দশম সংসদ নির্বাচন অধিকাংশ দল বর্জন করার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজেদের এই প্রত্যাশার কথা জানান তারা।
অনেকের স্মৃতিতে উঠে এসেছে ‘ছোটবেলায় দেখা’ ভোটের গল্পও, যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় ‘ব্যালটবাক্স চুরি’ যাওয়ার মতো ঘটনাও।
মাদারীপুরের জামাল কিশোর বয়সে ১৯৮৮ সাল ঢাকায় আসেন। সুষ্ঠু ভোটে যে ক্ষমতায় আসবে সেই দেশ চালাবে, এটাই তার চাওয়া।
জামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কথা হইলো আনন্দ-ফূর্তি করে ভোট দিব।”
জীবিকার জন্য রিকশা চালানোকে বেছে নিয়ে ৩০ বছর ধরে এ পেশাতেই থাকা জামাল বললেন তার ‘ভোটের স্মৃতি’।
“ভোট দেওয়া নিয়ে প্রত্যেক মানুষের একটা আগ্রহ থাকে। ছোটকালে দেখতাম বাপ-চাচারা আমাগো লইয়া যেত স্কুল মাঠে, ভোট দিতে। আমরা এইডা-সেইডা কিনে খাইতাম, হেরা ভোট দিত। কী একটা উৎসব হত! মাঝে-মধ্যে চেয়ারম্যান ইলেকশনে ভোটের বাক্স-বুক্স লইয়া দৌড় দিত, তারপরও আনন্দ থাকত।”
ভোট নিয়ে একই সঙ্গে সংশয় ও প্রত্যাশার আভাস মেলে জামালের কথায়।
জামাল বলেন, “এখন মানুষের বিশ্বাস নেই ভোট দিতে পারব, কি পারব না। তারপরও আমরা আগের মতো আনন্দ-ফূর্তিতে ভোট দিতে চাই, দাঙ্গা-হাঙ্গামা চাই না। নির্বাচনে মারামারি বা সংঘর্ষ এটা কেউরই কাম্য না।”
শ্রমজীবী জামাল বলেন, “আমরা রিকশা চালাইয়া খাই। শান্তিমতো যেন রিকশা চালাইতে পারি, রুজি-রোজগার ভাল হবে, শান্তিতে দুইটা ভাত খাইতে পারব।”
১৫ বছর আগে ঝালকাঠি থেকে এসে নগরীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভেতরে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন প্রতিবন্ধী ফিরোজ মেড্ডা।
ফিরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো রাজনীতি বুঝি না, করিও না। তবে আমার ভোট আছে, আমি ভোট দিব। একটা ভোট অনেক মূল্যবান। আমার ভোট আমিই দিতে চাই।”
জামালের মতো ফিরোজেরও চাওয়া, ভোট হোক শান্তিপূর্ণ।
“আমার এইটা করেই (পান বিক্রি) খাইতে হবে। আমরা চাই দেশ থেকে মারামারি-কাটাকাটি না হোক। কেউ গোস্ত-মাছ দিয়ে খাবে, আমি ডাল দিয়ে খাব, তারপরও শাস্তিতে থাকতে চাই। যে সরকারই আসুক, আমাদের কর্ম আমাদের করেই খাইতে হবি। দেশটা যেন ভাল থাকে।”
কুমিল্লার লাকসাম থেকে এসে রাজধানী শহরে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করেন মুহাম্মদ ইউসুফ।
এ হকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একটা ভালো নির্বাচন চাই, যাতে কোনো ঝগড়াঝাটি, মারামারি.... নির্বাচনের সময় তো কত মানুষই মারা যায়! আমি এইডা চাই না।”
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে ইউসুফ বলেন, “একটা মানুষের মূল্য অনেক, ছোট থেকে একটা মানুষকে লালন-পালন করে বড় করতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কোনো মানুষ মারা যাবে সেটা আমি চাই না। যে দলই সরকার হয়ে আসুক আমরা চাই সুন্দরভাবে আসুক। আমরা চাই নির্বাচনে কারও মৃত্যু না হোক, বা রক্তারক্তি না হোক।”
আরেক রিকশা চালক মো. আমির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যাতে করে কোনো ধরনের গ্যাঞ্জাম না হয়। সবাই যেন তার নিজের ভোট দিতে পারে।”
ডাব বিক্রেতা নারী মমতাজ বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা ভালো-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবার জন্য ভালো হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে মারামারি বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন এলেই তো দলাদলি বেড়ে যায়। আমি চাই, নির্বাচনে কোনো হানাহানি হবে না, হরতাল হবে না, গাড়ি ভাঙ্গা হবে না।”
বগুড়া থেকে আসা আসা রিকশাচালক মো. সৌরভের চাওয়াও ছিল মমতাজ বেগমের মতো।
“নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা সবারই প্রত্যাশা। নির্বাচন নিয়ে মারামারি করা খুব খারাপ। মারামারি-কাটাকাটি হানাহানি এগুলো না হয়ে ভালভাবে একটা নির্বাচন চাই।”
সব রাজনৈতিক দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে বলে আশা করছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি চাই সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন; যে নির্বাচনে কোনো তৃতীয়পক্ষও হস্তক্ষেপ করবে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাবে।”
‘স্বপ্নের গণতান্ত্রিক নির্বাচন’ নিয়ে এই শিক্ষক বলেন, “ফলাফল বিজয়ী ও পরাজিত দল সহজে মেনে নেবে … নির্বাচন নিয়ে কোনো সংঘাত বা মারামারি কোনভাবেই কাম্য নয়।”
রাজধানীর বাসিন্দা আরিফ আহমেদ বলেন, “সব দলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা সাধারণ জনগণ আশা করি। নির্বাচন নিয়ে সংঘাত হোক এটা কারও কাম্য নয়। কারণ কোনো মারামারি-সংঘাত দেশের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসে না।”
তবে নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা দেখছেন সরকারি কর্মকর্তা ওয়ালিদ হাসান।
তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলছে এবার সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে সরকার দলের নেতাকর্মীদের প্রভাব সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলাফল স্বরূপ ঐক্যফ্রন্টের পরাজয় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।”
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আগে থেকেই নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।