বিশ্বকাপ ফুটবল: কে হাসবে শেষ হাসি?

আর্জেন্টিনা-বুলগেরিয়া ম্যাচের আগে আলবেনিয়ার এক ফুটবলভক্ত বাজিঘরে গিয়ে বাজি ধরে, আর্জেন্টিনা বুলগেরিয়ার কাছে হারলে তার স্ত্রীকে দিয়ে দেবে।

মোস্তাক শরীফমোস্তাক শরীফ
Published : 22 Nov 2022, 09:47 AM
Updated : 22 Nov 2022, 09:47 AM

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পর্দা উঠেছে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরের। পশ্চিম এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেয়ায় নন্দিত ও নিন্দিত--দুটোই হয়েছে ফিফা। প্রথম মুসলিমপ্রধান ও আরব দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন, এ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষুদ্রায়তনের দেশে বিশ্বকাপ, প্রথম নারী রেফারি, শীতকালে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপ, সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ--ইত্যাদি অনেক ‘প্রথম’-এর মালা গলায় পরে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্বকাপ আসর।

অন্য সব খেলাধুলার চেয়ে ফুটবল নানা কারণেই ব্যতিক্রমী। আর কোনো খেলা নেই যেটি বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষকে এতটা উদ্বেলিত করে। এ খেলার সঙ্গে মিশে আছে প্রবল এক আবেগ যেটি আর কোনো খেলায় নেই। এ বিষয়ে আপনার মনে কোনো সন্দেহ থাকলেও আর্জেন্টাইন ক্রীড়া লেখক লুসিয়ানো ওয়ারনিকের বইটা পড়লে সব সন্দেহ ধুয়েমুছে যাবে। বইটির শিরোনাম ‘ইনক্রেডিবল ওয়ার্ল্ড কাপ স্টোরিজ’। রোববার কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে একসঙ্গে বিশটি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এটি। বইটিতে আছে সত্যিই অবিশ্বাস্য নানা তথ্য। কয়েকটা বলা যাক। ২০১০ বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার জন্য এক ফুটবল ভক্ত বাজি ধরে কুমিরে ভর্তি একটা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। খেলা চলাকালে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হবার পরও মাঠে ফিরে এসেছিলেন উরুগুয়ের এক খেলোয়াড়। লিওনেল মেসি না ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, কে সেরা খেলোয়াড় এ নিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন এক রুশ দম্পতি!

রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওয়ারনিক বলেছেন, এ বইটা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ক্রীড়া অনুষ্ঠানকে নানান পরিপ্রেক্ষিত থেকে উপস্থাপন করা। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক সময় ছোট ছোট ঘটনাও বুঝিয়ে দেয় এ খেলাটি ঘিরে মানুষের আবেগের গভীরতা কতটা।’ উদাহরণ হিসেবে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ চলাকালীন একটা ঘটনার কথা বলেছেন তিনি। আর্জেন্টিনা-বুলগেরিয়া ম্যাচের আগে আলবেনিয়ার এক ফুটবলভক্ত বাজিঘরে গিয়ে বাজি ধরে, আর্জেন্টিনা বুলগেরিয়ার কাছে হারলে তার স্ত্রীকে দিয়ে দেবে। আর্জেন্টিনা বুলগেরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় এবং পরিণামে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে তার।

এ মুহূর্তে ফুটবলামোদীদের মাঝে একটাই আলোচনা: কারা জিতবে বিশ্বকাপ? কাদের মধ্যে হবে ফাইনাল? কে হবেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়? বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা সেদেশের নামকরা সব ক্রীড়া সাংবাদিককে একত্র করে এ প্রশ্নটি রেখেছিল তাঁদের সামনে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সন ইঙ্গল, নিক অ্যামেস, ব্রায়ান আর্মার গ্রাহাম, বেন ফিশার, ডেভিড হাইটনার, অ্যান্ডি হান্টার প্রমুখ। ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে তাঁদের কয়েকজনের ভবিষ্যদ্বাণী শোনা যাক।

ফাইনালের দুটো দল হবে ব্রাজিল আর স্পেন, চ্যাম্পিয়ন হবে ব্রাজিল। আর্সেন ওয়েঙ্গারের সেই সূত্র ফলে যাবে--সে দলই চ্যাম্পিয়ন হয় যে দলে থাকে সেরা গোলরক্ষক (সন ইঙ্গল)। ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের মধ্যে ফাইনাল হবে, ব্রাজিল জিতবে (ব্রায়ান আর্মার গ্রাহামস)। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল ফাইনালে খেলবে, আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে জিতবে (জেমি জ্যাকসন)। আর্জেন্টিনা-জার্মানি ফাইনালে খেলবে, আর্জেন্টিনা জিতেব (এমা কেম্প)। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স ফাইনালে খেলবে, আর্জেন্টিনা জিতবে (জোনাথন লিউ)। ব্রাজিল-ফ্রান্স ফাইনালে খেলবে, ব্রাজিল জিতবে (সিড লোয়ে)। ফাইনাল হবে আর্জেন্টিনা আর ইংল্যান্ডের মধ্যে, আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে জিতবে (পল ম্যাকইনেস)। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স ফাইনালে খেলবে, মেসি জিতবে এবং সেদিনই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেবে (বার্নি রোনে)। আর্জেন্টিনা ও স্পেনের মধ্যে হবে ফাইনাল, মেসির দল জিতবে (জ্যাকব স্টাইনবার্গ)। ১৯৯৮ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হবে। ফাইনালে খেলবে ফ্রান্স ও ব্রাজিল, তবে এবার ফল হবে উল্টো, ব্রাজিল জিতবে (লুই টেলর)। ফাইনাল হবে আর্জেন্টিনা আর জার্মানির মধ্যে, আর্জেন্টিনা জিতবে। ব্রাজিলও শক্তিশালী, তবে তাদের রক্ষণভাগকে তুলনামূলক দুর্বল মনে হচ্ছে। সবচেয়ে সুসংহত দল বলে মনে হচ্ছে জার্মানি আর স্পেনকে, তবে অভিজ্ঞতার বিচারে জার্মানি এগিয়ে থাকবে (জোনাথন উইলসন)।

টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বুট জিতবেন কে? লিওনেল মেসি (সন ইঙ্গল), ডারউইন নুনেজ (বেন ফিশার), নেইমার (ব্রায়ান আর্মার গ্রাহামস), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (অ্যান্ডি হান্টার), রবার্ট লেভানডোভস্কি (জেমি জ্যাকসন), হ্যারি কেন (এমা কেম্প), ডারউইন নুনেজ (জোনাথন লিউ), কিলিয়ান এমবাপ্পে (সিড লোয়ে), লিওনেল মেসি (পল ম্যাকইনেস), কিলিয়ান এমবাপ্পে (বার্নি রোনে), লাওতারো মার্টিনেজ (জ্যাকব স্টাইনবার্গ), হ্যারি কেন (লুই টেলর), মেমফিস ডিপে (জোনাথন উইলসন)।

বিশেষজ্ঞরা হাজারটা কথা বলতে পারেন, ঝড় তুলতে পারেন চায়ের কাপে, কিন্তু খেলা হবে কেবলই মাঠে। অতএব বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মিলল কিনা সেটি জানার জন্য চলুন অপেক্ষা করি ১৮ ডিসেম্বর অব্দি, তার আগে মনপ্রাণ দিয়ে উপভোগ করি বিশ্বের সুন্দরতম খেলার সর্বোচ্চ আসর।

(রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে)