বাঙালি আতিথেয়তার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটুক প্রবাসে

কুয়ালালামপুর শহরের অন্যতম পর্যটন এলাকা চায়নাটাউন। এখানেই আমাদের দোকান।

রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 12:24 PM
Updated : 17 Nov 2016, 12:36 PM

দোকানের পাশে চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে বিকাল হলে বাইরে খোলা জায়গায় টেবিল পেতে দেয়। পর্যটকরা এখানে বসে চাইনিজ খাবার আর বিয়ার খায়। প্রায় সময় পর্যটকদের ভিড় থাকে এখানে। সন্ধ্যায় জমজমাট হয়ে ওঠে রেস্টুরেন্টগুলো।

একদিন সন্ধ্যায় এক টেবিলে বসলেন ইউরোপিয়ান ছয়জন নারী-পুরুষ। এরা কয়েক ধরনের খাবার আর কোমল পানীয় লম্বা সময় নিয়ে গল্প করতে করতে খেলেন। বিদেশিদের সব সময়ই দেখি, অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে খান তারা।

আমাদের দোকানের পাশে চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে ইউরোপিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ানদের দেখি খাবারের অর্ডার যাই হোক, সাথে কোল্ড বিয়ার থাকবেই। ওরা অনেক লম্বা সময় নিয়ে বসে রেস্টুরেন্টে, এক-দুই ঘণ্টা থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টা, এমনকি এক বসাতে একটা পুরো বেলাই কাটিয়ে দেয় বিয়ার গিলতে গিলতে।

যাহোক, ওই ছয় জনের কথায় আসি। তাদের বিল হলো দুইশো চুয়াল্লিশ রিংগিত। ওয়েটার বিলের রিসিট হাতে দেওয়ার পর ভদ্র মহিলা স্মার্ট ফোনের ক্যালকুলেটরে হিসেব করে বললো, জন প্রতি একচল্লিশ রিংগিত।

সাথে সাথে ছয় জন যার যার ওয়ালেট বের করে একচল্লিশ রিংগিত বের করে ভদ্র মহিলাকে দিলেন। তিনি ওয়েটারকে বিল পরিশোধ করলেন। তারপর সবাই উঠে চলে গেলেন।

তাদের এ অবস্থা দেখে আমার বেশ জানার আগ্রহ হলো। তারা মালয়েশিয়ায় থাকে নাকি বেড়াতে এসেছে।

জানা গেল, তারা সবাই মালয়েশিয়ায় থাকে। সবাই মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়টি কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় দুইশ' কিলোমিটার দূরে। শনি-রোববার দুদিন ছুটি, তাই ঘোরাঘুরি করে।

সব সময়ই দেখি, সাদা চামড়ার ট্যুরিস্টরা কয়েকজন একসাথে খেতে বললেও বিল কিন্তু ভাগাভাগি করে দেয়। অনেক সময় ভাগ সমান হয় না।

অর্ডারের সময় যে যা অর্ডার দেয় তার দাম হিসাব করে দেয়। অবশ্যই একই খাবার সবাই মিলে খায়। যেমন কেউ শাক অর্ডার দিল,কেউ চিংড়ি অর্ডার দিল,কেউ কোন প্রকার মাংস অর্ডার দিল। তিন প্রকারের খাবার মিলেমিশে খেলেও যে শাকের অর্ডার দেয় সে শুধু শাকের বিল চুকায়। চিংড়ির অর্ডার যে দিয়েছে, সে চিংড়ির বিল দেয়।

মাঝেমাঝে অবশ্য একজনও বিল চুকায়। তবে ফ্যামিলি হলে একজন বিল দেয় বেশিরভাগ সময়। ফ্যামিলি মেম্বার কারো বয়স আঠারোর নিচে হলে ভাতের সাথে ডাব বা কোক। আর বয়স আঠারো বা এর বেশি হলে মা-বাবা একসাথে বিয়ার খাওয়া। তবে ছেলেমেয়েসহ ফ্যামিলি থাকলে বিয়ার অতিরিক্ত মাত্রায় খায় না কেউ।

সাদা চামড়ারা আর যাই হোক, সারাদিন বিয়ার খেলেও মাতালের সংখ্যা খুব কম দেখি।

খেতে বসে প্রায় সময় যার বিল সে চুকানো তাদের সংস্কৃতি। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ভিন্ন। আমার ভালো লাগে আমাদের সংস্কৃতি। আমরা বাঙালিরা বন্ধুর সাথে, সহকর্মীর সাথে,পরিচিতদের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার পর কার আগে কে বিল দেবে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়।

অন্যের প্রতি আতিথেয়তায় ভুবন জুড়ে বাঙালির সুনাম আছে। আমাদের সুনাম আর আমাদের এই সংস্কৃতি চিরকাল অটুট থাকুক।

ওদের সংস্কৃতিও ভালো। তবে তা ওদের জন্যে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাব বিশ্বে। বাঙালির আতিথেয়তার সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক প্রবাস জীবনের পথে-প্রান্তরে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি