সুদর্শন স্বপ্নের দেশ

শাহাব আহমেদ
Published : 10 Feb 2020, 08:18 AM
Updated : 10 Feb 2020, 08:18 AM


লাইলাকের দেশে লাইলাক ফোটে আর হিজল ফুলের দেশে হিজল ফুল।
অথচ লাইলাকের দেশে যার সাথে দেখা হল, তাকে আমার হিজল ফুলের মত মনে হতো।
এমনিতেই। আমার এমন হয়, আমি কৈশোর পেরুতে না পেরুতেই চলে গিয়েছিলাম, অনেক দূরে, এতদূরে মানুষের যেতে হয় না।
ভাবিনি আর কোনদিন দেখা হবে। হাওয়ায় দুলিয়ে যাওয়া আইভি লতার মত মন আমার সংশয়ে দোলে, "তি লি এতা, তি লি ?" একি তুমি, সত্যই তুমি?
হ্যাঁ, সে-ই!
এত লোকের মধ্যেও আমাকে চিনলো, হাত আর গাল বাড়িয়ে দিলো, বন্ধুত্বের চুম্বন। আর আলতো আলিঙ্গন।
লেনিনগ্রাদের মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করার ৩০ বছর পরে এই মিলন-মেলায় আসতে গিয়ে সুপ্ত আকাংখা ছিল, যদিই সে আসে, যদিই দেখা হয়ে যায়।কত অসম্ভব সম্ভব হয় জীবনে, কত বিস্ময় উঁকি মারে বিপ্রতীপ জানালায়!
কেমন আছো?
ভালো, ভালো আছি, তুমি?
আগের সেই শান্ত, স্থির হাসি, স্ফটিকের দ্যুতির মত।
আমিও ভালো আছি, চোখে ওর রোদ চিক চিক করে।
কোথায় আছো?
বলি।
তুমি?
জার্মানিতে।
পৃথিবী কত ছোট হয়ে গেছে। আগে কেউ রাশিয়া ছেড়ে কোথাও যেতে পারতো না, দেয়াল ছিল উঁচু, আলো ও খরখরিবিহীন।
এত লাইলাক ফুটেছে এবার, এত এত কাশতান!* দেখেছো? যেন ফুলেল উৎসব। কোথা থেকে এল এত ফুল! আগে তো ছিলো না ।
ছিল, উৎসব ছিল যৌবনের, হাসির, অনুভূতির।তোমার দৃষ্টি অন্ধ-বন্ধ ছিল, মনের দরজা, জানালাগুলো ভেজানো, খুব একটা দেখতে পেতে না। ফাউস্টের মত একাগ্র ছিলে, অন্য জগতে।
ছিল কি অনুভূতি?
ছিল।
বলোনি কেন? কেন টোকা মারো নি দুয়ারে?
কী জানি, বলবো বলবো করেও বলা হয় নি।তুমি দেশ দেশ করে পাগল…..হিজল "ফুখ্ল" হ্যাঁ, হিজলই তো, খুব বলতে।
বাহ্ মনে রেখেছো তুমি, কী অদ্ভুত!
ওর ফুলের উচ্চারণটা ভারি মজার,আমাদের 'ফ' ওদের কন্ঠ-তারে বাজে না, রুক্ষ্ণ হয়ে যায়, ফ থেকে হয় ফ্খ। হাসি পায়, কিন্তু ভালো লাগে, ভীষণ ভালো লাগে, তারমানে রুশ-জার্মান -ইংরেজি শব্দের জঙ্গলে বাংলার হিজল ফুল, আজও ফোঁটে।
জানো, সেই কলেজের ফাঁকে নরেন্দ্র এল একদিন; বলে, তোর তো "ও"র সাথে খুব খাতির, একটু বলে দে না যে, আমার ওকে খুব পছন্দ । সে তোমার পুরো নামটি উচ্চারণ করেনি, "ও" তোমার নামের আদ্যাক্ষর, সে টুকুই বলেছিল।
তাই নাকি? ওর চোখে যেন আধো বিস্ময়!
নরেন্দ্র কে?
দা, ছিল এক 'চুদাক'** এসেছিল আমাদেরই প্রতিবেশি দেশ থেকে।
'চিনতে পেরেছি, হ্যাঁ পেছনে খুব ঘুর ঘুর করেছে কিছুদিন, সম্পূর্ন তোমার বিপরীত। তুমি থাকতে তন্ময়, আর ওর ছিল আরজিনার মত চোখ। মনে হতো যেন ওর ঘিন ঘিনে জিভ আমার গায়ে। তা তুমি কি বললে?'
'তোর পছন্দ, তুই-ই বল। আমাকে জড়াস কেন?' মনে মনে ভাবি শালা, দিই পশ্চাতে উনপঞ্চাশমণি উষ্ট্রাঘাত।
ও হাসে খিল খিল করে। আগেও হাসতো মণি-মুক্তা ঝরিয়ে।
'দিলে ভালোই করতে।'
'বিয়ে করেছো?
হ্যাঁ, ৮৮ সালে পরিচয়, বিনির্মাণ দলে, পূর্ব জার্মানির, পাশ করে বিয়ে, তারপর থেকেই বার্লিনে, ভালো আছি, সুখে আছি।
তুমি?
আমিও ৮৮ সালেই ঘর বেঁধেছি, আমাদেরই ইনস্টিটিউটের মেয়ে, জুনিয়র। আমিও ভালো আছি। শোন, তোমাকে অনেক খুঁজেছি আমি। অনেক!
তাই? ওর চোখের মণি বড় হয়ে ওঠে।
কেন?

এমনিতেই।

জুন ১ , মস্কো, ২০১৯

পাদটিকা:
* কাশতান-চেস্টনাট
**দা-হ্যাঁ, চুদাক-স্ট্র্যান্জ, পিকুলিয়ার।