সোমবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে রোনালদোর হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন ফিফা সভাপতি জেপ ব্লাটার।
আরাধ্য পুরস্কারটি নিজের করে নিতে রোনালদো পেয়েছেন মোট ৩৭.৬৬ শতাংশ ভোট। মেসি ১৫.৭৬ শতাংশ আর নয়ার ১৫.৭২ শতাংশ ভোট পান।
তৃতীয়বারের মতো বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়ে ভীষণ আনন্দিত রোনালদো বলেন, “যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই”
২০১৩ সালেও বার্সেলোনা প্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে হারিয়ে ফিফা ব্যালন ডি’অর জেতেন রোনালদো। ২০০৮ সালে ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’ অর পুরস্কার আলাদাভাবে জিতেছিলেন তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলা এই ফরোয়ার্ড। তখনও ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার যুক্ত হয়নি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের দেয়া এই সম্মানের সঙ্গে। সব মিলিয়ে তিনবার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হলেন পর্তুগালের অধিনায়ক।
গত বছর জাতীয় দলের হয়ে জ্বলে না উঠলেও ক্লাবের হয়ে অসাধারণ খেলেন রোনালদো। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে দশমবারের মতো ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাতে দারুণ অবদান ছিল রোনালদোর। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত গোলের রেকর্ড গড়েন তিনি।
বিশ্বকাপে গিয়েই অবশ্য নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন রোনালদো, তার দেশ পর্তুগালও গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ে। তবে বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই পুরনো রূপে ফেরেন এই ফরোয়ার্ড। ক্লাবকে উয়েফা সুপার কাপ জেতাতেও দারুণ অবদান রাখেন রোনালদো। তাছাড়া গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে কোপা দেল রে জেতেন তিনি।
আর গত মাসে রিয়ালের জার্সিতে ২৯ বছর বয়সী রোনালদো জেতেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। এটা ছিল গত বছরে রিয়ালের চতুর্থ শিরোপা।
বল পায়ে সাফল্যে ভরা একটা বছর শেষ করতে পেরে আরও যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন রোনালদো।
সামনে আরও সাফল্যের প্রত্যাশায় তিনি বলেন, “এটা ছিল অসাধারণ একটা বছর। যে কাজটি এতদিন করেছি, সেটি চালিয়ে যেতে চাই। যত দিন যাবে, আরো উন্নতি করার, আরো ভালো হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। আমি কখনই ভাবিনি যে আমি তিনবার এই ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবো। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হতে চাই আমি।”
কোচ আনচেলত্তির অধীনে ফুটবল উপভোগ করার কথাও বলেন রোনালদো। সঙ্গে গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের আনন্দের স্মৃতিচারণ করেন।
“কার্লো আনচেলোত্তির সঙ্গে কাজ করা ভীষণ আনন্দের। চমৎকার একটি বছর ছিল। যখন মাদ্রিদে এসেছিলাম, আমরা সবাই দেসিমার চাপ অনুভব করেছিলাম। সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাটা ছিল গত বছরের সেরা মুহূর্ত। এটা ছিল চমৎকার। এটা সব ভক্ত, মাদ্রিদের সব সমর্থকের জন্য। এটা পাওয়ার যোগ্য তারা।”
২০১৪ সালে মোট ৪৩ ম্যাচ খেলে ৫২ গোল করেন তিনি। প্রতি ৬২ মিনিটে একবার করে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক এই তারকা। সঙ্গে সতীর্থদের দিয়ে ১৭টি গোলও করান তিনি।
এই মৌসুমে একের পর এক গোল করে যাওয়া রোনালদো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পর লা লিগাতেও একটি রেকর্ড গড়েন; স্পেনের শীর্ষ লিগে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখন তার দখলে। ২৩টি হ্যাটট্রিক করে ভেঙে দেন সাবেক তারকা আলফ্রেদো দি স্তেফানোর ২২ হ্যাটট্রিকের রেকর্ড।
প্রতিপক্ষের গোলমুখে মেসিও কম যাননি। ৫৩ ম্যাচ খেলে ৪৯ গোল করেন আর্জেন্টিনার ছোট্ট জাদুকর। সেই সঙ্গে আথলেতিক বিলবাওয়ের সাবেক তারকা তেলমো সাররার লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে গড়েন নতুন ইতিহাস।
এই বছরে ক্লাবের হয়ে কোনো শিরোপা না জিতলেও দেশকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলতে দারুণ অবদান রাখেন তিনি, জেতেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
আর জার্মানির চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক নয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হন। ক্লাব বায়ার্নের হয়ে বুন্দেসলিগা ও জার্মান কাপ জয়েও দারুণ অবদান রাখেন তিনি।
ফ্রান্স ফুটবল ১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা ফুটবলারকে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দিত। ২০০৭ সাল থেকে পুরস্কারটি দেয়া হয় বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
২০১০ সাল থেকে ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে একীভূত হয়ে এর নাম হয় ফিফা ব্যালন ডি’অর। বিজয়ীরা নির্বাচিত হন জাতীয় দলগুলোর অধিনায়ক ও কোচ এবং ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের বাছাই করা ক্রীড়া সাংবাদিকের ভোটে।
ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের পুরস্কার পান জার্মানির মিডফিল্ডার নাদিন কেসলার।
জাপানের সাংবাদিক হিরোশি কাগওয়াকে দেয়া হয় ফিফা প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড।
আর ২০১৪ সালের ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কার পেয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবকরা।