ঢাকার মঞ্চে সৈয়দ জামিল আহমেদের পুনরাবির্ভাব এবং রিজওয়ান-এর অর্জন ও ‍অভিঘাত

আলম খোরশেদআলম খোরশেদ
Published : 13 Sept 2017, 01:52 PM
Updated : 13 Sept 2017, 01:52 PM

সৈয়দ জামিল আহমেদ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নাট্যচিন্তক ও নির্দেশক। তাঁকে জানি সেই ১৯৮০ সাল থেকেই,যখন তিনি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অভ ড্রামার,সংক্ষেপে এনএসডি, স্নাতক হিসাবে ঢাকায় ফিরে 'নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়'-এর তৎকালীন প্রযোজনা, রবীন্দ্রনাথের 'অচলায়তন' নাটকের- যার একটি চরিত্রে আমিও অভিনয় করছিলাম তখন- মঞ্চভাবনা ও সজ্জার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
এর কয়েক বছর বাদে, প্রথমে ঢাকা ও পরে দেশত্যাগের কারণে তাঁর কোন পূর্ণাঙ্গ নাটক দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার কখনোই। তবে, প্রবাসে বসেও বাংলাদেশের নাট্যজগতে তার অতুলনীয় ভূমিকা ও অবদানের কথা কানে আসত প্রায়শই। তিনি ততদিনে একজন নাট্যকর্মী মাত্র নন, বিলেতে নাটক নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার একজন নিবেদিতপ্রাণ, একনিষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে প্রভূত সুনাম ও সম্মানের অধিকারী বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব। নাট্যনির্দেশনার জন্য দেশের বাইরে থেকেও তাঁর কাছে ডাক আসে তখন হামেশাই; দেশের ও বিদেশের বনেদি সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর নাট্যবিষয়ক বিদ্যায়তনিক গ্রন্থও প্রকাশ পেতে থাকে নিয়মিত ব্যবধানে।
পাশাপাশি,বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চেও তিনি নানাবিধ নিরীক্ষা ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড ঘটাতে থাকেন। বিশেষ করে, দেশজ আঙ্গিকে নির্মিত, প্রায় ছয় ঘন্টার মহাকাব্যিক নাট্যনির্মাণ,'বিষাদ সিন্ধু' নাট্যরসিকদের কাছে রীতিমত কিংবদন্তির খ্যাতি পায়,এবং 'চাকা','বেহুলার ভাসান' ইত্যাদি আরও কিছু অসামান্য প্রযোজনার কৃতিত্বও জমা হয় তাঁর অর্জনের ঝুলিতে। কিন্তু প্রলম্বিত প্রবাসজীবনের কারণে এসবের কোনটারই স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য হয় না আমার।

তারপর যখন এক পর্যায়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসি, তখন শুনতে পাই, নানাবিধ কারণে তিনি দেশের মঞ্চ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। ততদিনে তাঁর বিভিন্ন লেখাপত্র পড়ে এতটাই অভিভূত আমি, যে সেই সামান্য পূর্বপরিচয়ের সূত্রটুকু ধরেই তাঁকে আমাদের নবগঠিত প্রতিষ্ঠান Bistaar: Chittagong Arts Complex-এ একটি নাট্যবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনার আহবান জানিয়ে বসি। এবং কিমাশ্চর্যম, তিনিও আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের ১৯শে জুন দিনভর বিস্তার-এর সভাকক্ষে, চট্টগ্রামের নবীন, প্রবীণ নাট্যকর্মীদের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব নাট্যচিন্তা ও দর্শন নিয়ে উপভোগ্য ও অতীব উপকারী একটি নাট্যসংলাপ বিনির্মাণ করেন। নাট্যঅন্তপ্রাণ এই মানুষটির মৌলিক ও মাটিঘেঁষা মনন এবং শিল্পবিষয়ে বিপুল বৈদগ্ধ্যের পরিচয় পেয়ে, সেই অবধি, তাঁর একটি মঞ্চপ্রযোজনা স্বচক্ষে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে মন।

সেরকম একটি সুর্বণ সুযোগও মিলে গেল এই ঈদের ছুটিতে, যখন তিনি 'নাটবাঙলা' নামক একটি নতুন নাট্যসংগঠনের আমন্ত্রণে ও আয়োজনে 'রিজওয়ান' নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক নিয়ে পুনরায় আবির্ভূত হলেন ঢাকার মঞ্চে,প্রায় দুই যুগ পরে। ঘটনাচক্রে,এ-নাটকটি The Country Without a Post Office নামে যে-কবিতাগ্রন্থটি অবলম্বনে নির্মিত, তার রচয়িতা যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী, কাশ্মিরী বংশোদ্ভুত কবি আগা শাহেদ আলির সঙ্গেও আমার কিঞ্চিৎ ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। নিউইয়র্কে আমি যে-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তিনি ছিলেন সেখানকার 'সৃজনশীল লেখালেখির' শিক্ষক। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর আমরা নিউইয়র্কে যে-সম্প্রীতিসভাটির আয়োজন করেছিলাম, তিনি সেখানে এসে ‍আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের পাশাপশি তাঁর কবিতাও পাঠ করেছিলেন।
তো,এমন সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া না করে ৮ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে, প্রত্যক্ষ করি জামিল আহমেদ-এর মহাকাব্যিক নাট্যযজ্ঞ,'রিজওয়ান'। নাটকটি সম্পর্কে ইতোমধ্যে ইতিনেতি অনেক কিছুই পড়া হয়ে গিয়েছিল সামাজিক মাধ্যমের পাতায়। তারপরও, যথাসম্ভব একটি খোলা মন নিয়েই আমি রিজওয়ান-কে দেখি এবং বলতে দ্বিধা নেই যে, শেষ পর্যন্ত, এর সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, একটি অনন্য নাট্যাভিজ্ঞতার অভিঘাত এবং হৃদয়মন দ্রবীভূত করা এক অনির্বচনীয় শিল্পানুভূতির আস্বাদ নিয়েই বাড়ি ফিরি। এখানে,আমার সেই ব্যক্তিগত দর্শনাভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রযোজনাটি থেকে আমাদের নাট্যাঙ্গনের অর্জনগুলো নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

এক. এই নাটকটি মঞ্চায়নের যে সময়কাল ও প্রক্রিয়াটি বেছে নিয়েছেন আয়োজকগোষ্ঠী 'নাটবাঙলা' ও নাট্যপরিকল্পক সৈয়দ জামিল আহমেদ, সেটি নিজেই একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বাঙালি মুসলমানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদকে ঘিরে আমরা সত্যিকার অর্থে কোনও উৎসবের আবহ লক্ষ করি না আমাদের সমাজজীবনে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ঈদসংখ্যা প্রকাশ, হাতেগোণা কয়েকটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রমুক্তি এবং এক-আধটা টিভি-অনুষ্ঠানকে ঘিরে খানিকটা সক্রিয়তা দেখা গেলেও, নাট্যাঙ্গনে তখন বিরাজ করে কেবলই সুনসান নীরবতা। দূরদর্শী সমাজচিন্তক জামিল আহমেদ ও তার নাট্যবাহিনী যেন সচেতনভাবেই এই নিরানন্দ, নিষ্ক্রিয়তার সংস্কৃতিকে ভেঙে দিয়ে আমাদের নিস্তেজ শিল্পাঙ্গনে নতুন এক উৎসবমুখরতার ধারা নির্মাণের লক্ষ্যে ঈদের ঠিক আগের দিন থেকে পরবর্তী দশদিন, প্রতিদিন দুটো মঞ্চায়ন করে, 'রিজওয়ান' নাটকের মোট কুড়িটি টানা প্রদর্শনীর দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেন। শুধু তাইই নয়,এরই মাধ্যমে একই সঙ্গে তাঁরা এই নাটকের প্রদর্শনীর আগাম সমাপ্তিও ঘোষণা করেন। এটি নিঃসন্দেহে ছিল একটি বড় রকমের অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং নাটকের কুশীলব ও কর্মীদের শারীরিক/মানসিক/সামাজিক সক্ষমতার ওপর প্রচণ্ড চাপ ও চ্যালেঞ্জস্বরূপ। কিন্তু নাটকের প্রতি প্রগাঢ় দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাঁরা এই চ্যালেঞ্জটাকে গ্রহণ করেছিলেন সর্বান্তঃকরণে, এবং সুখের বিষয়,তাতে প্রায় পুরোপুরি সফল হন তারা। কেননা,বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে ইতোঃপূর্বে কোন একটি বিশেষ নাটককে ঘিরে এরকম উত্তেজনা, উৎসাহ ও উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে বলে এই লেখকের জানা নেই। ঈদের আবহে, আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে, দেশজুড়ে বিরাজমান চাপা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার মুখে এই নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে তাঁরা ডাক দিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এবং তার সঙ্গে যুক্ত করে দিলেন টিকিট বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ দিয়ে বানভাসি মানুষকে সহায়তার মানবিক অঙ্গীকারটুকুও। নাটককে আমরা যারা সামাজিক দায়বদ্ধতার হাতিয়ার করার কথা ভাবি, সৈয়দ জামিল আহমেদ ও নাটবাঙলা যেন সেটাকে একেবারে হাতেকলমে প্রয়োগ করে দেখালেন; এর চেয়ে বড় অর্জন একটি নাটকের জন্য আর কীইবা হতে পারে!

দুই। তাই বলে সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তিনি শিল্পের সাথে কোনও প্রকার আপোষ করতে রাজি নন। বস্তুত, এই নাটকে তিনি নাট্যভাষার সর্বোচ্চ প্রয়োগ এবং শিল্পের সুষমা ও সৌন্দর্য নির্মাণের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেন, ফলত সত্যি সত্যি শিল্পের এমন এক অতলস্পর্শী চূড়া স্পর্শ করতে সক্ষম হন যা কদাচিৎ বাংলাদেশের নাটকে আমরা দেখতে পাই। অনেকেই এই নাটকের নির্দিষ্ট কোনও গল্প, বক্তব্য, ভাষ্য ইত্যাদি খুঁজে না পেয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান লেখকের মতে, এই আপাত প্লটহীনতার ভেতর দিয়েই মানবজীবনের গভীরতর এক অসহায়ত্বের অনুভূতি ও বিষাদাচ্ছন্ন বাস্তবতার বর্ণনার পাশাপাশি জীবনমৃত্যুর প্রগাঢ় উপলব্ধির উপস্থাপনার সাফল্যটুকুই এই নাটকের আরেক বিশাল অর্জন। কেননা, এটি তো আসলে প্রথাসিদ্ধ কোনও নাটকই নয়। একটি কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতার মূল ভাবনা ও অনুভূতির বীজ থেকে এই নাটকের বাহ্য কাঠামোটি নির্মাণ করেছিলেন ব্যাঙ্গালুরুবাসী, প্রতিভাবান তরুণ নাট্যকার অভিষেক মজুমদার। তবে সেটি ছিল ভিন্ন ভাষায়। পরে সম্প্রতি, তার বাংলা অনুবাদ করেন কোলকাতার নাট্যকর্মী ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য, যেটিকে অবলম্বন করেই জামিল আহমেদ নির্মাণ করেন'রিজওয়ান' নাটকের এই বাংলাদেশি সংস্করণটি। ফলত,এই নাটকের কোনও নির্দিষ্ট প্লট কিংবা আখ্যান নেই, রয়েছে কেবল একটি জনপদের এক ভাগ্যবিড়ম্বিত পরিবারের অপঘাতে মৃত সদস্যদের বয়ানে তাদের জীবৎকালের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা, আর মৃত্যুপরবর্তী জীবনে স্মৃতি ও শোকের সন্তাপে সংরক্ত বেদনার অধিবাস্তব বহিঃপ্রকাশ। গৃহহীন, দেশহীন মানুষের বেদনা ও হাহাকার, একটি ঘরের ঠিকানার জন্য আমর্ম আকুলতা, রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন ও নির্মমতার শিকার হওয়া, নির্বিচার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও তার প্রতিকারহীন পরিণতি; এইসব শ্বাশ্বত বেদনার বৈশ্বিক বাস্তবতাকেই তিনি অল্প ক'টি চরিত্রের মুখে কবিতার মত কিছু মর্মভেদী সংলাপ, সঙ্গীত, আলো আর দুরন্ত দেহাভিনয়ের মাধ্যমে চারিয়ে দেন দর্শকচেতনার গভীরে,যার অনুরণন আমরা টের পেতে থাকি, নাটক শেষ হবার পরও দীর্ঘক্ষণ ধরে।
তিন. এই নাটকের অপর অর্জন তার মঞ্চ পরিকল্পনা, বিন্যাস ও সজ্জা। আগেই বলেছি, নাটকটি অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে, কিন্তু জামিল আহমেদ তার পরীক্ষানিরীক্ষাকে, বিশেষ করে পরিসর ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যেন আমাদের সকল কল্পনাকেও ছাপিয়ে যান। প্রথাগত মঞ্চের বদলে, এখানে তিনি তিনটি উল্লম্ব তলে তার ‍অভিনয়ক্ষেত্র নির্মাণ করেন। দর্শকদের দু'পাশের বসার আসনের মাঝখানে মিশে যাওয়া ঢালু উপত্যকার মত সমতলভূমি; এর ওপরে ঝুলন্ত ও গতিশীল দুটো সংকীর্ণ ট্রলি, যেনবা জীবন-মৃত্যুর মাঝখানের এক অনিশ্চিত ত্রিশঙ্কুতল; এবং তারও ওপরে,আলোকপ্রক্ষেপণের জন্য নির্মিত পাটাতনগুলোর সরু আলোআঁধারি জুড়ে মরলোক কিংবা ঊর্ধ্বলোকের প্রতীকী পরিসর, এই তিন মিলিয়ে নির্মিত হয় নাটকের মূল মঞ্চভূমি। তার সঙ্গে যুক্ত হয় পুরো গ্রিনরুম, ব্যালকনি, করিডোর, সিঁড়িপথ- যেখানে যতটুকু জায়গা জুটেছে, তার প্রায় পুরোটারই বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃজনশীল ব্যবহার করেন জামিল আহমেদ তাঁর নাটকের প্রয়োজনে। আর কিছু দড়ির সিঁড়িও মাঝেমধ্যে নেমে আসে ওপর থেকে, যা বেয়ে মৃতদের উঠে যেতে দেখা যায়, যেনবা মরলোকে; কখনওবা সেইসব স্বর্গের সিঁড়ি বেয়েই ঊর্ধাকাশ থেকে নেমে আসে আমাদের হর্তাকর্তা বিধাতারূপী সৈন্য কিংবা পরিত্রাতার দল, আর তার মাঝখানে রিজওয়ান, স্বর্গের পাহারাদার, স্বজনদের মৃতদেহ আগলে থাকে, জগতের সকল হত ও অপহৃতের বেদনার ভার আপন কাঁধে নিয়ে, কোনও একদিন বিনা অপরাধে নিজেও মৃতের দলে নাম লেখাবে বলে। এভাবে, নামোল্লেখ না করেও নির্দেশক যেমন একদিকে কাশ্মিরের এবং কিছুটা বা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের, ট্রাজিক ও বেদনাময় ভূপ্রকৃতিকেই বিনির্মাণ করেন মঞ্চজুড়ে, তেমনি নাটকের মূল প্রতিপাদ্য: হত্যা, মৃত্যু ও বিচ্ছেদের আবহটুকুও ফুটিয়ে তোলেন ইহলোক আর পরলোকের বেদনাদীর্ণ এই প্রতীকী ব্যঞ্জনায়।

এক কথায়, অসাধারণ ও অভূতপূর্ব ছিল নাট্যপরিকল্পকের প্রখর কল্পনাশক্তিসঞ্জাত এই মৌলিক মঞ্চভাবনাটুকু।
চার. নির্দেশক হিসাবে সৈয়দ জামিল আহমেদ এর মুকুটের অপর উজ্জ্বল পালকটি হচ্ছে, একটি নতুন দলের একদল তরুণ, ‍অভিনেতা ও নাট্যকর্মীদের কাছ থেকে নাটকের প্রতি এমন অপরিসীম দরদ ও নিষ্ঠা, প্রখর পরিশ্রম, ব্যক্তিগত আত্মত্যাগ, দুর্মর ইচ্ছাশক্তি, মসৃণ দলগত সমন্বয় ও নিঃশর্ত আনুগত্য আদায় করে নিতে পারা। এরই বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই নিখুঁত দলীয় ও শারীরিক অভিনয়ে, ঝুঁকিপূর্ণ দৈহিক ও যান্ত্রিক কসরতাদিতে, জটিল মঞ্চসজ্জা ও তার ব্যবস্থাপনায়; প্রায় জাদুকরী আলোক প্রক্ষেপণকৌশলে, সঙ্গীতের সুষ্ঠু ও নির্ভুল প্রয়োগে, সর্বোপরি, টানা দশদিন ধরে স্বরযন্ত্রের ওপর প্রবল চাপ-নেওয়া কুশীলবদের কষ্টসাধ্য বাচিক অভিনয়ে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের নতুন প্রজন্মের মঞ্চকর্মীদের জন্য একটি মহান ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
পাঁচ. সবশেষ কথা, এই নাটকটির মাধ্যমে আপাদমস্তক ও সত্যিকারের দায়বদ্ধ নাট্যভাবুক,তাত্ত্বিক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ-এর এমন প্রাজ্ঞ পুনরাবির্ভাব, সরব সক্রিয়তা ও সম্মুখ নেতৃত্ব আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের প্রায় স্থবির হয়ে পড়া নাট্যাঙ্গনে অনেক বড় একটি আশার আলো জ্বালিয়ে দিতে পেরেছে নিঃসন্দেহে। এই আলোতে অচিরেই আবার ঝলসে উঠবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় নাটমঞ্চ,এটুকু প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। জয়তু জামিল, জয় নাটবাঙলা!