বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন; পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে তারা সরে আসেন।
Published : 14 Mar 2024, 10:31 PM
জমি খারিজের তথ্য সংগ্রহের সময় লালমনিরহাটে পাঁচ সাংবাদিককে কার্যালয়ে আটকে রেখে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার-ভূমির বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমান সরকারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কার্যালয়ের গেইটের তালা খুললে সাংবাদিকরা বের হন। এবং তার হস্তক্ষেপে সেসময় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
৫ মার্চ শেরপুরের নকলার ইউএনও কার্যালয়ে তথ্য কমিশনের আইন অনুযায়ী তথ্য চেয়ে আবেদন করেন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা।
পরে তার বিরুদ্ধে তথ্য চাওয়ার নামে গোপনীয় শাখার নারী কর্মকর্তাকে নাজেহাল, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তছনছ এবং ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের কর্তব্য কাজে বাধাসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. শিহাবুল আরিফ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত সাংবাদিক রানাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
মঙ্গলবার বিকালে আপিল আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই লালমনিরহাটে সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে এসে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টি এম এ মমিন। আশ্বাস পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এর পরই পেছনে থাকা একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনের মোটরসাইকেল আটকানো হয়। কাগজপত্র না পাওয়ায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমান সরকার।
এ জরিমানার খবরে সাংবাদিকরা শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টি এম এ মমিন সেখানে যান।
সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবস্থান থেকে সরে আসেন।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নোমান ছিলেন না।
মাইটিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু এ শুনানির ভিডিও ধারণ করছিলেন। এতে কার্যালয়ের ‘স্টাফরা’ ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারী কমিশনারকে ডেকে আনেন।
আব্দুল্লাহ আল নোমান সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক মাহফুজ সাজুকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা।
তারা বলেন, এ খবর পেয়ে জেলা প্রেস ক্লাব থেকে সাংবাদিক নিয়ন দুলাল, এস কে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও অফিসে আটকে রাখা হয়।
সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, “সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে। এ তথ্য জানতে এসে সত্যতা পাই। তখন এসি ল্যান্ড আমাকে অফিসে আটকালে সহকর্মীদের ফোন দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসি ল্যান্ড তাদেরও অফিসে আটকিয়ে রাখেন।”
এসি ল্যান্ড সাংবাদিকদের সম্পর্কে ‘খুবই অপ্রীতিকর’ মন্তব্য করেন অভিযোগ করে সাজু বলেন, “তিনি আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকিও দিয়েছেন।”
দৈনিক কালবেলা পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি এস কে সাহেদ বলেন, “এসি ল্যান্ড আমাদের সঙ্গে খুবই রূঢ় আচরণ করেছেন। সাংবাদিকদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।”
সেবা নিতে আসা মানুষজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার তথ্য সংগ্রহ করায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন বলে দাবি এস কে সাহেদের।
চ্যানেল আই-এর ক্যামেরা পারসন আব্দুল মান্নান বলেন, “আমার মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সঙ্গে ছিল না। কাগজ দেখানোর জন্য এসি ল্যান্ডের কাছে ১০ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকায় কোনো সময় না দিয়েই জরিমানা করেন।”
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, “সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে সেবা নিতে যাওয়া মানুষজনের সঙ্গে খুবই রূঢ় আচরণ করা হয়। আমার সঙ্গেও চরমভাবে রূঢ় আচরণ করেছেন সহকারী কমিশনার। তিনি সরকারি অফিসটিকে পারিবারিক অফিস মনে করেন।”
সাংবাদিকদের অফিসে আটকিয়ে গালিগালাজ এবং জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নোমান সরকার কোনো উত্তর দেননি, এড়িয়ে যান।
তবে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন বলেন, “সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোনোভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, তিনি পুরো ঘটনাটি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লালমনিরহাট প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, “জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সাংবাদিকরা আন্দোলনে যাবেন।”
আরও পড়ুন