নেই শিরোনাম
বড্ড জেদি। বেপরোয়া। বিবেচকও বলা যায় না তাকে।
স্বভাবে লুটেরা। অস্থির। ক্ষুধিত। বুনো বেপরোয়া।
হ্যাঁচকা টান দেয়। উন্মোচন করে। লৌকিক নেকাব।
দুরন্ত, নাছোড়। অতিশয় একগুঁয়ে। নাই কাণ্ডজ্ঞান।
সর্বদাই জয়ী হতে চায়। পরাভব কিছুতে মানে না।
যতো শাস্তি নিপতিত হয় হোক, লক্ষ্যে অবিচল।
গুরুদণ্ড হলেও পরোয়া নেই। অদম্য এমন।
কিন্তু ওর অভ্যন্তর ফাঁপা। খুঁতও আছে। শূন্যতা দীঘল।
অপূর্ণ কামনা বাসনা। নিরাশার বেবুঝ শেকল।
বুকভরা দীর্ঘশ্বাসও দেদীপ্য প্রবল। গোঙানিবহুল।
মুমূর্ষু কাতর। আকাঙ্ক্ষা বিভ্রমতুল্য। ধু ধু সে আলেয়া?
কামক্রোধ তাড়না রিপুর। সুগভীর ইন্দ্রিয়পরতা।
বলতে পারো নার্সিসাসও। একলা জ্বোরো ন্যুব্জ পিঠ।
আত্মপ্রেমে বেগানা উদ্বেল। ফিরে আসবে? রুদ্ধ পথ।
তৃষ্ণা তার নাম। মোহ তার নাম। আকাঙ্ক্ষাও বলা হয় তাকে।
ভাঙাপোড়া জোড়া জোড়া
ক.
নদীর কাছে বলতে পারি, গ্লানি দুঃখ-কথা
আপন স্রোতের ভালোবাসায় ভাসিয়ে নেবে দূরে
খ.
বৃক্ষসখা, তার সমীপে বিষাদ জমা করি
যেন সে ভল্ট গোপন স্মৃতির প্রত্ন আবাসন
গ.
নাই যতি অথবা বিরতি
ভালোবেসে হলে হোক পরাভব ক্ষতি
ঘ.
তোমার নৈকট্য চেয়ে শীতলতা দূরত্ব পেয়েছি
তাও তো কিছুটা পাওয়া, রিক্ততার চাইতে যেটা ভালো।
ঙ.
সন্ধ্যার আঁধারে ভাবলে প্রিয় মুখ
অন্ধকার হটে গিয়ে জ্বলে ওঠে আলো
চ.
হয়নি মিলন আর হবে না, ভালো করেই জানি
আকাশ-বাতাস জানলে পরেই করবে কানাকানি
ছ.
পথ ভেঙে ফেলি খোঁপাও তো খুলি
ডুবে গিয়ে মরতে চাই বলে, পথও ভুলে যাবো
জ.
আছে যতো তীর, বেঁধাও আমাকে
জন্মেছি তো শরবিদ্ধ নিহত হতেই
ঝ.
কোন্ জাগতিক যুক্তিবলে ঠেকিয়ে দিতে চাও?
অদম্য এক কবির তৃষায় অগ্নি হয়ে মরো
ঞ.
আমরা আছি মিলনে বিরহে
নৈকট্যে-দূরত্বে দগ্ধ দোঁহে নিরালায়
ট.
অসবর্ণ প্রেম, ধিকিধিকি তুষের আগুন
এক জন্মে পিপাসা কখনো মেটে? হই নিত্য খুন
ঠ.
খাঁচা খুলে দিয়েছি কবেই
তুমি পাখি, আকাঙ্ক্ষিত মুক্তি নিয়ে নাও!
ড.
ভালোবেসে নেমেছি পাতালে
এক জন্ম কেটে যাক, অবসানও হোক সেখানেই।
ঢ.
এক পশলা ছোঁয়াছুঁয়ি, আধো আলিঙ্গন
চুম্বনে মাদকে দুঁহু জড়াজড়ি, আর কীই বা চাই
ণ.
মুক্তো হতে যদি পারতাম
তোমার কন্ঠার স্পর্শ তবে পাওয়া যেত।
জানা আছে কার
মনেও ময়লা জমে
শরীরের মতো,
জানতে হলে দেখতে হলে
অতীন্দ্রিয় চোখ থাকা চাই।
ক্ষার কোথা পাই?
মনের দুঃখই বেশি
শরীরী জখম ক্ষত ব্যাধির তুলনে
উপশম বড়ই দুর্লভ
মানবীর মানবিক শুশ্রূষা মমতা
যত্ন আর ভালোবাসা
পথ্য আর ঔষধও তো যুগপৎ
ক্রমশ তা দুষ্প্রাপ্য হয়েছে?
জোগানের উৎসমূল কোথায় রয়েছে?
কেউ কি তা জানে?
মানুষ জানে না!
বাস্তবতার বিপরীতে
নদীর চোখে মানুষ দেখা, কেমন ব্যাপার?
শক্ত, ভীষণ জটিল সেটা
সরল অঙ্ক হলে হয়তো ভালোই হতো
আমরা যা চাই সবটা কি পাই?
নদীর ইচ্ছা অন্যরকম, মূর্খ মানুষ
বুঝতো যদি হাল হকিকত ভালোই হতো
নদী কী চায়? মানুষ কি তা জানতে পারে?
জানতে পেলে পাপ স্খালনের সুযোগ পেতো
এতো অমঙ্গলের মধ্যে একটু ভালোই হতো
নদীর চোখে মানুষ তবে কিবংপ্রকার?
নৃশংস আর অত্যাচারী অমানবিক
নিজের স্বার্থ ষোলো আনাই কম কিছু না
নেচার ফেচার গোল্লায় যাক, কী এসে যায়
নিঝুম নদী সাক্ষী নীরব সাধ্য তো নাই
এই জুলুমের বিরুদ্ধে সে সোচ্চার হয়
ছড়িয়ে দিতে সক্ষম নয় ঘৃণার থুতু
পারতো যদি উমদা হতো ভালোই হতো
কিন্তু এসব সম্ভব নয় কল্পনা সে
বাস্তবতার ধার ধারে না ধার ধারে না
জলরঙে বন্দিশের ছবি
তটিনী তরঙ্গ দেখে, তার স্নিগ্ধ সাহচর্য পেয়ে
মুছে ফেলি মনোকষ্ট, গোপন বিরহভার
যৎকিঞ্চিৎ হালকা ও ধূসর হয়ে আসে,
নদী ঢেউ হয়তো কিছু জাদুটোনা আয়ত্ত করেছে
নদী হয় নিরবধি দুঃখ কষ্ট বৈরাগ্যের সহগামী
আমার অপ্রাপ্তি ধুয়ে নিয়ে চলো সাগর সঙ্গমে
বাঁচতে বাঁচতে বড়ো বেশি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গেছি
ভুলের দোসর হয়ে নৈমিত্তিক জীবনের ছন্দছুট
রুটিনের নিয়ত ছোবলে জখমি অম্ল হয়ে আছি
গাঙের গহিনে যদি নিজের অস্তিত্ব পেতো নিমজ্জন
বেশ হতো, কিন্তু সে গুড়ে বালি, দীর্ঘশ্বাসই সার
তটিনী তরঙ্গ তুমি, খোলাচুলে বিরহ সংগীত
বন্দিশের ছবি আঁকছো জলরঙে একান্তে ক্ষমায়
সে ভুবনে নাই কোনো ছদ্মবেশী গণতন্ত্র কপটতা ভান
আছে শুধু ডানাভাঙা আর্তনাদ, বিচ্ছেদের বেহাগ সানাই
নদী জানে বলেই তো চড়া পড়ে তলপেটে তার
মুখ থুবড়ে থেমে যায়, শুরু হয় খরা সংকীর্তন
সংবেদনে তিয়াসা ঘুঙুর নাচে নাচতে নাচতে এক সময়
ক্লান্ত আর পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে, স্মৃতিভ্রংশ হানা দেয়
সত্যাসত্য যাচাইয়ের আর কোনো ক্ষমতা থাকে না।
পথরেখা ঝাপসা ও সুদূর
যে কবিতা লেখা হয় নি
তারও আছে অশ্রুপাত বেদনামন্থন
আছে অতৃপ্তির দাহ অচিকিৎস্য রোগ
সেসব তাড়িয়ে ফেরে আমাকেই সর্বক্ষণ
মুক্তি খুঁজতে চেয়ে আরো নাকাল বেদিশা হই
আরো বেশি শৃঙ্খলিত, আরো বেশি উন্মূল কাঙাল।
যে বিপ্লব আজো অব্দি অধরা দূরের
তারও কিন্তু রক্তপাত ক্ষরণ বেদনা আছে
মনোমাঝে সারাক্ষণই সংক্রমিত হয়
স্বৈরাচারী বিষদাঁত তাকেও কামড়ে ধরে
কৌশলী জুলুম থেকে রেহাই সে পাবে না পাবে না
আছে বাল্যবিবাহের অগ্নি পোড়াতুষ ধিকিধিকি
নারীর নিগ্রহ আর অসাম্যের অন্ধ আস্ফালন
বুর্জোয়া সামন্তখিদে বেড়ে চলে ক্রমাগত
গ্রাস করে ফেলতে চায় জনপদ আকাশ মৃত্তিকা
যে ঘুম আসেনি চোখে
কবে আসবে জানা নেই, আলামতও দৃশ্যমান নয়
তার জন্যে পথ চেয়ে থাকতে থাকতে
আয়ু জ্বেলে জীবনপ্রদীপ সলতে নিভু নিভু
অসমাপ্ত পথরেখা এভাবেই সুদূরে মিলায়।
ফলাফল
ভূমন্ডলে কেউ তো কারো নয়
এমনকি নিজেও নিজের নয়
এরকম অনাত্মীয় পরিবেশে
কেউ কি সুস্থির মতো বাঁচতে পারে?
সেটা কি সম্ভব?
মানতে হয় ব্যর্থতা ও অন্ধ পরাভব।
কেউ কারো ছিল কি কখনো?
গবেষণা করেও যা মিলবে সারাৎসার
সহজেয় অনুমেয় মিলবে যে-ই ফল
সকলই নিষ্ফল
না-পাওয়ার হাহাকারই সত্য হয়ে
পাবে প্রজ্বলন
এভাবে কেমন করে বেঁচে থাকবে
ভাইবা দেখো মন।