চিত্রকলা, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতে শিল্পের বিস্তার

মিঠুন চৌধুরী
Published : 21 Dec 2019, 03:00 PM
Updated : 21 Dec 2019, 03:00 PM


সঙ্গীত নৃত্যকলা যন্ত্রসঙ্গীত মূকাভিনয় আলোকচিত্র দৃশ্যশিল্প নাটক ও চলচ্চিত্র, শিল্পের সব শাখার নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে হয়ে গেল বিস্তার শিল্পোৎসব ২০১৯।
চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ, একাডেমি প্রাঙ্গন আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আর্ট গ্যালারি জুড়ে শিল্পের এই উৎসব পরিণত হয় চট্টগ্রামে সব বয়সী মানুষের এক প্রাণের উৎসবে।
শনিবার সন্ধ্যায় উৎসব প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতেই বর্ণিল কয়েকটি ফেস্টুনে চিত্রিত হয়েছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সব শিল্পোৎসব।
এক নজরে জেনে নেয়া যায় রিও কার্নিভাল, ভেনিস বাইএনিয়াল, কান ফিল্ম ফেস্টিভাল, চেখভ ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভাল, নিউ অরলিন্স জাজ ফেস্টিভাল, খাজুরাহো ডান্স ফেস্টিভালসহ বিশ্বের সেরা সব শিল্পোৎসব সম্পর্কে।
মঞ্চে তখন সিলেটের কমলগঞ্জের বাবু চাঁদ সিনহা ও বিশাল সিনহার মণিপুরী মৃদঙ্গ বাদন চলছে। মৃদঙ্গের অকৃত্রিম বোলে পিতা-পুত্র মোহিত করে রাখে নাগরিক শ্রোতাদের।
পাশেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আর্ট গ্যালারিতে চলছে কানাডা থেকে প্রেরিত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী 'আন্ডারওয়াটার' এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিল্পীদের অংশগ্রহণে যৌথ দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী 'ভাবনা থেকে প্রয়োগ'।
বিশ্ববিখ্যাত ১২ জন আলোকচিত্রীর নজরকাড়া সব ছবিতে সাজানো 'আন্ডারওয়াটার' আকৃষ্ট করেছে দর্শকদের। আর 'ভাবনা থেকে প্রয়োগ' ভাবিয়েছে শিল্পোবোদ্ধাদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাগর তলের অজানা পৃথিবী এত সুন্দরভাবে এসব ছবিতে ধরা দিয়েছে যা এখানে না এলে বুঝা যেত না। বিশ্ব বিখ্যাত সব আলোকচিত্রীর কাজ দেখার সুযোগ চট্টগ্রামে খুব একটা হয় না।
শনিবারের অন্য আয়োজনের মধ্যে ছিল পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী 'ইতি তোমারই ঢাকা' এবং এ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা।


নারীদলের মূকাভিনয় পরিবেশন করে 'মূকন্যা' চট্টগ্রাম। আরপেজিও মিউজিক স্কুলের নাজিম উদ্দিন জাহেদ ও সামিত মনজুরের পরিবেশনায় ভায়োলিন ও পিয়ানোর যুগলবন্দি 'ভায়ানো' শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।
মোহাম্মদ ফরহাদ আহমেদের পরিকল্পনায় সমকালীন নৃত্যনক্শা 'ট্রাই নট টু ক্রাই' পরিবেশিত হয়। প্রয়াত শিল্পী শান্তনু বিশ্বাসের গান পরিবেশন করে 'কালপুরুষ'।
পঞ্চমবারের মত এই শিল্পোৎসব আয়োজন বিষয়ে বিস্তার এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আলম খোরশেদ বলেন, "কান ভেনিস রিও ফেস্টিভালসহ বিশ্বের সেরা সব ফেস্টিভাল আমাদের প্রেরণার উৎস। আমরা চাই এ আয়োজন সেরকম এক উৎসব হয়ে উঠুক। চট্টগ্রাম হয়ে উঠুক সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র।"
উৎসবের আয়োজনে বহুমাত্রিকতা সেই ইঙ্গিতই দেয়।
উৎসবের তিনদিনের আয়োজনে শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ছিল লোকগান ও নগর সংগীত, ধ্রুপদী নৃত্যের সঙ্গে ছিল সমকালীন নৃত্যনক্শাও।


বৃহস্পতিবার বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এই শিল্পোৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রবীণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী পণ্ডিত নির্মলেন্দু চৌধুরী।
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ হাসিনা জাকারিয়া এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ।
আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী।
প্রথম দিনের আয়োজন শুরু হয় ফুলকি'র শিশুদের ব্রতচারী নৃত্যের মধ্য দিয়ে। এরপর ধ্রুপদ পরিবেশনা করেন কৌশিক আহমেদ।
ওড়িশি অ্যান্ড টাগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, চট্টগ্রাম এর শিল্পীরা ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। অযান্ত্রিক পরিবেশন করে দলীয় বাচিক পরিবেশনা 'মূক মানুষের গান'। পিয়ানোয় রবীন্দ্রনাথ ও শচীন কর্তার গান পরিবেশনা করেন কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম।


দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আফগান লোকনৃত্য পরিবেশন করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর শিক্ষার্থীরা। এরপর বিপ্লব, বিজয় ও মানবতার গান পরিবেশন করে উদীচী'র শিল্পীরা।
তারপর শিল্পী আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিকল্পনায় সমকালীন নৃত্যনকশা 'আ স্ট্রাগলিং আইডেন্টিটি', তাহনুন আহমেদির পরিকল্পনায় 'রাশ ইন চট্টগ্রাম' এবং স্নাতা শাহরিনের পরিকল্পনায় 'ট্রু স্টোরি' পরিবেশিত হয়।
সুফি সঙ্গীত পরিবেশন করে চট্টগ্রামের মাইজভাণ্ডারী মরমী গোষ্ঠী আর পদ্মার নাচন: লোকনাট্য পরিবেশন করে কুষ্টিয়ার শেরেবুল ও তার দল।