সন্ন্যাসী ও বাঘেরা, জিয়াও ইয়ান কিং, জলরং, ১১৫ x ২১৫ সেমি., ২০০৩
চীনা রাশিচক্র অনুসারে সারণির তিন নম্বরে থাকা বাঘ ভূমিতে যত প্রাণী আছে তাদের শাসন করবে। (আকাশের প্রাণীদের ভার ড্রাগনদের ওপর ন্যস্ত)। জ্যোতিষ শাস্ত্র বলছে, ব্যাঘ্রবর্ষে জন্মগ্রহণের কারণে (১৯১৪, ১৯২৬, ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৬২, ১৯৭৪, ১৯৮৬ বা ১৯৯৮) জাতক সাহসী, আশাবাদী, সহিষ্ণু,
মানবিক, দয়ালু ও আত্মনির্ভরশীল হবে। এরা পাবে দীর্ঘ জীবন। আর অন্যদের নির্দেশ দেওয়ার জন্যেই ব্যাঘ্রজাতকদের জন্ম, মানার জন্য নয়।
চীনা বাঘ উদ্যম, সাহস, আত্মমর্যাদা ইত্যাদি পুরুষালী উদ্দীপনা নিয়ে শিল্পকলায় হাজির রয়েছে। বাঘকে চীনে 'পাহাড়ের রাজা' হিসাবেও গণ্য করা হয়। লোকবিশ্বাস, বাঘ অপদেবতা থেকে রক্ষা করবে। সে কারণে বাড়িতে ঢোকার মুখে আর ঘরের ভেতরের দেয়ালে বাঘের ছবি টাঙানোর রীতি আছে, যে বাঘের ছবি থাকলে শয়তান ঘরে ঢুকবে না। প্রাচীন চীনে কৃষকেরা বাঘকে ফসলের দেবতা বলে জানতো আর শত্রুর হৃদয়ে ত্রাসের সঞ্চার করতে চীনা সেনারা শিরস্ত্রাণে খোদাই রাখত বাঘমুণ্ডু।
চীনদেশে বিশ্বাসীরা মনে করে ৫০০ বছরে বাঘ সাদা বর্ণ ধারণ করে। বাঁচে
…….
বাঘরঙ অ্যাম্বার লকেট
………
১০০০ বছর পর্যন্ত। মরলে দেহ ছেড়ে মাটির নিচে ঢুকে পড়ে বাঘের আত্মা আর অ্যাম্বারে (গাছের রেজিন বা রজনের জীবাশ্ম) রূপান্তরিত হয়। চীনা ভাষায় অ্যাম্বারের মানেও তাই "বাঘের আত্মা"। (অ্যাম্বার নিয়ে সাধারণ একটি ভুল ধারণা হলো এটি গাছের কষ থেকে তৈরি হয়। কষ আর রেজিন এক নয়। পৃথিবীর বেশির ভাগ অ্যাম্বারই ৩০ থেকে ৯০ মিলিয়ন বছরের পুরনো।)
বাঘ নিয়ে চীনা শিল্পীদের আগ্রহ তাই অনেক দিনের। চীনা ভূদৃশ্য, ড্রাগন, বাঁশের পরেই বাঘ চিত্রকলার অবস্থান। পশ্চিমে এই চিত্রকলার বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। চীনা শিল্পীদের করা এসব বাঘের ছবি ইন্টারনেটে কিনতে পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ১২০০ মার্কিন ডলারে।
২.
এই বাঘচিত্র নিয়ে ধানমণ্ডির 'বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্'-এ ১২ আগস্ট ২০০৮-এ শুরু হয়েছে চীনা শিল্পীদের প্রদর্শনী: "ঐতিহ্যবাহী চীনা চিত্রকলা" (Traditional Chinese Painting)। কোর্ট রীতির এ বাঘ প্রদর্শনীর সব ছবিই এঁকেছেন মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের wanggongzhuang গ্রামের কৃষকেরা। বাঘের ডিটেইলের কারণে এই কৃষক-শিল্পীরা ইতোমধ্যে পৃথিবীবিখ্যাত হয়েছেন। এই গ্রামের শিল্পীরা সবচেয়ে বেশি সময় দেন বাঘ ও অন্য প্রাণীর পশম আঁকতে গিয়ে। প্রতিটি বাঘলোম আলাদা করে আঁকতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দিতে হয়। প্রায় তিন মাস সময় যায় এক একটি ছবির পেছনে। এ ছাড়া প্রতিটি ছবিই আলাদা ও তাৎপযপূর্ণ হয়ে উঠতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় পরিবেশ ঠিক থাকছে কিনা। প্রতিটি ছবিরই দায় শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও ভারসাম্যময় হয়ে ওঠা।
এবারের প্রদর্শনীতে ছবির সংখ্যা ৫০। বেঙ্গল শিল্পালয়-এর সৌজন্যে আর্টস-এর ওয়েব গ্যালারিতে তা থেকে ১৯টি ছবি উপস্থাপন করা হলো। প্রদর্শনীর পরেও আর্টস-এর আর্কাইভে ছবিগুলি দেখা যাবে। চিত্রকলার ছবি তুলেছেন ইন্দ্রনীল কিশোর। প্রদর্শনীটি চলবে আগস্টের ১৯ তারিখ পর্যন্ত।
চীনা ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলা বিংশ শতাব্দী থেকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব কাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কোরিয়ায় খুবই আদৃত হচ্ছে। ক্যালিগ্রাফি পদ্ধতি ও বিধৌত জল রঙে করা এ-সব কাজে ঐতিহ্যের মিশ্রণে এক নবধারা সৃষ্টি হয়েছে। লোক-ঐতিহ্যের স্পর্শে এইসব সৃষ্টি শিল্পমূল্য ও সৃজনশীলতায় ভিন্ন মর্যাদার আসনে আজ প্রতিষ্ঠিত। সিল্ক কাপড় ও কাগজে করা এসব কাজে শিল্পীর মনোভঙ্গি খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
এই প্রদর্শনীতে মধ্য চীনের একটি অঞ্চলের সাধারণ গ্রামের লোকশিল্পীদের করা বন্যপ্রাণী বিশেষত বাঘের নানা ভঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ও বিরল কিছু বৃক্ষের উপস্থিতি ছবির পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টিতে খুব আগ্রহ-উদ্দীপক হয়ে উঠেছে। বাঘকে উপজীব্য করে এইসব চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি লাভ করেছে। চীনা বাঘ ছবি বলে এই সৃজনের আলাদা শ্রী ও বৈশিষ্ট্য আছে। সিংহ ও বানরকে অবলম্বন করে অংকিত কয়েকটি কাজও বেশ ভালো। ভিন্নধারার এইসব চিত্র আশা করি দর্শকদের হৃদয়ে দীর্ঘদিন জাগরুক থাকবে।
– বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্
৩.
প্রদর্শনীর ছবি
————————————
ছবির সংখ্যা: ১৯
————————————