বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গভবনে প্রায় ৫০ মিনিট বৈঠকের পর বেরিয়ে এসে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা প্রস্তুত। আগামী সাত দিনের মধ্যে (তফসিল) করতে পারি। রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তষ্ট।”
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যে কোনো ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পরামর্শ দেন বলে পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা ধরে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করেছে ইসি সচিবালয়।
এরপর বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ করল সাংবিধানিক সংস্থাটি।
সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে অপর চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, “এটি জরুরি কোনো সাক্ষাৎ নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে এটি অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার। উনাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।”
তফসিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, “তবে তফসিলের ব্যাপারে আমরা আগামী ৪ তারিখে মিটিং করব। সেদিন সিদ্ধান্ত হবে।”
রোববার কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করার কথা রয়েছে সিইসি নূরুল হুদার।
বিতর্ক এড়িয়ে চলুন: ইসিকে রাষ্ট্রপতি
বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাক্ষাতের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাদশ সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
“সিইসি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারণ, নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকার প্রস্তুতি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি দিকগুলো তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে যে কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান।”
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে বলেন রাষ্ট্রপতি।
“তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যাপকতার ফলে এর অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে ইসিকে সজাগ থাকতে হবে।”
সার্বিক প্রচেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে বলেও রাষ্ট্রপতি বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপি ও সংলাপ প্রসঙ্গ
বঙ্গভবনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা সিইসিকে সংলাপ নিয়েও প্রশ্ন করেন। তফসিল দেওয়ার জন্য কমিশন সংলাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিনা- তা জানতে চান তারা।
উত্তরে নূরুল হুদা বলেন, “এগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। সংলাপ চলবে, সেটার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।“
সংলাপের কারণে ভোট নিয়ে ইসির পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না জানতে চাইলে নূরুল হুদা বলেন, “সংবিধানে নির্বাচন করার কথা যেভাবে বলা আছে, সেভাবে হবে।”
তফসিলের খসড়ায় কোনো পরিবর্তন হবে কিনা- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “খসড়া মনে মনে আছে, কমিশনের মিটিংয়ের মাধ্যমে সেটা চূড়ান্ত হবে।”
সব দল নির্বাচনে আসার মত আস্থা ইসি তৈরি করতে পেরেছে কি না- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে, নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে।”
দুর্নীতিবাজদের পদে না রাখার ধারা বাদ দিয়ে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে হাই কোর্ট যে নির্দেশনা ইসিকে দিয়েছে, সে বিষয়েও সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “হাই কোর্টের এটা আমরা পেয়েছি, এটা কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”