ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে বাংলা তর্জমা: আলম খোরশেদ
Published : 21 Apr 2024, 08:56 PM
মুহূর্তগুলো
যদি জীবন আবারও যাপন করতে পারতাম,
আমি চেষ্টা করতাম পরের জীবনে
আরও বেশি করে ভুল করতে,
আমি এত নিখুঁত হতে চেষ্টা করব না,
আমি আরও গা-ছাড়া, আরও পূর্ণতর হব
এখনকার চেয়ে, সত্যি বলতে কী,
আমি খুব কম জিনিসকেই গুরুত্বের সঙ্গে নেব,
আমি আরও কম স্বাস্থ্যসচেতন হব,
আমি বেশি বেশি ঝুঁকি নেব,
আমি আরও ভ্রমণে বেরুব,
আমি আরও অনেক সূর্যাস্ত দেখব,
আমি আরও অনেক পাহাড়ে চড়ব,
আমি আরও আরও নদীতে সাঁতরাব,
কখনও যাইনি আগে এরকম জায়গায় যাব আরও,
আমি আরও বেশি আইসক্রিম ও কম সিম খাব,
কল্পনার চেয়ে বরং সত্যিকার সমস্যায় জড়াব বেশি,
আমি এমন এক মানুষ ছিলাম
যে খুব সক্রিয় ও সুচিন্তিত জীবন যাপন করত-
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত,
অবশ্য আমারও কিছ কিছুু আনন্দের মুহূর্ত ছিল,
তবে আবারও ফিরে যেতে পারলে আমি শুধুই আনন্দে থাকতাম,
আপনি হয়তো জানেন না---- জীবন এইসব মুহূর্তেরই যোগফল,
তাই বর্তমানকে হারিয়ে ফেলবেন না যেন!
আমি এমন একজন মানুষ ছিলাম
থার্মোমিটার ছাড়া,
গরম জলের বোতল ছাড়া,
ছাতা কিংবা প্যারাস্যুট ছাড়া যে কোথাও যেত না।
আবারও জীবন ফিরে পেলে আমি বোঝাহীন ভ্রমণ করব,
আবারও জীবন ফিরে পেলে আমি খালি পায়ে কাজ করব
বসন্তের শুরু থেকে শরতের শেষ অবধি,
আমি আরও বেশি করে
নাগরদোলায় চড়ব
সূর্যাস্ত দেখব ও শিশুদের সঙ্গে খেলা করব,
যদি আবারও জীবন ফিরে পাই-- কিন্তু হায় আমার বয়স এখন পঁচাশি,
এবং আমি জানি আমার মৃত্যু আসন্ন ...
সেইখানি
দক্ষিণ গোলার্ধের এক গৌণ কবির জীবনী
মন থেকে ঝেড়ে ফেলার মতো
অপ্রয়োজনীয় বোঝায় ভারাক্রান্ত দিনগুলো হায়,
যাকে ভাগ্য কিংবা নক্ষত্ররা এমন এক শরীর দিয়েছে
যে কোনো সন্তান রেখে যাবে না,
এবং অন্ধত্ব, যা মূলত কারাগারের আধো অন্ধকার,
এবং বার্ধক্য যা মূলত মৃত্যুর সকাল,
এবং খ্যাতি, যার যোগ্যমাত্র নয় সে,
এবং একাদশ অক্ষরের পংক্তি বুননের অভ্যাস,
এবং বিশ্বকোষ, হাতে বানানো
সূক্ষ্ণ মানচিত্র ও মসৃণ গজদন্তের জন্য
প্রাচীন প্রণয়,
এবং ল্যাটিন ভাষার জন্য এক অসংশোধনীয় স্মৃতিকাতরতা,
এবং এডিনবরা ও জেনেভার স্মৃতিকণা,
এবং নাম-তারিখের স্মৃতিবিলোপ,
এবং পূর্বদেশের প্রবল ধর্মানুরাগ, যা কিনা
বিশাল পূর্বের অনেকেই নিজের বলে মনে করে না,
এবং আশা ও প্রত্যাশায় কম্পমান সন্ধ্যা,
এবং কীটতত্ত্বের ব্যামো,
অ্যাংলো-স্যাক্সন পদের কাঠিন্য,
এবং চাঁদ, যা বরাবরই আমাদেরকে চমকিত করে,
এবং সকল বদভ্যাসের সেরা, বুয়েনোস আইরেস,
এবং জলের সূক্ষ্ণ ঘ্রাণ, আঙুরের স্বাদ,
আর চকলেট, আহা মেহিকোর দুর্লভ আস্বাদ,
আর কিছু মুদ্রা ও একখানি বালুঘড়ি,
এবং একটি সন্ধ্যা, আরও অনেক সন্ধ্যারই মতন,
এই পংক্তিনিচয়ের জন্য উৎসর্গ করা।
এলিজি
হায় বোর্হেসের কী নিয়তি
পৃথিবীর বহুবিধ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে
অথবা বহুবিচিত্র নামের এক ও একলা সমুদ্র,
এডিনবরা, জুরিখ,
দুই কর্দোবা,
কলম্বিয়া ও টেক্সাসের
একদা অংশভাক্,
অতঃপর পরিবর্তনশীল প্রজন্মান্তরে
পূর্বপরুষের আদি ভূমিতে প্রত্যাবর্তন,
অন্দালুসিয়ায়, পর্তুগালে ও সেইসব অঞ্চলে
যেখানে স্যাক্সনেরা যুদ্ধ করেছে ডেনিশদের সঙ্গে
এবং তাদের পরস্পরের রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে,
লন্ডনের রক্তিম ও সুনসান গোলকধাঁধায়
একাকি ভ্রমণ করে,
কত না আয়নার ভেতরে ক্রমে বয়স্ক হতে হতে,
মার্বেল মূর্তির দৃষ্টি অর্জনের ব্যর্থ বাসনায়,
লিথোগ্রাফ, অ্যাটলাস ও এনসাইক্লোপিডিয়াদের
প্রশ্ন করে করে,
মানুষেরা যা দ্যাখে তা দেখে,
মৃত্যু, শিথিল সকাল, সমতলভূমি
ও নাজুক তারাদের,
এবং কিছুই না দেখে, কিংবা প্রায় কিছুই না দেখে,
বুয়েনোস আইরেসের একটি মেয়ের মুখচ্ছবি ছাড়া,
যে মুখ চায় না তুমি তাকে মনে রাখো।
হায় বোর্হেসের নিয়তি, হয়তো তোমার
নিজের নিয়তিও তার চেয়ে অচেনা ও অদ্ভুত নয়।