শীর্ষ কয়েকজন নেতার পর এবার ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
Published : 04 Dec 2013, 09:11 PM
বেশ কিছুদিন ধরে অপ্রকাশ্যে থাকা বিরোধী দলের এই নেতাকে বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে তার সহকারী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও চেয়ারপারসনের সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
তাদের গ্রেপ্তারের পর অবরোধে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় আসামি করার পর আত্মগোপন করেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খোকা।
মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার (খোকা) উত্তরার ৫ সেক্টরের একটি বাসায় ছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই বাসা ঘেরাও করে স্যারকে নিয়ে যায় তারা।”
খোকাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাব বা পুলিশের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত ৩০ নভেম্বর রিজভীকে তুলে নেয়ার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
খোকাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তা কাল (বৃহস্পতিবার) কোর্টের সময় জানতে পারবেন।
“মাঠ পর্যায়ে তারা (বাহিনীর সদস্যরা) কী করছে, না করছে, সকাল বেলা যখন প্রতিবেদন পাব, তখন জানতে পারব।”
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বলা হচ্ছে- জানালে তিনি বলেন, “অনেকেই বলছে যখন, তখন আপনিও বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
মোখলেছুর রহমান আরো বলেন, “সবই তো বোঝেন, ফিল্ডে কাজ হচ্ছে। কোনটা কী হবে, না হবে, সেটা সকাল বেলা বোঝা যাবে।”
অবরোধে শাহবাগে গাড়ি পোড়ানোর পাশাপাশি মালিবাগ ও মাতুয়াইলে বাসে আগুন দেয়ার মামলায়ও খোকাকে আসামি করে পুলিশ।
শাহবাগ ও মালিবাগের মামলার আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও আত্মগোপনে রয়েছেন।
শীর্ষনেতাদের অনুপস্থিতিতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। মামলা মাথায় নিয়ে তিনিও অজ্ঞাত স্থান থেকে বক্তৃতা ও বিবৃতি পাঠাচ্ছেন।
নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলের ডাকে অবরোধে সংঘাতে এই পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে খোকাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকারের কঠোর অবস্থানেরই প্রকাশ ঘটল।
খোকা গ্রেপ্তার হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনাকে রেখেই তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়া হয়।
সরকারি দলের ‘সন্ত্রাসীদের’ মোকাবেলায় সম্প্রতি বিরোধী দলের কর্মীদের দা-কুড়াল নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র খোকা।
ছয় মাস আগে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় থেকে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটকের সময় খোকাও তার মধ্যে ছিলেন, পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
বিএনপির প্রতিবাদ
খোকাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, আন্দোলনে জনগণের ‘স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’ দেখে সরকার ‘দিশেহারা’ হয়ে পড়েছে। তাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাতে ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, “তারা যদি মনে করে থাকে, গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমানো যাবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছে।
“আমরা সরকারকে বলে দিতে চাই, এখনো সময় আছে, গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধ করুন। নইলে আপনাদের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
এর আগে বিএনপির প্যাডে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “এভাবে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে না; বরং এতে আন্দোলন আরো বেগবান ও তীব্র হবে।”
খোকাসহ বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল ও সালাহউদ্দিন।