‘হাওয়া'র মধ্যে বরং সর্বকালীন রাজনৈতিক খুশবু স্পষ্ট

হা্ওয়া সিনেমা নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনা

সেঁজুতি জাহানসেঁজুতি জাহান
Published : 6 August 2022, 09:44 AM
Updated : 6 August 2022, 11:08 AM

গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের গলা টিপে জাদুতন্ত্রের মিথ শুয়ে থাকে সাপ হয়ে মড়ার গা জড়িয়ে।

মৃতদের কেউ জালিম, কেউ কেউ জালিমের পক্ষের গণতন্ত্র, কেউ কেউ জালিমের প্রতি অনাস্থাশীল ও বিভ্রান্ত, কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ আবার জাদুতন্ত্রের এক একটি পরিণত গ্রহ।

গত ২৯ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'হাওয়া'র কথা বলছি। এখানে জালিম নিঃসন্দেহে 'নয়নতারা' নৌযানের 'মহাজন' 'চান মাঝি'। জালিমের পক্ষের গণতন্ত্র 'ইবা' বা ইব্রাহিম বাদে সবাই। কেউ সজ্ঞানে কেউ অজ্ঞাতে জালিম চান মাঝির সাগরেদ। সিনেমায় চান মাঝিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফেস করেছে দুটি সত্তা : এক. ইব্রাহিম, দুই. গুলতি

ইব্রাহিম সমাজতন্ত্রের প্রতীক, যে মহাজন চান মাঝির বৈষম্যমূলক দুই নাম্বারির বরাবরই বিপক্ষে।

গুলতি জাদুতন্ত্রের প্রতীক, যে ডাকাত চান মাঝিকে হত্যার জন্য জাদুতন্ত্রের সাহায্যপুষ্ট। গুলতির বেদে বাবাকে হত্যা করে চান। পিতৃ হত্যার বিচার এই মনুষ্য সমাজে পাওয়া দুষ্কর, তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে জাদুবিদ্যার সাহায্য নেয়। বেদের মেয়েরা তুকতাক, জাদুবিদ্যায় পারদর্শী হয়--এটা প্রচলিত লোক বিশ্বাস। তাই এই কলার সাহায্য সে সহজেই পেয়ে গেছে।

কিন্তু 'নয়নতারা' বোটের গণতন্ত্রের কী দশা?

ইজা, নাগু, উরকেস,পারকেসরা সবাই মাছ ধরতে অকূল দরিয়ায় এসেছে। স্বপ্নের মাছ তাদের জীবিকার মূল উৎস।

সৌভাগ্যের মৌসুমে দরিয়ায় নাও ভাসায় সবাই। সৌভাগ্য সবার জন্য কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু চান মাঝি সেই সৌভাগ্যের আদি-বীজে হত্যার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তরণের মতো জঘণ্য পাপ বুনে রাখে, সেই পাপের ধারা শেষ অবধি চালিয়ে যায় সে। সৌভাগ্যের মৌসুমে ভর করে কালা জাদু। একজন জালিম সময়েও সে জালিম সময় অতিক্রান্ত অসময়েও সে জালিমই। তার 'হুশ কইরে কথা' বলার চালে গোটা বোটের মানুষ। গণতান্ত্রিক মানুষগুলোকে শোষণ করে চলে সে খুব কায়দা করে। সমাজতন্ত্রের প্রতীক চরিত্র বোটের ইঞ্জিন চালক 'ইবা' ওরফে ইব্রাহিম সেটা খুব ভালোভাবেই বোঝে। তাই প্রায় সমস্ত অমানবিক ও অন্যায্যতার বিপক্ষে সে একাই দাঁড়িয়ে যায়। তার সহযোগী নাগুকে মাদক দিয়ে পক্ষে রাখে ধূর্ত চান মাঝি। এছাড়া ভৌতিক আবির্ভাব সত্ত্বেও বোটের একমাত্র নারী চরিত্র গুলতির প্রতি চান ও নাগুর কামার্ত দৃষ্টিভঙ্গি নাগুকে ইবা থেকে আলাদা এবং চানের সঙ্গে একাত্ম হতে দেখা যায়।

মনুষ্য সমাজে চিরকালীন রাজিনীতির হাওয়া মূলত এই জিনিসই।

কে যে কোন সূত্রে কার পক্ষে চলে যায় 'হাওয়া' সিনেমাটি সেই দৌড়ের চিত্রটিকেই ধারণ করতে সফল হয়েছে।

জালিম ও ধূর্ত চান মাঝি তার একাধিপত্য বিস্তরণ ও অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য 'হুশ কইরে কথা' বলে, বুদ্ধি করে সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে, বোটের গণতান্ত্রিক চরিত্রগুলোর প্রচণ্ড আস্থা তার ওপর। কিন্তু, সমুদ্র পাড়ের মহাজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ সরানোর কাজে বাঁধা দেওয়া ইবা জানে যে এখানে এই চুরিকৃত মাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ কিছুতেই সমানভাবে পাবে না সবাই। তাই এই সাম্যের কথা বলে সে এক পর্যায়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তার এই প্রতিবাদে ভয় পেয়ে চান মাঝি ইবার বন্ধু নাগুকে খুব সূক্ষ্মভাবে হাত করে নেয়।

অর্থাৎ আমরা যদি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখি যে, একজন স্বৈরাচারী তার আধিপত্য ও স্বার্থ রক্ষার জন্য গণতন্ত্রকে ব্যবহার করছে। ব্যাপারটা সমাজতন্ত্রের প্রতীক চরিত্র ইবা বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছে। স্বৈরাচারী ধূর্ত চান মাঝির

অন্যায্যতার বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা না থাকা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বাইরে গিয়ে পরিচালক জাদুতন্ত্রের সংযোজন ঘটিয়েছেন। বা আদৌ ঘটিয়েছেন কিনা আমরা তা জানি না, কিন্তু এভাবে একটি সিনেমার প্রতিপাদ্য দর্শন ও প্রবহমান ভাষা-সংস্কৃতির এক নতুন পাঠ উন্মোচিত হতে দেখতেই পারি। সে স্বাধীনতা নিশ্চয়ই দর্শকের আছে?

পরিচালক সেটাই করতে চেয়েছেন যা চিরায়ত সমাজের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর মন করতে চায়। গ্রামের অত্যাচারিত গরীব জনগণ যখন অত্যাচারের বিচার পায় না, যখন আইনের টিকিটাও তাদের নাগালে থাকে না, তখন তারা অত্যাচারীর জন্য প্রাণ নিঙড়ানো অভিশাপ দিতে থাকে।

'হাওয়া' সিনেমাকে আমি আপাতত রাজনৈতিক সিনেমা হিসেবেই দেখতে চাই।

চরিত্রগুলোর অভিনয় দেখে মনে হয়েছে কাস্টিং একদম যথাযথ হয়েছে। যার যা আছে তা ই পরিচালক ধরতে পেরেছেন, হৃদয়বান ও দায়িত্ববান দর্শককে দেখিয়েছেন। যথেষ্ট যত্ন ও পরিশ্রম দেখেছি দৃশ্যের প্রতি পরতে পরতে।

ব্যাপারটা সিনেমার 'সাদা সাদা কালা কালা'গানটির মতো আপাত নজরে ভাত-ডাল খাওয়ার মতো সহজ ঠেকেছে।

এই সহজ ঠেকেছে বলেই সিনেমা এবং সিনেমার গানটি এতো জনগ্রাহ্যতা পেয়েছে। বাংলাদেশের এতো মানুষকে শিল্পবোদ্ধার দিক থেকে নিম্নরুচির বলি কী করে?

অধিক জনগ্রাহ্য আর মহৎ সৃষ্টিকর্ম সবসময় এক না হলেও এ দুটোর একটা সাধারণ ধর্ম আছে, যেটা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সমাজ তৈরি করে দেয়।

মহৎ সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সাহিত্যে আধুনিকতা' প্রবন্ধে বলছেন:

"সাহিত্যের প্রাণধারা বয় ভাষার নাড়ীতে, তাকে নাড়া দিলে মূল রচনার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। এরকম সাহিত্যে বিষয়বস্তুটা নিশ্চেষ্ট হয়ে পড়ে, যদি তার সজীবতা না থাকে। এবারে আমারই পুরোনো তর্জমা ঘাঁটতে গিয়ে এ কথা বারবার মনে হয়েছে। তুমি বোধ হয় জান, বাছুর মরে গেলে তার অভাবে গাভী যখন দুধ দিতে চায় না তখন মরা বাছুরের চামড়াটা ছাড়িয়ে নিয়ে তার মধ্যে খড় ভরতি করে একটা কৃত্রিম মূর্তি তৈরি করা হয়, তারই গন্ধে এবং চেহারার সাদৃশ্যে গাভীর স্তনে দুগ্ধ-ক্ষরণ হতে থাকে। তর্জমা সেইরকম মরা বাছুরের মূর্তি—তার আহ্বান নেই, ছলনা আছে। এ নিয়ে আমার মনে লজ্জা ও অনুতাপ জন্মায়। সাহিত্যে আমি যা কাজ করেছি তা যদি ক্ষণিক ও প্রাদেশিক না হয় তবে যার গরজ সে যখন হোক আমার ভাষাতেই তার পরিচয় লাভ করবে।"

রবীন্দ্রনাথ মরা বাছুরের চামড়ায় ভরা খড়ের নকল বাছুরের সঙ্গে তর্জমার তুলনা করেছেন। আমি এই প্রসঙ্গটি এই জন্য এনেছি যে, অনেকেই 'হাওয়া' মুভিকে কোরিয়ান মুভি 'সী ফগ' এর নকল বলছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে 'হাওয়া'র মধ্যে 'আহবান' বা সাবলীল হৃৎস্পন্দন ছাড়া আমরা কি কেবল 'ছলনা' দেখেছি?

সিনেমায় থাকা অবধারিত সাসপেন্স, জাদুবাস্তবতার জাল বিস্তৃত লোকজ পরাবাস্তব অনুষঙ্গ, ভাষিক নানান পসরাসমৃদ্ধ দৃশ্য গ্রন্থনার কোথাও তো কোনো ছাড় চোখে পড়েনি!

তবে এইসব আরোপণমূলক 'ছলনা' প্রতিষ্ঠার শক্তি ঠিক কোথা থেকে পায় মানুষ?

উৎসটা জানা দরকার।

বাগেরহাট-খুলনার জেলেদের লোকাল ভাষার এক্সেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে সিনেমায়।

যার এক সতেজ মাধুর্য পুরো সিনেমায় দেখা যায়। যেখানে হিউমার সেখানে দর্শক হাসতে পারছে, অপ্রমিত লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ সত্ত্বেও সিরিয়াস সিনে কেউ আর হাসছে না, বরং আতঙ্কিত হচ্ছে। জাদুবাস্তবতার দৃশ্যগুলোকে রূপকথার মতো খেলো লাগছে না বরং হলিউডি পরাবাস্তব সিনেমাগুলোর মতো ফ্যান্টাসির বিস্ময় জাগাতে পারছে। আঞ্চলিকতার সীমানা ছাড়িয়ে সিনেমাটি বা ছবিটি কিংবা কারো কারো ভাষায় বইটি কি তাহলে বাংলাদেশি সিনেমার একটা নতুন সিনেমা-ভাষা নির্মাণ করতে পেরেছে?

প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তাঁর 'বিশ্বচলচ্চিত্র: ভাষা ও মাধ্যমগত বিকাশের রেখাচিত্র' নামক একটি লেখায় বলছেন: "চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় পরিচয় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ নতুন ভাষা। যে ভাষা অক্ষরভিত্তিক ভাষার সমান্তরালে নিজস্ব চরিত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।"

'হাওয়া' সেই বড়ো পরিচয়টি পেয়ে গেছে হয়তো। আমরা আম জনতা বা স্রোতে ভাসা বা নাগুদের জালে আটকা পড়া মাছ পিপল হিসেবে সেই পরিচয়ের তলাটি ছুঁতে পারিনি এখনও। 'হাওয়া' আসলে আমরাই,যারা হাওয়ায় কেবল ভাসতেই জানি, বৈরী হাওয়ার সঙ্গে লড়তে জানি না ইবা কিংবা গুলতিদের মতো।

ভাষার ক্ষেত্রে অবশ্য একটা ছোট্ট আপত্তি জানিয়ে যাই। শরিফুল রাজ,শরীফ সিরাজ(দুই ইঞ্জিনিয়ার), তুষি(গুলতি) এবং আরও কারো কারো ভাষার মধ্যে ঢাকাইয়া অপ্রমিত ছিল, যেটা একটু কানে লাগছিল। এ ধরনের সমস্যাকে অনেকে সমস্যা মনে করেন না। কিন্তু, যেকোনো মাধ্যমেই ভাষার এক্সেন্টটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ পরিচর্যা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরম যত্নে নির্মিত 'টেলিভিশন' সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর ক্ষেত্রেও একই সমস্যা ছিল। চঞ্চলের ভাষায় পুরোপুরি নোয়াখালির এক্সেন্টটা ধরা পড়েনি। এটা একটু কানে লাগছিল।এদের সবার অভিনয় একেবারেই নিখুঁত ছিল সন্দেহ নেই।

'হাওয়া'র গল্পটা আর একটু বরফ-জমাট হলে আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ হতো দর্শকদের।

আর একটা বিষয় খুব পরিষ্কার হওয়া দরকার। সেটা হলো 'হাওয়া' যে শ্রেণির জন্য নির্মিত হয়েছে তারা কিন্তু ঠিকই এর ভাষা বুঝতে পারবে, ভাষা মানে মুখের ভাষা নয়, সিনেমায় বলতে চাওয়া বক্তব্য। এমনকি পরাবাস্তব বলে যেসব বিষয়কে আজকাল 'তত্ত্বায়িত'(শব্দটি সদ্য তৈরি করা,পরিভাষা হিসেবে বক্তব্যে গুঁজে দিলাম আরকি) করা হচ্ছে, সেগুলোই সেই শ্রেণি অনায়াসেই বুঝতে পারবে। আর জাদু টোনা, কালা জাদু বিশ্বাস করা মানুষ তো এ দেশের পকেটে পকেটে। এর জন্য প্রান্তজ শ্রেণির জীবন সামনে আনা লাগে না। এটাই এখন সংস্কৃতি। তুলনামূলক 'র' কণ্ঠের 'সাদা সাদা কালা কালা' গানটি প্রান্তজ শ্রেণির মানুষের কণ্ঠস্বর হলেও এই গানে উচ্চবিত্ত খুঁজে পাচ্ছে নিজেদের অনুল্লেখ্য ফুর্তির মৌসুম, মধ্যবিত্ত পাচ্ছে জীবন ও মৃত্যুর রঙের নাম। ফলে, গানটি আর নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির বর্ণ-গন্ধ-ছন্দ-গীতের প্রতিনিধিত্ব করছে না।

'সাদা সাদা কালা কালা' এই বর্ণবাচক শব্দগুলা প্রাগৈতিহাসিকভাবে ভাষার সংস্কৃতির মধ্যে গেঁথে আছে।

'সাদা' বোঝাতে শুভ্র বা স্নিগ্ধ আর 'কালা' বুইঝাইতে সূর্য/রঙের অনুপস্থিতি মাথায় নিয়ে কেউ শব্দচয়ন করে না।

ভাষা সমাজে বা সময়ে এভাবে শেকড়বাকড়সমেত কাজ করে না।

উদাহরণ হিসেবে এই আলাপে 'অস্থির', 'জটিল' বা 'কুল' শব্দগুলোর কান ধরে টানতে পারি। এসব শব্দের আভিধানিক অর্থ আজ কোথায়?

বলে রাখা ভালো শিল্পের সর্বত্র এক জাতীয় তত্ত্বের জোর খাটালে ভাষাকে বরং জোর পূর্বক ধর্ষণ করাই হবে, ভাষার আত্মাকে বোঝা আর যাবে না।

এ ছাড়া মুভিতে স্ল্যাঙের আধিক্যও কারো কারো কাছে অরুচিকর লাগতে পারে। শিল্প-মাধ্যমে ভাষার এইসব অনিচ্ছাকৃত ঢেউ থাকবেই, এর জন্য মাথা খুটে মরার কিছু নাই। স্ল্যাঙ জেলে বা প্রান্তজ সমাজের ভাষার আদি প্রাণ। ভাষার সংস্কৃতি না বুঝে মধ্যবিত্তের উচিৎ না 'হাওয়া' দেখতে হলে যাওয়া। সবশেষে তারেক মাসুদের 'সত্যজিৎ ও রবীন্দ্রনাথ' প্রবন্ধ থেকে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। তারেক মাসুদ বলছেন: " ইতিহাসের পরিহাস হলো, দুজনের প্রতিভাই আবিষ্কৃত এবং প্রাথমিকভাবে আদৃত হয়েছে পশ্চিমে, জন্মভূমিতে নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল জেতার পরই কেবল বাঙালি সাহিত্যসমাজ বুঝতে পারে তাদের মধ্যে এত বড়মাপের একজন কবি রয়েছেন।... একইভাবে 'পথের পাঁচালী'র বিরতিহীন প্রশংসা আর মহিমাকীর্তনের মধ্যে আমরা ভুলে যাই যে 'কান উৎসবে' - এ সাফল্যের পরও দেশীয় কর্তৃপক্ষ এই বলে ছবিটিকে বাতিল করেছিলেন যে 'ছবিটি অনুজ্জ্বল ও গতিহীন'। কমলকুমার মজুমদারের মতো মহৎ লেখকও ছবির বেলায় 'সুন্দর দৃশ্য' ছাড়া আর কিছু বলার মতো খুঁজে পাননি।" বাঙালির এই 'হা-ডুডু' স্বভাব কেবল পশ্চিমের নয় পূর্ব বাংলায়ও যে বহাল তবিয়াতে আছে তা আজকের দিনে 'হাওয়া'র বেলাতেও দেখছে পাচ্ছি। ঈর্ষার শেকলবাহী 'কমলকুমারে' ভরে গেছে সব স্থান। আর সে 'হাওয়া'য় সরীসৃপের পাল তুলে কিলবিল করছে দেশীয় বহু মগজ। এখন হয়তো একমাত্র গুলতির মতো দৈবই ভরসা।