Published : 06 Jun 2024, 01:14 AM
ইন্ডিয়ান ইঙ্ক
কোলকাতায় তুমি কালি কালি চোখ
কখনো তো তেমন কাজল দিতে না –
আমার চোখ গ্রাস করে
একজোড়া ডার্ক ব্রাউন মণি-পাথর,
কতো সহজে কালিতে আঁকা যায় তোমার মূর্ত-মুখ!
অন্য একটা জীবন সত্যি যদি পাই
হয়ে যাবো তোমার চুলের কৃষ্ণকাল –
কালো জলে আঁকা বৈশাখী মেঘে
যেভাবে ফুলে ওঠে ইন্ডিয়ান ইঙ্কে ভেজা তোমার ঠোঁট
যদি সত্যি তোমাকে কালোর অন্ধকারে পাই!
যতটা মন-বিষে প্রেম রূপসী হয় –
এই তো তুমি, নীলের কালোতে
স্তনমন্ত্রে আলিঙ্গনে জড়ানো দেহরঙের রাত্রি।
দাগ ফেলতে মায়ার চাহনীতে
সে কী অন্ধকার দেখেছি তোমার নিঃশ্বাসে!
আমাদের বহু পুরাতন স্পর্শ এখনও
শীতকালের টানে কালো হয়ে আছে –
তোমার কাঠকয়লার শরীরে
এখনও আমার লুন্ঠনে নিশিদিন আগুন জ্বলে,
আমি আগুনের আনন্দে মরি,
তোমার হাতে রেখে যাই প্রেমের পবিত্র ছাই।
একা আয়ুষ্কাল
আমি তালগাছ, একা দাঁড়ানো –
শরীরে কোন ডাল নেই, নিঃসঙ্গ।
মাথাটা ঝাঁকড়া চুলের পাতায় আলাদা
আমি সমতলে দূর দেখতে অভ্যস্ত
স্বতন্ত্র একা উচ্চতা!
আমার তেমন সঙ্গী নেই, ছায়াও নেই
পথিকের আমি অতটা প্রিয় কেউ নই –
আমার চুলের ঝুলনে বাবুই পাখির রূপের বাড়ি
মেঘ-বৃষ্টির উদাসীন আষাঢ়-শ্রাবণ
তারপর শরৎকাল আমাকে ছুঁইতে এসে
ধানক্ষেতে শীত ডেকে এনে ঘুমায়।
দেহে দণ্ডায়মান পিচ্ছিল উর্ধগামী দৈর্ঘ আমার
প্রতিদিন জন্ম নেই একক সাহসে –
আমি জন্ম নেই নিজাঙ্কুরে স্বকীয় সঙ্গমে,
একা একা বৃক্ষহীন এক ঘাসের মাঠে
আমার আছে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকার একা জীবন
আছে এক জীবন, একা একা আকাশ দেখার।
একদা আষাঢ় মাস
আমার নিজের কোন ছাতা ছিলো না –
বৃষ্টি নামলে একা একা দীর্ঘ হয়
তোমার জানালা থেকে আমাদের বাড়ি!
আষাঢ়ে আমি নিজেই জানালার পাশে পড়ার টেবিল,
চোখে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা একাকী রঙে নামে
বৃষ্টি থামলে আমাদের উঠানে জলের উপরে
তুমি ভেসে যাও–
সেই আষাঢ়ের সন্ধ্যায় বিশাল কলা পাতায়
গুটিশুটি শুয়ে থাকা নড়ে ওঠে তোমার শরীর –
পড়ার টেবিলে আমার অংক খাতায় তুমি শাদা পৃষ্ঠা
কলম টানলেই নড়ে উঠতো রিক্লাইনিং ফিগার কবিতায় মন-মেঘ হয়ে যেতো তোমার মুখ।
সেইসব রাতের কালো আকশে প্রতিখণ্ড মেঘে
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে।
মনে পড়ে, আমার নিজের যদি একটি ছাতা থাকতো
ওইসব আষাঢ়ের প্রথম কদম ফুল
এই প্রেমের দেশে মাটিতে কী আর ঝরতো!
তোমাদের ছাদে কেন পাখি আসে
তোমাদের রুফটপে রাজ্যের পাখি আসে
কী অবলীলায় আমি ছাড়া সবকিছু বৈধ –
মানতে পারি না, মানা যায় না মেয়ে
আমিও তো গান গেয়ে
চেয়েছি তোমার শ্রবণে বাজুক আমার মন!
পাখিরা এমন কী গায়,
পালক খসে গেলে বুঝি তোমার মন ভালো হয়?
পাখিদের গ্রামে এমন কী বাজে?
এস্রাজ, সেতারে আর
চৌরাশিয়ার বাঁশিতে বাজে না আমার প্রাণ?
পালক খসে গেলে যদি মন ভালো হয়
আমি তো পাখি হয়ে উড়েছিলাম,
তোমার চোখের ভেতরে অসংখ্য পালকের আকাশ –
একদিন তুমিও পলক ফেলে তাকিয়ে দেখবে,
ধু ধু নীলের আকাশে
তোমার নিজের আর কোন পাখি আসছে না!