প্রিয় শিক্ষক কাশীনাথ রায়ের প্রস্থান

আজফার হোসেনআজফার হোসেন
Published : 17 Jan 2021, 07:09 AM
Updated : 17 Jan 2021, 07:09 AM


কাশীনাথ রায়। আশির দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে তিনি ছিলেন আমার বন্ধু, কমরেড ও সতীর্থ নূরুল কবীর আর আমার সরাসরি শিক্ষক। তিনি ছিলেন আমাদের পরম প্রিয় শিক্ষক। এখনও আমাদের শিক্ষক। ক্লাসরুমে তাঁর নিজস্ব কায়দায় উচ্চারিত ও ধ্বনিতরঙ্গায়িত শব্দগুলো মাঝেমাঝেই স্মৃতির ভেতরে মধুর আওয়াজ তুলে যায়, যেমন তাঁর কবিতার অনেক লাইনও আমাদের জন্য থেকে গেছে একরত্তি মহাকাল ধরে।
তিনি আমাদের পড়িয়েছিলেন ইংরেজ ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডি। কিন্তু তিনি হার্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ছিলেন আসলেই বিশ্বসাহিত্যের সুপণ্ডিত। এক পর্যায়ে আমার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। সেই কারণেই তাঁর বাসায় বসে মালার্মে, উইটগেনস্টাইন আর জীবনানন্দসহ রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে তাঁর অসাধারণ পর্যবেক্ষণও আমার জানবার সুযোগ ঘটেছিল। সত্যি কথা বলতে, তাঁর মত এত উঁচু মানের শিক্ষক আমরা খুব কম দেখেছি আমাদের জীবনে ।


এবার আরেকটা প্রসঙ্গে আসি: সেই অল্প বয়সে, ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকার সময়, আমি কাশীনাথ রায়ের দুর্দান্ত কবিতা "চারু বাবু ও কতিপয় বিভ্রান্ত স্থপতি" ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেলি। অনুবাদ করার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো লাগা থেকেই তাঁর কবিতাটা অনুবাদ করে ফেলি। শওকত স্যার (প্রফেসর শওকত হোসেন) কি ভেবে সেই অনুবাদটা আবার তাঁর 'ফর্ম' পত্রিকায় ছাপিয়েছিলেন! ছাপানোর পর এও বুঝতে পেরেছিলাম, তাঁর কবিতার প্রতি সুবিচার করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করার কারণে তাঁর সামনাসামনি হতে চাইনি বেশ কিছু দিন। কিন্তু একদিন তিনি আমাকে দেখতেই ধন্যবাদ জানালেন ওই অনুবাদের জন্য। আরও লজ্জা পেলাম; কিন্তু এও বুঝলাম যে, তিনি উদার।
তিনি যে আপসহীন, তাও বুঝেছি বারবারই। তাঁর কাছে আমার ঋণ অন্তহীন। তাঁকে দিতে পারিনি কিছুই, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি প্রচুর। জানি, তিনি আছেন। এবং থাকবেনও–আমাদের পরম প্রিয় কাশীনাথ স্যার!
কবীর আর আমি এও মনে করি, তাঁকে আমাদের ইংরেজি বিভাগের অনেকেই এবং অবশ্যই আমাদের তথাকথিত সাহিত্যজগৎ এখনও ঠিক মত চিনতে পারে নাই। আজ তিনি চলে গেলেন। কিভাবে নিজেকে সান্তনা দেবো, বুঝতে পারছি না।