রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের ধরতে সাত দিন সময় দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করার তিনদিনের মাথায় ফের কর্মসূচিতে ফিরেছে শিক্ষক সমিতি।
Published : 28 Apr 2016, 04:29 PM
একইসঙ্গে আগামী ৩ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাসমাবেশের ঘোষণাও দিয়েছে রাবি শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ্ একথা জানান।
গত শনিবার সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুনিদের আটকের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও হত্যার দুদিন পর শিক্ষক সমিতি সরকারকে সাতদিন সময় দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েন তারা।
অবস্থান চলাকালে শিক্ষক সমিতির সভাপতি শহীদুল্লাহ্ বলেন, “আমরা একটি আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু রেজাউল করিম হত্যায় আজ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ পুরো দেশ উত্তাল। সেখানে আমরা ঘুমিয়ে থাকতে পারিনি। তাই জরুরি সভা ডেকে আন্দোলনে নেমেছি।
“আজ আন্দোলন করছি, প্রতিদিনই বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করব, যতদিন না খুনিদের শাস্তি না হয়।”
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২ মে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে। একই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করা হবে।
৩ মে রাবিতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৫ মিনিট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে প্রদ্বীপ প্রজ্বালন করা হবে জানিয়ে তিনি সারাদেশের মানুষকে নিজ নিজ স্থানে থেকে একইভাবে প্রদ্বীপ প্রজ্বালনের আহ্বান জানান।
এছাড়া ৪ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নিজেদের উদ্বেগেরে কথা জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবেন এবং ঘটনার দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান শান্তনু।
ভাষা বিভাগের শিক্ষক বিথীকা বণিক বলেন, “আমরা একের পর এক শিক্ষককে হারাচ্ছি। কিন্তু কোনোটারই কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আমাদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা জানি না, কর্মজীবন শেষ করে অবসরে যেতে পারব কিনা, নাকি তার আগেই চাপাতির আঘাতে শেষ হয়ে যাব।”
“আমরা জীবনের নিশ্চয়তা চাই। আর যদি নাই পাই তাহলে শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে কী লাভ! তাই প্রশাসনকে বলছি, সজাগ হোন। নাহলে এই করছি, সেই করছি এমন মায়াকান্না করে কোনো লাভ নাই।”
শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘটে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
এর আগে গত সোমবার আন্দোলন স্থগিত ঘোষণার পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমাদের সহকর্মী সিদ্দিকীকে অন্যায়ভাবে হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে তিনদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই আমরা আপাতত এক সপ্তাহের জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছি।”
“আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব।”
শিক্ষক সমিতির আন্দোলন স্থগিতের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে বিভিন্ন মত প্রকাথ করেছেন অনেকে।
উদিসা ইমন নামে একজন লিখেছেন, “বোকা উদিসার প্রশ্ন: আন্দোলন থাইকা পালানোর উপায়কে আল্টিমেটাম বলে? হায় অসহায় শিক্ষককূল! সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়া রাবির আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা শিক্ষকদের। আপনারা সাতদিন পর হেগোরে মনে করায়ে দিয়েন প্লিজ।”
উদিসা ইমনের পোস্টে জাহিদ জন নামের একজন কমেন্টে লিখেছেন, “সরকারকে বিব্রত করতে চান না তারা, আপনি তাদের খোঁচায়েন না প্লিজ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা কী বুঝে এ কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন সেটা এখনও মাথায় আসছে না।
প্রতিবাদ অব্যাহত
বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দিনেও মানববন্ধন, মৌন মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদুল্লাহ ভবনের সামনে ‘জাগো জাগো, মানুষ জাগো’ স্লোগান নিয়ে ‘মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চ’-এ গিয়ে সমাবেশ করেন তারা।
এরপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাংস্কৃতিক জোট, চিহ্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
তারা নিজ নিজ বিভাগ ও দলীয় টেন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার সেখানে গিয়ে মানববন্ধন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যামে শেষ করে।
গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহীর শালাবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় সেদিনই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছে ওই শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ হোসেন। গোয়েন্দা পুলিশকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় নগরীর এক ওয়ার্ড শিবির নেতা, রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়ির এক মসজিদের ইমাম ও এক মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।