সালমান রুশদির সঙ্গে একটি সন্ধ্যা

সেজান মাহমুদ
Published : 18 April 2008, 09:56 AM
Updated : 18 April 2008, 09:56 AM


ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্যার আহমেদ সালমান রুশদি (জন্ম. ১৯/৬/১৯৪৭)

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মুসলিম বিশ্বের কাছে বিতর্কিত, পশ্চিমা বিশ্বের লেখক-সমালোচকদের কাছে এ শতাব্দীর একজন অন্যতম শক্তিশালী লেখক সালমান রুশদি আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ট্যালাহাসি শহরে এলেন বক্তৃতা দেয়ার জন্য। এখানে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে সাতদিনের আনুষ্ঠানমালার সূচনা-বক্তার মর্যাদায় এলেন তিনি। এদিন আমার বাড়িতে মেহমান, অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে আমার এক চিকিৎসক বন্ধু, আর বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী। আমার কাছে

……
Midnight's Children (1981)
…….
টিকিট আছে মাত্র দুটো। দ্বিধা কাটালেন তপন দা নিজেই, বললেন, 'আমার কোনো আগ্রহ নাই যাওয়ার, তোমরা যাও।' অতএব তপনদাকে প্রতিবেশীর বাসায় রাতের খাবারের নেমন্তন্ন খেতে দিয়ে আমরা চলে এলাম ইউনিভার্সিটির রুবি ডায়ামন্ড অডিটোরিউয়ামে।

সালমান রুশদি এখানে আসবেন এ খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁর বর্তমান কর্মস্থলে যোগাযোগ করি সামনা-সামনি একক সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। কিছুটা আশার আলোও দেখা দিয়েছিল, কিন্তু যেই না জানালাম যে আমি বাংলাদেশের লোক, তারপর থেকেই নানান নিরাপত্তামূলক প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হলো। অগত্যা একক সাক্ষাৎকার না করে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব মেনে নেওয়া ছাড়া গতি থাকে না।

আমি বন্ধুকে নিয়ে অডিটরিয়ামের ভেতরে ইউনিভার্সিটির ফ্যাকালটিদের

……
Shame (1983)
…….
ব্যালকনিতে আসন নিলাম। সালমান রুশদি তাঁর আলোচিত-সমালোচিত উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেস লেখার জন্য ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ জারির সাত বছর পর অনেকটা সাবধানতার সঙ্গে জনসমক্ষে আসা শুরু করেছেন। এর মধ্যে আমেরিকার 'ফিল ডোনাহিউ শো'তে এসছিলেন, এসছিলেন জনপ্রিয় টক শো লেট নাইট উইথ জে লোনো-তে। এছাড়া এই দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর নতুন উপন্যাস দ্য মুর'স লাস্ট সাই-এর প্রচারনার কাজে আমেরিকায় অনেকটা সর্বসাধারণের জন্য আধা-উন্মুক্ত (সেমি-পাবলিক) পাঠ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি 'এমেরি' বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে 'বিশিষ্ট আবাসিক লেখক'-এর মর্যাদায় শিক্ষকতা শুরু করেছেন। এই সূত্রেই তিনি আমাদের শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন, এখান থেকে তাঁর নতুন খণ্ডকালীন কর্মস্থল মাত্র আধা ঘণ্টার বিমান-দূরত্বে।

সালমান রুশদি কি বিতর্কিত লেখার জন্য আলোচিত নাকি আসলেও একজন বড় মাপের লেখক? এ প্রশ্ন প্রায়শ সাহিত্যের আড্ডা থেকে শুরু করে সামাজিক আড্ডায় ঝড় তোলে। পশ্চিমা সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁর সাহিত্যকর্মকে চিনতে শুরু করেছে সেই মিডনাইট'স চিলড্রেন উপন্যাস থেকে, যেটি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় এবং বুকার পুরস্কার অর্জন করে।

……..
The Satanic Verses (1988)
……
উপন্যাসে বা ছোটগল্পে জাদুবাস্তবতা, ইতিহাস বা মিথের ব্যবহার, সর্বোপরী অসাধারণ ভাষার জন্য তিনি সমালোচকদের কাছে এবং পাঠকের কাছে নন্দিত। এই ভাষা কেমন, বা এর স্বাতন্ত্রই বা কোথায়? যারা বৃটিশ ধ্রুপদী ধারার ইংরেজির বা ফরস্টেরিয়ান ইংরেজির রাহুমুক্ত হতে সচেতন প্রয়াসী তারা রুশদির প্রশংসায় বরং আরও এক কদম এগিয়ে। তার কারণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড বা ক্যারাবিয়ান লেখকেরা যেরকম নতুন ধারার ইংরেজি ভাষা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি রুশদির ভাষা যেন এরকম 'ইন্ডিয়ান ইংরেজি' যা আর কোথাও সহজে মেলে না। এমনকি অন্য ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখকদের মধ্যেও নয়। রুশদির বিখ্যাত বাক্যবিন্যাস 'ওয়ান ডে ইউ উইল কিলোফাই (killofy) মাই হার্ট' বা 'আই'উল জাস্ট বাইড-ও মাই টাইম' যেন সেই নতুন ধারার ইংরেজির নমুনা।

সালমান রুশদি তাঁর এক ঘণ্টার বক্তৃতা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যে তাকে 'ইতিহাসে উপন্যাসের ভূমিকা ও সমসাময়িক জীবন' শিরোনাম অনায়াসেই দেয়া যায়। প্রথমেই তিনি আমেরিকান পপ কালচার যেমন ব্রিটনী স্পিয়ার, প্যারিস হিলটন নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতির প্রতি কঠাক্ষ ছুড়ে দিয়ে বলেলেন, 'একটি সস্তা হোটেল থেকে কী করে যে সস্তা সেলিব্রেটি তৈরি হয়, তার প্রমাণ প্যারিস হিলটন।' একই সঙ্গে সমালোচনা করলেন প্রেসিডেন্ট বুশকে। উল্লেখ্য, সালমান রুশদি গোড়া থেকেই 'ইরাক যুদ্ধের নৈতিক ভিত্তি নেই' এরকম সমালোচনা করে এসেছেন। ইতিহাসে ও সমসাময়িক জীবনে উপন্যাসের ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে প্রথমেই বললেন, 'পৃথিবীর ইতিহাসে ভালো উপন্যাসগুলো বেশিরভাগ সময়েই খারাপ রিভিউ পেয়ে এসেছে।
—————————————————————–
"পৃথিবীর ইতিহাসে ভালো উপন্যাসগুলো বেশিরভাগ সময়েই খারাপ রিভিউ পেয়ে এসেছে। একমাত্র অতীতের দিকে ফিরে গিয়েই আমরা ভালো সাহিত্যের মর্যাদা বুঝতে পারি।"
—————————————————————–
একমাত্র অতীতের দিকে ফিরে গিয়েই আমরা ভালো সাহিত্যের মর্যাদা বুঝতে পারি।' একই সময়ে তিনি আমেরিকান লেখকদের সমালোচনা করলেন এই বলে যে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক অবস্থান, রাজনৈতিক অবক্ষয়, তা নিয়ে লেখার কোনো দায়িত্বশীলতা তিনি তাদের মধ্যে দেখেন না। লেখকদের ওপরে লেখকদের প্রভাব নিয়ে তিনি বললেন, 'কিছু লেখককে পড়তে হয় এজন্য যে আমি তাদের মতো লিখতে চাই না, যেমন ড্যান ব্রাউন (দ্য ভিঞ্চি কোডের লেখক)। কিছু লেখকদের পড়তে হয় এজন্য যে আমি তাঁদের মতো লিখতে চাই, যখন বুঝতে পারি এই চাওয়াটাই অসম্ভব চাওয়া, তখন অনুপ্রাণিত হয়ে লিখি, যেমন জেমস জয়েস।' জার্মান ঔপন্যাসিক নোবেল লবিয়েট গুন্টার গ্রাস, কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক আরেক নোবেল লবিয়েট গাব্রিয়েল গার্সিয়া মারকেজ তাঁর ওপর প্রভাব ফেলেছেন একথা অকপটে বললেন সালমান রুশদি। তাঁর প্রথম বই ফ্যান্টাসি আর কল্পবিজ্ঞানের মিশেল দেয়া গ্রিমাস সম্পর্কে জিগ্যেস করলে জানালেন, 'এই বইটি নিয়ে আমি এখন বিব্রত।'

সালমান রুশদি মানেই স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে বিতর্ক, খোমেনীর দেয়া মৃত্যুদণ্ড ও মুসলিম বিশ্বের ভূমিকার প্রসঙ্গ চলে আসে। প্রথম প্রশ্নটি আমিই করি। প্রথমেই বলি যে, 'আমি তোমার বই না-পড়া কোনো মুসলমান না।

…….
Haroun and the Sea of Stories (1990)
……..
এখানে জাদুবাস্তবতা, ফ্যান্টাসি, অ্যাবসার্ডিটি, ব্যাঙ্গাত্মক রস এগুলো আমলে নিয়ে তোমার কথার জের ধরেই বলছি, সাহিত্যের অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হলো আনন্দ সৃষ্টি (সালমান রুশদি নিজেও সেটা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর বক্তৃতায়)। যখন বাস্তবে দেখলে এর ঠিক উল্টোটি হচ্ছে, আনন্দের বদলে তিক্ততা, তখন কি তোমার মনে কোনো নৈতিক দোদুল্যমানতা (মর‌্যাল ডাইলেমা) দেখা দিয়েছিল কি না?' এর প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিলেন সালমান রুশদি। প্রথমে বললেন, ঠিক বুঝতে পারছি না, তুমি কি স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে বলছে? বললাম, হ্যা। তখন তিনি উত্তর দিলেন, যা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। 'পাঠকের বই পড়ে কি প্রতিক্রিয়া হবে তার দায়ভার তো আমি নিতে পারি না। পাঠক যদি কোনো কিছুতে অফেন্ডেড হন, তা থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো বইটি বন্ধ করে দেয়া। আমি তো প্রতিদিনই কোনো না কোনো কিছুতে অফেন্ডেড হচ্ছি। তাছাড়া এই ফতোয়াবাজদের জীবন ফিরে পাওয়া উচিত (দে নিড টু গেট আ লাইফ)।'

এ প্রসঙ্গে অন্যত্র সালমান রুশদি বলেছেন যে স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা হইচই হওয়াতে ভালো-মন্দ দুটোই হয়েছে। এতে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে বইটি পড়ার জন্য, কিন্ত এই হইচই বড় রকমের বাঁধা এই উপন্যাসের শিল্পমূল্য বোঝার জন্য। স্যাটানিক ভার্সেস বুকার পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও পুরস্কার পায় নি, যদিও বছরের সেরা উপন্যাস হিসেবে 'হোয়াইটব্রেড এওয়ার্ড' পেয়েছিল এবং পশ্চিমা সমালোচকদের বানানো শতাব্দীর সেরা একশটি বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকবার।


'এমেরি' বিশ্ববিদ্যালয় ডিসকাশন গ্রুপে সালমান রুশদি; ছবি: Brett Weinstein, ১১/২/২০০৮

এখানে তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধগুচ্ছ ফ্রি এক্সপ্রেশন ইজ নো অফেন্স-এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি পাকিস্তান থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ইন্টারন্যাশনাল গেরিলাস-এর গল্পটি বলেন। ১৯৯০ সালে স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হওয়ার পর পর এই ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়। এই ছবিতে সালমান রুশদিকে একজন র‌্যাম্বো ধাঁচের ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে যাকে চারজন পাকিস্তানি গেরিলা হত্যার জন্য খুঁজছে। এই ছবিটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিষদ মুক্তি দিতে অস্বীকার করে এই বলে যে এখানে সালমান রুশদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং ছবিটি মুক্তি দিলে সালমান রুশদি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মানহানীকর ছবি মুক্তি দেয়ার জন্য মামলা করে দিতে পারেন। একথা জানার পর সালমান রুশদি নিজে একটি দাসখত লিখে দিলেন 'যদিও ছবিটি বিকৃত, অকেজো আবর্জনা, তবুও এটি মুক্তি দিলে আমি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবো না।' এভাবে ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন বা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে সালমান রুশদি ব্রিটিশ সরকারের 'রেসিয়াল এন্ড রিলিজিয়াস হেট্রেট এ্যাক্ট'-এর ঘোরতর বিরোধী।

১৯৮৮ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে।

…….
The Moor's Last Sigh (1995)
……..
বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো যেমন নিষিদ্ধ করেছে স্যাটানিক ভার্সেস, নিন্দা জানিয়েছে সালমান রুশদির বিরুদ্ধে, তেমনি লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ নানা ধরনের মুক্তচিন্তার মানুষেরা এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এই ফতোয়ার জন্য সালমান রুশদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হিতোশি ইগারাশি, যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটি জাপানিজ ভাষায় অনুবাদ করেন তাকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয় ১৯৯১ সালে। ইতালির অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকে একই মাসে ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ড অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আততায়ীর গুলি থেকে। ১৯৮৯ সালে ব্রিটেনে যে ট্রেন-বোমা ফাটানো হয় তা ছিল সালমান রুশদিকে উদ্দেশ করে হিজবুল্লাহ'র আক্রমণ। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরানের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ খাতামী জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যেমন 'রুশদিকে হত্যার ফতোয়া সমর্থন করেন না তেমনি এটি রহিতও করেন না,' সুওরাং এটি আজও বহাল আছে। সালমান রুশদি ঈষৎ মুচকি হাসি হেসে বলেন যে এখনও অনেকটা 'ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র মতো ফেরুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে তাঁর কাছে বেনামে কার্ড আসে যাতে লেখা

……
The Ground Beneath Her Feet (1999)
…….
থাকে 'আমরা এখনও ভুলি নি'। তিনি আরও বলেন এটা এখন সত্যিকারের ভয়-দেখানোর চেয়ে অনেকটা 'রেটরিকের' মতো হয়ে গেছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই 'মৃত্যুদণ্ড' দেয়ার চেয়ে এটাকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করলেই বরং সবার জন্য মঙ্গল হতো। মানুষের বিশ্বাস কেন এতো সহজে আহত হবে, ঠুনকো কাচের মতো ঝুরঝুরে হবে যে ভিন্নমতকে খতমই করতে হবে, আমি আমার নিজের ভাষায় এভাবে বলি যে, 'কারো যেমন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, তেমনি কারো তো নাস্তিকানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অনুভূতি তো সবারই সমান!'

সালমান রুশদি তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাস লিখতে সময় নিয়েছেন পাঁচ বছরের মতো, মিটনাইট'স চিলড্রেন, স্যাটানিক ভার্সেস, দ্য মুর'স লাস্ট সাই, বা শালিমার দ্য ক্লাউন। সামনের পাঁচ বছরে কী লিখছেন? দ্য এনচ্যানট্রেস অফ ফ্লোরেনস সালমান রুশদির পরবর্তী নতুন বই। এখানেও তিনি তাঁর নিজস্ব ধারা ঠিক রেখেছেন ইতিহাস থেকে উপকথা বা উপাদান নিয়ে চরিত্র সৃষ্টির। এই উপন্যাসের কথক একজন ইউরোপীয় ভ্রমণকারী যার নাম "মোগর ডেল' আমর" বা ভালোবাসার মুঘল। তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারে এসে দাবি করেন যে তিনি সম্রাট বাবরের কনিষ্ঠতম বোন 'কারা কোজ'-এর সন্তান। কারা কোজ ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। ধীরে ধীরে জানা যায় এই 'কারা'কে উজবেকিস্তানের এক যুদ্ধবাজ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাঁকে নিয়ে যায় পারস্যের 'শাহ' এবং সর্বশেষে 'আরগালিয়া' নামের ফ্লোরেনসের এক যোদ্ধা যে তাঁকে সেবাদাসী করে রাখে। এভাবে এক নারী তাঁর নিজের পরিচয়, জীবনের দাম খুঁজে বেড়ায় এই পুরুষশাসিত পৃথিবীতে। সেই চোখে উন্মোচিত হয় পৃথিবীর দুই মহাযুগের চালচিত্র, একদিকে মুঘল সাম্রাজ্য, অন্যদিকে রেনেসাঁর ফ্লোরেনস। এরা কি ইতিহাসের সত্যি গল্প? কী ঘটলো সেই অসামান্য সন্দুরী 'কারা কোজ'-এর? এ উপন্যাস নিয়ে কি সৃষ্টি হবে আরেক বিতর্কের? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী জুনের তিন তারিখ পর্যন্ত। কারণ ২০০৮ সালের জুন ৩ তারিখে এই বই আমেরিকার বাজারে আসবে। এই উপন্যাসের পটভূমি থেকে আমার মনে একটি প্রশ্ন জোড়ালোভাবে দানা বাঁধে, সালমান রুশদি যদিও একবারও তুরস্কের আরেক নোবেলপ্রাপ্ত লেখক অরহান পামুকের নাম বলেন নি, কিন্তু তাঁর প্রভাব কি দেখা যাচ্ছে না? তাঁকে আরেকটি প্রশ্ন করতে করতেই আমার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রশ্ন করার আর সুযোগ হয় না। প্রশ্নটি ছিল, তিনি কি প্রি-ইসলামিক বা প্রাক-ইসলামিক যুগ থেকে ইতিহাসের উপদান নিয়ে কোনো উপন্যাস লিখবেন, কখনও? ততক্ষণে রাত প্রায় এগারোটা। তুমুল বৃষ্টি আর মাতাল বাতাসের দাপট মাথায় নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাই, এবার ঘরে ফেরার পালা!

ফ্লোরিডা, ইউ, এস, এ। ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০০৮