খালেদার ভোট করা আদালতের সিদ্ধান্তের উপর: ইসি

দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন কি না, সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই অনুসরণ করবে ইসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2018, 10:26 AM
Updated : 29 Oct 2018, 10:57 AM

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে সোমবার দ্বিতীয় মামলায় সাজার রায় হওয়ার পর সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় একথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা) নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে আদালতের ওপর। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন।”

আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত; তাকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণাও রয়েছে বিএনপির।

গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়াপারসন কারাবন্দি; এর মধ্যে সোমবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কারও ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ড হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। কিন্তু বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ ও নজির রয়েছে।

বিএসএমএমইউতে সোমবার দুপুরে এনাটমি বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কেবিনে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। এদিন তার বিরুদ্ধে আরেকটি দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের সাজার রায় হয়।ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আইনটির কথা মনে করিয়ে  দিয়ে রফিকুল বলেন, “এটা যে কোনো নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। এটা আদালতের উপর পুরোপুরি নির্ভর করবে। শুধু খালেদা জিয়ার কথা বলছি না, সবার জন্য বলছি, যদি কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে চান, কোনো দণ্ডে দুই বছরের বেশি দণ্ডিত হয়েছেন পূর্বে, এরকম কোনো লোক একটি নির্দিষ্ট সময় পার না হলে প্রার্থী হতে পারেন না।

“যারা এখন দণ্ডিত হয়ে দণ্ড ভোগ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে দণ্ডটার যদি আপিল না থাকে, আপিলে যদি তাকে নির্বাচনে একেবারে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়টা যদি নির্দিষ্ট করা না থাকে, তাহলে উনারা কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু যদি বলা থাকে আপিলে সাজাটাকে স্থগিত করা হয়নি, তাহলে কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া সম্ভব হবে না।”

বিএনপি যদি আইনি লড়াই চালায়, সেক্ষেত্রে কী হবে- প্রশ্ন করা হলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “উনারা আবারও আদালতের কাছে যেতে পারেন। আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে উনার প্রার্থিতা বহাল রাখতেও পারেন।

“কিন্তু এখন পর্যন্ত কিন্তু আমরা জানি না, উনি আপিল করবেন কি না? আপিল করলে সেখান থেকে কী ধরনের রায় আসবে? এটা আদালত নির্ধারণ করে দেবেন।”

নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে রফিকুল বলেন, “যদি আইনি কাঠামো না পায়, তাহলে সংসদ  ভোটে ইভিএম ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না। আইনি কাঠামো পেলে মিনিমাম হলেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে।”

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করতে হবে। ইসির প্রস্তাবে সোমবার মন্ত্রিসভা সায় দিয়েছে। তবে সংসদ অধিবেশন না থাকায় এজন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ইসি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে এগোলেও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সীমিত আকারে হলেও ইভিএম ব্যবহারের পক্ষপাতি।

রাজনৈতিক শিবিরে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে নির্বাচন নিয়ে অনেকে শঙ্কা দেখলেও তা উড়িয়ে দিচ্ছেন রফিকুল। তিনি বলেন, কোনো শঙ্কা নেই।

সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আইন শৃঙ্খলার প্রয়োজনে যদি সেনাবাহিনী নির্বাচনে আনতে হয়, তাহলে আমরা আনব। এটা প্রতিটি নির্বাচনেই হয়। সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করে।”

বিএনপি ভোটের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছে; তাতে আবার আপত্তি রয়েছে আওয়ামী লীগের।