বন্দী জীবনের অস্কার ওয়াইল্ডের পঠিত গ্রন্থাবলি

বিপাশা চক্রবর্তীবিপাশা চক্রবর্তী
Published : 15 Oct 2018, 06:19 PM
Updated : 15 Oct 2018, 06:19 PM


অস্কার ওয়াইল্ড রূপকথার হ্যাপী প্রিন্স থেকে যিনি হয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের প্রিন্স। কিন্তু আসলেই কি এই প্রিন্স(রাজকুমার) হ্যাপি(সুখী) ছিলেন? নিজে যদি হ্যাপি প্রিন্স একটি রূপকথা লিখেছিলেন, কিন্তু নিজের জীবন ছিল নানাভাবে অসুখী। এই অসুখী রাজকুমারকে আকাঙক্ষা পাঠকদের মধ্যে প্রবল যার সাহিত্য সৃষ্টির জাদুতে আজও মুগ্ধ এই পৃথিবী। তেমনি নিজের জীবনের কারণে আজও বিস্ময়কর হিসেবে ধরা দেন অনুরাগীদের কাছে। বেঁচেছিলেন মাত্র ৪৬ বছর। তাতেই বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর সৃষ্টি ও অসামান্য বৈদগ্ধ্যের জন্য। আবার সমালোচিত, কখনো ধিক্কৃত হয়েছেন তাঁর জীবনযাপনের, তথাকথিত 'সমকামিতা'-র জন্য। উনিশ শতকের সেই ভিক্টোরীয় যুগ, যেখানে শুদ্ধতাই ছিল জীবন যাপনের একমাত্র কানুন। আর কিনা তখনই সমকামী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছিল অস্কার ওয়াইল্ডের বদনাম। সেসময় সমকাম মানেই নরকযাত্রা। পায়ুকাম নিকৃষ্টতম পাপ। তখনও মানুষের জানা হয়নি সমকাম বিবর্তনেরই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার এক প্রাকৃতিক রূপ। ভিক্টোরীয় অবদমনের তলায় পিষ্ঠ হয়ে শরীর-মনের তাড়নায় রোবি রোজ কিংবা অ্যালফ্রেড ডগলাসসহ একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অস্কার। ক্লিভল্যান্ড স্ট্রিটে পুরুষ সমকামীদের কুখ্যাত নিষিদ্ধপল্লীটির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক থাকার কথা রটে যায়। ফলাফল 'অশ্লীলতা'-র দায়ে জেল। দু'বছরের সশ্রম কারাদন্ড। সময়টা তখন ১৮৯৫ সাল। এই সময়ে তাঁকে নিউগেট, পেন্টনভিল ও ওয়ান্ডসওয়ার্থ কারগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁকে কায়িক শ্রমের পরিবর্তে জেল কর্তৃপক্ষ পড়াশুনা করার সুযোগ করে দেন। প্রথম দিকে, তাঁর সীমিত সংখ্যক বই পড়ার সুযোগ ছিল। সেই বইগুলির সবটাই ছিল ধর্ম সংক্রান্ত। বইয়ের প্রতি তীব্র নেশার কারণে কর্তৃপক্ষ অবশেষে, তাঁকে ছোট একটি লাইব্রেরী গড়বার অনুমতি দেয়। ২০১৬ সালে বার্কশায়ারের এইচ.এম. প্রিজন রিডিং কারাগার তাঁর লাইব্রেরীর কিছু বই প্রদর্শন করে সেগুলোই এখানে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

Collected Works of Matthew Arnold
City of God by St Augustine
The Confessions of St Augustine
Various Works by Charles Baudelaire
The Pilgrim's Progress by John Bunyan
The Prioress's Tale by Geoffrey Chaucer
The Divine Comedy by Dante Alighieri
La Vita Nuova by Dante Alighieri
Collected Works of John Dryden
Trois Contes by Gustave Flaubert
La Tentation de St Antoin by Gustave Flaubert
Illumination by Harold Frederic
The Passes of the Pyrenees by Charles L Freeston
Faust by Johann Wolfgang von Goethe
Brittany by Baring Gould
Collected Works of Hafiz
The Well-Beloved by Thomas Hardy
The Longer Poems of John Keats
Epic and Romance: Essays on Medieval Literature by William Paton Ker
The Courtship of Morrice Buckler: A Romance by AEW Mason
An Essay on Comedy by George Meredith
The History of the Jews by Henry Hart Milman
History of Latin Christianity by Henry Hart Milman
History of Rome by Theodor Mommsen
Juvenile Offenders by William Douglas Morrison
A History of Ancient Greek Literature by Gilbert Murray
Apologia Pro Vita Sua by John Henry Newman
Two Essays on Miracles by John Henry Newman
Idea of a University by John Henry Newman
Essays on Grace by John Henry Newman
Provincial Letters by Blaise Pascal
Pensées by Blaise Pascal
The Renaissance by Walter Pater
Gaston de Latour by Walter Pater
Miscellaneous Studies by Walter Pater
Egyptian Decorative Art (paperback) by WM Flinders Petrie
Letters and Memoir by Dante Gabriel Rossetti
Quo Vadis by Henryk Sienkiewicz
The Student's Chaucer by Walter William Skeat
Collected Works of Edmund Spenser
Treasure Island by Robert Lewis Stevenson
Collected Works of August Strindberg
The Study of Dante by JA Symons
Richard Wagner's letters to August Roeckel
Collected Works of William Wordsworth

অস্কার ফিঙ্গাল ও'ফ্ল্যাহারটি উইলস ওয়াইল্ড-এর জন্ম অক্টোবর ১৬, ১৮৫৪ মৃত্যু নভেম্বর ৩০ ১৯০০ সালে। আইরিশ নাট্যকার ঔপন্যাসিক এবং কবি। জন্ম ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।


বন্দি অবস্থায় প্রথম তিন মাসে গরাদের ভিতর অস্কার ওয়াইল্ডকে শুধুমাত্র প্রার্থনার বই পড়তে দিত। সেগুলি স্তবক ও বাইবেল ছিল। কিন্তু তৎকালীন লিবারেল পার্টির এমপি ও রিডিং শহরের গভর্ণর রিচার্ড হ্যালডেনের অনুরোধে কারা কর্তৃপক্ষ একটু নরম হয়। তখন ওয়াইল্ড ধন্যবাদ স্বরূপ তাকে নিজের স্বাক্ষরিত The Importance Of Being Earnest বইটি উপহার দেন। ওয়াইল্ডকে অবশ্য তাঁর গরাদের ভিতর বই রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত বই পড়তে চান ততক্ষণ পর্যন্ত তার গরাদের আলো জ্বালিয়ে রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

১৮৯৫ সালের জুনে প্রথম যে বইটি তিনি পড়তে চেয়েছিলেন, সেটি ছিল The Confessions of St Augustine -এর বিভিন্ন খন্ড। ওয়াল্টার পেটারের The Renaissance ছিল তাঁর জীবনে পাঠ করা মূল বইগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ছিল নান্দনিকতার দিক থেকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক বই যা ওয়াইল্ডকে এতোটাই প্রভাবিত করেছে যে তিনি নিজেই শিল্পের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। লাইব্রেরীতে থেকারে বা ডিকেন্সের কোন উপন্যাস ছিল না। তাই তিনি নুতন বই সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেন। তাদেরকে তিনি জানান, এই বইগুলির সংগ্রহ কারাগারে থাকলে বন্দীদের অনেকের জন্য তা মঙ্গল বয়ে আনবে, যেমনটি তার ক্ষেত্রে হয়েছে।
ঋণের কারণে অস্কার ওয়াইল্ডকে দেউলিয়া ঘোষণা করে তার বাড়ির ব্যক্তিগত লাইব্রেরী নিলামে তোলা হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে মাত্র ৫০টি সরকারের সংগ্রহে আছে, বাকি ৩০০০টির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। লাইব্রেরী থিং সাইট (www.librarything.com)-এ ওয়াইল্ডের সংগ্রহের একটি পুনর্গঠিত সংস্করণ দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া থমাস রাইটের Built of Books: How Reading Defined the Life of Oscar Wilde বইতে ওয়াইল্ডের গ্রোগ্রাসে বই গেলার প্রবণতা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। যেখানে তার একটি অদ্ভুত অভ্যাসের কথা জানা যায়, ওয়াইল্ড যেকোন বই বা যে-কয়টি পৃষ্ঠাই পড়তেন সব পঠিত পৃষ্ঠার উপরের দিককার কোনের ছোট্ট একটু অংশ ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতেন।

অপমানে, বঞ্চনায় কেটেছে তাঁর অন্তিম কয়েক দিন। স্ত্রী কনস্ট্যান্স লয়েডের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলেও আইনী বিচ্ছেদ হয়নি। তবুও তাদের দুই পুত্র সিরিল এবং ভিভিয়ানের পদবী থেকে বাবার উপাধিটুকু সরিয়ে দেন কনস্ট্যান্স। জেল থেকে বেরুনোর বছর তিনেকের মাথায় ফ্রান্সের প্যারিসে মারা যান ওয়াইল্ড। মৃত্যুর কারণ সেরেব্রাল মেনিনজাইটিস। আজকের যুগের প্রেক্ষিতে বিচার করতে গেলে হয়তো ওয়াইল্ডের জীবন অন্যরকম হয়ে ধরা দিত।


কে জানে তার সেই ভালবাসা, সেই জীবন হয়তো ভিক্টোরীয় যুগের আরোপিত অতিরঞ্জিত কোন গল্প। তাই তো বার বার তাকে জানার ইচ্ছেটা মরে না। মৃত্যুর এতকাল পরেও বিশ্ব সাহিত্যে তার অবদান ও ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়নের কারণে তিনি এতটাই প্রভাবশালী হয়ে আছেন যা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বিভিন্ন সময় ওয়াইল্ডের জীবনী লিখেছেন অনেকেই— হেসকেথ পিয়ার্সন, মন্টগোমেরি হাইড, রিচার্ড এলম্যান, যিনি ওয়াইল্ডের এবং জেমস জয়েসের সবচেয়ে প্রামাণ্য জীবনীকার বলে স্বীকৃত। এমনকি এই ২০১৮ সালে এসেও তিনি বার বার নতুন করে ধরা দিচ্ছেন ভক্তদের হৃদয়ে।

৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে ওয়াইল্ডের আর-একটি নতুন জীবনী, ম্যাথিউ স্টারজিস-এর লেখা Oscar: A life, প্রকাশক হেড অফ জ়িউস, লন্ডন। উনিশ শতকীয় ব্রিটিশ জীবন ও সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ স্টারজিস তাঁর নতুন ওয়াইল্ড-জীবনীতে পাঠকের সামনে এনেছেন সাম্প্রতিককালে উদ্‌ঘাটিত হওয়া তথ্য ও নথি, যেসব আগে পাওয়া সম্ভব ছিল না। ওয়াইল্ডের আগের ও এলম্যানের জীবনীতে বেশ কিছু ভ্রান্তি ছিল, যার সঠিকটিও দেখিয়ে দিয়েছেন স্টারজিস, পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন উনবিংশ ও বিংশ শতকের সন্ধিক্ষণের এই আশ্চর্য ব্যক্তিত্বের আরও কাছাকাছি। ১০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মুক্তি পেয়েছে ওয়াইল্ডের জীবন নিয়ে বিশেষ করে জীবনের শেষদিনগুলো নিয়ে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র, নাম 'দ্য হ্যাপি প্রিন্স'।
তথ্যসূত্র
The Independent
The Guardian

আর্টস বিভাগে প্রকাশিত বিপাশা চক্রবর্তীর আরও লেখা: