আর্টস বৈঠকমেহেরজান বিতর্ক (কিস্তি ৬)

admin
Published : 19 May 2011, 07:01 AM
Updated : 19 May 2011, 07:01 AM

কিস্তি ৫-এর পর
————-

ফৌজিয়া খান: আচ্ছা, আমি একটু আরেকটা প্রসঙ্গে বলতে চাচ্ছিলাম যে, এখানে ফিমেল সেক্সুয়ালিটি, ডেপিকশন বা ডিজায়ারের ডেপিকশন বলা হচ্ছে। আমার পুরো ছবিটা দেখে, রুবাইয়াত, আপনার (পিয়াস করিম) মতো আমার সামান্য একটু পরিচিত, বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধু না, তারপরও আমি বলব যে, দ্য ওয়ে-তে–ওম্যান আর পোর্ট্রেট হিয়ার, মানে, আমি কোনোভাবেই এটা বলতে পারি না যে, এখানে…বরং মেল গেইজ-ই মনে হয়েছে।


আর্টস বৈঠক: মেহেরজান বিতর্ক (কিস্তি ৬)

পিয়াস করিম: আমি আপনার সঙ্গে একমত এখানে।

ফৌজিয়া খান: সো, মানে এইটাকে–মানে, আমরা বেশি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যেন আবার…

[সুমন রহমান: না, বেশি তাত্ত্বিক বলতে কি বুঝাইতেছেন?]

মানে, আমার কাছে মনে হয়েছে–যা সরলভাবে আমরা দেখতে পারি সেই দেখাটাকে আমরা একটু ফেস করার চেষ্টা করি।

পিয়াস করিম:'সরল দেখা' বলে কোনো দেখা নেই তো আসলে।

ব্রাত্য রাইসু: ফাহমিদুল দ্বিমত করতে চাচ্ছেন–

ফাহমিদুল হক: আমি এই পয়েন্টাতে দ্বিমত করি। এই যে মোরশেদ ভাইয়ের আগের প্রশ্নটা, যেটা আমাকে করা হয়েছিল—যে মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবমাননা, মানে ছোট করে দেখানো, সেটা আছে কি না? আমি বলব যে আছে। কিন্তু কেন হলো এটা? বিকজ ইট'স মেড বাই এ ফিমেল ডিরেক্টর। আমি ফেমিনিজমের এগেন্সটে না, কিন্তু ফেমিনিস্ট কারণেই কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের এই–"বীরপুরুষ"–এদের খর্বকায় করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এক নানাজানের আওতা ছাড়া, নানাজান ছাড়া এখানকার প্রত্যেকটা ওম্যান ক্যারেকটারস আর স্ট্রংগার দ্যান প্রত্যেকটি মেল ক্যারেকটারস।

পিয়াস করিম: তাতে দোষের কিছু নেই।

ফৌজিয়া খান: না, আমি আপনার সঙ্গে একদম স্ট্রংলি ডিসঅ্যাগ্রি করি এই কারণে–আমি মনেই করি না যে,এইটা ফেমিনিস্ট অ্যাপ্রোচের জায়গা থেকে–রুবাইয়াত এটা খাটো করে রেখেছে। [পিয়াস করিম: আচ্ছা, আপনার পরিচয়টা জানি না।] আমার নাম ফৌজিয়া খান; আমি মনে করি এটা রুবাইয়াতের হচ্ছে—ক্যারেকটারাইজেশনের যে দক্ষতা, সেই দক্ষতা সে পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। সেই জন্যই হচ্ছে এটা হয়েছে।

[সুমন রহমান: খাটো হয়ে গেছে?]

ফৌজিয়া খান: হ্যাঁ, হ্যাঁ, খাটো হয়ে গেছে।

সুমন রহমান: এখানে ছবির সেন্ট্রাল দুইটা থিওরিটিক্যাল টেনশন আমার কাছে মনে হয়েছে যে, একটা হচ্ছে ন্যাশনালিজম, একটা হচ্ছে ফেমিনিজম, হ্যাঁ? তো এখন, সে ফেমিনিস্ট জায়গা থেকে পুরো জিনিসটা ডিল করতে গিয়ে এই গুবলেটটা হয়ে গেছে আর কি, যে–যে কারণে কিছু ক্যারেকটার কম মনোযোগ পাইছে, কিছু ক্যারেকটারের প্রোবলেম হয়ে গেছে।


মেহেরজান সিনেমা'র বিহাইন্ড দ্য সিন

মোরশেদুল ইসলাম: তো, সেদিক দিয়ে দেখলে তো সে নীলা ক্যারেকটারটাকে ভালোভাবে আনা উচিত ছিল।

ফৌজিয়া খান: ওইভাবে–হ্যাঁ…

সুমন রহমান: সেটা তো তাঁর টেকনিক্যাল দুর্বলতা।

ফাহমিদুল হক: নীলা ক্যারেকটারটার ফিনিশিংটা ভালো না, কিন্তু যতক্ষণ সে ছিল একটা দাপট দেখিয়ে গেছে।

ফৌজিয়া: কী দাপট? সেই দাপটটা কিসের জন্য?

মোরশেদুল ইসলাম: কিসের দাপট?

পিয়াস করিম: ফাহমিদুল, আমি একটা কথা বলি। আমি আপনার লেখার সাথে পরিচিত। আপনার নাম জানি। যদিও এর আগে কখনো পরিচয় হয় নি। কিন্তু আমি যেটা বলি যে, ধরা যাক, আমরা তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি যে, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খর্বকায় করা হয়েছে। তাতে অসুবিধা কী? মানে, এটা হতে পরে।আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, আমরা মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে, গৌরবকে আমরা ধারণ করি। আমাদের ব্যক্তিত্বে, আমাদের রাজনীতিতে, আমাদের চর্চায় আমরা ধারণ করি। কিন্তু বীরত্ব আরোপ করার মানে নয় তো যে তাকে মুম্বাই ছবির মতো তরোবারি খুলে লড়াই করে জিতে আসতে হবে। তাই না? মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে অনেক খর্বকায়তার উপাখ্যান ছিল রে, ভাই। আহমদ ছফার উপন্যাসেই দেখেন আপনি। যে কী যেন, ওই 'অলাতচক্র'-এ, যে মুক্তিযুদ্ধের সবটাই কিন্তু আনপ্রোবলেমেটিক বীরত্বগাথা নয়। এর মধ্যে অনেক হীনতা ছিল, অনেক নীচতা ছিল, হ্যাঁ? তো ফলে,এগুলো যদি কেউ বলে তাতে–তারমানে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী হয়ে যাওয়া না আর কি।

মোরশেদুল ইসলাম: না, না, কিন্তু আমি যেটা বলছি যে, মুক্তিযুদ্ধের যে নীচতার ইয়েগুলো ছিল, সেগুলো দেখানো যেতেই পারে একটা ছবিতে। কিন্তু সেটা কি–যখন আমরা সেটা দেখাব তখন কি একজন শিল্পী হিসেবে আমাদের ওই দায়িত্বটা এসে পড়ে না যে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বটা আগে দেখিয়ে তারপর সেটা দেখাব? আমি যদি সেই বীরত্বটা না দেখিয়ে শুধু এই দিকগুলো দেখালাম, সেটা কী?

পিয়াস করিম: আমাদের হেজেমোনিক ন্যাশনাল ন্যারেটিভে এত বেশি বীরত্ব দেখানো হয়েছে বারবার…

মোরশেদুল ইসলাম: আমি বীরত্বের কথা বলছি না–মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র, মুক্তিযোদ্ধারা যে কতটা সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে, বা তাঁরা যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধটা কী একটি বিশাল ব্যাপার ছিল আমাদের জীবনে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানুষ কী কষ্টটা স্বীকার করেছে, দেশের মানুষ। এই জিনিসগুলো আসাটা জরুরী কিনা? তখন আমি…

পিয়াস করিম: আমার মনে হয় জাতি হিসেবে আমাদের ম্যাচ্যুরিটিটা আরও বেশি প্রমাণিত হবে, আমরা যদি আমাদের ক্ষতগুলো নিজেরা প্রকাশ করতে পারি যে–এখানে দুর্বলতা ছিল।

সলিমুল্লাহ খান: একটা ফুট নোট দেই, দেখেন। ছবিতে যখন বারবার রেফারেন্স আসে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি,যখন খাজা সাহেবের দৃষ্টিতে বলা হচ্ছে–আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণী যেমন এখন বলে একাত্তরের গণ্ডগোল–তিনি গণ্ডগোল হিসেবে দেখাচ্ছেন এটাকে।

[পিয়াস করিম: রাইট।]

সলিমুল্লাহ খান: হতে পারে নানা রকম কারণে তিনি গণ্ডগোল বলেছেন। অন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধও বলতে পারে। এরকম ছোট ছোট কিছু দেখবেন,একদম গ্রামের লোকদের দৃষ্টিতে দেখানো হয়েছে, উনি বারবার দেখাচ্ছেন, আমার এই কৃষকরা বারবার প্রতারিত হয়েছে, তিনি কৃষকদের ভালবাসেন। এটা অনেকটা রাবীন্দ্রিক অ্যাটিচ্যুড প্রকাশ পেয়েছে।

[পিয়াস করিম: একদম ঠিক।]


মেহেরজান সিনেমা থেকে

সলিমুল্লাহ খান: কিন্তু, মজার বিষয় হচ্ছে কী, কৃষক–কয়েকটা অসাবধান কাজ এখানে ছবিতেকরা হইছে। ভাগ্যিস এটা পাকিস্তান নয়। এজন্য আমরা–এটাকেউ পয়েন্ট আউট করেছেন কিনা, আমি দেখছি না। গ্রামের লোক ওনাকে পয়গম্বর মনে করে। ইংরেজি অনুবাদের মধ্যে লিখছে,'দে ট্রিট হিম লাইক এ সেইন্ট।'এই যে পয়গম্বর বলা, এটা তো হালকাভাবে বলেছে, না বোঝার জন্য বলতে পারে। এইটা হচ্ছে একটা; মুক্তিযুদ্ধের পিছনের চরিত্রকে ছফা ল্যাং মেরেছেন–এই অভিযোগ করেছিলেন আমাদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস,আহমদ ছফার পাঁচটি উপন্যাসের ভূমিকায়। আহমদ ছফার যেটুকু সমালোচনা করেছেন সেটা কলকাতায় আশ্রিত বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের সময়যা যা করেছেন, তার একাংশকে তিনি সমালোচনা করেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আহমেদ ছফা নেভার ডিজওন মুক্তিযুদ্ধ। আহমেদ ছফার একট বিখ্যাত লেখা আছে—একাত্তর: মহাসিন্ধুর কল্লোল। সেখানে উনি বলেছেন,অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন–মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে। উনি বললেন যে, আমি এ স্মৃতিচারণ করতে পারব না। একাত্তরের মহাসিন্ধু থেকে এক ঘটি জল নিলে কি তার চরিত্র বোঝা যাবে? এটা উনি অভিমান করে বলতেন। তবুও আমি একটা কথা বলব—বইলা উনি লেখক শিবিরের জন্মকাহিনীটা বললেন। সেটা ভোরের কাগজে ছাপা হয়েছিল, এই লেখা। আপনারা অনেকেই সেটা হয়তো পড়েছেন। আমি এইজন্য বলছি কি–যে, আহমদ ছফাকে, নামটা এই ছবিতে ব্যবহার করা, এই ছবির আরেকটা, আমি বলব যে–অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। একজনের লেখাকে সম্পূর্ণ তার বিপরীতে নিয়ে যাওয়া যায় না।

[পিয়াস করিম: ছবিতে কি ব্যবহার করা হয়েছে? ছবিতে মনে হয় ব্যবহার করা হয় নি।]

ছবিতে লিখেছে আহমদ ছফার আইডিয়া দ্বারা ইন্সপায়ার্ড…

[পিয়াস করিম: ও আচ্ছা। হ্যাঁ।]

ব্রাত্য রাইসু: উদ্বুদ্ধ হইতেই পারে। ভুলভাবে উদ্বুদ্ধ হইতে পারে না?

সলিমুল্লাহ খান: না, পরে লিখছে কি–এই যে রুবাইয়াতের লেখা নিয়ে যারা সন্দেহ করছেন, এটা যে ফাহমিদুল লেখে নাই, রুবাইয়াতের লেখাটা, তার পক্ষে এটা প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তার প্রবন্ধের শেষে…প্রথমত সে লেখে, মানে—'মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে' প্রবন্ধের শেষে বলে কি….. 'সুপণ্ডিত আহমদ ছফা অনেক আগেই বলেছেন–'। আহমেদ ছফাকে সুপণ্ডিত বলতে এই প্রথম আমি দেখলাম।

ব্রাত্য রাইসু: উনি তো মহাত্মা হিসেবেই পরিচিত। ফরহাদ ভাই, কিছু বলেন?

পিয়াস করিম: না, আমি শুধু একটা পয়েন্ট একটু বলব, সেটা হচ্ছে যে—না, আমি মোরশেদুল ইসলামকে চিনি, পরিচয় হয়নি, আপনাকে চিনি। কিন্তু…যেটা হচ্ছে যে, না, আমি আপনার (মোরশেদুল ইসলাম) একটা বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে, এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ হেয় হয়েছে, আমি মনে করি। এই অর্থে বলেছি যে, থিওরিটিক্যালি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মানবিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে চরিত্রে দেখানো সম্ভব নয় বলে, তা নয়। আমি ওই সময় বেঁচে ছিলাম, বয়স কম ছিল, সলিমুল্লাহ খান, আমি–একই বছরে জন্ম। কিন্তু আমরা তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেককে চিনি এবং এর অনেক গল্প বলা যেতে পারে, যেটায় হেজিমনিক ন্যাশনালিস্ট ডিসকোর্স আমাদেরকে লাত্থি মেরে বের করে দেবে, এগুলো বললে আর কি। অনেক কেলেঙ্কারির গল্প আমরা জানি। ব্যাপারটা…কিন্তু এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের যে একটা মাল্টিফেসেটেড কমপ্লেক্সিটি থাকা উচিত ছিল–এই কমপ্লেক্সিটি ছবিতে উঠে আসেনি। আমি এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে একমত।

ব্রাত্য রাইসু: কী বললেন–কমপ্লেক্সিটি?

একটা বহুমাত্রিক জটিলতা, [ফাহমিদুল হক: বহুমাত্রিক জটিলতা যেটা ছবির সম্ভাবনায় ছিল, ওইটা আর আসেনি।]

পিয়াস করিম: হ্যাঁ, ওইটা আসেনি। বিকশিত হয়নি।

সুমন রহমান: না, এখন জিনিসটা হচ্ছে যে, ছবিটার টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে। আমাদের প্রবলেমটা হচ্ছে যে, আমাদের যেটা হয়, যখনই ছবির প্রবলেম নিয়ে আলোচনা করি, তখন আমাদের আলোচনাটা চলে যায় যে–এইটা হয়নি, মানে, এইটা আরও হইতে পারত। কিন্তু যদি আমরা ধরি যে, এটা একটা ওয়েল মেড ছবি; হ্যাঁ, এটাতে কোনো–কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি নেই, সবাই খুব ভালো অভিনয় করছে, খুব সুন্দর ছবি–তাহলে যে ডিসকোর্সটা সামনে আসল আর কি, এ ছবির মাধ্যমে–সেটা নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি কিনা?

সলিমুল্লাহ খান: আমি শুরুতে যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, রাইসু, আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে, এখানে দুইটা ভাগ করে আলোচনা করা যায়। আপনি তখন বাগড়া দিলেন। আমি বলেছি যে, একটা শিল্প হিসেবে আলোচনা–আমি করব না বলে এটা আমি ভাগ করে রাখছিলাম। আমি বলেছি কী, সত্যের সাথে এর কী সম্পর্ক? এই জন্য আমি শুধু একটা রেফারেন্স দিচ্ছিলাম–সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে'। এটা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের বিরোধী, এ রকম একটা ক্যারেকটারাইজেশন আছে। কারণ তার আগে রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসেই এরকম বিরোধী বলে স্বয়ং…লুকাস আপত্তি করেছিলেন। আপত্তিটা সঠিক আমি তা বলতে চাই না। অর্থাৎ মানুষ আপত্তি করে, এটা স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের তৎকালীন ফেইসকে যেভাবে দেখাইছেন …লুকাস ভুল করেছিলেন, উনি বলেছেন, সন্দ্বীপ হচ্ছেন গান্ধীবাদী। আমি বলছি যে, সন্দ্বীপ গান্ধীবাদী না, সন্দ্বীপ হচ্ছে বাংলার সন্ত্রাসবাদীদের প্রতিনিধি।

[পিয়াস করিম: অনুশীলন সমিতির…]

অনুশীলন সমিতির লোক। তো যা হোক, এ ধরনের ত্রুটি হয়। আমারও জ্ঞানের অভাব হতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, আমি আমার সেন্টিমেন্টটা বলছি এভাবে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়…আপনিও বেঁচে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়, আমারও বয়স ১৩-১৪ বছর ছিল। আমার মোটামুটি জীবন্ত স্মৃতিতে আছে, মুক্তিযুদ্ধের উভয় সাইড—নারীর সাইড, পুরুষের সাইড। আমার একটা পারসেপশন, ভুল হতে পারে, সেইটা–দেখছি কি, এইখানে মুক্তিযুদ্ধের যে ডমিনেন্ট ডিসকোর্স তার থেকে একটু বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আহমদ ছফা চেষ্টা করেছিলেন। আমি শুধু প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি, আহমেদ ছফা যেদিক থেকে সমালোচনা করেছিলেন, এটা সেদিক থেকে নয় এবং আহমেদ ছফার সমালোচনাটা আমার চোখে গ্রাহ্য, এটা আমার চোখেও গ্রাহ্য নয়। আমি শুধু এই মতটা বলার জন্য এসেছি।

পিয়াস করিম: আমি একমত, আপনার সঙ্গে।

ব্রাত্য রাইসু: সুমন, কী যেন বলতেছিলেন, শেষ করেন?

সুমন রহমান: না, ওইটাই। ওই প্রসঙ্গ যে অর্থাৎ যে, টেকনিক্যাল বিষয়গুলা বাদ দিয়ে আমরা জাস্ট–যেটা, সে আসলে, মানে, মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে–সেটা যদি আমরা বলতে পারি।

ব্রাত্য রাইসু: আচ্ছা, আমি একটা প্রশ্ন করি। নতুন প্রশ্ন। সেটা হলো যে, যদি এটা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করে এবং আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই হই তাহলে তো–এটা নিষিদ্ধ করার সমস্যা কোথায়? যদি এটা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তাহলে এটা নিষিদ্ধ হবে না কেন?

সুমন রহমান: বিরোধিতা করে কেন? বিরোধিতা তো করে না।

মোরশেদুল ইসলাম: আমি নিষিদ্ধ করার পক্ষে একেবারেই নই, নো, নো…।

পিয়াস করিম: আমি বুঝি কি—এর থেকে অসম্মানের কিছু হয় না, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললেই যদি নিষিদ্ধ করা হয়—মুক্তিযুদ্ধকেই অসম্মান করা হয়।

ব্রাত্য রাইসু: মোরশেদ ভাই কি বলছিলেন?

মোরশেদুল ইসলাম: আমি নিষিদ্ধ করার পক্ষে একেবারেই নই। আমার কথা হচ্ছে, মানে যেকোনো শিল্পকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে আমি। এখন যদি জামায়াতে ইসলামের কেউ, আমার বক্তব্য হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর কেউ যদি–ছাত্রশিবির করে, এরকম কেউ যদি একেবারেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী একটা ছবি করে আমি সেটাকেও সেন্সর দেয়ার পক্ষে। পাবলিক উইল রিজেক্ট। দর্শকরা রিজেক্ট করবে–এটা হচ্ছে আমার কথা। সুতরাং সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে আমরা সবসময় বলছি, ফিল্মের।

ব্রাত্য রাইসু: এ ব্যাপারে, আপনি, হাবীব ভাই, কী বলেন? নিষিদ্ধের ব্যাপারে?

হাবীব খান: নিষিদ্ধ তো এটা হয় নাই।

ফৌজিয়া খান: অফিশিয়ালি তো নিষিদ্ধ হয় নাই। [ব্রাত্য রাইসু: না, না, নিষিদ্ধ করা যাইতে পারে তো?] এইটা আমি মনে করি আরও আপত্তিজনক যে, আসলেই এটা একটা ভয়ংকর ঘটনা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। যেই ছবিটাকে সেন্সর দেয়া হলো, রিলিজ করা হলো এবং সেই ছবিটা একটা অঘোষিত, মানে, এটা যদি ধরেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলের গভর্নমেন্ট থাকত তাহলে কিন্তু এটা হচ্ছে গিয়ে, আমি মনে করি যে, আমরা ধরেই নিতাম যে–হ্যাঁ, এই দলের লোকেরা করতেই পারে। কিন্তু কেন? এটা তো একটা মানে…

সুমন রহমান: মামলাটা তো ছবির না। ছবির মামলা হলে যতরকম প্রতিবাদ হইছে, তার নাইনটি পারসেন্টই ছবিটা দেখে নাই এবং তারা প্রয়োজনও মনে করতেছে না ছবিটা দেখার।

ফৌজিয়া: না, তারা ছবি দেখেই প্রতিবাদ…

সুমন রহমান: না,না, না, প্রশ্নই আসে না। [ফৌজিয়া খান: না, না, ডেফিনিটলি ছবি দেখেই প্রতিবাদ করছে।] আপনি তাহলে ব্লগ দেখেনই নাই। জার্মানির–ছবি পাবে কোথায় তাঁরা? জার্মানিতে ইংল্যান্ডে—এসব জায়গায় যে প্রতিবাদ হচ্ছে?

[মোরশেদুল ইসলাম: না, তাঁরা ছবি দেখে নাই।]

হ্যাঁ, হ্যাঁ এবং তারা সেটা আপহোল্ডও করতেছে। [মোহাম্মদ আজম: তাঁরা ম্যাক্সিমামই ছবিটা দেখে নাই।] এবং তারা সেটা আপহোল্ডও করতেছে।

ব্রাত্য রাইসু: না, না, হাবীব ভাইকে আমি জিজ্ঞেস করব যে—এই যে নামাইয়া দিলেন–এটা কি–এখন ওনাদের আপত্তি এবং এই যে ওনারা নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে, এখন আপনার কী মনে হয়, যে নামানো কি… [হাবীব খান: নিষিদ্ধ করার পক্ষে তো আমিও নই।] হ্যাঁ, তাহলে নিষিদ্ধ না কইরা নামায় দেওয়া। এইটার মধ্যে কী—

হাবীব খান: দেখলাম যে এত সবাই দুঃখ পাচ্ছে, সবাইকে কষ্ট দেওয়া, সেইজন্য নামায়া দিলাম।

পিয়াস করিম: সবাই তো কষ্ট পায়নি, আমি তো কষ্ট পাইনি।

ফাহমিদুল হক: বন্ধুদের চাপে উনি নিজেকে উইথড্রো করেছেন।

হাবীব: না, না, বন্ধুদের চাপে না শুধু। আমাকে অনেকে…

[মুসতাইন জহির: উনি একটা কথা পরিষ্কার করে বলেছেন যে, উনাকে রাজাকার বলা হচ্ছে।]

হাবীব খান: অনেক কিছুই, আমি—আমি বললাম তো, আমাকে একজন বলেছে, আমি কোনো নাম বলব না, হাবীব, ইউ কাম আউট। আমি বললাম, এখন–সেই বৃহস্পতিবার রাতে–আমি বললাম, এখন তো আমি কাম আউট করতে পারছি না। বললেন, কেন? আমি বললাম, আমি দুইটা অ্যাগ্রিমেন্ট করেছি–একটা প্রডিউসারের সঙ্গে, একটা সিনেমা হলের সঙ্গে। আর আজকে বৃহস্পতিবার, কালকে আমি–কোন কারণে আমি এটা করব? তাদের, তাদের…তাদের যে রাগ কিংবা তাদের যে সেন্টিমেন্ট, তার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। তাঁরা সেটা–সেন্টিমেন্টাল তাঁরা হয়েছে। আমি তো বলেছি ভাই–আমার পক্ষে তো এটা সম্ভব না। কালকে আমি দুইটা অ্যাগ্রিমেন্ট আমি ডিজ-অনার করতে পারছি না। তারপরে তো একসপ্তাহ পরে শেষে আমি বললাম যে থাক—এইটাকে আমি, আর যাওয়ার দরকার নাই। আমি ছবি উইথড্রো করতেছি।

মোরশেদুল ইসলাম: যা হোক, তাও আমি খুশি যে, সেন্সর বোর্ড ছবিটাকে নিষিদ্ধ করে নাই এবং আমি, সেন্সর বোর্ড ছবির দুইটা জায়গা কেটেছে, সেটারও আমি বিরুদ্ধে, সেটাও থাকা উচিত ছিল। কারণ, তাহলে কিন্তু আমরা ছবিটা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পেতাম।

ব্রাত্য রাইসু: এখন মোরশেদ ভাই, আপনাদের কি কোন সংগঠন আছে?

মোরশেদুল ইসলাম: দুইটা জায়গার মধ্যে একটা জায়গায় ডায়ালগ ছিল যে, 'মুক্তিযুদ্ধ আমরা কেন করছি, লক্ষ্যটা কী? এরকম আদর্শহীন যুদ্ধ কেন আমরা করবো?' এ ধরনের ডায়ালগ একজন–বামপন্থি একটা ছেলে–তার মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে।

ব্রাত্য রাইসু: আচ্ছা মোরশেদ ভাই, আপনাদের প্রতিষ্ঠানের নাম কি চলচ্চিত্র…

মোরশেদুল ইসলাম: চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটি।

ব্রাত্য রাইসু: না, এর বাইরেই কি আপনাদের চলচ্চিত্রজগতে কোনো ফোরাম আছে কি না? যেইখান থেকে আপনারা সিনেমা নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে কিংবা সিনেমা নামায়ে দেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন, এই রকম কোনো জায়গা কি আছে কোথাও?

মোরশেদুল ইসলাম: আমাদের তো অনেক ফোরাম আছে, যেমন শর্ট ফিল্ম ফোরাম আছে। এখন সেইটা আমি জানি না, তাঁরা ওইটা…

সলিমুল্লাহ খান: আপনি কি বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিতে আছেন?

মোরশেদুল: ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিতে তো আমি আছি, কিন্তু আমি এখন সরাসরি নাই…

সলিমুল্লাহ খান: সভাপতি না আপনে?

মোরশেদুল ইসলাম: সভাপতি আমি এখন আর নেই। আমি গত টার্মে ছিলাম। এখন আরেকজন সভাপতি, সুতরাং আমার ধারনা আছে–এই সবগুলো ফোরামই আমাদের বক্তব্যের সাথে একমতই হবে। কিন্তু যেহেতু ওগুলোকে আমি, মানে, রিপ্রেজেন্ট করছি না ওইভাবে–আমি বলতে পারি না।

ব্রাত্য রাইসু: মানে, আপনার জানা মতে তাদের কোনো উদ্যোগ নাই এইটার ব্যাপারে?


মেহেরজান সিনেমা থেকে

ফাহমিদুল হক: এটা আমারও একটা প্রশ্ন। সেটা হলো যে ফিল্ম নিয়ে, এই ছবিটা নিয়ে আলোচনা করছেন দর্শক, কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেন যারা তারা এবং মোটাদাগে ব্লগাররা। এখানে চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত, অ্যাট লিস্ট ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্মের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের কোনো রোল আমরা এখানে দেখছি না। যেটা আমরা…[ব্রাত্য রাইসু: তাদের রোল তো আছে। তারা যে নীরব থাকছে, এটাই তাদের রোল।] হ্যাঁ, এইটা যদি একটা রোল ভাবি। বিশেষ করে নেমে যাওয়ার পরে, ছবিটা নেমে যাওয়ার পরে একটা কিছু তাদের দিক থেকে—একটা ফোরাম থেকে আসা উচিত ছিলো।

ব্রাত্য রাইসু: আপনি কি মনে করেন যে, এই ধরনের–নিষ্ক্রিয়তা কি পরবর্তী

হাবীব খান: না, নেমে যাওয়ার পর একটা সুন্দর উদাহরণ আছে। একজন–প্রদর্শক সমিতির একজন সভাপতি, উনি বলেছেন যে, এই ছবিটা নামানো ঠিক হয় নাই। আমার প্রশ্ন, এখন আমি প্রশ্নটা কারে করবো? আমার প্রশ্ন হলো–অভিসার সিনেমা হলে চলত, উনি অভিসার সিনেমা হলের মালিক, ছবি তো উনিই নামিয়ে দিয়েছেন, আমি তো ওনাকে ডিসকনটিনিউ করি নাই। এখন কী বলব?

মোরশেদুল ইসলাম: না, উনি ডিসকনটিনিউ করেছেন–ওটা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে।

হাবীব খান: না, না, সেই কথাই তো বললাম, এই যে—

মোরশেদুল ইসলাম: একজন প্রদর্শক এটা নামিয়ে দিতেই পারে। তাতে দোষের কিছু নাই।

সলিমুল্লাহ খান: না, ছবিটা যারা প্রথম সমালোচনা করেন, প্রথম আলোতে সেটা আছে। মোরশেদ ভাই, এই যে রুবাইয়াত এবং আরও তিন জন–মাহবুবুজ্জামান বাবুসহ, কাবেরী গায়েন এবং ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীসহ চারজন যে লিখেছে, তারা ওখানে লিখছে কী, আমরা ছবিটা নামানোর পক্ষপাতী নই বা নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নই। লোকে ছবি দেখুক এবং বর্জন করুক, এই হচ্ছে তাদের অ্যাটিচ্যুড। কিন্তু আমি ছবির বিরুদ্ধে আপত্তির প্রধান কারণ হচ্ছে ছবি যত কথাই বলুক না কেন, এখন একটা ডিসকোর্স বাংলাদেশে একা হচ্ছে না। একটা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ আছে। পৃথিবীতে লক্ষ্য করেন, আজ পাকিস্তানিরা যে বইগুলো লিখছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, আপনি সেগুলোকে ইগনোর করতে পারেন না। পাকিস্তানি জেনারেলদের চোখে, নিয়াজি যে আত্মসমর্পণ করেছিল তার বইয়ের নাম কী–'দি বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান'। হাসান জহির বলে একজন আছেন। তার বইয়ের নাম কী–'সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান'। আর ইন্ডিয়ানরা বই লেখে কী–পাকিস্তানিরা বলে যুদ্ধ আমাদের ইন্ডিয়ার সাথে হইছে, বাংলাদেশ কিছুই না, এখনও পর্যন্ত। তারা রেইপের কথা স্বীকার করে না। যেমন নায়লা খান তার লেখায় বলেছে, পিকিংয়ে বেনজির ভুট্টোর সাথে তাদের দেখা হয়েছিল কয়েকটি প্রতিনিধি দলের। সেখানে বেনজির ভুট্টো বলেন, ওমা! তোমাদের দেশে যে রেইপ হয়েছে আমি তো কিছু জানি না! উনি, ডটার অব দ্য ইস্ট-এ বলেছেন, সে বই আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, নানা বই পড়ার মধ্যে–পিয়াস যদি কিছু মনে না করেন। সেখানেও কিন্তু তিনি এগুলো স্বীকার করেন নি। এ হচ্ছে আমাদের জীবনের একটা বাস্তবতা। এখন ইন্ডিয়ানরা কী বলেন, তাঁরা বলে, 'লাইটনিং ক্যাম্পেইন', 'পাকিস্তান, কাট টু সাইজ'। এগুলো ভারতীয়দের বই। ভারতীয়রাও মনে করে না, এখানে যদিও বা মাঝে মাঝে তারা বেড়াতে আসে, বাংলাদেশের লোকেরা–মুক্তিযোদ্ধারা কিছু করেছে। সেটা তারা কিন্তু কনডেসেন্ডেংলি একটু বলে, মুক্তিযোদ্ধারা একটু সাহায্য না করলে আমরা কি আর ১২ দিনে পাকিস্তানকে হঠাইতে পারি! এইটুকু বলে। কিন্তু কাজটা আমরাই করেছি। তাহলে ইন দ্য ইন্ট্যারন্যাশনাল ডিসকোর্স ইট ইজ এ পাকিস্তান-ইন্ডিয়া ওয়ার, স্টিল। এবং ইন্ডিয়ান ডিসকোর্সে এটা ইন্ডিয়া'স ভিক্ট্রি। এক হাজার বছরের সুযোগ–পাকিস্তানকে দু'টুকরা করার। আর পাকিস্তানিরা বলে কি, বিট্রেয়াল অব দি ইস্ট পাকিস্তান। কথাটার দ্বিমুখিতা আছে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা বেইমানি করেছি, অথবা আমাদের নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বেইমানি করেছে। যেভাবেই নেন না কেন–এই ডিসকোর্সের মধ্যেই কিন্তু আপনাকে ছবি বানাতে হচ্ছে। আপনি এগুলি না এনে কিন্তু উট পাখির মতো চোখ বন্ধ রাখতে পারেন, তাহলে যুদ্ধটা বাংলাদেশের যে, এটাই এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি আন্তর্জাতিকভাবে। এইজন্য আমরা করছি কি,এখন আর্চারড কে ব্লাড ধরতেছি। আর্চারড ব্লাড কে? আমেরিকান দূতাবাসের একজন মাইনর অফিসার যিনি মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করেছিলেন। এখন তার নামে বিরাট বই বেরোচ্ছে–'দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, মেমোয়ার্স অব এন আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট, সেকেন্ড এডিশন, ২০০৬। কেন? কারণ হচ্ছে এখন অ্যামেরিকান যে জুনিয়র অফিসার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল, এটা বলা এখন আমাদের বর্তমান ডিসকোর্সের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ গেল কোথায়? বাংলাদেশ কোথাও নাই। যদিও আমরা বলছি যে, এখানে একটা ডমিন্যান্ট ডিসকোর্স–মধ্যবিত্তরা আছে এখানে। কিন্তু এই মধ্যবিত্তের ডিসকোর্স এটাকে বাংলাদেশের পিপল'স ওয়ার বলতে চায় না। মানে বাংলাদেশের বর্তমান মধ্যবিত্তের ডিসকোর্সটা হচ্ছে আপনি বলছেন, নব্য ফ্যাসিস্ট। তারা বলছে কি, 'এক নেতা এক দেশ'। এই হচ্ছে স্লোগান। আমি…'এক নেতা এক দেশে'র অনুবাদ হচ্ছে ফ্যাসিজম। তো বাংলাদেশের ডিসকোর্সটা চলছে এখন ফ্যাসিস্ট, এখন আমরা যাই কোথায়–গরিব, দাঁড়াই কোথায়? কিন্তু তারপরও আমরা কি মুক্তিযুদ্ধকে ফেলে দিতে পারি? পারি না। ওই যে বামপন্থি কয়েকজন বলেছেন–তোহা সাহেব, হক সাহেবের নাম, এবাদুরের উপন্যাসেও আছে, ফিল্মে দয়া করে দেয় নাই; কিন্তু মূল কথাটা সেইটাই যে, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আমরা, ঐ যে 'দুই কুকুরের লড়াই' তত্ত্ব–সেই তত্ত্ব জনগণ রিজেক্ট করেছে, ইতিহাস রিজেক্ট করেছে এবং এখনো পর্যন্ত যারা রিজেক্ট করেনি, তাদের উচিত রিজেক্ট করা। এটা আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ।

ব্রাত্য রাইসু: তো আমরা অনেকক্ষণ আলাপ করলাম। শেষ করব কিছুক্ষণের মধ্যে।

ফরহাদ মজহার: আমি দুই-একটা কথা বলি।

ব্রাত্য রাইসু: জি, ফরহাদ ভাই, বলেন।

ফরহাদ মজহার: আমার ছোট্ট, আমার তরফ থেকে–

ব্রাত্য রাইসু: না, বড়ও বলতে পারেন, অসুবিধা নাই।

ভিডিও ধারণ ও অনুলিখন: প্রমা সঞ্চিতা অত্রি

ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts