কষ্টদায়ক অতীত স্মরণে

মুশতাক আহমেদের চিত্রকর্ম নিয়ে লিখেছেন শিল্প-সমালোচক তকির হোসেন

তকির হোসেনতকির হোসেন
Published : 25 Sept 2022, 03:57 PM
Updated : 25 Sept 2022, 03:57 PM

মুশতাক আহমেদ হলেন বাংলাদেশের একজন অন্যতম নিষ্ঠাবান চিত্রশিল্পী যিনি ১৯৮০ সাল থেকেই ঢাকা আর্ট সার্কিটে সক্রিয় আছেন। এই সময়কালে, জাতি অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধা অতিক্রম করেছে; আমাদের সৃজনশীল অনুষদগুলি অভিনব স্বপ্ন ও ধারণার এক বলয় তৈরি করেছে। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছি যা যুদ্ধোত্তর ট্রমা, দুর্নীতি, মতাদর্শগত পার্থক্যের সাথে দ্রুত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে যা প্রায়শই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। দেশের বুদ্ধিজীবী এবং সৃজনশীলতার প্রবর্তকরা তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য একটি মুক্ত, উদার, অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল পরিবেশের প্রত্যাশা করেছিলেন। সেই সময়ে দেশ সব দিক দিয়ে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। একজন নিবিড় দর্শক হিসেবে, মুশতাক দেশের পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করেন। তার দ্বারা আকৃতির পরিবর্তন এবং সচেতন ব্রাশ স্ট্রোক একই সাথে স্বতঃস্ফূর্ত এবং সুপরিকল্পিত ভাষা তৈরি করে। তার প্যালেট নরম এবং সাহসিক উপস্থাপনার মধ্যে দুলছে। প্যালেটগুলো শ্রমসাধ্য এবং নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার মধ্যবর্তী ব্যবধানে আঘাত করে আনন্দ এবং পরমানন্দের জন্য একটি খেলার মাঠ জাগিয়ে তোলে। তার আঁকা ছবি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের ইশারায় পূর্ণ। তারা একটি জটিল বাস্তবতাকে অনুধাবন করে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এটি মুশতাককে বাংলাদেশের শিল্প পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট শিল্পীদের একজন করে তুলেছে।

সময়ের সাথে সাথে, মুশতাক নিজেকে পরিশীলিত করতে থাকেন এবং দক্ষতার একটি মেডলি আয়ত্ত করতে থাকেন। ফলস্বরূপ, নতুন লাইন, কৌশল, ফর্ম এবং বিভিন্ন ধরনের বস্তু তার চিত্রকর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একজন রোমান্টিক এবং প্রকৃতিকেন্দ্রিক শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন চিত্রশিল্পী। তিনি সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক চিত্রশিল্পী এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালের হত্যাযজ্ঞ মুশতাকের আঁকা কিছু বিষয়াবলী যা তার মনস্তাত্ত্বিক মেজাজ, ক্রোধ, ব্যথা এবং উদ্বেগের পাশাপাশি ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালের বিপজ্জনক দিনগুলিকে প্রতিফলিত করে। তার সেই সময়কালের গভীর উপলব্ধি তার চিত্রকর্মে যথাসম্ভব অবিকলভাবে এবং প্রতীকীভাবে ফুটে ওঠে। মুশতাকের চিত্রকর্মে তার বিষয়গুলির শিকড়ে গভীর চিন্তাভাবনার কারণে আরও পরিপক্ক দেখায়। সিরিজে তিনি নিজেকে হারিয়েছেন দুঃখের যাত্রায়। আলো ও ছায়ার মিশ্রন তার রচনায় নীরবতা ও নির্জনতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। একজন সংবেদনশীল শিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু হওয়ার পর থেকেই মুশতাক তার চিন্তাভাবনার স্বকীয় প্রক্রিয়া এবং ভাষা বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

মুশতাক আহমেদ একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার পিতা আব্দুর রব ওরফে বগা মিয়া — একজন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, ব্যবসায়ী এবং মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বগা মিয়া একজন সংসদ সদস্য (এমপি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। বগা ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় হঠাৎ গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তাঁর স্ত্রী বেগম জাহানারা রব ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে (বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যার আগ পর্যন্ত) পাবনা ও বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন।

১৯৭৫ সালের হত্যাযজ্ঞের সময় মুশতাকের বয়স ছিল মাত্র ১৮ এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি গুলশানে (রোড-১১৩) থাকতেন এবং সঙ্কটের সময় উৎসাহের সাথে তার বাইকে করে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ঘটনার একটি ধারণা পেতে। তার মা তাকে কোথাও যেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু মুশতাক ধানমন্ডি ১৭ নম্বরে তার বড় বোনের বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। পথে তাকে কোনো ধরনের মিছিল বা নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মুখীন হতে হয়নি। তিনি অনুভব করলেন পুরো শহর আতঙ্কে স্তব্ধ। বোনের বাড়িতে পৌঁছে তিনি প্রবীণ  রাজনীতিবিদ আবুল হাসনাত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, কে এম ওবায়দুর রহমান এবং মেজর রহমতুল্লাহর দেখা পান। তারা সবাই খুব উদ্বিগ্ন ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে মুশতাক গভীরভাবে আহত হয়েছিলেন।

এই ঘটনা নিয়ে মুশতাক দুটি পেইন্টিং করেছেন (ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক) যা থিম-ভিত্তিক এবং তাদের প্রকাশের ধরণটি বিশুদ্ধ বর্ণনামূলক। একটি চিত্রকর্মে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের হত্যাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ক্যানভাসে সারা দেশের মানচিত্র জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল রক্তমাখা শরীরকে চিত্রিত করেছেন। পেইন্টিংটি এই আইকনিক ব্যক্তিত্বের বিশাল তাৎপর্যকে বোঝাতে চায়। পেইন্টিংয়ের উপরিভাগ মসৃণ এবং কোথাও কোথাও অসম দেখায়, যেখানে রঙগুলিকে চমৎকারভাবে মিশ্রিত করা হয়েছে। একটি অনন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দুঃখের অভিব্যক্তি তৈরি করতে, তিনি তার অসম সৃজনশীলতা প্রকাশ করেছেন। এগুলি ছাড়াও চিত্রশিল্পী ইমপ্রেশনিজমের মুডে লাল রক্তের প্রবাহ সহ একটি পান্না-সবুজ রঙের চিত্র প্রস্তূত করেছেন। হত্যাকাণ্ডটি চাঁদনি রাতে করা হয়েছিল এবং এটিকে তুলে ধরতে ক্যানভাসে একটি ক্ষীয়মান চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। এর আগে মুশতাক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর জীবন ও কর্মের ওপর বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম করেছেন।

অন্য পেইন্টিংটিতে কিছু এলিয়েনকে (আকৃতি) দেখানো হয়েছে যেগুলো রক্ত ​​চুষে বাতাসে উড়ছে। এলিয়েনদের পা রক্তমাখা। আর ক্যানভাসের নিচের অংশটি নরম সবুজ আর লাল রঙের মিশেলে বৈশিষ্ট্যময় হয়ে উঠেছে। ক্যানভাসটি একটি সদ্য জন্ম নেওয়া দেশকে উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির স্পর্শ অনুভব করার কথা বোঝায়, যা একদল লোক জোরালোভাবে ব্যর্থ করে দেয় এবং তা করার পরই প্রস্থান করে। ১৯৭৫ সালের খুনিরা একটি দেশের উন্নয়নকে থামিয়ে দিয়েছিল এবং এর জনগণের জন্য অন্যায়, বৈষম্য এবং ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ভরা একটি নতুন পথ তৈরি করতে সহায়তা করেছিল। চিত্রটি ২০০৪ সালে করা হয়েছিল এবং ২০০৬ সালে শহরের একটি গ্যালারিতে প্রথম প্রদর্শন করা হয়েছিল। এখন আবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রকর্ম প্রস্তুত করার উপর মন দিচ্ছেন।

মুশতাক আহমেদ অস্পষ্ট আকৃতি এবং একটি চিত্রকর্মের সামগ্রিক  মৌলিক দিকগুলোর ব্যবহারে অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ। তিনি তার ট্রেডমার্ক কৌশলের জন্য সতর্কতার সাথে ব্রাশ ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি রঙের স্তর নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তার ক্যানভাসে দমিত ও প্রাণবন্ত রঙ যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তার সমতল রঙের ব্যবহার একটি আভা তৈরি করেছে যেখানে কেউ শিল্পের প্রতি তার অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা উপলব্ধি করতে পারে। পেইন্টিংগুলিতে বিভিন্ন জায়গা খোলা এবং বড় বলে মনে হয় যার ফলে স্পষ্টভাবে প্রতিটি মুহূর্তের উপর জোর দেওয়া হয়। তার রঙের বার্তা আমাদের আত্মা এবং মন দ্বারা সহজেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

মুশতাক আহমেদ একজন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন চিত্রশিল্পী, যিনি অনেকদিন ধরেই ঢাকার চিত্রকলায় বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। যখনই দেশ কোন অস্থিরতায় ডুবে যায়, তিনি পরিস্থিতিকে তীব্রভাবে চিত্রিত করার জন্য হাত লাগান।

কোভিড-১৯ মহামারী দেশে পৌঁছানোর কিছুদিন পরেই শিল্পী প্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষের ক্রমবর্ধমান দোদুল্যমান মেজাজ – তাদের আতঙ্ক এবং উদ্বেগ – সেইসাথে সামগ্রিক বিপজ্জনক সময়কে প্রতিফলিত করার জন্য একটি ধারাবাহিক চিত্রকর্ম তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই মহামারীর উপর তার গভীর পর্যবেক্ষণ তাকে পরিস্থিতির অন্তর্নিহিত এবং বাইরের অবস্থা বিশ্লেষণে সহায়তা করেছিল।

সময়ের এই পর্যায়ে, মুশতাক অনেকগুলি মানবরূপ চিত্রিত করেছেন, যার প্রত্যেকটির একটি অনন্য চেহারা রয়েছে, কারণ চিন্তাশীল এবং বিষন্ন অভিব্যক্তিগুলি একে অপরের থেকে আলাদা। রঙের সমৃদ্ধ মিশ্রণের কারণে পেইন্টিংগুলির উপরিভাগগুলো মসৃণ এবং কখনও কখনও অসম দেখায়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এতগুলো অভিব্যক্তি তৈরি করতে গিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন তার অসম সৃষ্টিশীল ক্ষমতা। এগুলির পাশাপাশি, চিত্রকর কিছু পান্নাসবুজ-ভিত্তিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ইমপ্রেশনিজমের মুডে চিত্রিত করেছেন, যেখানে কখনও কখনও একটি ক্ষীয়মান চাঁদ ভাল দিনের আশা প্রকাশ করতে উঁকি দেয়।

কর্মজীবনের শুরু থেকেই একজন বিচক্ষণ শিল্পী হিসেবে মুশতাক শিল্পের মাধ্যমে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া ও ভাষাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার চিত্রকর্মে রয়েছে অকৃত্রিম নান্দনিকতার ছোঁয়া। তারপরও শিল্পীর মনের সঠিক গতিপ্রবাহ আন্দাজ করা খুব কঠিন। কিন্তু মুশতাকের আঁকা ছবিগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর যে কেউ নিশ্চিত হতে পারেন যে তিনি একজন রূপক ও আধুনিকতাবাদী শিল্পী। আকাশী, সবুজ, কালো এবং ক্রিমসন তার পেইন্টিংগুলিতে খুব লক্ষণীয় এবং রঙগুলি একে অপরের সাথে ভালভাবে মিশে যায়। রঙগুলি একটি স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করে এবং দর্শকদের সুযোগ দেয় কল্পনা করার জন্য এবং তাছাড়াও দৃষ্টির বিভ্রম উপভোগের জন্য। এটাও লক্ষ্য করা গেছে যে তার বেশিরভাগ রং নিস্তদ্ধ এবং শান্ত দেখায়।

বর্তমান চিত্রকর্মের সিরিজের চরিত্রগুলির বিন্যাসও নিঃসন্দেহে অনন্য এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ। তাঁর চিত্রগুলি দেখলে যে কোন দর্শক একটি একাকী আত্মার বিলাপ, অন্তর্নিহিত দুঃখ এবং নির্জনতার ছাপ অনুভব করতে পারে।

মুশতাক ক্ষুদ্র অস্পষ্ট আকৃতি এবং সামগ্রিক মৌলিক দিকগুলোর ব্যবহারে অত্যন্ত যত্নশীল। কখনও কখনও কালো তার কাজগুলিতে প্রধান ছায়া হিসেবে কাজ করে এবং শিল্পী এই রঙের স্তরগুলি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তাঁর লাইনগুলি একটি আভা তৈরি করেছে যেখানে কেউ তাঁর অধ্যবসায়, আকাঙ্ক্ষা এবং শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা সম্পর্কে জানতে পারে।

মুশতাক তার হলমার্ক টেকনিকের জন্য নিষ্ঠার সাথে ব্রাশ ব্যবহার করেন। তিনি সরাসরি রং প্রয়োগ করেন, এবং তারপর তাদের শৈল্পিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সাবধানতার সাথে পালিশ করেন। তার কাজগুলি কৌশলভিত্তিক এবং এদের মধ্যে অ্যাক্রিলিকনির্ভর চিত্রগুলি স্পষ্টভাবে তার আবেগী মনকে প্রকাশ করে। এই সিরিজে শোকের যাত্রায় নিজেকে হারিয়েছেন তিনি।

মুশতাক প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং এর বিভিন্ন রহস্যময় দিক উনাকে এটি আঁকতে উৎসাহিত করে। তবে চিত্রকর মহামারী দ্বারা গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছেন। বর্তমানে, তার প্রকৃতি-ভিত্তিক চিত্রগুলি একটি ফ্যাকাশে পরিস্থিতি বোঝাতে চায় এবং কখনও কখনও তিনি একটি বিষণ্ণ পরিবেশ আনার জন্য দমিত রং ব্যবহার করেছেন, যা আমাদের আত্মা এবং মন দ্বারা সহজেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রঙের পাশাপাশি, আলো এবং ছায়ার মিশ্রণ তার প্রকৃতি-ভিত্তিক চিত্রগুলিতে নীরবতা এবং অন্ধকারের অনুভূতি তৈরি করে। প্রকৃতি সর্বদা তার আত্মার সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থাকে। এর আগে, তার ক্যানভাস চমৎকারভাবে প্রাণবন্ত রঙ বহন করেছিল, যেখানে কেউ শান্তি, সম্প্রীতি এবং প্রশান্তি খুঁজে পেতে পারে। কিন্তু বর্তমান মহামারী তার চিন্তাভাবনা প্রক্রিয়া এবং রঙ প্রয়োগের পদ্ধতিকে নির্মমভাবে পরিবর্তন করেছে।

এটি সহজেই বোঝা যায় যে মুশতাক তার রঙের প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন যাতে তারা একই সাথে স্বাধীন এবং সংযত দেখায়। এখন তার শৈল্পিক চিন্তাভাবনার গতিপথকে আরও পরিপক্ক মনে হয়, কারণ যদিও কোভিড-১৯ প্রায় সবার উপরই প্রভাব ফেলছে, সৃজনশীল ব্যক্তিরা এর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।

মুশতাক আহমেদ ঢাকা আর্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন শিল্প সংগ্রাহকও বটে। তার শিল্প সংগ্রহে সমসাময়িক বাংলাদেশী মাস্টার পেইন্টার, ভারতীয় মাস্টার পেইন্টার, পশ্চিমা সমসাময়িক শিল্পী এবং অনেক উদীয়মান ও প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশী শিল্পী কর্তৃক রচিত শিল্পকর্ম রয়েছে। তার সংগ্রহের চিত্রগুলো বিভিন্ন বিভাগে সাজানো রয়েছে। বিভাগগুালা হল – আলংকারিক এবং বস্তুনিষ্ঠ বিভাগ, ল্যান্ডস্কেপ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিভাগ এবং বিমূর্ত বা অত্যাধুনিক বিভাগ।

তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও। তার ডকুমেন্টারি "ডাই মিলিয়ন '৭১" কলকাতায় ইন্টারন্যাশনাল বাংলা ফিল্ম ক্রিটিক আ্যাওয়ার্ড ২০১১ পেয়েছে। ডকুমেন্টারিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার উপর নির্মিত।

মুশতাক সবসময়ই নতুন ধারণার প্রতি খুব আগ্রহী এবং সমসাময়িক সংস্কৃতি ও শিল্প সবসময়ই তার এই নতুনের অন্বেষণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি নতুন চিন্তার জন্য প্রস্তুত, যা তাকে সৃজনশীলতার সমস্ত উপায়ে আগ্রহী হওয়ার ফুরসত দেয়।