নূর হোসেনের ২টি চাঁদাবাজির মামলা দায়রা আদালতে

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের দুইটি চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নারয়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 05:48 AM
Updated : 8 Feb 2016, 02:02 PM

সোমবার নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিন এ আদেশ দেন।

একই সময় নূর হোসেনের পক্ষে এ দুই মামলায় করা জামিনের আবেদন নাকচ হয় বলে জানান তার আইনজীবী খোকন সাহা।

একটি মামলা করেন সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার ইকবাল হোসেন। ২০১৪ সালের ১০ জুন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা এ মামলায় নূর হোসেনসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়।

তার মামলার অভিযোগ হলো, ইকবালের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধর করে নূর হোসেনের লোকজন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

(ফাইল ছবি)

অপর মামলাটি দায়ের করেন আদমজী ইপিজেডের একটি প্যাকেজিং কারখানার মালিক আকরাম হোসেন।

২০১৪ সালের ২৭ মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজির মামলাটি দায়ের করেন আকরাম। এতে নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলায় বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ মে আকরাম হোসেনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা।

ওই সময় ভয়ে তিনি মামলা করেননি। পরে সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেন ভারত পালিয়ে গেলে আকরাম এই মামলা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নূর হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী এবং আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা দুটি মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

কিন্তু অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি।

আবেদনটি বিচারিক হাকিম আদালত ও জজ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান। হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে  নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে।

এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন।

নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা হলেন- সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, এম এম রানা ও আরিফ হোসেন, র‌্যাব সদস্য এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই  বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।

র‌্যাবের সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই  কামাল হোসেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ, তাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান পলাতক।

এছাড়া নূর হোসেনের আরেক সহযোগী বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকার সেলিম ভারতের কারাগারে আটক রয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন নূর হোসেন। এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই নেতা।

২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর গতবছরের ১২ নভেম্বর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।