প্রবাসের চিঠি: লাশ হয়ে দেশে ফেরা একজন মহিউদ্দীন

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আঠারো বছর বয়সে দুবাই পাড়ি জমিয়েছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি জাফতনগরের ইছহাক মিয়ার পুত্র মহিউদ্দীন মানিক।

‌জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2017, 01:42 PM
Updated : 1 March 2017, 01:42 PM

প্রবাস জীবনের দীর্ঘ চড়াই উতরাই পেরিয়ে একসময় জীবনে আসে কিছুটা ছন্দ। ছোটভাই নুরুদ্দিনকে দুবাই ড্রাগন মার্টে খুলে দেন মোবাইল এক্সেসরিজের দোকান। নিজে বিয়ে করেন, চাঁদের মতো ফুটফুটে দুটি সন্তান আসে তার ঘরে।

পুত্র আবরার এর বয়স চার আর কন্যা আরজুমের মাত্র সাত মাস। সব্কিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন যে ভাগ্য হল বৈরি। সন্তানেরা বাবা কি তা জানার আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান মহিউদ্দীন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে মহিউদ্দীন চিরতরে না ফেরার দেশে যাওয়ার আগে দুবাইয়ের রাশিদিয়া হাসপাতালে বিশ দিন আইসিইউ’তে ছিলেন।

কর্মস্থলে আমিরাতি মালিকের কাছে, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে, বন্ধু স্বজনদের কাছে প্রিয় মুখ ছিলেন মানিক। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তার এভাবে অকালে হারিয়ে যাওয়ায় শোকবিহ্ব্ল হয়ে পড়েছেন চেনাজানা সবাই।

২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দুবাই সোনাপুরে মহিউদ্দিনের জানাজার নামাজে শত শত প্রবাসীর ভিড় হয়। অশ্রু সজল বিদায়ের পর ২৭-এর দিবাগত রাতেই বিমানের একটি ফ্লাইটে তার লাশ চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কিছুদিন পরেই তার বহু সাধনায় তিলে তিলে বানানো নতুন বাড়িতে ওঠার কথা ছিল। কথা ছিল ছোটভাই নুরুদ্দিনসহ দেশে যাবেন, তাকে বিয়ে করাবেন। দু’ভাই একসঙ্গে বাড়ি গেলেন ঠিকই, কিন্তু একজন লাশ হয়ে।

দুবাই'র বাংলাদেশি চেনা মহলে এমন কেউ ছিলেন না যার কাছে হাসিখুশি চেহারার প্রাণোচ্ছ্বল এই তরুণটি অপ্রিয় ছিলেন। হাস্য রসিকতায় ভরপুর বন্ধুবৎসল মহিউদ্দীনের এভাবে অবেলায় হারিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

বেদনাবিধুর বিদায়ে তাই কেউ দীর্ঘশ্বাস চাপছেন, কেউ বা আড়ালে চোখ মুছছেন। প্রিয় বন্ধুকে এভাবে হারানোর বেদনার ভার বহা বুঝি তাদের জন্য না।

আর এভাবেই স্বজনবিহীন একাকী প্রবাস জীবনের মনোকষ্ট, কর্মস্থলে প্রলম্বিত শ্রমঘণ্টার বদলে নিম্ন মজুরি আর উৎকণ্ঠা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপনের বলি হচ্ছেন আমাদের বহু প্রবাসী।

প্রবাস থেকে বাড়ছে লাশের মিছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভাগ্য বদলের জন্য বাংলাদেশিরা আসছেন সেই ষাটের দশক থেকে। এটি দেশের বাইরে আমাদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম জনশক্তির বাজার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশও এটি ।

তবে দুঃখের ব্যাপার এই যে এই অর্জনের পেছনে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নেই। যদিও ১৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক রেমিটেন্স আয়ে আমিরাত প্রবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন।

এই রেমিটেন্স সৈনিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং অকালে হারিয়ে যাওয়া মহিউদ্দীনদের পরিবার পরিজনদের পূনর্বাসনে স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন আজ সময়ের দাবি।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!