নাটোরে খ্রিস্টান দোকানি ও ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত হত্যার পর এক সপ্তাহ না কাটতেই পাবনায় অনুকূল চন্দ্র ঠাকুরের সেবাশ্রমের এক সেবককে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
Published : 10 Jun 2016, 09:15 AM
পাবনায় আশ্রমের সেবক হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
জঙ্গি দমনে ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ পুলিশ
শুক্রবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে সেবাশ্রমের ২০০ গজ দূরে হেমায়েতপুরের পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রধান ফটকের কাছে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে এএসপি (সদর সার্কেল) সেলিম খান জানান।
নিহত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে (৬০) সৎসঙ্গ আশ্রম নামে পরিচিত ওই সেবাশ্রমে কাজ করে আসছিলেন গত ৪০ বছর ধরে। অন্য দিনের মত শুক্রবারও প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে আক্রান্ত হন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে পুলিশ বলছে, নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ দেওয়া হয়। ঘাড়ে ও মাথায় এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে দেখে মনে হয় খুনিরা তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চেয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে পুলিশ দেশজুড়ে জঙ্গি দমনে সাত দিনের ‘সাঁড়াশি অভিযান’ পরিচালনার পর প্রথম সকালেই পাবনায় খুন হলেন নিত্যরঞ্জন।
সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ জানান, নিত্যরঞ্জনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার আরুয়াপাড়ার কংশুর গ্রামে। তার বাবার নাম রসিকলাল পাণ্ডে।
“গত ৪০ বছর ধরে এই আশ্রমে আশ্রিত থেকে ধর্ম সেবা দিয়ে আসছিলেন নিত্যরঞ্জন। ডায়াবেটিস ছিল বলে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন। আজও হাঁটতে বেরিয়ে খুন হয়ে গেলেন।”
এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা দিতে পারেননি।
স্থানীয় এনজিও কর্মী নরেশ মধু বলেন, “উনি দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। এ এলাকারই মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। সৎসঙ্গ সেবাশ্রমে কাজ করতেন। সাদামাটা মানুষ, কোনো শত্রু ছিল বলে শুনিনি।”
বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার মত নিত্যরঞ্জন হত্যার পেছনেও জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে তার সন্দেহ।
আগেরগুলোর মতো এই হত্যাকাণ্ডে আইএসের দায় স্বীকারের বার্তা আসার খবর দিয়েছে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
তবে জঙ্গিরাই জড়িত কি না, সে বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এএসপি সেলিম খান।
তিনি বলেন, “আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখব। এটা জঙ্গিদের কাজ কি না এখনই সে রকম কিছু বলা যাবে না।”
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার দাসকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে পুলিশ প্রশাসন।
গত দুই বছরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশকরা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরাও হয়েছেন জঙ্গি কায়দায় হামলার শিকার।
এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। কখনো মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিদল আইএস, আবার কখনও আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) এর দায় স্বীকারের খবর এসেছে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের পর।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ওই দাবি নাকচ করে বরাবরই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাইরের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই; ‘দেশে জন্ম নেওয়া জঙ্গিরা’ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।