শহিদ কবীরের একক চিত্রপ্রদর্শনী, ২০০৮

admin
Published : 9 April 2008, 04:14 AM
Updated : 9 April 2008, 04:14 AM

…….
ভালোবাসা, বোর্ডে এগ টেম্পারা, ৪৬ x ৯২ সেমি
…….
ধানমণ্ডির গ্যালারী চিত্রক-এ (রাস্তা ৪, বাড়ি ২১) ২৯ মার্চ ২০০৮ থেকে শুরু হয়েছে শিল্পী শহিদ কবীরের একক চিত্রপ্রদর্শনী। এটি শিল্পীর ১২তম একক প্রদর্শনী। এর আগে দেশে ২০০১ সালে গ্যালারী চিত্রকেই তার একক প্রদর্শনী হয়েছিল। এবারের প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্থপতি সামসুল ওয়ারেস। প্রদর্শনীর কোনো নাম দেননি শিল্পী। জানালেন নাম দিতে ইচ্ছে করে নাই তাই তিনি নাম দেন নাই। তবে যদি একান্তই নাম দিতে হতো তাহলে দিতেন ‌'‌ও আমার দেশের মাটি'।

প্রদর্শিত ছবি থেকে
ছবি বড় সাইজে দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন।

শহিদ কবীরের জন্ম ১৯৪৯ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শিল্পশিক্ষা শেষে ওই একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৬৯ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে স্পেনের মাদ্রিদে ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট


বিশেষ ভঙ্গিতে শহিদ কবীর

হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর থেকে সেখানেই আছেন । বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন ছাড়াও ১৯৮৪ সালে স্পেনের মাদ্রিদ থেকে carmen arozamena পুরস্কার পান। বিভিন্ন দেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত তিনি টেম্পারা মাধ্যমে কাজ করেন।

১০ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা দর্শকদের জন্য প্রদশর্নী উন্মুক্ত থাকবে। গ্যালারী চিত্রকের সৌজন্যে প্রদর্শনীর ৩৯টি ছবি থেকে ৩২টি ছবি আর্টস-এর ওয়েব গ্যালারীতে উপস্থাপিত হলো। প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পরেও আর্টস আকাইভে আগ্রহী দর্শক প্রদর্শনীটি দেখতে পাবেন।

শহিদ কবীরের চিত্রপ্রদর্শনী উপলক্ষে প্রকাশিত ব্রশিওরে শিল্প-সমালোচক নিসার হোসেন কবীর সম্পর্কে যা লিখেছেন তা এখানে যুক্ত হলো।

পরম সত্যের অন্বীক্ষণ / নিসার হোসেন
শহিদ কবীরের জীবনচর্যা ও শিল্প সাধনা একই সূত্রে গাঁথা। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সম্পূর্ণভাবে প্রথাবিরোধী ও যথেচ্ছাচারী। শৈশব থেকেই তিনি পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতি আর সংস্কারের ঘের ভেঙে নিজ ইচ্ছা-আমিত্বকে লাগামহীনভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন। তবু সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, বেখাপ্পা এবং রুটি-রুজির জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এই বৈশিষ্ট্যটিই শেষ পর্যন্ত তাঁর শৈল্পিক প্রতিভা বিকাশের সহায়ক শক্তি হয়ে তাঁকে এক নিখাদ-জীবনবাদী শিল্পীর অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত করেছে।

এদেশের কলাঙ্গনে কবীরের আবির্ভাব গত শতকের ৭০ এর দশকে, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশেও যখন পরাধীন মানসিকতায় বেড়ে ওঠা ৬০ এর দশকের সেই উচ্চমার্গীয় নির্জীব-বিশুদ্ধ চিত্রভাষারই পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে ঠিক তখনই আচমকা কালবৈশাখী ঝড়ের মতো অপরাহত তারুণ্যের শক্তি নিয়ে নবীন প্রজেন্মের হৃৎশিখাকে উস্কে দিতেই যেন শহিদ কবীরের আত্মপ্রকাশ! আজ তেত্রিশ বছর পরেও তাঁর কাজে এবং আচরণে সেই একই তারুণ্য আর প্রাণশক্তির প্রকাশ দেখে আমরা যারপরনাই মুগ্ধ ও সঞ্জীবিত হই।

কবীরের সাম্প্রতিক কাজগুলোর বেশিরভাগই টেম্পারা মাধ্যমে আঁকা। অতি সূক্ষ্ম কাজের উপযুক্ত এই মাধ্যমটিতেই কবীর তাঁর আসাধারণ শৈল্পিক প্রতিভার স্ফূরণ ঘটিয়ে ৭০-দশকের শেষভাগেই অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। কিন্তু দুর্দম্য জীবনের আহ্বানে বিবাগী এই জাত শিল্পীর মধ্যে সম্ভবত কোনো প্রলোভনেরই পিছুটান নেই অথবা প্রাপ্তির প্রচণ্ড মোহ তাঁকে কোনো কিছুতেই তৃপ্ত হতে দেয় না। এই অতৃপ্তিই যখন তাঁকে রূপ ভেদ করে রূপের অতলে পৌঁছুতে প্রলুব্ধ করে তখন অলংকার প্রসাধনের আভরণ সরিয়ে উদোম চিত্রতলকে রীতিমত ব্যবচ্ছেদ করে চিত্রের পরত-এ পরত-এ তিনি নিজেই যেন বিলীন হয়ে যেতে থাকেন। ফলে নি®প্রাণ জড়বস্তুর প্রতিরূপটিতেও কবীরের নিজ দেহের উত্তাপ আর হৃৎস্পন্দন প্রতিস্থাপিত হয়ে জড়-জঙ্গম, প্রাণ-নিষ্প্রাণ, তুচ্ছ-মহান, সসীম-অসীম, সুন্দর-অসুন্দর ইত্যাদি যাবতীয় স্থূল ভেদাভেদের তত্ত্বগুলোকে অহেতুকে পরিণত করে সমস্ত চিত্রপট জুড়ে এক পরম সত্যের চিরকালীন সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠিত হয়।