গভীর রাতে ঘুমন্ত রেললাইনে টর্চলাইট হাতে দু-একজন পাহারাদারের আনাগোনা। পাশেই মহাসড়কে গাড়িগুলোর সাঁই সাঁই শব্দে ছুটে চলা। বাসার ব্যালকনিটা শহরমুখি না হয়ে শহরের উল্টোমুখি হয়ে ভালই হয়েছে। শহরভিউ হলে উঁচু-উঁচু বিল্ডিংগুলোতেই আটকে যেতো চোখ।
ব্যালকনি থেকে নিচে তাকালেই গাছপালা আর ঝাড়-জঙ্গল। সেখান থেকে বৃষ্টিভেজা রাতে ভেসে আসে ঝিঁঝি পোকা আর ব্যাঙের ডাক। গাঁয়ের মাটিতেই জন্মেছি,গায়ে মাটি আর কাদা মেখে বড় হয়েছি। আমার কাছে ঝিঁঝি আর বর্ষার ব্যাঙের ডাক চিরচেনা এক সুর। চিরচেনা সেইসব সুর এ বিদেশ-বিভূঁয়ে শুনতে ভালোই লাগে।
কুয়ালালামপুরে অনেক জায়গায় অনেক বাসায় থাকলেও এ রকম প্রকৃতিঘেষা জায়গা আর পাইনি। তাও আবার মূল শহরের কাছেই।
প্রতিদিনই বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়। এরপর তো স্মার্টফোনেই কেটে যায় আরো দুই-আড়াই ঘন্টা। এ সময়টাতেই স্মার্টফোন হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়ালে মুহূর্তেই প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়।
ভাবতেই অবাক লাগে,আমাদের দেশে নানা ঋতুতে শুধু প্রকৃতির দৃশ্যপটই পাল্টায় না, ঋতুভেদে মাছ-তরকারি, ফলমূল, ফুল,পাখি সবই পাল্টে যায়।
এখন অক্টোবর মাস। আমাদের দেশে এখন ফুলকপি, বাধাকপি, শিম, মূলা এসব সবজি নেই। আবার শীতকাল এলেই এসব সবজির দেখা মিলবে। প্রথম যখন সব শাক-সবজি আসতে শুরু করে, তখন কি যে স্বাদ লাগে!
মালয়েশিয়ান ও ইন্দোনেশিয়ানরা আরো অবাক হয় বাংলাদেশে শীতকাল আছে শুনলে। শীতকালের নাম শুনলেই ওরা কুয়াশার কথা জিজ্ঞেস করে। জানতে চায় কুয়াশা কেমন পড়ে? জিজ্ঞেস করার ধরণ দেখে মনে হয় কুয়াশা ওদের খুব পছন্দ।
শীতের কথা বললেই মনে পড়ে শৈশবে দেখা শীতের সকাল। দূর গাঁয়ের চাষীদের কলসি মাথায় খেঁজুরের রস বেচতে আসার সেই দৃশ্য। যদিও এখন আর তেমন দেখা যায় না আমাদের গাঁয়ে। আমার গ্রামের আশেপাশের গ্রামেও খেঁজুর রস নেই আর! দূরের গ্রামে কিছু কিছু আছে।
শিল্পায়ন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। কলকারখানার আগ্রাসনে আমাদের প্রিয় আনোয়ারার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা হারিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের সৌন্দর্যই হলো তার পাহাড়,নদী আর সমুদ্র। এখনো রাত গভীর হলে দূর প্রবাসে এই ব্যালকনিতে দাঁড়ালে চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার শৈশবের অবিকৃত 'দেয়াং পাহাড়'। চোখের সামনে খেলা করে শৈশবের গাঁয়ের সবুজ প্রকৃতি।
শিল্পায়ন হোক, তবে সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়।