গাজীপুরে পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে উদ্ধার কর্মীরা। শেষ হয়েছে উদ্ধার অভিযান।
Published : 04 Jul 2017, 06:14 PM
মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান এ কথা জানান।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামে একটি কারখানার ডাইং সেকশনের বয়লার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে চার তলা ভবনের একপাশের দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়ে।
আখতারুজ্জামান বলেন, “বয়লার বিস্ফোরণের পরপর কারখানা থেকে ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা ও গাজীপুরের হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়।
“মঙ্গলবার ভোরে আবার তল্লাশি শুরুর পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়। বিকালে উদ্ধার হয় আরও তিনজন।”
বিকালে উদ্ধার হওয়া তিনজন পরিচয় পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজরাই বিকালের অভিযানে উদ্ধার হওয়া তিনজন। স্বজনরাই তাদের সনাক্ত করেছেন। ”
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, উদ্ধার হওয়া ১৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। রাতে স্বজনদের কাছে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তাসহ লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্ত করা হয় বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর, সাভার ইপিজেড, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল খালেক জানান, মঙ্গলবার সকালে ওই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাশের কটন ক্লাব, ইসলাম নিটওয়্যার, আলিম ফ্যাশন লিমিটেড, ডেল্টা ফ্যাশন, মাস্কো লিমিটেডসহ ১০টি কারখানায় মঙ্গলবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈদের ছুটির পর মঙ্গলবার কারখানাটি খোলার কথা ছিল। তার আগে সোমবার দুপুরে কারখানার ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঘটনার সময় প্রায় অর্ধশত কর্মী সেখানে কাজ করছিলেন।
শ্রমিকরা জানান, সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণের পর নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত একাংশের দেয়াল, দরজা, জানালা ও যন্ত্রাংশ উড়ে আশেপাশে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি
ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এই কমিটিকে বয়লার বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সদর দপ্তরের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান।
ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) সহকারী পরিচালক দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
নিহতের প্রতি পরিবার পাবে ৮ লাখ টাকা
গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের প্রতি পরিবারকে আট লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
বয়লার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কারাখানা পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
এছাড়া সরকার আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেবে বলে জানান তিনি।
মুজিবুল হক বলেন, এ ঘটনায় মামলা হবে। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী যে-ই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কারখানার চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, কারখানার পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।