Published : 13 Feb 2022, 10:41 PM
চিত্রকর্ম: রাকীব হাসান
বসন্তের দাগ
তুমি কেমন আছো?
আমি রাকীব,
তোমার এখনও একটি সাদা ক্যানভাস।
তুমি রঙিন ক্যানভাস চাও,
তুমি সাদা ক্যানভাসে কিছুই দেখো না!
সাদা ক্যানভাস সেও তো ছবি, কারণ তার সামনে দাঁড়ালে সেও ভাবনা জাগায়, শূন্যতার ভাবনা!
আমি নতুন বাড়িতে উঠেছি
প্রতিটি কক্ষ খালি
এই যে শূন্য কক্ষগুলো
তারা কিন্তু নিজের মতো করে পরিপূর্ণ।
কার কাছে? নিজের শরীরের কাছে!
আসবাব আর সাজসজ্জা তার পোশাক,
মানুষ যেমন পরিধান ত্যাগ করলে সে নগ্ন!
নগ্নতার এক সত্য নাম রাকীব হাসান
যে কোনো ভাবনাই প্রেমের ভিতর দিয়ে আসে – –
অবহেলা, অবজ্ঞা, লুকোচুরি,
আবেগ মথিত কান্না, রাগ, অভিমান, নেশা
এবং ঘৃণা সবই প্রেমের জন্ম দেয়া বীজ —
পাওয়া না পাওয়ার দাগ এড়ানো যায় না!
এই দাগ জীবনের শেষ পর্যন্ত বলে যায় – –
আমার একদিন বসন্ত এসেছিলো!
মনোচিত্র
আমি যাকে ভালোবাসি সে ভয় পায়,
আর সে যে
আমাকে আমারও অধিক ভালেবাসে
তা সে নাচতে নাচতে মূর্ত হয় —
মূর্তির এই দেহ আমি চিনি,
সে রাধার মতো কাদা।
প্রথম প্রেমের সহজ ভঙ্গি
দেখেছিলাম খড়কুটায়,
তারপর আমি সব ভঙ্গির কৃষ্ণ খেলা – –
খেলিছো সব দৃশ্য লয়ে,
আমি শিল্পপ্রভু!
কাঁপতে কাঁপতে সজনে ডাটার রসালো কামড়
গভীর সবুজ পাতায় জিভের ভাঁজ খোলে
সময় স্তব্ধ হয়েছিলো কতো অসংখ্য রাতে!
কে কাকে খেয়েছে,
আমাদের ব্যক্তিগত দুই ইশ্বর জানে!
ধর্মের নরকে নামতে নামতে,
যা কিছু পাপ তাই নিয়ে
জীবনের দেহে স্বর্গে ফিরে আসি
স্পর্শে কালো হয়েছি, তারপর লাল!
যে কোনো অন্ধকারে রক্ত দিলে
লাল হয়ে ওঠে মানুষের দিন;
ভালোবাসায় রক্ত আছে
সে ঝরে, যেভাবে হলুদ হলে
সব পাতা একদিন ঝরে যায়!
এখানে সবই কিনতে হয়
সবই কিনতে হয়
এমনকি ভালোবাসাও
তুমি কী পেয়েছো পয়সা ছাড়া?
ওই যে ক্যামেরার ফ্লাস ক্লিক
দাগ এড়ানোর প্রোফাইল পিকচার
সবই তো পয়সায় কেনা!
ঠোঁট ফোলানো ফুল
দেহের তামাদি তসর সিল্ক
পয়সা পয়সা পয়সার বসন্ত
না কিনলে কে তোমাকে
আমার থেকে দূরে নিতো?
আফ্রিকার অন্ধকারে পর্যটন
উটপাখির মুখ তুমি কিনেছো,
কালো মানুষের স্বপ্নের জিরাফে
আমি বিক্রি হয়েছি না বুঝেই।
ভালোবাসার জেব্রা ক্রসিংয়ে
আঘাত করেছো —
আমি তো তোমার আঙুল ধরেই
হাঁটতে চেয়েছিলাম!
যে অন্ধকার বোঝে না
সে চাঁদ কিনে সংসার করে!
কিনতে হয় শাড়ি গহনা
কিনতে হয় বাড়ি গাড়ি
পয়সায় পয়সায়
তোমাকে কিনতে হয়েছে
অন্যের সন্তান!
কিনতে হয় বিছানা ও বালিশ
তারপর কাবিনে প্রেম বিক্রি করো —
এও তো এক বিবাহিত বৈধ লাম্পট্য জীবন?
এর চেয়ে ভালো ছিলো না?
আমরা নষ্ট হই,
এর চেয়ে ভালো হতো
অবৈধ চেয়ে থাকি,
আমি অঙ্গ দেবো, তুমি অঙ্গ নেবে —
রাত্রি শেষে গা ধুয়ে
প্রতিটি বসন্তের সূর্যোদয়ে
আবার প্রেম শুরু হবে!
শব্দপাত – ১
দৃশ্যের প্রেমে পড়ে
দৃষ্টি কখনো কখনো নাচে
দৃশ্য হেঁটে আসে কাছে
বাতাসের রেললাইনে
বাঁশির স্টেশন
ঠোঁট চোখে ভাগ হয়
সুরবোধ্য বাজনার বুকে
রাতের আকাশে তাকে ছাড়া
কেনো পাহাড় দেখি না
নেমে আসি উদগ্রীব
জলে পড়লে ডুবে যাই
সে জল পুড়ে পুড়ে ধোঁয়ায়
উড়ে গেছে বিকেলের আগে
আঙুলের মাপ বাড়তে চেয়েছে
বসতে চেয়েছে বাড়িঘর
দুপুরের মেঘ দিন শেষ করে
মসলার গন্ধের পরে
আবার অন্ধকার!
যাকে বৃষ্টির রাত বলি
সে চলে যায়
তাকে আমি দেখি না
যে বলেছিলো বৃষ্টি ভালোবাসে।
কন্দ
নাভীর ভিতরে সব আছে
অনন্তকাল
মোহমন্ত্র –
সঙ্গে আমিও।
এই ডুবে সুখ পড়ে থাকে
বিষ রেখে যাই
নেশা নেশা নারীতে
গন্ধ ফেরা বসন্তে;
নগ্নতায় দাস যেমন প্রেম দেখে
কবিতায় সাহস যেমন
সেই সাহস জলে অন্তঃসত্ত্বা
ডুবে মরে কামের পুরুষ
শিল্প রক্তের রঙে
আমার ত্বকে নাম আর নাম
কে চলে যায় রক্ত ছেড়ে
সব দেশ আমার মাতৃভূমি।