Published : 27 Jun 2020, 11:48 AM
হাবিবুরহমান বই First They Erased Our Name: A Rohingya Speaks ইংরেজি সংস্করণটি আমাদের হাতে আসে ২০১৯-এ। বইটির ফরাসি সংস্করণ প্রকাশকাল ২০১৮। হাবিবের সহলেখিকা হিসেবে ছিলেন সোফি আনসেল। হাবিবুরহমান অস্ট্রেলিয়া বার্মিজ রেফুজি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচত। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকার হাবিবকে রেফুজি এম্বাসেডর ঘোষণা করে। অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আইনিভাবে থেকে যাবার ব্যবস্থা বা, তাদের হয়ে বিভিন্ন সময় সরকারি সংস্থাদের সাথে যোগাযোগ হাবিব তার দ্বায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে। আমার সাথে হাবিবের আলাপ হয় ২০১৮ সালে। আস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মানবাধিকার সংস্থাদের আয়োজিত আলোচনায় হাবিবকে বক্তব্য দেবার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। সাধারণত এই আলোচনায় হাবিব তুলে ধরে থাকেন ৪০ বছরব্যাপী গ্ণহত্যার পিছনে বার্মিজ সামরিক সরকার এবং শাষক শ্রেণির বাণিজ্যিক সমীকরণ; এবং হালের মুক্ত বাণিজ্য আর এই সমান্তারালে গণতন্ত্রের বাতাবরণে একটি জাতিগোষ্ঠীর নির্মম হত্যার পিছনের রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট।
হাবিব বইটি উৎসর্গ করেছেন প্রথমে তাদের যাদের রক্তে আজ আরাকানের মাটি রক্তাক্ত। এরপর, হাবিব পাঠকদেরকে উৎসর্গ করে, রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরতে আবেদন জানান। বিভ্রান্তিময় আর সহিংস ইতিহাসের বিপরীতে তুলে ধরতে- বলেন রোহিঙ্গাদের ইতিহাস -তারা যে নারকীয় অত্যাচার, জাতিগত বিভেদ, আর বিদ্বেষের শিকার। তুলে ধরবার বিষয়টি সামনে এনে হাবিব আমাদেরকে একভাবে কিন্তু দায়বদ্ধ করে ফেলেন। আমরা সবাই ইডেন্টি পলিটিক্স নিয়ে কম বেশি মাথা ঘামিয়েছি। কেউ কি পারে কারো কথা তুলে ধরতে? অথবা কতটুকু সঠিক হবে সেই কথন- এই আলোচনায় আর রাজনীতিতে কেটে গেছে কতটা সময়। কিন্তু যাদের জীবন কেটেছে ক্যাম্পে, যাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে সক্ষমতা অর্জনের সব অধিকার; আজ ৪০ বছর যারা গণহত্যার শিকার- হতে পারে সে গণহত্যা শ্লথ বা সময়ে সময়ে নারকীয়, তাদের হয়ে অর্থাৎ সেই রোহিঙ্গাদের কথা বলা কিন্তু আমাদের দায়িত্ব।
হাবিবের বইটি বলা চলে জীবনভর নির্যাতন, মানবাধিকার বঞ্ছিত, রাষ্ট্রবিহীন এক জনগোষ্ঠীর প্রথম ভাষ্য। এই প্রথম একজন রোহিঙ্গার দৃষ্টিতে আমরা দেখি-তাদের স্বপ্ন, যন্ত্রণা, প্রতিক্ষণ মৃত্যু বিভীষিকা, ভালবাসা, মানুষের মত বাঁচবার এবং সর্বপরি স্বাধীনতার জন্য আকুতি আর আকাঙ্ক্ষা। 'বৈষম্য আর সহিংসতার আলোচনায় equity অর্থাৎ ন্যায্যতা-প্রশ্নের মূল ভিত্তি হল –সমতা নয়, বরং সবাই একই রকম সমান । আর ন্যায্যতা এবং সমতা যদি হয় মূল জাতিরাষ্ট্রের কাঠমো্; এই কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ আর বিভিন্ন নৃজাতি গোষ্ঠীর বিভাজনের ভিত্তিতে। এই আত্মপরিচয়- বিভক্তিতে প্রান্তিক মানুষ সবচাইতে অসহায়। এখানেই হাবিবের আর্তি আর অমর্ত্য সেন 'আত্মপরিচয় ও সহিংসতা' (Identity & Violence: The Illusion of Destiny-২০০৫)- বিষয়ে আলোচনার সাদৃশ্য দেখা যায়। সেন এই বইটিতে এবং রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বারবার বলেছেন (হার্ভাড, ১৪ই নভেম্বর, ২০১৪) মানুষের আত্মপরিচয় একক (singular identity) কোন ভিত্তির উপর গড়ে উঠার মানেই হল তৈরী করা একটি বিষয় বা নির্মাণ (constructed )। এই যোগসূত্র মূর্ত করে রাজনীতিগত অভিলাষ, এবং বৈষম্য এবং সহিংসতার সাথে আত্মপরিচয়ের যোগ। সেনের মতে মানুষের আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে নৃতাত্ত্বিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক, নিবিড় বিনিময়ের ভিত্তিতে। নিরন্তর এই প্রশ্ন– 'কেন আমারা একই মাটি, জল, আর হাওয়ায় জন্ম নিয়েও, আর সবার মত নই' এসেছে হাবিবের মনে। এভাবে আরেক বাস্তবতায়, জাতিরাষ্ট্রের রাজনীতি, আর শুদ্ধ জাতির সন্ধানে শক্তির অপচয়ের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে এসেছেন হাবিব। হাবিবের ভাষায়–'আমাদের জন্য নিষিদ্ধ উচ্চারণ ছিল "আমি রোহিঙ্গা – এই আমার পরিচয়"। কিন্তু ফিসফিস করেও এই শব্দ উচ্চারণে একধরনের শিহরণ খেলে যেত'।
হাবিবরা পাঁচ ভাইবোন, হাবিব দ্বিতীয়। হাবিবের বাবার স্বপ্ন ছিল হাবিব পেশায় একজন আইনজীবী হবেন। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই, পড়ালেখার প্রশ্ন তাই অবান্তর। তবে, চিন প্রদেশে ছিলেন বলেই হাবিবের বাবার পক্ষে তার সন্তানদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। হাবিবের বর্ণনায় চিন প্রদেশটিতে ছিল বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর আর বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা আর সহনশীলতা ছিল মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের মূল ভিত্তি। বিচিত্র মানুষের সাথে জীবনযাপন মানুষের সার্বিক বিকাশের জন্য জরুরি-সেই বিষয়টি হাবিবের আলোচনায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে।
বার্মিজ রাজনীতির পালা বদলের সাথেই চলেছে রোহিঙ্গাদের উপর নাগরিকত্ব আইনের নানা ধরনের পরীক্ষা। তাই একসময় আবার বাধ্য হয়ে হাবিবের পরিবারকে আরাকানে ফিরে যেতে হয়; হাবিবের ভাষায়-'ড্রাগনের মুখের ভেতরই আমাদের থাকতে হবে। এটাই আইন'। শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে, তাদের বাবার প্রথম পদক্ষেপ ছিল স্কুলে ভর্তির জন্য সন্তানদের নাম বদল। হাবিবের ভাষায় 'কিন্তু নাম বদলে গেলেই কি আমার বর্ণ, চেহারা পাল্টে যায়! আমি আমার শরীর দিয়ে আমার ইতিহাসকে বহন করি। আমরা কালার, তাই বলে ওরা আমদের ডেকে থাকে। আমি তাই থেকে গেলাম। আমরা শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ওদের কাছে'। নিদারুণ বীভৎস এবং বিভ্রান্তিময় ইতিহাসের শিকার রোহিঙ্গা জাতি; আর এর বিপ্রতীপে হাবিব সম্মিলিত মানুষের ইতিহাসের কথা, ভালবাসা আর সংস্কৃতির বিনিময়ের ভিত্তিতে হাজার বছরের যে ইতিহাস সেকথা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন।
রোহিঙ্গাদের নিজের ঘর-বাড়ি বলে কিছু নেই। তাদের নাম, ধাম কোন না কোন ক্যাম্পের তালিকায় নথিভুক্ত। এভাবে হাবিব জানিয়ে দেন- 'তাদের পক্ষে কোথাও কখনও ফেরা সম্ভব নয়। ফিরে যেতে পারেনা, ফেরার পথ থাকেনা- এটাই তাদের বাস্তবতা'। বেঁচে থাকার তাগিদে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে হয়, বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলতেই থাকে নিরন্তর। হাবিবর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। আরাকান ছেড়ে ঈয়াঙ্গুন, এরপর থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া পাড়ি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া আসেন ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এর মধ্যে ১০ বছর চলে গেছে। মানব পাচারকারীদের পাল্লায় পড়তে হয়েছে, বাচাঁর তাগিদে বন্দী পাচারকৃত শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে থাইল্যান্ডের জেলেদের নৌকায়। ছোট ছোট কিছু অর্জন আছে। ২০০১ সালে মালয়শিয়া UNHCR রোহিঙ্গাদের প্রথম বার্মিজ রেফুজী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। হাবিবের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলে অস্ট্রেলিয়ায়। হবিবের ভাষায় 'জীবনে প্রথমবারের মত একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পেলাম অস্ট্রেলিয়ায় রোহিঙ্গা বার্মিজ শরণার্থী হিসেবে'। এই ২০১১ সালে মিয়ানমার যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথে, তখন আবার নেমে এল রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে বন্দী অবস্থায় হাবিব। বিশ্ব রেফুজি দিবসে তার মনে হয় এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করতেই হবে। বিশ্বকে জানিয়ে দেয়া দরকার কি হচ্ছে দেশটির অভ্যন্তরে। 'আমাদের ক্ষমতার শক্তির প্রতিবাদের ভাষা একটাই -অনশন। এছাড়া এই ডিটেনশন সেন্টার থেকে আর কীভাবে সম্ভব বিশ্বের কাছে এই প্রতিবাদ পৌঁছে দেয়া'?
হাবিবের অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে পৌছঁতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সে থেকে শুরু হল আরেক পথ চলা। হাবিবের বাবার স্বপ্ন ছিল হাবিব আইনজীবী হবেন। আইনের শাসন মনে হয় খুব জরুরি তাদেরই কাছে যাদের জীবনে আইনের ব্যতিক্রম এক চিরস্থয়ী সত্য। আইনজীবী হওয়া সম্ভব হয়নি এখনও, কিন্তু এই স্বপ্ন হাবিব বয়ে নিয়ে চলছেন।
এই বইটি নিয়ে আলাপ করার সময় বাংলাদেশ প্রসংগ বারবার আমাদের আলোচনায় এসে পরে। বাংলাদেশ সকারের ভূমিকা বিষয়ে বলতে গিয়ে হাবিব বলেন 'আমাদের জন্য অনেক করেছে বাংলাদেশ। এমনকি রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুলে যাবার সুযোগ দেয়া হয়েছে'। এছাড়া হাবিব মনে করে থাকেন ভাসান চর রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর একটি সম্মানজনক সমাধান। তবে কার্যকর সমাধান হল মিয়ানমার বা 'বার্মায়' রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্বতানের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য চাপ সৃষ্টি করা। এই প্রত্যাবর্তন পরিচালিত হতে হবে বাংলাদেশ সরকারের তত্বাবধানে-এই তার অভিমত। মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার। বিভিন্ন সময়ে তাদের অপহৃত ভূমি আবার তাদের ফিরিয়ে দিয়ে, আর সবার মত স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার দিতে হবে। মানে –'শতকরা ১০০ ভাগ নাগরিক যে অধিকার পেয়ে থাকে'। রাজনীতি আর অর্থনৈতিক রাজনীতি একই সুতোয় বাঁধা। রাখাইন প্রদেশে চিন এবং ভারতের বিনিয়োগ আছে বিভিন্ন খাতে। এর ভেতর তেল এবং খনিজে বিনিয়োগ উল্লেখ করা যায়। এছাড়া আছে কৃষি এবং রাবার বাগানে ভিয়েতনামের বিনিয়োগ। অন্যদিকে বার্মিজ সরকার দাবি করছেন ২০১৭ সালে কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবিত প্রায় সকল সুপারিশ, বিশেষত, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ থেকে আহৃত প্রাপ্তির সুষম বণ্টনের সুপারিশগুলো সবই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে কাদের ক্ষেত্রে এবং কীভাবে কী কী বাস্তবায়ন করা হয়েছে সে প্রশ্ন অবান্তর। তাই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হবে, একইসাথে নাগরিক অধিকার নিশিচত করতে হবে। তাহলে একই সমান্তরালে কমিশনের সুপারিশকৃত প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়নের আলোচনা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে সম্ভব।
আমাদের আলোচনা প্রসঙ্গে এক সময় ধর্ম এসে পরে। হাবিবের মতে রোহিঙ্গাদের 'মুসলিম' এই তকমায় চিহ্নিত করা ছিল বার্মিজ সামরিক সরকারের রাজনৈতিক কৌশল। তার মতে 'এই কৌশল কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ারও। ধর্ম জীবনের জন্য প্রয়োজন- সেখানেই সীমারেখা টানা দরকার। রোহিঙ্গাদের মুসলিম দেশগুলো সাহায্য করে ঠিকই; কিন্তু সেই সাহায্য অনুদান নির্ভর'। হাবিবের প্রশ্ন 'রোহিঙ্গারা মুসলিম'-এই যদি তাদের অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের সমস্যার একটি মানবিক সমাধান বের করা মুসলিম দেশগুলোর দ্বায়িত্ব। কিন্তু তারা শরণার্থীদের অনুদান নির্ভর সাহায্য করেছে'। শুধু তাই নয়; এখানেও আছে বর্ণবৈষম্য'। তার ভাষায় –'একজন আরব শরণার্থী আর একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কখনোই এককাতারে দেখা হয়না'। প্রসঙ্গক্রমে হাবিব জানান তার এক চাচা ৫০ বছর সৌদি আরবে আছেন, কিন্তু সেই বন্দী জীবন-এক ধরনের ক্যাম্পই বটে। এমন কি রোহিঙ্গা শিশুদের আরাবিক স্কুলে পড়ার অনুমতি পর্যন্ত নেই। 'এ কি জীবন? মানুষেরতো এই একটাই জীবন'? তাই হাবিবের আকুল আবেদন রোহিঙ্গাদেরকে এবং তাদের এই সমস্যাকে মানবিকভাবে দেখার। এর একটি মানবিক সমাধান খুঁজে বের করা। মালয়শিয়াসহ আরও অনেক মুসলিম দেশের সাথে মিয়ানমারের বাণিজ্য সম্পর্ক আছে। হাবিবের মতে এই নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই –'বরং এই ধরনের সম্পর্ক মিয়ানমারের সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরী করতে সহয়তা করে'।
হাবিবের সাথে আলোচনায় আমার মনে হয়েছে নতুন করে আত্মপরিচয়ের রাজনীতির আলোচনা; এবং একইসাথে যে প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব-ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত তাদের জবাবদিহিতার পরিসর এবং কাঠামো নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে। হাবিবের মতে ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে যে ইতিহাস উপস্থাপন করা হয় তা হল ক্ষমতার ইতিহাস; ভূমি আর মানুষের ইতিহাসকে খণ্ডিত করার ইতিহাস। বর্তমান ভারতের রাজনীতির দিকে ইঙ্গিত করে হাবিব বলেন- 'ভারতে শুরু হয়েছে একই রাজনৈতিক খেলা। আমরা যেই রাজনীতির ভুক্তভোগী আজ ৪০ বছর'। নাগরিকত্ব আইনকে কত রকম বিভিন্ন মোড়কে এনে যে উপস্থাপন সম্ভব!আর তাই পৃথিবীর কোন প্রান্তিক জাতির জন্য নাগরিকত্ব নিশ্চিত একটি বিষয়–সেই ভাবনার দিন চলে গেছে। তারা নিজ দেশে নিজ বাসভূমে পরবাসী। একদিকে সহিংসতা, অপরদিকে সন্ত্রস্ততার ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। কিন্তু এই রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হাবিব মনে করেন মানবাধিকার সংঠনগুলোর ভাষা এক হতে হবে। তার মতে-'পরিষ্কার জানিয়ে দিতে হবে "যদি মানুষেরা (people) তোমার না হয়ে থাকে; তাহলে ঐ মানুষগুলো যেখানে বসবাস করে সেই ভূমি তোমার নয়। তুমি ভূমি দাবী করলে, মানুষের দ্বায়িত্ব তোমার'। অর্থাৎ ভূমি এবং সেখানে বাসকারী মানুষের নিবিড় নৃতাত্বিক যোগাযোগ এক ধরনের সার্বভৌমত্ব বা অধিকার মূর্ত করে, আর সেই সার্বভৌমত্বকে মানতেই হবে। তাই ভূমি এবং মানুষ দ্বিখণ্ডিত করা যাবে না। হাবিবের কথা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। তাহলে আবার নতুন করে ভাবতে হবে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানাবাধিকার সংগঠনগুলোর দায়িত্ব ঔপনিবেশিক এই কাঠামোকে অর্থাৎ ভূমির দখল এবং মানুষের অধিকার হরণের এই নিরন্তর প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করা। নতুন করে জাতি, রাষ্ট্র, জাতিরাষ্ট্র কাঠামো এবং গণতন্ত্র আর নাগরিকত্বের রাজনীতি; সেই সাথে বিশ্ব শান্তি, আর নিরাপত্তা বিষয়গুলোকে আলোচনায় নিয়ে আসা।
First They Erased Our Name : A Rohingya Speaks. লেখক-হাবিবুরহমান এবং সোফি আনসেল। অনুবাদ করেছেন-আন্দ্রেয়া রীস। বইটির প্রকাশ করেছে–স্ক্রাইব। প্রকাশকাল ২০১৯। https://www.amazon.com/First-They-Erased-Our-Name/dp/1947534858