরিবর্তনের অধিকার তার আছে। তারপর তিনি আন্তর্জাতিক রুলস, সত্যজিৎ-সুনীল আখ্যান ইত্যাদি বিষয়ে আমাকে আলোকিত করেন।
আলোকপ্রাপ্ত হবার পর আমি পার্থিব রাশেদকে স্পস্ট জানাই যে তিনি কখনই আমাকে কোন স্ক্রিপ্ট মেইল করেন নাই। যদি করেও থাকতেন তাহলেও সেই মেইল তাকে আমার অনুমতি ব্যতীত ছবি বানাবার অধিকার দেয় না। তবে আমি মোহাম্মদ আরজুর কাছ থেকে টেলিছবি নির্মাণের জন্য একটা স্ক্রিপ্ট পাই, যে কাজটা পরে আর হয় নাই। কিন্তু সেই আলাপচারিতা/ম্যাসেজ বিনিময়ের মধ্যে পার্থিব রাশেদ কখনই যুক্ত ছিলেন না। তারপর আমি আবারও আমার আগের বক্তব্য তার কাছে পুনর্ব্যক্ত করি।
সবশেষে পার্থিব রাশেদকে আমি জানাই যে, যেহেতু 'রৌরব'এর স্বত্ব তিনি আমার কাছ থেকে কেনেন নাই, যেহেতু আমার নাম এবং গল্প তার ছবিতে ব্যবহারের আগে অনুমতি নেবার প্রয়োজন মনে করেন নাই সেহেতু যথার্থ অধিকার অর্জন না করা পর্যন্ত তিনি যেন কৃপা করে তার জ্ঞান ধরে রাখেন। আমি আরও জানিয়ে দেই, এই ম্যাসেজই তার সাথে আমার শেষ ইনফরমাল যোগাযোগ এবং তার যদি আমার বক্তব্যগুলিকে খন্ডন করবার প্রমাণ থাকে তিনি যেন যথার্থ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসেন। পার্থিব রাশেদের কাছে তার বাড়ির ঠিকানা এবং ইমেইল এ্যাড্রেসও আমি চাই।
এর উত্তরে পার্থিব রাশেদ আমার উপন্যাসের কিছু অংশ তার চিত্রনাট্যে ব্যবহার করবার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি আমাকে এও জানান যে তার একদিনের শুটিং বাকি আছে, উপন্যাসের অংশটুকু ছাড়াই টেলিছবি হবে। আমার নাম ও 'রৌরব' আর থাকছে না। সবশেষে তিনি যোগ করেন,
'প্লিজ আমাকে আর জ্বালায়েন না'।