গিইয়্যের্মো আররেওলা: নিঃসঙ্গ কন্ঠস্বর

মেহিকোর প্রথম সারির চিত্রশিল্পী ও কথাসাহিত্যিক আররেওলা সম্পর্কে বিখ্যাত মার্কিন লেখক আলফ্রেড কর্ন-এর অভিমত

রাজু আলাউদ্দিনরাজু আলাউদ্দিন
Published : 4 March 2023, 12:34 PM
Updated : 4 March 2023, 12:34 PM

গিইয়্যের্মো আররেওলা মূলত চিত্রশিল্পী ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম বাহা কালিফোর্নিয়ার তিহুয়ানা শহরে ১৯৬৯ সালে। ২০ বছর যাবৎ তিনি চিত্রকর্মের সাথে জড়িত। তার চিত্রকর্ম মূলত বিমূর্ত ও অবয়বধর্মী। দেশে ও দেশের বাইরে এ পর্যন্ত তার ৩০টির বেশি একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছে। মেহিকো শহরের মিউজিয়ামে ২০১৫ সালে Sursum Corda o la última canción শীর্ষক প্রদর্শনী এবং ২০১৩ সালে বাহা ক্যালিফোর্নিয়ার তিহুয়ানায় CECUT-এ El olvido que me diste. Una retrospectiva শীর্ষক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

কবি পুরা লোপেস কোলোমে-এর সাথে আররেওলার রচিত Via Corporis বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে মেহিকোর অভিজাত প্রকাশনী Fondo de Cultura Económica থেকে।

 তিনি একাধিক উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের লেখক। তার আলোচিত উপন্যাস La venganza de los pájaros (Fondo de Cultura Económica, 2006) এবং বহুল আলোচিত গল্পগ্রন্থ Traición a domicilio (Joaquín Mortiz, 2013)।

Nexos, Revista de la Universidad, Tierra Adentro, El poeta y sus trabajos, Milenio, El Universal এবং  Contrarréplica সহ মেহিকোর প্রথম সারির শিল্প ও সাহিত্যের পত্রিকাগুলোয় নিয়মিত লিখে আসছেন। তার গল্প মেহিকো থেকে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থের সংকলন Los mejores cuentos mexicanos (Joaquín Mortiz, 2003), Líneas de Fuga (E1 Ediciones, 2020), El Lejano Oriente en la poesía mexicana (UNAM-UAS, 2022)-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

দেশে বিদেশে তিনি বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

অনূদিত প্রবন্ধটি গিইয়্যের্মোর El olvido que me diste শীর্ষক অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে ২০১৪ সালে লিখেছিলেন আমেরিকার বিখ্যাত কবি, গল্পকার, সাহিত্য ও শিল্পসমালোচক আলফ্রেড কর্ন। আলফ্রেড কর্ন-এর জন্ম আমেরিকার জর্জিয়ায় ১৯৪৩ সালে। কবিতা , প্রবন্ধ ও উপন্যাস মিলিয়ে তার গ্রন্থের সংখ্যা ২০-এর অধিক। গিইয়্যের্মোকে নিয়ে কর্ন-এর লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন। বি. স.

গিইয়্যের্মো আররেওলা: নিঃসঙ্গ কন্ঠস্বর

 আলফ্রেড কর্ন 

গিইয়্যের্মো আররেওলার চিত্রকর্ম হচ্ছে অন্তর্জগতের ভূদৃশ্য থেকে ফিরে আসা এমন সব প্রতিধ্বনি যা একাকী কেঁদে বেড়ায়। যে প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছেন প্রথমে শিল্পী, পরে তা আমাদের কাছে এসেছে। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের লেখক হিসেবে তিনি ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন, তবে বেশির ভাগ লেখকের মতোই এটা তিনি আবিষ্কার করেছেন যে অর্জিত অভিজ্ঞতার সবটাই ভাষিক সমতুল্য খুঁজে পায় না। সে কারণেই গিইয়্যের্মো অন্তর্দৃষ্টি, উদ্বেগ, ইঙ্গিতসমূহ প্রকাশের উপায় হিসাবে চিত্রকলার দিকে ঝুঁকেছেন।

তেল এবং অ্যাক্রিলিকে গিইয়্যের্মো অররেওলা গাঢ় টোনের প্যালেট পছন্দ করেন, একরঙা থেকে দূরে নয়— এমন সব রং যেমন ধূসর, নীল, বাদামী, চক, কালো হালকা এবং শুষ্কভাবে প্রয়োগ করা হয়। মেহিকোর কথা ভাবলেই আমাদের মনে আসে উজ্জ্বল রং, ঝরা পাতার উজ্জ্বল বর্ণ, আর দুপুরে দৃশ্যমান ফুল এবং ফল। কিন্তু আররেওলা আবছা, শীতের আলোতে পাহাড় এবং মরুভূমির রঙের পক্ষে সেই জোরালো প্রদর্শনকে এড়িয়ে যান।

চিত্রকলার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি রথকো এবং তাপিয়েস এবং সেই শিল্পীদের অনুসারী যারা বিধ্বস্ত প্লাস্টার বা কংক্রিটের রুক্ষ শহুরে দেয়ালের সাথে একটি সম্পর্ক অনুভব করেছেন, যা পেইন্ট, ধুলো এবং গ্রাফিতিতে আচ্ছাদিত। কখনো কখনো আধেক দৃশ্যমান, নির্জন, রহস্যময় এই অস্পষ্ট পরিবেশ থেকে একটি মানুষের সিলুয়েট বা মুখ ফুটে ওঠে। যখন তাদের মুখ থাকে, তখন এগুলি মুখোশের মতো, অস্পষ্ট এক জায়গায় ভাসমান, যেমনটা রেডন, নোল্ডে বা ডি কুনিং করে থাকেন তাদের চিত্রকর্মে।

এটা বলা কি যথাযথ নয় যে এই কাজগুলো বিষণ্ন মেজাজের ফলাফল? তেমনটাই বলা যায় যদি আমরা কেবল এটা স্বীকার করে নেই যে বিষণ্নতা হচ্ছে মানব-পরিস্থিতিকে বুঝবার চাবিকাঠি। আররেওলার শিল্পকর্ম আমাদেরকে বিভ্রম থেকে মুক্ত এমন এক মনের সাথে সংযোগ ঘটায়, যে মন একাকীত্ব, ভয়, মৃত্যু এবং চেতনার অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে চিন্তা করে। যদি একজন শিল্পী এখনও এই ধরনের জ্ঞানের অবয়ব আঁকতে সক্ষম হন, তাহলে তাঁর সাহস ও সংকল্পে আমাদের আশ্বস্ত হওয়া উচিত।