আর্টস বৈঠকমেহেরজান বিতর্ক (কিস্তি ৮)

admin
Published : 26 July 2011, 04:07 PM
Updated : 26 July 2011, 04:07 PM

(কিস্তি ৭-এর পর । শেষ কিস্তি))
————-

ফরহাদ মজহার: একটা ছিল রেসিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন অব নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান। মানে, আমরা বাংলাদেশী জাতিরা, আমরা লড়াই করেছি পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে। আমরা এ পর্যন্ত যত উপন্যাস লিখেছি, যত কিছু দেখেছি, আমরা যা শুনলাম একটু আগে—সবই ছিল যে, আমাদের—পাঞ্জাবিরা ধর্ষক, পাকিস্তানিরা ধর্ষক, তারা আমাদের অত্যাচার করেছে, এটা ঔপনিবেশিক এবং ফলে এটা ছিল—এই বয়ানটা একটা রেসিয়াল বয়ান, রেসিজম। এটা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বয়ান হয় নাই। মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে যখন আসবে তখন কিন্তু পিপল্‌সের জায়গা থেকে, যেটা সেলিম ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা করছে, পিপল্‌সের জায়গা থেকে, শ্রমিকের লড়াইটা আগে ছিল। বাংলাদেশ শ্রমিক আন্দোলনগুলো ছিল, আদমজী জুট মিলে শ্রমিকদের বড় আন্দোলন ছিল, কৃষকদের আন্দোলন ছিল। ওই বয়ানের কোনো উপস্থিতিই নাই, আমাদের যে, রেসিয়াল মুক্তিযুদ্ধের যে কথন। মানে আমি আশ্চর্য, যেটা শুনে বিস্মিত হয়েছি, আমি নিজেও এখানে, বলবো যে, হকচকিয়ে যাইতেছি, কথা বলতে ভয় পাচ্ছি, যে, আমরা এখন পর্যন্ত সেভেনটি ওয়ান থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের নন-রেসিয়াল, একটা পিপল্‌স্‌ বয়ান আমরা তৈরি করতে পারিনি।


ভিডিও: মেহেরজান বিতর্ক, শেষ পর্ব

আমরা এখনও বারবারই একটা জাতীয়তাবাদী জীবন—জাতীয়তাবাদে কোনো অসুবিধা নাই আমার। যেটা আমি, আবারো আমি ফাহমিদুলকে কোট, মানে বলতেছি ওর লেখা সম্পর্কে, যে আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজিক এসেনশিয়ালিজম বলে—যে জাতীয় বা জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন করা আর জাতীয়বাদকে সমর্থন করার মধ্যে একটা বড় ধরনের পার্থক্য আছে। জাতীয়বাদ একটা ডেফিনিটলি এইটা রেসিয়াল ইডিয়োলজি, এবং একইসঙ্গে এটা ফ্যাসিজমকে জন্ম দেয়। এটা তার চরিত্রগত লক্ষণ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্টটা আমরা কখনো ডিসওন করব। যেটা আমি মনে করি যে, সেলিমের সঙ্গে বা অন্য সবার সঙ্গে আমি একশ বার একমত। এটা কোনো প্রশ্নই আসে না। সেভেন্টি ওয়ান ইজ এ পয়েন্ট অব ডিপারচার, কারণ সেভেন্টি ওয়ানে আমরা একইসঙ্গে কিন্তু–রেসিয়াল আইডেন্টিটির জায়গা থেকে কিন্তু উতরে যাচ্ছিলাম আমরা। কারণ আমরা এই প্রথম রেসিয়াল এবং কমিউনাল আইডেনটিটির মধ্যে ঢুকছি না, কারণ বাঙালি মুসলমানরা এই প্রথম তাদের কালচারাল আইডেনটিটিকে তারা খুঁজে পাচ্ছে, বাঙালির মধ্যে। কারণ বাঙালি মুসলমানরা এই পর্যন্ত, প্রথমত, ইংরেজি শিখে নাই একশ বছর ইংরেজ শাসনের সময়ে। এর পরবর্তীতে ইংরেজি যখন শিখতে গেছে তখন হয়ে গেছে কমিউনাল। তার পর তার মধ্যে কমিউনাল টেন্ডেন্সি ডেভেলপ করেছে।

এই প্রথম সেভেন্টি ওয়ানের পরে সিক্সটির দিকে আমরা শুরু করলাম, যা আমরা প্রথম আমাদের কমিউনাল জায়গা থেকে–একদিকে আমরা একটা জাতীয় চেতনার দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি, সে জাতীয় চেতনাটার কিন্তু সূত্র এখনো পর্যন্ত ১৯ শতকের নবজাগরণ এবং কলকাতাকেন্দ্রিক আমাদের বুদ্ধিজীবীদের বাঙালির যে সংজ্ঞা, এটা। এই জায়গাটায় আমরা পৌঁছে গেছি, এ কারণে–স্ট্র্যাটেজিক এসেনশিয়ালিজমের যে মানদণ্ডটা আমাদের দরকার ছিল, সেটা ছিল ডেফিনিটলি বাঙালি জাতীয়তাবাদটা, এটা হিস্টরিক্যালি নেসেসারি। আমার আর্গুমেন্টটা হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদটা হিস্টরিক্যালি নেসেসারি স্ট্র্যাটেজিক এসেনশিয়ালিজম। এটা ছাড়া সেভেন্টি ওয়ানে যুদ্ধ করতে পারতেন না। এবং শেখ মুজিবুর রহমান, হিস্টরিক্যালি নেসেসারি এসেনশিয়ালিজম যেভাবে সে ধারণ করতে পেরেছে, বামপন্থি আন্দোলনগুলো এখানে পরাস্ত হয়েছে। যারা মনে করেছেন যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটা মুখ্য নয়, শ্রেণী-আন্দোলনটা মানে আমাদের শ্রেণীসংগ্রামটাই প্রধান। ফলে আমরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন রুখে দাঁড়াবো, তারা টিকে নাই। একমাত্র খোরাসানের বাথ পার্টির থিসিস ছিলো যে—না, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটা প্রধান। তো আমি যেটা মনে করি যে, আমার খালি অ্যাপিলটা হবে এই জায়গাতে, যে, আমরা কবে রেসিজম ত্যাগ করে আসলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা লিখতে পারবো। আমি বলবো যে, আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে, যে, এই…রুবাইয়াতের এই ছবির মধ্য দিয়ে আমাদের রেসিজমের একটা উৎকট প্রকাশ হয়েছে। মানে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আমি বলছি না। বাঙালি চেতনা আপনি শেয়ার করেন আমি শেয়ার করি, হয়তো শ্রেণীগত পার্থক্য থাকতে পারে। {ব্রাত্য রাইসু: এটা কি ছবির মধ্যে, বলতেছেন?} ছবিকে কেন্দ্র করে আমরা যেভাবে ডিসকোর্সটা তৈরি করছি, আমরা যেভাবে আলোচনাটা করছি—আমরা কেউ করতেছি নিঃসন্দেহে অনেক পরিমিত ভাষায়, অনেক পরিমিত জায়গা থেকে, অনেক তত্ত্বগত, জ্ঞানগত জায়গা থেকে…কিন্তু এসেনসিয়ালি, এটা একটা রেসিয়াল বয়ানে কিন্তু পরিণত হচ্ছে। মানে আমরা কিন্তু এখনো দেখতে পারছি না যে, আসলে মুক্তিযুদ্ধের স্ট্রাগলটা কি ছিল, আমরা মুক্তিযুদ্ধে কী চেয়েছিলাম? আমরা ডেফিনিটলি বাংলাদেশ স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম।

কারণ, হোয়াট ওয়াজ ইট? আমরা আসলে, নাইনন্টিন সেভেন্টি ওয়ানের ওয়ারটা একটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল, না মিলিটারি, আপনার, যে ব্যুরোক্র্যাটিক যে স্টেট ছিল, তার বিরুদ্ধে পিপলস-এর একটা ডেমোক্র্যাটিক স্ট্রাগল ছিল? যে স্ট্রাগল আমরা এখন পর্যন্ত কমপ্লিট করতে পারি নাই। আজ ২০১১ সাল পর্যন্ত। এবং আমাদের এখনও পর্যন্ত–দেখা যাইতেছে যে, ওই আড়িয়াল বিলের লোকেরা লাঠি নিয়ে নামতেছে আর পুলিশের সঙ্গে তাদের সংগ্রাম করতে হইতেছে। কয়েকদিন আগে রূপগঞ্জে লড়াই করতে হইতেছে। এটা কমপ্লিটলি অ্যাবসেন্ট। আমি বলছি যে, এই যে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে জাতীয়তাবাদ, এটা এসেনসিয়ালি রেসিস্ট একটা ধারার মধ্যে সে রয়ে গেছে। আমাদের কাজটা হইতেছে এখান থেকে ক্রিটিক করে মুক্তিযুদ্ধের যে প্রগ্রেসিভ, তার যে রেভোল্যুশনারি রেডিক্যাল ক্যারেক্টারটা ছিল–এটাকে সামনে নিয়ে আসা। এবং নিঃসন্দেহে আমি মনে করি যে, রুবাইয়াতের পক্ষে, এমনকি এবাদুর আমি পড়ি নাই, তার পক্ষে এটা ধারণ করা কতটুকু সঠিক, আমি মানে, পারত বা শক্তিশালী কিনা—এটার মধ্যে আরো কয়েকটা জিনিস আমাদের যাবে। তো আমি মনে করি, সেটা আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এবং আমি মনে করি, সেলিমের সাথে আমি ঐ তফাতটা–শুধু ঔপনিবেশিক, কলোনিয়াল ছিল…প্রথম যেই, দেশ ভাগ হইয়া গেছে, ছবির শুরুতে, যে কনটেক্সটা তৈরি করা হয়েছে, তুমি যেটা, এর আগেও বলছিলা মনে হয়, ইট ইজ নট এন্ড অব কলোনিয়ালিজম, ইয়েস, ইট ইজ নট এন্ড অব কলোনিয়ালিজম, বাট ইট ইজ নিউ কলোনিয়ালিজম। মানে আগে যে পলিটিক্যালি যে রুল করত, একটা, কলোনিয়ালিজম যেটা, সেই চরিত্রের মধ্যে এটা নাই, কিন্তু এসেনশিয়ালি একটা কলোনিয়ালিজম এক্সিস্ট করে। যদি কলোনিয়ালিজম এক্সিট করে তাহলে পাকিস্তানি মতাদর্শ এক্সিস্ট করে, বাংলাদেশে। সেটা আমরা যদি, জিন্নাহ এভিনিউকে যখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করি, আমরা একই তো মতাদর্শের চর্চাটা করি। আমরা যখন জাতির জনক জিন্নাহর জায়গায় মুজিবকে বসাই, আমরা একই মতাদর্শ, পাকিস্তানি মতাদর্শ প্র্যাকটিস করি, কিন্তু ভিন্ন খোলসে, মানে ভিন্ন মোড়কে। আমরা যখন, কমিউনালিজম যেটা, মানে রিলিজিয়াস কমিউনালিজমকে যখন আমরা রিজেক্ট করি, কিন্তু রেসিয়াল কমিউনালিজমকে যখন আমরা ধারণ করি, যখন একইসঙ্গে, আমরা যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে আক্রমণ করি, দিনের পর দিন আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা আমরা চালাই—আজকে পর্যন্ত, ২০১১ সাল পর্যন্ত, তখন এটা কি রেসিজম না?

সুমন রহমান: এটা তো, সব বড় জাতীয়তাবাদেরই লক্ষণ এটা।

ফরহাদ মজহার: এটার মধ্যেই তো বসে আছি। আমরা তো এখান থেকে বেরিয়ে যাইনি, আমরা আদৌ। তাহলে আমি মনে করি, কালচারাল জায়গাতে, আমি বলবো যে, সেই জায়গায় এই ছবিটা যেই পসিবিলিটি–যেটা হলো ট্র্যাজেডি এই ছবিটার, যেটা পিয়াস যে কথাটা খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, যেটা আমরা অনেকেই বোধ হয় সেটায় একশোবার একমত—যেই সম্ভাবনাটুকু তার মধ্যে ছিল, ইভেন নারীচরিত্রগুলোর মধ্যে পসিবিলিটি ছিলো, সম্ভাবনাটুকু আমরা একদমই আনছি। এমনকি—ইভেন, ওই যে, যেটাকে (আমরা) ম্যাজিক রিয়ালিজম হইছে কি হয় নাই—সে তর্ক আমরা বাদ দিলেও, সে প্রশ্নে না গেলেও, আমি বললাম যে, ফর্টি সেভেনে একটা দাঙ্গার সময় একটা বাচ্চাকে, তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছিল–তার যে ট্রমা এবং সে ট্রমার যে এক্সপ্রেশন কী হতে পারে, ঠিক আছে না, এটা কিন্তু আমরা খেয়াল করি নাই–ছবিতে স্টাবলিস্‌ড্‌ হয় নাই–কিন্তু আমরা দেখতেছি যে, আমরা, সমালোচনাটা হইতেছে কিন্তু ওই–, মানে ছবিটা এত বেশি বড় ক্যানভাস ধরতে গেছে, যেখানে তার ধরবার হয়তোবা সামর্থ্য তার মধ্যে ছিল না। কিন্তু ওই ক্যানভাসটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং ক্যানভাস ছিলো। আমি বলবো যে, যথেষ্ট পসিবিলিটি ছিলো।

সুমন রহমান: আমারো বক্তব্য সেটাই ছিলো। আমার মনে হয়েছে যে ক্যানভাসটা ইন্টারেস্টিং এবং…। আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আর কি–সেটা হচ্ছে যে, আপনি যে বললেন মধ্যবিত্ত জাতীয়তাবাদী যে চিন্তা, তার মধ্যে আমরা ক্রিটিক্যাল থাকব, এই যে, আমাদেরকে ক্রিটিক্যাল থাকার স্পেসটা কে করে দিবে?

ফরহাদ মজহার: আমাদেরই করতে হবে। সেটা তো আহমদ ছফা করেছে। তাকে তো মৌলবাদী গালি শুনে মরতে হয়েছে। আমরা ভুলে যাব না কিন্তু? তাকে তো হিন্দুবিদ্বেষী বলে তাকে মরতে হয়েছে। আমরা যদি ভুলি না যাই ওটা, যে আমরা বলতেছি যে, আমরা তো দেখেছি সেভেন্টি ওয়ান থেকে এটাকে ফেস করতে হয়েছে আমাদেরকে। ফেস করার ক্ষেত্রে যেখানে সেলিম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেটা বলেছে, সেটা হচ্ছে যে, সেভেন্টি ওয়ানকে তো আমাকে ওউন করতে হবে, আমার মতো। আমার মতো মানে পিপলসের জায়গা থেকে ওন করতে হবে। তার একটা ক্লাস-চরিত্র থাকবে, তার একটা এন্টি-প্যাট্রিয়াক্যাল চরিত্র তার থাকবে, ডেফিনিটলি; সেখানে আমরা তো রাতারাতি পুরুষতন্ত্র কাটিয়ে উঠতে পারছি না। তাহলে সেভেন্টি ওয়ানের মধ্যে পুরো মাত্রায় যে আপনার পুরুষতন্ত্র ছিল না, তা নয়; আমরা যে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একবার, সে বহু বছর আগে—তখন কেউ কথা বলত না, তখন নারী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে আমরা তখন প্রথম কথা বলা শুরু করি। ডিসকোর্সটাতো আপনারা শুরু করবেন, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।

সলিমুল্লাহ খান: আমি একটু এই বিষয়ে…টিপ্পনি একটা। ফ্রাঞ্জ ফানোর বইটার নাম নিতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম—ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্ক। এটার শুরুতে উনি বলছেন, আজকে আমি মনে করি, উনি বলছেন, ভালোবাসা সম্ভব, তাই আমি এই বইটা লিখছি। মানে ইন্টাররেসিয়াল লাভ ইজ পসিবল, দ্যাটস হোয়াই আই অ্যাম রাইটিং। এটা হচ্ছে ফ্রাঞ্জ ফানোর বইয়ের ভূমিকায় বলছে, কিন্তু ভেতরে উনি বলছেন, তাদের লাভের যে বিকৃতি, যে পচন ধরেছে আমি তাই এক্সপোজ করছি। একটা ভদ্রমহিলা–শুধু সাদা লোক ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না, আবার কালো ছেলেরা সাদা মেয়ে ছাড়া কারো সাথে সে শোবে না। এই যে পণ করা, উনি বলেন এটা হলো লাভের বিকৃতি। তা হলে মানুষ যেন মানুষ হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, এইটা আমরা কথায় কথায় মুখস্থ বলি–এই ক্লিশে কথাটা উনি ব্যবহার করছেন–সেইটা আমি চাই। তাহলে সেটা চাইলে কতগুলো পূর্বশর্ত আগে পূরণ করতে হবে। তাই আমি বলছি এই জন্য যে জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এক জিনিস না। ফরহাদ ভাই এটা ঠিকই বলেছেন। আমি শুধু একটু উদাহরণ দিচ্ছি স্পষ্ট করার জন্য। ধরেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ফ্রান্স দখল করে ফেলল জার্মানি। তখন ফ্রান্সের কলোনি ছিল মার্তিনিক দ্বীপে, সেখান থেকে কয়েকজন যুবক—ফ্রাঞ্জ ফানো তাদের একজন–তারা বলল কি, আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেব। মানে আমরা ফ্রান্সকে মুক্ত করব জার্মানির হাত থেকে। তারা যুদ্ধে চলে গেল। '৪৩ সন হইছে তখন যাইতে যাইতে। যুদ্ধ করে তারা যখন দেশ স্বাধীন হল। তখন দেখে কি তাদেরকে, রেস হিসেবে পাছায় লাথি মারে সাদা সৈন্যরা, ফরাসি সাদা সৈন্যরাই। তখন, সে বলে কি–ওমা! আমি যার বিরুদ্ধে লড়লাম—হিটলার তো অ্যালাইভ এখানে, আমার পার্টির ভিতরেই! তখন সে বাড়িতে চলে আসল। বাড়িতে এসে ইলেকশন-টিলেকশন করল। তারপর আবার ফ্রান্সে পড়তে গেল। সেখানেও দেখি একই রেসিজমের শিকার। তখন শেষ পর্যন্ত সে একজন ডাক্তার হলো, আলজেরিয়ায় গেল। ওমা! আলজেরিয়ায়ও দেখে সেই ফরাসিরা, সেখানে রেসিজম চালাইতেছে। বলে যেই আদর্শের জন্য, যে হিটলারকে পরাস্ত করার জন্য আমি লড়াই করেছিলাম, তাহলে আমি কি ভুল করেছিলাম? আমি তো ফরাসি, রেসিস্ট বাহিনীর একজন সৈন্য আমি। আমি ফরাসিদের ত্যাগ করব। তখন তিনি আলজেরিয়ার পক্ষে চলে গেলেন যুদ্ধে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ, একজন ইন্ডিভিজুয়ালের দৃষ্টিকোণ থেকেও রেসিজমকে কীভাবে দেখা যায় এবং তার বিরুদ্ধে তিনি রিয়্যাক্ট করেন, আলজেরিয়ার সংগ্রামটাকে উনি বলেছেন, জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম। তার নিজের দেশ যে—মার্তিনিক, সেখানে সবাই ফরাসিদের কাছে মিউমিউ ভাবে আছে, সেখানে উনি একমত হলেন না তার স্বদেশবাসীর সাথে। অর্থাৎ মার্তিনিকে থেকে ফরাসিদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। তিনি ডাক্তার ছিলেন। চাকরিসূত্রে গিয়েছিলেন আলজেরিয়ায়। সেখান থেকে তিনি আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যোগ দিলেন। তাদের পত্রিকার সম্পাদক হলেন এবং তাদের অ্যাম্বাসাডর হলেন, মারা গেলেন যুদ্ধে, অসুখে। আমরা এইটুকু তার জীবনকাহিনী জানি। তো এখান থেকে আমি কি লেসনটা নিতে পারি বাংলাদেশের জন্য। আমি বলি যে, ফ্যাঞ্জ ফানো হচ্ছেন একজন অসাধারণ রেইসমুক্ত লোক। তিনি একজন ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেছিলেন যিনি ফ্রান্সের নাগরিক এবং ঘটনাচক্রে তার গায়ের চামড়া সাদা।

ব্রাত্য রাইসু: ও, উনি চান নাই যে আর কোনো কালো লোক সাদা মেয়েকে বিয়ে করুক।

সলিমুল্লাহ খান: নো, নো, উনি সেটা চান নাই…উনি চান নাই মানে–বিয়ে করা যায়, কিন্তু সাদা ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না, এটা রেসিজমের সীমা লঙ্ঘন করে।

আচ্ছা যা হোক। জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম এবং জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুরুতর পার্থক্যের মধ্যে একটা জিনিস হচ্ছে, আপনি জানেন যে আমাদের দেশে শুধু নয়, কোরিয়াতে যুদ্ধের সময় জাপানিরা এরকম বহু বাচ্চাই তৈরি করে গেছে। মানে পৃথিবীতে যতো…আমি বলবো যে–কলোনিয়াল ওয়ার কিনা, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে আমি একটু, মানে মৃদুভাবেই বলব, সবিনয়ে দ্বিমত করব যে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অ্যাপারেন্টলি ছিল–আমরা লাহোর প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে সমস্ত এলাকায় মুসলিম জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের নিয়ে আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হবে। আলাদা রাষ্ট্র না করে আমরা এক রাষ্ট্রই করলাম, তাতে আমাদের মধ্যে একটা ইক্যুয়াল পার্টনারশিপের কথা থিওরিতে ছিল, যেটা ওই খাজা সাহেবও বলেন। কিন্তু বাস্তবে, এর পরে দেখা গেল প্রত্যেকেটা কাজেই শেখ সাহেবের বক্তৃতা যখন বলি—৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষণে কী আছে, ১৯৫৪ সনে আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করেও ক্ষমতায় যেতে পারি নাই। এতেই বোঝা যায়, এটা যদি আপনারা রিপ্রেজেন্টেশন ধরেন, আমাদের পাকিস্তানিদের সম্পর্কটা ছিল–আমি বলব, একরৈখিক। এখন রেসিজম কথাটা, আমি ফরহাদ ভাইকে ফেরত দিচ্ছি। কথাটা কী? হত্যা, আল মাহমুদ বলেছেন, শুধু হত্যা ডেকে আনে, আমি বলি, রেসিজম শুধু রেসিজম ডেকে আনে। বাঙালিদের মধ্যে যে রেসিজম–সেটা কালোদের মধ্যে যে রেসিজম দেখা যায়, যেটার নিন্দা ফ্রাঞ্জ ফানো করেছেন–নেগ্রিচুডকে উনি প্রথমে খুবই নিন্দা করেছেন। নেগ্রিচুডকে উনি প্রথমে খুবই নিন্দা করেছেন। নেগ্রিচুডকে সার্ত্র বলেছেন কি–এটা হলো কালোদের রেসিজম। অ্যান্টি কলোনিয়াল, মানে অ্যান্টি রেসিস্ট রেসিজম।


মেহেরজান সিনেমার পোস্টার

আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা হুমায়ুন আজাদ প্রভৃতি এবং আরো হুমায়ুন আজাদ এত লোকদের মধ্যে আছে, কিন্তু তার চেয়েও আশরাফ লোক যারা, তাদের মধ্যেও আছে। যেটা ফরহাদ ভাই বলছেন, অনেক সফিস্টিকেটদের মধ্যেও আছে। কিন্তু আমাদের সেটা অতিক্রম করার আগে চিনতে হবে, রেসিজমের স্বরূপটা কী? আপনি তাই বলে এই বলবেন যে, যে কোনো মূল্যে আমি প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণ করব, পাছে রেসিজম হয়! আমার প্রশ্ন, পশ্চিম পাকিস্তানিদের আমরা যারা ঘৃণা করছি, পাঞ্জাবি বলে, আমরা তাদের ঘৃণা করবো; কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে ঐতিহাসিক অন্যায়টা করেছে সেটা রিড্রেস করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং এখনো সেই রিড্রেসটা হয় নি। ঐতিহাসিকভাবে হয় নি। এমনকি পাকিস্তানি রুলিং ক্লাসের পক্ষ থেকে তার কোনো রকমের স্বীকৃতি পাওয়া যায় নাই। পাকিস্তানি জনগণ কী হয়েছে, সেটা হলো আলাদা কথা। আমরা পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজনকেই ডিস্টিংগুইস করতে পারি—একবাল আহম্মেদ, যিনি বিদেশে ছিলেন এবং যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেকখানি করেছেন। ফয়েজ আহমদ ফয়েজরা কবিতা লিখেছেন। আমি পাকিস্তানি ইন্ডিভিজুয়াল যাদেরকে বলছি, তারাও আমাদের মতো সেখানে সংখ্যালঘু। তা থেকে আমি বলব, মুক্তিযুদ্ধের যে ঐতিহাসিক বিবরণটা আমরা এখন দিলাম যে, এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশেও বহুত শ্রেণী ছিল, পাকিস্তানেও বহুত শ্রেণী ছিল। কাজেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ না বলে আমি বলব যে, পাকিস্তান রুলিং ক্লাস এখানে একটা রেসিস্ট ধরনের কলোনিয়াল শাসন করেছিল। এটা আমার বন্ধু পিয়াসের সাথে দ্বিমত করেই বলছি সবিনয়ে, আমি ঠিক রেসিস্ট মনে করি, আপনি মনে নাও করতে পারেন। অ্যাট লিস্ট আমি বলব, রেসিজমের উপাদান এখানে আছে। তার একটা উদাহরণ হচ্ছে, আমি যে কথা বলছি, 'দ্য এলিমেন্ট অব রেপ, দ্য এলিমেন্ট অব কিলিং। ঢাকাতে যখন আলোচনা ফেল করল তখন একরাতে আটশ ইপিআরকে মারল, রাজারবাগ পুলিশে হামলা করল। এগুলো তো মিলিটিরি রিভোল্ট দমনের ঘটনা নয়, ইট ইজ নট এ পিয়োর মিলিটারি রিভোল্ট। আপনাদের শুধু একটা কথা মনে করিয়ে আমি শেষ করি। ১৮৫৭ সনের যুদ্ধ যখন শুরু হলো, আপনারা অনেকেই জানেন, এটাকে সিপাহিযুদ্ধ বলা হয়, সিপাহিযুদ্ধ বলে। লক্ষ করবেন, ইংরেজরা প্রথম যে বইগুলো লিখেছে, প্রথম মানে প্রথম ৬ বছর–একটাতেও সিপাহিবিদ্রোহ বলে নাই, নাম ছিল ইন্ডিয়ান রিভোল্ট। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে বেঞ্জামিন… বলেছেন, এটা ন্যাশনাল রিভোল্ট, সেটাই কার্ল মার্কস উদ্ধৃত করেছে তার লেখায়। কিন্তু জর্জ ডড বলে একটা লোক ছিল। সেই ডডের একটা বই বেরিয়েছে। নাম হচ্ছে হিস্টরি অব দ্য ইন্ডিয়ান রিভোল্ট। তার চার বছর পরে, যার বই আমরা এখন পড়ি, জন কে, বলে—কে-এ-ওয়াই-ই। এই ভদ্রলোক তিন খণ্ডে বলেছেন, তিনি নাম দিছেন প্রথম 'হিস্টরি অব দি সেপাই ওয়ার'। তাহলে যুদ্ধকে ভারতীয় না বলে সেপাইদের যুদ্ধে পর্যবসিত করার মধ্যে একটা মতলব আছে। কাজেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে এটাই আমার শেষ পয়েন্ট– ওয়াসিম সম্বন্ধে যে কথা হচ্ছে, ওয়াসিম একজন ইন্ডিভিজুয়াল এটা সত্য, আমরা সকলেই ইন্ডিভিজুয়াল। কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল হিসেবে আমরা একমাত্রিক নই।

আমি হয় পুরুষ অথবা নারী, আমি তো শুধুমাত্র ইন্ডিভিজুয়াল নই, তাই না? আমার চামড়া কালো অথবা সাদা; আমি লেখাপড়া করেছি, অথবা করি নাই–আমর নানা রকমের এলিমেন্ট যুক্ত। আল্লার যেমন নিরানব্বই সিফত, আমাদের, মানুষের নয় সিফত, আমরা নানা পরিচয়ে পরিচিত। ওয়াসিমের অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে হি ইজ এ ডেজার্টার ফ্রম দ্য পাকিস্তান আর্মি, ট্রু। বাট হি ওয়াজ অলসো এ সোলজার। সালমা যখন বলে, আমারে একটা সৈন্য এনে দাও। আমি সৈন্য বিয়ে করবো। এখানে এটা ফ্যাসিজম নয়, এটা ফ্যাসিনেসনিজম। সৈন্য নিয়ে একটা ফ্যাসিনেশন আছে, তাই না। ফ্যাসিস্টের কাছাকাছি কিন্তু এইটা, শব্দের দিক থেইকা আর কি। তো এই যে বন্ধন—সৈন্যের সাথে প্রেমে পড়া, অনেক বাঙালি রি-অ্যাক্ট করেছে। শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানির প্রেমে পড়া নয়। মনে করেন, আজকে যদি ইউরোপে অথবা আমেরিকায় একটা পাকিস্তানি লোকের সাথে বাঙালি মেয়ে বিয়ে করে, অনেকে রিঅ্যাক্ট করবে। অনেকে অনার কিলিং করে যে তুমি কেন একটা অমুসলিকে বিয়ে করবা? সেগুলি আছে, আমাদের বাংলাদেশে সেটা নাই আমি বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু যে যুদ্ধের কনফ্লিক্ট কনটেক্সটে প্রেমটা হইছে, তাতে মানুষের রি-অ্যাকশন হওয়াটা স্বাভাবিক। হি ইজ এ সোলজার, হু কেম অ্যাজ এ পার্ট অব দ্য ইনভেডিং আর্মি। আমরা যেমন 'ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গি এল দেশে'—সে তো বর্গির অংশ হিসেবে এসেছে। সে কেন ডেজার্টার হইছে তার কারণটা স্পষ্ট হয় নাই? সে বলছে কি, আমি মসজিদে গুলি করতে পারব না। সেইজন্য তাকে কোর্ট মার্শাল করতে চেয়েছে। কোর্ট মার্শাল থেকে পালাবার জন্যে সে জঙ্গলে এসে আশ্রয় করছে। তাকে, উপন্যাসে আছে, আবারো উপন্যাসের কথা বলছি, উপন্যাসে পরিষ্কার, তাকে বাঙালিরা বন্দি করেছে। এবং তিন বাঙালি সৈন্য গাঁজা খাইয়া বিভোর হইছে, তখন সে পালায় আসছে। তারপর তার সঙ্গে দেখা হয়। কাজেই আপনাদের সাব-টেক্সট এবং টেক্সট মিলাইতে হবে। আমি বলছি কি, ওয়াসিম ইজ নট অ্যান ইন্ডিভিজুয়াল অ্যালোন। হি ইজ অ্যান ইন্ডিভিজুয়াল। হি রিপ্রেজেন্টস দ্য ইনভেডিং আর্মি। কাজেই এ ডেজার্টার ইভেন, হি ইজ ফ্রম দি ইনভেডিং আর্মি। মানে হি ইজ এ ডেজার্টার, হি ইজ স্টিল অ্যান ইনভেডিং আর্মি। এইগুলো পারসিভ করাটা, আমি মনে করি যে, খুব একটা কোনো অসুস্থতা নয়।

ফরহাদ মজহার: না, ঠিক আছে, আমি…তোমার সাথে অবশ্য এইখানে আমার মতপার্থক্য আছে লেটস লিমিট অ্যাট দ্যাট পয়েন্ট। আমি বলি যে আপনার, ওয়াসিম ক্যারেক্টারটা আসছে, যেটা করার চেষ্টা হচ্ছে—যেহেতু ক্যারেক্টার স্টাবলিশড হয় নাই, ফলে আনফরচুনেটলি তোমার ইন্টারপ্রিটেসনটাই কারেক্ট। যদি সে স্টাবলিশড হইতো, আজকে ভিন্ন একটা ইন্টারপ্রিটেসনে আমরা যেতাম, কিন্তু আমাদের মূল যেটা আমি মনে করি, সেটা হলো যে, যদি এই ওয়াসিম যদি সিম্বলাইজ করত রেসিজম, তাহলে হতো কী–ওয়াসিম বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের একটা নেতা হইত। দ্যাটস হাউ, রেসিজম ফাংশনস টু শো, যে আলটিমেটলি আমরা যে কলোনিয়াল যে মাস্টারের যে প্রতিনিধি সেই নিপীড়িতের মুক্তিদাতা হয়ে দাঁড়ায়। রেসিজমের (এটা) ডিসকোর্সে এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কিন্তু এটা এখানে দেখি নাই। আমরা এটার মধ্যে এই রেসিজমের ব্যাপারটা আমরা দেখি নাই। আমরা দেখছি যে, একটা সিম্পলি একটা হেল্পলেস লোক, মানে আমার দিক থেকে দেখার দিকটা। হেল্পলেস এ ডেজার্টার; ফলে আমি তাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নেব–সব ফ্যাক্ট ছবির, কিন্তু অ্যাট দ্য সেইম টাইম, আমরা এত কিছু হওয়ার পরেও কিন্তু আমরা ওয়াসিমের এই পাকিস্তানি চরিত্রটা, বালুচ হওয়ার চরিত্রটা কিন্তু আমরা বাঙালিরা কিন্তু বাদ দিই নাই।

সুমন রহমান: মানে সে যে বেলুচি সেটা বিবেচনা করার মতো আমরা…

ফরহাদ মজহার: না, আমরা কিছু–সেটা বিবেচনা করতে আমরা রাজি না, এটা তখনই পাকিস্তানি প্রোপাগান্ডার একটা ছবি হয়ে যায়।

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা ফরহাদ ভাই, এখানে বিখ্যাত—মানে আপনাকে আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি শুধুমাত্র, হেগেলের নামে একটি কথা চালু আছে, অল কাউজ লুক ব্ল্যাক ইন দ্য নাইট অব আওয়ার ইগনোর‌্যান্স বা ডার্কনেস। রাত্রিবেলা সব কালো দেখায় গাভীকে; চিত্রাগাভী এবং লালগাভী, কালোগাভী-সব কালো দেখায়। এটা তো আমাদের পরিস্থিতির একটা দ্বন্দ্ব। আমি সেইজন্য না বলে আমি বলতেছি, তাকে, হি ইজ এ পার্ট অব অ্যান আর্মি। হি হ্যাজ বিকাম এ ডেজার্টার ভেরি লেটলি এবং তার ব্যক্তিগত মহত্ত্বটা তো বোঝা যাচ্ছে, এই জন্য অনেকে আপত্তি তুলছে–তাকে যে মহত্ত্বটা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ইকুইভ্যালেন্ট, আর একটা কোনো বাঙালিকে, আমরা কিন্তু…(চরিত্র দেখি নাই)। এখানে সেক্সিজম কীভাবে আসছে দেখেন। যদি ডেজার্টার আর্মির একটা মেয়ের সাথে বাংলাদেশের আরেকটা ছেলে প্রেম করত, মানুষ কোনো রি-অ্যাক্ট করত না কিন্তু। ন্যাশনালিস্ট ডিসকোর্সের মধ্যে সেক্স ইজ এ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট এলিমেন্ট। যদি কোনো জাতির মেয়ে অন্য ছেলের প্রেমে পরে তখন ইকুয়ালি দেখা হয় না। সর্বত্র কিন্তু, সে যদি পাকিস্তানি ছেলে না হয়ে পাকিস্তানি মেয়ে হতো, ক্যান ইউ ইমাজিন দ্যাট? তাতেও অনেকে আপত্তি করত, অনেকে আপত্তি করত, কিন্তু সে আপত্তিটা এরকম ভিরুলেন্ট হতো না আর।

ব্রাত্য রাইসু: আচ্ছা আমি একটা জিনিস– সেটা হলো যে, যদি পাকিস্তানি আর্মিটা মসজিদে গুলি করতে যে রাজি হয় নাই, সেই রকম না হয়ে আসলেই সে পাকিস্তানি আর্মি এবং যে বাঙালি সৈন্য খুন করে, সেরকম পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে যদি মেয়েটা প্রেমে পড়ত, তাইলে কি এই ছবিটাকে নিষিদ্ধ করা যাইত কি না?

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আজকে যদি বাংলাদেশের কিছু লোক, মনে করেন, ঠাকুরগাঁয়ে দাঁড়াইয়া একটা ফ্ল্যাগ তুলে বলে কি যে, আমরা আবার পাকিস্তানে যোগ দেব, তাকে কি নিষিদ্ধ করা যাবে কিনা, ফ্ল্যাগ তুলতে, আপনি কি বলেন?

পিয়াস করিম: এটা তো একই ঘটনা না।

সলিমুল্লাহ খান: নো, আমি তাকে বলছি যে, আপনি তাহলে এটার উত্তর যদি 'হা' বা 'না' দিবেন, তাহলে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন 'হা' বা 'না'।

ফরহাদ মজহার: (অস্পষ্ট) তারা পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ নিয়ে বলতেছে যে তারা পাকিস্তানে যোগ দিতে চায়।

সলিমুল্লাহ খান: যদি কেউ চায়, আপনি তো–তার গণতান্ত্রিক অধিকার, বলতেই তো পারেন আপনি।

তাহলে আপনি, এটা ডিসকোর্স, ডিফারেন্স করছেন, এইটা আর্ট, ওটা হলো রিয়াল। তো আপনি রিয়াল অ্যালাউ করবেন না, কিন্তু আর্ট অ্যালাউ করবেন। আমার কথা হচ্ছে, আর্ট স্বাধীন এবং স্বয়ম্ভু, কিন্তু আর্ট সম্পূর্ণভাবে সত্যের দায় থেকে মুক্ত কিনা। এই প্রশ্নের উত্তর আমি–আগে আমি বলেছিলাম। 'হ্যাঁ' বললে ঠিক আছে। তাহলে আপনার নিষিদ্ধ করার দরকার নাই?

ব্রাত্য রাইসু: দুটো এক করে আমি দেখতেছি না।

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা, আপনি না দেখেন, আমি মনে করি যে দায়মুক্ত হতে পারে না।

পিয়াস করিম: আমি বলি একটু, ওই ডিসকোর্স–এখানে নারীরা বলতে পারে, শুধু পুরুষরাই কথা বলছে, আমরা বলছি না! কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে ব্যক্তিচরিত্র, ইন্ডিভিজুয়াল তো খুব একটা কমপ্লেক্স ব্যাপার, আপনি তো স্বীকার করবেন, আপনি তো সাইকো-অ্যানালিসিসের লোক। ফলে এই ওয়াসিমের পুরো ব্যক্তিচরিত্রটাকে শুধুমাত্র ইনভেডিং আর্মির সদস্য, ওখানে রিডিউস করা যায় কিনা। কিন্তু আরো অনেক মাত্রা আছে, যে মাত্রাগুলো…

সলিমুলাহ খান: আমি রিডিউস করি নাই তো, আমি বলছি যে ওটাকে ইগনোরও করা যাবে না। দ্যাট মাস্ট বি ইনক্লুডেড ইন দি হোল পিকচার।

পিয়াস করিম: ওইদিকটা থেকে আমি ফরহাদ ভাইয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে, তারপরও আমরা ক্ষমা করতে পারছি না। কিন্তু আমি, একটা কথা বলে আমি সেলিম এবং ফরহাদ ভাই-দুজনেরই গাল শুনব, এবং সম্ভবতঃ ফাহমিদুল এবং সুমনেরও গাল শুনব। সেটা হচ্ছে যে, আমি খুব সচেতন যে এখনকার কালচারাল স্টাডিজ, ক্রিটিক্যাল থিওরি ডিসকোর্সে ন্যাশনালিজম একটা গালি। মানে কারও অত্যন্ত চামড়া মোটা না হলে কেউ নিজেকে এখন আর ন্যাশনালিস্ট দাবি করে না। তো আমার বন্ধু আজম ওখানে বসে আছে যে আলপটকা বলে ফ্যালে—ও ন্যাশনালিস্ট। তো আমি বলি কী যে, আমি কিন্তু, আমাকে যদি কেউ ন্যাশনালিস্ট বলে তো আমি খুব রাগ করি না। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে, ন্যাশনালিজমের একটা ঐতিহাসিক লিবারেটিং একটা ট্র্যাডিশন আছে। এবং অনেক ক্যাপিটালিস্ট ন্যাশনালিজমের আর আমাদের মতো প্রান্তিক দেশের ন্যাশনালিজমের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি। ফলে, ন্যাশনালিজমের দুটো ফেস আছে অ্যাট লিস্ট। প্রোবাবলি দেয়ার আর…আমি ন্যাশনালিজমের—বাংলাদেশী বলি না বাঙালি বলি, সেটা আরেক বিতর্ক—কিন্তু ন্যাশনালিজমের একটা পার্টিকুলার ট্র্যাডিশনকে ধারণ করতে আমি খুব লজ্জিত হই না আর কি। যেই–অশ্লীল, ভালগার তর্কগুলো হয়েছে, আমি ব্লগে পড়ে দেখেছি, আমার কথা হচ্ছে, সেগুলোকে আমি মনে করি না, অর হুমায়ুন আজাদের, মানে আমি আপনার (স.খা) সঙ্গে একমত—হুমায়ুন আজাদের লেখা হোয়াইট ট্র্যাশ। আমি মনে করি না যে, দ্যাট রিপ্রেজেন্টস, হুমায়ুন আজাদের লেখা, রিপ্রেজেন্ট দ্য বেস্ট পসিবল ট্র্যাডিশন অব থার্ড ওয়ার্ল্ড ন্যাশনালিজম। আমার কাছে এখনো মনে হয় যে, থার্ড ওয়ার্ল্ড রেভোলিউশনে ন্যাশনালিজমের একটা ব্যাপার বলা যায়-হুইচ ইজ এ ভেরি ট্র্যানজিশনাল ফেনোমেনা। একটা সময় এটা অতিক্রম করে যেতে হবে নিজেকে। এবং এই ন্যাশলিজমের সঙ্গে সম্ভাব্য আমাদের এখানে ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ইট উইল হ্যাভ ইটস্ আগলি ফেসেস, যেটাকে আমাদের প্রতিরোধ তো করতে হবে, রেজিস্ট করতে হবে। কিন্তু ন্যাশনালিজমের বোধহয় একটা লিবারেটিং আসপেক্ট আছে।

ফরহাদ মজহার: আমি এর বিরুদ্ধে নই, আপনার সাথে আমার অমত নাই। কারণ আমি এটা–ওই পার্থক্যের মধ্যে কিন্তু পড়ে যায়। ন্যাশনাল লিবারেশন এবং ন্যাশনালিজমের ইডিওলজি দুটোর মধ্যে যে পার্থক্য। ন্যাশনালিজমের নিজস্ব ইডিওলজি আছে, কারণ আমরা তো আমাদের ভাষার মধ্যে বাস করি, হিস্ট্রির মধ্যে বাস করি। ন্যাশনালিজ থেকে কখনোই মুক্ত হবেন না আপনি। কিন্তু যেটা হলো যে, সেভেন্টি ওয়ানের যে ন্যাশনালিজমটা আপনার, এর যে বয়ান, আমরা যেটা দেখি–২০১১ সালে এসে আমরা দেখছি যে, এই বয়ানটা কারা অ্যাপ্রোপ্রিয়েট করতেছে। করতেছে গ্রামীণ ব্যাংক, করতেছে বাংলালিংক, করতেছে করপোরেশনস্, ঠিক আছে না? তার মানে, এখন আমরা যে ন্যাশনালিজম, ক্রিটিকটা করলাম আমি একটু আগে, এটা কিন্তু আপনার ন্যাশনালিজম না, এটা আমার ন্যাশনালিজম না। কারণ, তাহলে আপনি যদি ইম্পেরিয়ালিজমের বিরুদ্ধে লড়তে চান, আপনার গ্লোবাল বিভিন্ন রকম রেসিস্ট যে টেন্ডেন্সিসগুলো আছে বা ইসলামোফোবিয়া, যেটা আপনার ফাংশান করে, এটার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে কিন্তু ন্যাশনালিজম আপনার লাগবে। আপনাকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে একইসঙ্গে যে, আপনি ইসলামোফোবিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়া আপনি যেন আবার একটা, রাইট উয়িং একটা কমিউনাল পলিটিক্সের মধ্যে না যান। আরেক ধরনের পলিটিক্সের আইডিওলজির মধ্যে যেন না ঢোকেন। মানে আমরা বলতেছি যে–জেনারেলি আমরা বলতে পারি যে, একটা আত্মপরিচয়ের যে নির্মাণটা আমরা করি রেসিয়াল লাইনে, এটা যেমন আমাদের ত্যাগ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তার সঙ্গে সঙ্গে এই বর্তমান সময়ে, কলোনিয়াল সময়ের পরে, এখনকার যে গ্লোবাল, আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা বাস করি তার, বেঁচে থাকার জন্য, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসাবে আমাদেরই কিন্তু আরেকটা বয়ান দরকার, যেটা কিনা গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলালিংকের বয়ান না। এটা আমরা তৈরি করতে পারব তখনই, যদি আমরা এই রেসিজমটাকে কবর দিতে পারি। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে ওই জায়গাটাতে যে, ২০১১ সাল পর্যন্ত আমরা ওইটাকে পারি নাই।

পিয়াস করিম: মানে আমি একমত আপনার সঙ্গে। এক ধরনের ন্যাশনালিস্ট থেকে আরেক ধরনের ন্যাশনালিস্ট হওয়া সম্ভব বলে মনে করি। এটা নিয়ে তর্ক হতেই পারে।

ব্রাত্য রাইসু: আচ্ছা, আমি ফৌজিয়ার কাছ থেকে–আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করব, তুমি নারী সদস্য হওয়ার কারণে। {পিয়াস করিম: এটা কিন্তু ওমেনিজম হয়ে গেলো।} যেকোনো ইজমের মধ্যেই পড়ুক, সেটা হলো যে, আমি যেটা শুনলাম যে বীরাঙ্গনা চরিত্রকে স্লিভলেস ব্লাউজ পরানোর কারণে রুবাইয়াত সমালোচিত হইছে। এটার ব্যাপারে তোমার অবস্থান কী?

ফৌজিয়া খান: আমার অবস্থান খুবই সিম্পল এবং পরিষ্কার, যেটা আমি আমার, আমি এটা বলেছিলাম আমার আলোচনায়। {ব্রাত্য রাইসু: তুমি এখন অন্যরকমও বলতে পার} না, সেই একই আর কি, যে, আমি সেভেন্টি ওয়ানের যা কিছু ইমেজেস দেখেছি, আর্কাইভ্যাল ইয়েতে, সেখানে—মানে শুধু মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক ইমেজ, সেটা না, সেই সময়কার যা কিছু দেখেছি, সেখানে আমি এই ধরনের স্লিভলেস ব্লাউজ দেখি নাই।

ব্রাত্য রাইসু: তুমি তো এখনো দেখাইতে চাচ্ছ না স্লিভলেস?

ফৌজিয়া খান: না না না, ইট'স নট দ্যাট, যে, আমি স্লিভলেস ব্লাউজ পরা মেয়েকে দেখাইতে চাই না। ইট'স নট মাই স্ট্যান্ড পয়েন্ট। আমার কথা হচ্ছে যে, আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই বলেছিলাম যে–আমি একটা রিয়্যালিস্টিক ন্যারেটিভের চলচ্চিত্র বানাই এবং সেখানে হিস্টোরিক্যাল একটা ঘটনাকে—ফরহাদ ভাই হয়তো আবার জিজ্ঞেস করবেন–হোয়াট ইজ…ইউ কল্ড অ্যাজ এ পরিপ্রেক্ষিত? আমার কাহিনীর ভিত্তিভূমি যখন সেভেন্টি ওয়ান থাকে, সেভেন্টি ওয়ানের মতোন মুক্তিযুদ্ধ, সেই ঐতিহাসিক ঘটনা, তার মানে ওই সময়কে আমার রিপ্রেজেন্ট করার ব্যাপার আছে।


মেহেরজান থেকে: স্লিভলেস ব্লাউজ পরে বসে আছেন নীলা

ব্রাত্য রাইসু: ওই সময় কি কেউ স্লিভলেস ব্লাউজ পরতো না?

ফৌজিয়া খান: আমি কোনো ইমেজের মধ্যে দেখি নাই। সো ফার আমি দেখি নাই।

পিয়াস করিম: আমি '৭১ সালে…আমাদের বয়স ১২-১৩ ছিল। আমি একমত ওনার সঙ্গে। একমত এই অর্থে যে, '৭১ সনে আমাদের ১২-১৩ বছর বয়স এবং আমরা গ্রামে গেছি। আমি তো তখন দেখেছি যে…মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলাম। আমার বোনরা-কাজিনরা কেউ স্লিভলেস ব্লাউজ পরতো না গ্রামে। শহরে পরতো কিনা আমার এখন মনে নাই। কিন্তু এটা সামাজিক বাস্তবতার ভেতরে সম্ভব ছিল না '৭১ সালে গ্রামে স্লিভলেস ব্লাউজ পরা।

সুমন রহমান: কিন্তু প্রি-সেভেনটি ওয়ান ফিল্মে কিন্তু আছে স্লিভলেস।

পিয়াস করিম: হ্যাঁ ফিল্মে আছে, শহরে পরত কিনা মনে নাই, কিন্তু গ্রামে গেছে শহরের যে মধ্যবিত্ত, তারা…

সলিমুল্লাহ খান: সেটা তো বড় সেন্ট্রাল পয়েন্ট নয়। সেটা হচ্ছে ছবিটার ডিটেইলের ব্যাপার।

ব্রাত্য রাইসু: না, এইটা একটা বড় আপত্তির ব্যাপার।

ফৌজিয়া খান: না, এটা আপত্তির জায়গাটা ওইখানেই যে, আমরা ওই সময়টাকে রিপ্রেজেন্ট, মানে সেই জায়গাটা…

পিয়াস করিম: আমি যদি ফিল্ম থিওরির দিক থেকে বিচার করি, ছবি যে রিয়ালিস্ট হতে হবে, এমন কোনো কথা নাই। ছবিকে, ছবির চরিত্রকে ম্যাজিক্যাল রিয়ালিজম হওয়া সম্ভব; কিন্তু আমার আপত্তিটা অন্যখানে। আমার আপত্তিটা হচ্ছে যে, রুবাইয়াত আমাদেরকে রিয়ালিস্ট চলচ্চিত্র উপহার দিতে চেয়েছে। যখন বাধা পড়ে গেছে– এরকম অ্যাকসেন্টে কথা বলে না, এরকম শাড়ি তো পরে না, তখন বলেছে যে 'ম্যাজিক্যাল রিয়্যালিজম'…. এটা হচ্ছে এক ধরনের কপট, এটা হচ্ছে আমার আপত্তি।

মোহাম্মদ আজম: না না, এটা বলে নাই কিন্তু।

পিয়াস করিম: না, না, কিন্তু রুবাইয়াত বলেছে যে, এটা রিয়্যালিটি এবং ফিকশনের একটা সংমিশ্রণ।

মোহাম্মদ আজম: 'ম্যাজিক রিয়ালিজম' শব্দটা আমি ব্যবহার করেছিলাম। আমি বলেছি যে, এক ধরনের টিউন আছে, আমি বলি নাই যে এটা ম্যাজিক রিয়ালিস্টিক অংশ। আমি বলছি যে, রঙের ব্যবহার এবং আরো কিছু ব্যাপারে {পিয়াস করিম: রঙের ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারে আকর্ষণীয় কিছু মনে হয়নি, বাই দ্য ওয়ে, সেটা আরেকটা ব্যাপার।}। আকর্ষণের কথা হচ্ছে না, ন্যারেটিভ মাত্রই আকর্ষণীয় না। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, হোয়াই ডিসটর্টিং…আমি ম্যাজিক রিয়ালিজমের এই অর্থে বলি নাই, খুব সাবধানতার সঙ্গে বলছি যে, এই ধরনের একটা আবহ তৈরি হয়েছে, কয়েকটা পয়েন্টে।

ফৌজিয়া খান: আমার কাছে কখনোই সেটা মনে হয় নাই, ছবিটার ইনটেনসন মনে হয়েছে রিয়ালিস্টিক।

পিয়াস করিম: না, রিয়্যালিস্ট ছবি হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

ফৌজিয়া খান: হতেই হবে কথা নাই। কিন্তু রুবাইয়াত সেটাই আমাদেরকে দেখিয়েছেন আর কি।

পিয়াস করিম: কিন্তু আমি যখন বলছি যে রিয়ালিস্ট ছবি তৈরি করছি এবং তার পর এই ব্যাপারগুলোতে কিন্তু সৎ থাকছি না। তাতে এক ধরনের শৈল্পিক অসততার তৈরি হয়।

ফৌজিয়া খান: সেটাই।

সুমন রহমান: আরেকটা কম্পারিজন আমি করতে পারি। এই যে বীরাঙ্গনা নিয়ে একটা উপন্যাস হয়েছে 'তালাশ'। তো দেখা যাচ্ছে যে, উপন্যাসটা খুব যে, {ব্রাত্য রাইসু: কার উপন্যাস এইটা?} শাহিন আকতারের, তো শেষ দৃশ্যে বীরাঙ্গনারে পুরা 'ম্যাজিক রিয়ালিস্ট' ডিরেকসনে… ওই অর্থে আর কি… আসলে ওটা এক ধরনের… ওই জায়গাটা আমি ডিল করব না আর কি। ডিল করব না ওইটা, ওইটাকে একটা এক ধরনের ইমেজিস্ট একটা প্যানোরমার মধ্যে ছাইড়া দিয়া আমি পাশ দিয়া চলে আসছি আরকি… তো ওই রকম মনে হইছে আর কি।

মোহাম্মদ আজম: এইটা কি এটার (মেহেরজান) মধ্যে আছে না?

সুমন রহমান: হ্যাঁ, ওই রকমই।

পিয়াস করিম: এমনকি ইলিয়াসের উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই'-এ যখন ওসমান রাস্তায় নেমে পড়ছে এবং হাড্ডি খিজির তাকে পথ দেখাচ্ছে, দ্যাট ইজ ম্যাজিক রিয়্যালিজম। ওইটা জাদুকরি বাস্তবতার এত পাওয়ারফুল…এবং খোয়াবনামাতে। কিন্তু রুবাইয়াত ওটা করে নি। রুবাইয়াত আমাদের কিছু এক্সপেরিমন্টাল রিয়ালিস্ট ছবি উপহার দিতে গিয়ে তারপর গুলিয়ে ফেলেছে।

ফাহমিদুল হক: এক্সপেরিমেন্টের জায়গাটা আমি একটু বলি। এটা একেবারেই ন্যারেটিভ ছবি না, আমি মনে করি। মানে একেবারে হলিউড ক্লাসিক্যাল ন্যারেটিভ বলতে যা বোঝায়—শুরু, তারপর ক্যারেক্টারগুলার ডেভেলপমেন্ট, তারপরে একটা কনক্লুসন।

সলিমুল্লাহ খান: ফাহমিদুল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি আমি? {ফাহমিদুল হক: জ্বি।} আপনি টলস্টয়ের 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' যদি পড়ে থাকেন, তারপর আপনি ফিল্ম দেখে থাকেন {ফাহমিদুল হক: না দেখি নাই।} -আপনি এটাকে রিয়ালিস্ট বলেন কি না? আমাদের রিয়ালিস্টের একটা রেফারেন্স লাগবে তো?

ফাহমিদুল হক: না, আমার কথাটা শেষ করে নেই। যে কোনো এক্সপেরিমেন্টাল, আপনি ম্যাজিক রিয়ালিস্ট বলেন, স্যুরিয়ালিস্ট বলেন, এ ধরনের ছবি সাধারণতঃ যা হয়েছে, মানে হাইলি এক্সপেরিমেন্টাল–সেগুলি সাধারণতঃ শর্ট ফিল্ম হয়। একটা ফিচার ফিকশনাল ফিল্ম, যেটার লেংথ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা, সেখানে আপনি পুরো ছবি জুড়ে কিন্তু আপনি এক্সপেরিমেন্ট করবেন না। আপনার ন্যারেটিভ স্ট্রাকচারে থাকতেই পারে।–

[অনেকে একসাথে…]

ব্রাত্য রাইসু: রাজু ভাই কি যেন বলতে চাইছিলেন। রাজু ভাই, বলেন। রাজু ভাইয়েরটা শুইনা নেই প্লিজ।

জাকির হোসেন রাজু: আমি দুই-তিনটা পয়েন্ট একটু আলোচনায় যাব। তার আগে আমি একটা ছোট জায়গা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। সেটা হচ্ছে যে, একটা পালকির দৃশ্য আছে, মনে আছে কিনা জানি না, ঐ শটটা পার্টিকুলারলি, বা ওটাকে যদি মিনি সিন বলি, ওটা কিন্তু এক ধরনের বিয়ন্ড রিয়্যালিজম আর কি। আমার কাছে ওইটা মনে হয়েছে যে, নট পার্ট অব রিয়্যালিস্ট ন্যারেটভ। আর ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, রুবাইয়াত হোসেন যদি ডিসিসন নিতে পারতেন, আমি এবাদুর রহমানের উপন্যাস পড়ি নাই এবং আমি জানতামও না যে এটা এবাদুর রহমানের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। তো রুবাইয়াত হোসেন যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন যে উনি ম্যাজিক রিয়ালিজম বা আমি বলব রিয়ালিজম নিয়ে প্লে করবেন, তাহলে ছবিটা আরো ম্যাচিউরিটি পেত। ফর এক্সাম্পল, বিশেষ করে–যেইটা বড় আপত্তির জায়গা যে, পাকিস্তানি সৈনিকের সাথে বাঙালি মেয়ের প্রেম। এটাকে চাইলে–আসলে আমার কাছে মনে হচ্ছে, অনেক দর্শক এটাকে ফ্যান্টাসি হিসাবেই নিচ্ছে। কিন্তু এটাকে চাইলে পরিচালক আরো সচেতনভাবে ফ্যান্টাসির জায়গায়ই নিয়ে যেতে পারতেন। সেটা হলে ছবিটা আরেক ধরনের বা আরকেটা মাত্রা পেত।

সলিমুল্লাহ খান: আমি খুব সংক্ষেপে বলছি কি, টলস্টয়ের রেফারেন্স যদি দেয়া যায় খুব সংক্ষেপে। 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এ এমন এমন রাশিয়ান ক্যারেক্টার ডেভেলপ করা হয়েছে, যারা যুদ্ধে যাবে, প্রথম জীবনে তারা নেপলিয়নের ভক্ত ছিল। যুদ্ধ শুরু হয়, মানে ফিল্ম শুরু হয় ১৮০৫-এ। উপন্যাসে আছে যে নেপোলিয়ন এখন এটা দখল করছে, ওটা দখল করছে, নেপোলিয়ন একজন এম্পারর হচ্ছে, সে একজন ইউসার্পার(usurper) এবং রাশিয়া হবে ইউরোপের উদ্ধারকর্তা। ওইখানে একটা ট্র্যাজিক এলিমেন্ট আছে এই জন্য যে, নেপালিয়ন হচ্ছেন–আমরা এখন যাই বলি না কেন–তখন মনে করা হতো, ফরাসি বিপ্লবের প্রতিনিধি। ফরাসি বিপ্লব এ জগতের সবচেয়ে বড় বিপ্লবী ঘটনা, ইমানুয়েল কান্টও পর্যন্ত যাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, জার্মানদের মধ্যে হেগেল, গ্যাটে পর্যন্ত। এখন, আবার রাশিয়ার জারশাসিত দেশের নাগরিক হিসাবে আপনার আবার দেশপ্রেম আছে। দেশপ্রেম আর আপনার জীবনের লালিত আদর্শ উভয়ের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব হয়, তখন একটা সত্যিই বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়। এইরকম বড় মহাকাব্যিক পটভূমি এখানে করে নাই, এই ছবিতে করতে পারে নাই। পাকিস্তানিদের প্রেমে পড়া নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই, আর যার থাকুক, হুমায়ুন আজাদের থাকতে পারে, আমার নাই। কিন্তু আমি বলছি, জিনিসটাকে, আবহটাকে বিশ্বাসযোগ্য করা যায় নাই। তাহলে বাংলাদেশে এখন যেটা করা হচ্ছে–এই ছবির বিরুদ্ধে, আমার প্রধান আপত্তিটা হচ্ছে, এটাকে বলা হয়, আপনার (ফাহমিদুল হক) পত্রিকা যোগাযোগে সম্প্রতি একটা লেখা ছেপেছেন, রবার্ট ফ্রিস্কের লেখা, যেটা রাসেল অনুবাদ করেছে। এটার একটা কথা আছে—পিস অব দি ব্রেইভ। সেইটা কী? ১৯৯৩ সনে বিল ক্লিনটন যখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং ইয়াসির আরাফাতকে পাশাপাশি নিয়ে এলেন সবুজ লনের মধ্যে হোয়াইট হাউসে, তখন ছোট্ট করে একটি কথা ইয়াসির আরাফাত বললেন, ইট ইজ এ পিস অব দ্য ব্রেইভ। তখন রবার্ট ফিক্স মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই কথাটা বলেছিলেন শার্ল দ্য গল। আলজেরিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের সময়, এভিয়ানে ১৯৬২ সনে। কী ছিল, বলেছিল কী, ফরাসিরা যখন বলছে, ইট ইজ এ পিস অব দ্য ব্রেভ মানে হচ্ছে, আমরা পরাজিত হয়েছি, আমরা বহুদিন, আট বছর ধরে তোমাদের ঠেকাইতে চাইছি। এখন আমরা তোমাদের গ্রহণ করছি, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। যে স্যারেন্ডার করে ইকুয়ালিটির অধীনে, সে পিস অব দ্য ব্রেভ বলে। কাজেই পরোক্ষভাবে ইয়াসির আরাফাত বলল, আমরা প্যালেস্টাইনিরা পরাজিত হয়েছি। আপাতত আমরা এ অস্ত্র–শান্তিচুক্তি মেনে নিচ্ছি। এটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের মিডিয়াগুলো লোকের কী পিক আপ করে? তারা কিন্তু 'টেরোর, টেরোর, টেরোর' বলে, তারা হামাস দেখে। আপনার ঐ প্রবন্ধ থেকে আমি এটা বুঝি, বাংলাদেশের–মনে হলো, বাংলাদেশের মেয়েটি আমরা রেসিজমকে অবসান করার জন্য, একটা উদার মানবতার প্রতিনিধি হিসাবে পাকিস্তানি ওয়াসিম সাহেবের প্রেমে পড়াইয়া আমরা যেটা প্রস্তাব দিলাম—পিস অব দ্য ব্রেইভ। আমি বলছি যদি—ইফ কন্ডিশনস হ্যাভ ফুলফিলড আই অ্যাম ইন ফেভার অব দ্য পিস অব দ্য ব্রেইভ, হোয়েন ইউ আর রিয়েলি ব্রেইভ। এটা হচ্ছে ফিকশনের দিক থেকে। পরাজিতকে আপনি ব্রেইভ বললেন–কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। এখন পরাজিত ব্যক্তির সাথে–আমি বলব এই দ্বন্দ্বটাকে আমাদের দেখতে হবে—মাস্টার্সের দ্বন্দ্ব আকারে। অথচ আমরা দেখতে চাচ্ছি, এটা শুধু দুইটা মানুষের সম্পর্ক। আমার মৌলিক বিরোধটা হচ্ছে এই জায়গাতেই, এটা ফরহাদ ভাইয়ের মন্তব্য প্রসঙ্গেও প্রযোজ্য, আর যে যে, যারা বলতে চান, আমি মনে করি এইখানে আমাদের আলোচনা শেষ না হলে আমাদের লিখিতভাবে বিতর্ক করা উচিত যে, পাকিস্তানি-বাংলাদেশী সম্পর্কটা, ফরহাদ ভাইয়ের কথা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝলাম। উনি এটাকে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক অন্ততঃ মনে করেন না।

ফরহাদ মজহার: আমি তা বলি নাই।

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা, যদি না বলেন তাহলে ঠিক আছে, তাহলে আমার আর তর্ক নাই। {ফরহাদ মজহার: অবশ্যই তর্ক আছে।} আমি একটু শেষ করি। আমার মূল আপত্তিটা হচ্ছে যে, প্রভু এবং ভৃত্যের মধ্যে যে সম্পর্ক তা শুধুমাত্র দুইজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক–এই ডায়মেনশনে রিডিউস করলে যে দোষটা হয়, তার বিপরীত দোষটা তার চেয়ে বেশি হয়তো খারাপ, কিন্তু এই দোষটাকেও স্বীকার করতে হবে। এই ছবির মৌলিক ত্রুটি হচ্ছে এখানে।

ফরহাদ মজহার: তুমি যে প্রশ্নটা তুলেছ, যে এটা একমাত্র ঔপনিবেশিক ছিল বা প্রভু-ভৃত্যের একমাত্র জায়গা তুমি যেটা রিডিউস করতেছ–আমি এটাকে বলব যে, এটা এত সরলীকরণ করা যাবে না এত সহজে। কারণ তখনকার '৭১-এর মধ্যে যে বয়ানগুলো ছিল, এমনকি শোষণের, সে বয়ানের মধ্যে এটাও তোমার জাতীয়বাদী বয়ানই ছিল। কারণ তুমি যে বয়ানটা দিতেছ ওটা কিন্তু জাতীয়তাবাদী বয়ানই।

সলিমুল্লাহ খান: নো, আমি আপনাকে সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিই, ১৯৪৮ সনে পাকিস্তানে দুইটা–কমিউনিস্ট পার্টির দুইটা উইং ছিল।

ফরহাদ মজহার: আমি শেষ করি। (সলিমুল্লাহ খান: এটা তাদেরো বয়ান ছিলো, বাই দ্য ওয়ে।) না ফাইন, তখন তো ক্যাপিটালিস্ট ডেভেলপমেনটা ফলো করতেছে সে পাথ। এবং ইন্ডিয়ার নেহেরুর মতো তো সোসালিস্ট ইকোনমি ফলো করছে না। ফলে ক্যাপিটালিজম ডেভেলপ করার ফলে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে কন্ট্রাডিকশনটা ডেভেলপ করতেছে, ওটা তো দুই অর্থনীতির তত্ত্ব না। ওটা তো সিম্পলি কলোনিয়াল রিলেশনশিপ না।

সলিমুল্লাহ খান: বাই দ্য ওয়ে, নেহেরুর ফলো করা পাথ এবং পাকিস্তানের পাথের মধ্যে সোসালিস্ট-ক্যাপিটালিস্টের পার্থক্য করা যাবে না। দুইটা একই, দুইটাই ক্যাপিটালিস্ট পাঠ।

ফরহাদ মজহার: আচ্ছা ফাইন। তাহলে পলিসিটা কী ছিল, নেহেরুর পলিসি…তুমি হার্ভার্ড ইকোনমিস্টদের যে ফলো করে পাকিস্তান রুলিং ক্লাসের যে ইকোনমিক পলিসি এটা কি তুমি অস্বীকার করতে চাইতেছ। নেহেরু এবং গান্ধীর পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু তুমি…ডেফিনিটলি ভারত এবং পাকিস্তান একই পলিসি ফলো করে নাই। ইন্টারনাল ক্যাপিটালিজমের পথ ধরে চলেনি।

সলিমুল্লাহ খান: আমি বলতে চাচ্ছি যে, একটাকে সোস্যালিস্ট বলা যাবে না, দুইটাই ক্যাপিটালিস্ট। রূপ টু, ভ্যারাইটিজ হতে পারে।

ফরহাদ মজহার: ঠিক আছে তোমার মত তোমার কাছে থাকুক। আমরা যেই জায়গাতে ছিলাম পাকিস্তানের প্রশ্নে, আমার প্রশ্নটা ছিল যে, এটাকে শুধুমাত্র একটা প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক বা কলোনিয়াল সম্পর্কে আমরা রিডিউস করতে পারবো না।

সলিমুল্লাহ খান: আমি বলেছি যে, প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ককে অস্বীকার করলে কোন আলোচনা করা যাবে না।

ফরহাদ মজহার: আমি অস্বীকার করি না? আমি বলছি যে এটাতে রিডিউস করা যাবে না।

সলিমুল্লাহ খান: আমি আমার পার্থক্যটা স্পষ্ট বললাম যে, ইট মাস্ট বি দেয়ার। আপনি বললেন যে, শুধু এটা বলা যাবে না। আমি শুধু এটা বলার পক্ষপাতী না। উই মাস্ট স্টার্ট ফ্রম দ্যাট।

ফরহাদ মজহার: না, সেটা আমরা কেউ অস্বীকার করছি না।

ফৌজিয়া খান: আমি ভেবেছিলাম যে, আসলে আমরা আজ যেই জায়গা থেকে মেহেরজানকে–এই আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসলাম, অন্তত আমি রাইসুর যে ফোন পেয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম যে এটা চলচ্চিত্র মেহেরজান নিয়ে কথা হবে। তার চাইতে বেশি…

ব্রাত্য রাইসু: না, না, আমরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে থাকবো, এমন কোনো কথা দেই নাই তো। {ফৌজিয়া খান: আমার এক্সপেকটেশনটা সেরকম ছিলো।কিন্তু আজকের টেবিলে আমরা যে…} তোমার এক্সপেকটেশন থাকতে পারে, আমি কিন্তু কথা দেই নি তোমাকে যে, আমরা শুধু মেহেরজান এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে থাকব। তাহলে তো মেহেরজান-চলচ্চিত্র তসবি গুনলেই হতো।

ফৌজিয়া খান: না, আমি বলছি যে, অ্যাজ এ আর্ট…

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা ফৌজিয়া, এইটা কাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র, আমি আগেই বলেছি, চলচ্চিত্রের আলোচনার মধ্যে কাহিনীর আলোচনা বাদ দেওয়া যাবে না।

মোরশেদুল ইসলাম: চলচ্চিত্র–মেহেরজান নিয়ে যদি এই বিতর্কটা না হতো, তাহলে চলচ্চিত্র মেহেরজান নিয়ে আলোচনা নিশ্চয়ই আসত না {ব্রাত্য রাইসু: এতো আলোচনার কী থাকতো?}।

সুমন রহমান: আমরা এই ইস্যুগুলা রিজলভ না করে তো সেই আলোচনা শেষ করতে পারবো না।

ফৌজিয়া খান: হ্যাঁ, সেই আলোচনাটা আমরা উপেক্ষা করে গেছি। সেই আলোচনাটা আমরা উপেক্ষা করে গেছি।

জাকির হোসেন রাজু: আপনি যেটা বলছেন যে, মেহেরজান ছবির ফরমাল এসথেটিক দিক নিয়ে আলোচনাটা আরো বেশি হবে, এরকম সম্ভবত আপনার একটা…

নাম (অস্পষ্ট): আমার যেটা মনে হয়, কিছুটা আলোচনা হয়েছে।

ব্রাত্য রাইসু: হ্যাঁ, ফৌজিয়া নিজেই তো অংশগ্রহণ করছে সেই আলোচনায়। তুমি তোমার নিজের আলোচনাকে ইয়ে করো কেমনে?

ফৌজিয়া খান: না, আমি তো করেইছি।

সুমন রহমান: আরো টেকনিক্যাল বিষয়ে হয়তো আশা করছিলো।

জাকির হোসেন রাজু: আমার মনে হয় যে, বরং, অ্যাজ এ ফিল্ম টেক্সট, এটা যেহেতু আরো বিভিন্ন কনটেক্সটকে স্পর্শ করে, সেই কনটেক্সট নিয়ে যেহেতু আমরা আজো কনফিউজড, সেই কারণেই কিন্তু আমরা আজকে এখানে জড়ো হয়েছি। না হলে এখানে এত লোক আদৌ আসত কিনা শুধুমাত্র ছবিটার শৈল্পিক না অশৈল্পিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনার জন্যে—সেটা সন্দেহ। তো আমি–রাইসু, আমার দু-একটা পয়েন্ট একটু বলতে চাই। একটা হচ্ছে যে, ফাহমিদ এবং আমি—আমরা দুজনেই শিক্ষকতায় আছি। তো আমরা মূলত ফিল্ম এবং মিডিয়া স্টাডিস নিয়ে পড়াশোনা করি এবং শিক্ষকতা করি। তো আমার একটা কথা মনে হয়েছে যে, বিশেষ করে যারা আমরা চলচ্চিত্র এবং গণমাধ্যম নিয়ে শিক্ষাদীক্ষার মধ্যে আছি, তাদের জন্য একটু বিপদ সংকেতের বার্তা মনে হয়েছে–প্রথম আলো'তে যখন একইসঙ্গে দুটি লেখা ছাপা হলো। একটি হচ্ছে রুবায়েত ফেরদৌস গংয়ের লেখা আর একটি হচ্ছে রুবাইয়াত হোসেনের নিজের লেখা। প্রথমত, আমি বলি যে, রুবায়েত হোসেন যা লিখেছেন, 'মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে'–আমি বলব যে, কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতাকে–আমি একসময়, হয়তো আপনারা কেউ কেউ জানেন, এক সময় আমি ফিল্ম একটিভিস্ট ছিলাম। কিছু ছবি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। তো কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতাকে যদি একটা আর্টিকেল লিখতে হয় যে আমার এই ছবি কী বলতে চেয়েছে, সেটা খুব, মানে, তার চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর হতে পারে না। আমি বলব যে, যদি প্রথম আলো তাকে বলে থাকে যে, আপনি লেখেন–ওনার বলা দরকার ছিল, আমার যা বলার, ভাই, আমি ছবিতেই বলে দিয়েছি। আপনারা ভালো-মন্দ পক্ষে-বিপক্ষে যা ইন্টারপ্রেট করেন, আমি আরেকটা আর্টিকেল লিখতে চাই না। উনি নিশ্চয়ই আরো অন্য বিষয়ে আর্টিকেল লিখতে পারেন; কিন্তু আর্টিকেল লেখার দায়িত্ব বরং আমি বলব যে, আমাদের মতো যারা আমরা চলচ্চিত্র না করতে পেরে শিক্ষকতায় এসেছি–বিভিন্ন তত্ত্ব-কাঠামো দিয়ে ব্যাখ্যা করার দায়িত্বটা বরং আমাদের ওপর ছেড়ে দেয়াটাই ভালো। তো সেইটা আমার কাছে মনে হয় যে বিপজ্জনক, যে কোনো–এবং সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে যে, এটা খুব অবসোলেট একটা ধারণা যে, এখন কোনো অথার বা ফিল্ম অথার, তার যে একটা ভিশন, সেটাকে তিনি যে তার ছবির মাধ্যমে বলতে চান.. আমি বলছি যে, যেটা জানি যে, দেয়ার ইজ ডেথ অব অথার, মানে অথার ইজ নো মোর। তাহলে যে কোনো একটা টেক্সট অনেকভাবে আমরা রিড করতে পারি, অনেকভাবে ইন্টারপ্রেট করতে পারি। কাজেই রুবাইয়াত হোসেনের এটা বলার প্রয়োজন ছিলো না।

সুমন রহমান: এইটার মধ্য দিয়া অথর রিভাইভড হইছে!

জাকির হোসেন রাজু: যেটা আমি বলব যে, একটু ব্যর্থ চেষ্টা আর কি।

ব্রাত্য রাইসু: আচ্ছা আমরা প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি। মোরশেদ ভাই, কিছু বলবেন কি?

জাকির হোসেন রাজু: দুই নম্বর হচ্ছে যে.. একটু আমি শেষ করি, রাইসু। আমার বন্ধু রুবায়েত ফেরদৌস, কাবিরী গায়েন এবং আরো দুইজন–তারা যে লেখাটা লিখলেন, সেইটার বিষয়ে আমার যেটা আপত্তি, সেটা হচ্ছে যে, তারা এক ধরনের একটা ডমিন্যান্ট রিডিং—ছবির, প্রেজেন্ট করতে চেয়েছেন এবং যেটা মনে হইছে যে, এই ডমিন্যান্ট রিডিংটা মেনে নিতেই হবে আর কি। মানে, আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে, তারা খুব বিশ্লেষণধর্মী লেখা লেখেননি। তারা যদি খুব সময় নিয়ে, ভালো করে, আমি বলব যে, যদি প্রথম আলোর পাতায় জায়গা না হয়, তাহলে অন্য কোনো পত্রিকায় বড় জায়গা নিয়ে তাতেই লিখতেন। তা হলে সেটা আরো বেশি অ্যাপ্রিশিয়েটেড হতো। তারা যেটা লিখেছেন যে, তারা একটু অ্যাক্টিভিজমের জায়গা থেকে লিখেছেন। তো আমি বলব যে, মাহবুবুজ্জামান বাবু বা প্রিয়ভাষিণীর অবস্থান থেকে তারা যদি অ্যাক্টিভিজমের জায়গা থেকে লিখেন, সেটা হয়তো বোঝা যায়। কিন্তু কেন রুবায়েত ফেরদৌস বা কাবিরী গায়েন, বিয়িং মিডিয়া স্কলার, তারা অ্যাক্টিভিজমের জায়গা থেকে একটা ছবিকে খুব মোটাদাগে একটা ফ্রেমে বন্দি করবেন, সেটা আমার মনে হয় যে আপত্তিকর।

ব্রাত্য রাইসু: আমি কাবিরী গায়েনকে আসতে বলছিলাম, উনি আসবেন কথা দিয়েছিলেন। তো উনি আসলে হয়তো এগুলি জিজ্ঞেস করা যেত। মাহামুদুজ্জামান বাবুকেও বলছিলাম। তো উনারা যেহেতু আসেন নাই, রুবায়েত ফেরদৌস সম্ভবত বিদেশে আছেন। ফলে তাদের পাওয়া গেল না। তো ওইটা আর জানা যাবে না। হয়তো উনারা অন্য কোথাও লিখবেন, আর কি। (মুসতাইন জহিরকে) আপনি কী বলতে চেয়েছিলেন?

মুসতাইন জহির: আমি বলছি যে, এই ছবিটা তো বন্ধ হয়ে গেছে। তো এই ছবিটা আবার দেখানোর দাবি আমরা করতে পারি কি না? প্রদর্শনটা উন্মুক্ত হওয়া উচিত কি না?

ব্রাত্য রাইসু: মোরশেদ ভাই, কী বলেন এই ব্যাপারে?

মোরশেদুল ইসলাম: না আমি অন্তত সেই দাবি করার জন্য এই সভা আমার মনে হয় না। তাহলে মনে হবে যে, আমরা ছবিটাকে প্রমোট করার জন্যই সভাটা করেছি। আমি সভার মধ্যে আমার ইন্ডিভিজুয়াল মতামত বলেছি যে, ছবিটাকে নিষিদ্ধ করাকে আমি সমর্থন করি না। সেটা সবাই আমরা মোটামুটি একমত। আমরা যদি এই সভা থেকে একটা সিদ্ধান্ত নেই যে, এই ছবিটাকে আবার দেখানো হোক। তাহলে সেটাও ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। সুতরাং সে ব্যাপারে আমার অবস্থান সেটা।

সলিমুল্লাহ খান: আপনি এক সমালোচকের কথা বললেন, রাজু, তাহলে অন্য সমালোচকের কথা তো বলা উচিত। যারা প্রথম আলোতে জায়গা পায় নাই, অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা প্রকাশ করেছেন নানা জায়গায়, তার মধ্যে একজন হচ্ছে ফারুক ওয়াসিম। প্রথম আলোতে চাকরি করেন। হয়তো বিনয়ের জন্য ওখানে ছাপেননি। ছাপবেন কিনা জানি না। ব্লগে অনেকগুলো লেখা–চার খণ্ড লিখেছেন, বিশাল এক আর্গুমেন্ট। সেখানে আমি যতটুকু বুঝেছি, দ্রুত পড়ার মধ্যে, উনি নানাজানকে গান্ধী এবং শেখ মুজিবের প্রটোটাইপ হিসাবে দেখিয়েছেন যে, শেখ মুজিবের মধ্যে যেরকম দ্বিধা ছিল, এ লোকের মধ্যেও দ্বিধা আছে। এরকম তো বহু রকমের ব্যাখ্যা হবেই। আমি ব্যাখ্যাগুলোকে ডিসকাস করতে চাই না।

আমাদের উচিত, এই প্রথম, এই ছবিকে আমি ধন্যবাদ দেই পরোক্ষে। সেটা হচ্ছে, এই ছবি হওয়ার কারণে অনেকগুলো গোপন কথা বেরিয়ে এল। আমরা যে কথাগুলো বলার কোনো মওকা পাচ্ছিলাম না, সেগুলো আমরা বলছি এবং আমাদের মনের মধ্যে যদি—বাংলাদেশের–রেসিজম থাকে, সেটা বেরিয়ে আসলো এবং আমাদের মধ্যে যদি, গোপন, যদি পাকিস্তানপ্রীতি থাকে, আবার দুই বুর্জোয়ার ঐক্যের কথা, যদি করতে চাই–সেটাও বেরিয়ে এল।

ছবিটাতে, আমি প্রিমিয়ারে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, যদিও আমি রুবাইয়াতকে চিনতাম না। কে আমাকে দাওয়াত দিছে, তাও আমি জানি না। তো গেলাম। ফিরে আসার সময় আমি দেখলাম যে, বিচারপতি হাবিবুর রহমান বেরিয়ে যাচ্ছেন, আরো অনেক বড় বড় লোক বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমার মুখ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল, আমি বললাম যে ওহ, ফাইনালি! দ্য বুর্জোয়াজি কামস অব এইজ ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বুর্জোয়া শ্রেণীর বয়স হলো, এইটাই বোধহয় আমি বলেছিলাম। পরে দেখলাম কি–আমার কথাটা হয়তো ভুল ছিল–'ওএফ'-এর সাথে আরেকটা 'এফ' লাগানো দরকার। আলোচনা দেখে মনে হচ্ছে–কামস অফ এইজ। এই বাংলাদেশের বুর্জোয়া শ্রেণী এখন বেখেয়াল হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চরিত্রের মধ্যে যে—সালমা যে চরিত্রটা আছে, সেইটা যেমন অসংলগ্ন কথা বলে, সে সবসময় মুতা ম্যারেজ করে, আগে মুতা করব, পরে সাংগাত করব–এই কথাগুলো বারবার আছে। এইটা হতে পারে যে, আমি বারবার এবাদুরের নাম নিতে বাধ্য হচ্ছি–দিস ইজ অ্যান এবাদুর রহমান ফিল্ম। যদি এটা হলিউড হইতো, দিস ইজ অ্যান এবাদুর ফিল্ম হতো এবং রুবাইয়াত হতো তার অ্যাসিস্ট্যান্ট; কিন্তু ইতিহাসের নানারকম নির্মম সত্যের মধ্যে এটা সত্য যে, এবাদুর ছবি থেকে চলে গেছে পরে। কিন্তু আমি এখনো মনে করি, এই ছবির বিগিনিংস উইথ এ ডিজঅনেস্টি। দিস ইজ অ্যান এবাদুর রহমান ফিল্ম, দ্যাট শুড হ্যাভ বিন রিকগনাইজড প্রপারলি। কিন্তু ফিল্মটার–সে আন্দোলনেও ছিল কিন্তু, মেহেরজান থেকে সে আমাকে বহু মেইল পাঠাইছে যে, আমি একটা ছবি বানাচ্ছি, এই এই…পরে যে কোনো কারণেই হোক—ইন্টার্নাল, বদলেছে। কিন্তু আমি বলব যে, এবাদুরের মূল চিন্তার যে গলদ, এবাদুরের যে ফ্যান্টাসি এবং আমি বলব, এবাদুরের অ্যানার্কিজম, হুইচ গোজ ফর নাথিং এবং এ লিট্ল্ বিট মে বি ইট'স প্রো-পাকিস্তানি। সেইটাই এখানে অচেতন থেকে বেরিয়ে এসেছে।

সুমন রহমান: মানে এইটা–এই ছবি এর থেকে বের হতে পারে নাই?

ব্রাত্য রাইসু: মানে, এটা কীভাবে? এবাদুরের এসেন্স যে বললেন, এটা কীভাবে?

ফাহমিদুল হক: এবাদুর কীভাবে প্রো-পাকিস্তানি?

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা, আমি বললাম তো, ছবির মধ্যে দেখা যায় কি–যখন কেউ একটা যুদ্ধকে চিত্রিত করে…প্রথমে এবাদুর প্রো-পাকিস্তানি হলো–হি ইজ ক্যারেক্টারাইজিং এ কলোনিয়াল ওয়ার অ্যাজ এ সিভিল ওয়ার। এটা হচ্ছে প্রো-পাকিস্তানি। আপনি অপরাধকে লঘু করেন, অথবা, এমনকি আমি জানি যে, অল রেপ ইজ রিপ্রেহেনসিবল। {ফাহমিদুল হক: আচ্ছা আপনি টেক্সট থেকে বলছেন?} না, শোনেন, টেক্সট থেকেই বলছি, এবং ফিল্ম থেকেও বলছি। ফিল্মে সে বলে–দিস ইজ নট দ্য ফার্স্ট টাইম আই ওয়াজ রেপড। এটা আলোচনা হয়নি বলে আমি করতেছি না। আপনি, এলিমেন্ট বাই এলিমেন্ট যদি সিকোয়েন্স বাই সিকোয়েন্স, শট বাই শট আলোচনা করেন দেখবেন যে, দিস ইজ মেড ফ্রম দ্যাট পয়েন্ট অব ভিউ। প্রথমে আমি বলছিলাম যে এটা 'মেল গেইজ' থেকে বানানো হয়েছে, কেউ কেউ বলছে 'ফিমেল গেইজ'। আমি বলছি আপনি যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, আমেরিকান গেইজ থেকে বলেন–এটা কি ইউএন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বানানো তথ্যচিত্র মনে করেন আপনি? কারও পয়েন্ট অব ভিউ আছে তো। হুজ গেইজ ইজ দিস? হু ইজ দ্য অ্যাবসোলিউট ভিউয়ার হিয়ার? 'গেইজ' মানে হচ্ছে এক দৃষ্টি নয়, দশ দৃষ্টির মধ্যে কোনটা ডমিন্যান্ট হয়। অফ কোর্স, ইট ইজ মেড ফ্রম দ্য পাকিস্তানি গেজ। এ বিষয়ে আমি কোনো সন্দেহ করি না।

ফাহমিদুল হক: এবার ক্লিয়ার হয়েছে।

ব্রাত্য রাইসু: শেষ করা যাইতে পারে না? কারও কিছু বলার আছে আর?

মোরশেদুল ইসলাম: না, মোটামুটি অনেক কিছুই ইয়ে হলো…

ব্রাত্য রাইসু: ধন্যবাদ সবাইকে, আপনারা এখানে আসার জন্য এবং অনেকক্ষণ বসার জন্য। থ্যাংক ইউ।

সমাপ্ত

ভিডিও ধারণ ও অনুলিখন: প্রমা সঞ্চিতা অত্রি

ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts