এই দিনে ভালোবাসার মানুষকে অনেকেই উপহার হিসেবে ফুল, চকলেট, হার্ট শেইপ পিলো, টেডি বিয়ার, শো-পিস, জুয়েলারি, মানি ব্যাগ, ঘড়ি ইত্যাদি দিয়ে থাকেন।
Published : 10 Feb 2015, 03:19 PM
আর তাদের কথা মাথায় রেখেই শহরের বিভিন্ন গিফট শপ ও ফুলের দোকানগুলো সেজেছে ভিন্ন আমেজে।
দিবসটি উৎযাপন করতে যুগলদের থাকে নানান ধরনের পরিকল্পনা। এবারের ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষকে ঘিরে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফাইড অ্যাকাউনটেন্ট’য়ের ছাত্র লিমন বলেন, “দিনটিতে আমার ‘ভ্যালেন্টাইনকে’ নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করার প্ল্যান আছে। তাছাড়া গিফট হিসেবে দিব টেডিবিয়ার ও ফুল।”
তবে ভালোবাসা দিবস যে শুধু অবিবাহিত যুগলের মধ্যে উদ্দীপনা বয়ে আনে তা কিন্তু নয়! বিবাহিতদেরও দেখা যায় দিনটিকে ঘিরে নানান পরিকল্পনা করতে।
উপহার হিসেবে যুগলদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে বিভিন্ন জুয়েলারি বা গহনা।
আর ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড তাদের গহনার উপর দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। নাকফুল ছাড়া আর সব ধরনের জুয়েলারিতে থাকছে ৩০ শতাংশ ছাড়, জানালেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের গ্রাহক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি।
তাছাড়া অনলাইন থেকে জুয়েলারি কিনলেই লটারির মাধ্যমে ছয়জন ভাগ্যবান ‘যুগল’ পাবেন সঙ্গীর সঙ্গে হেলিকপ্টারে চড়ে পুরো ঢাকা শহর উড়ে বেড়ানোর সুযোগ।
অনলাইনে পণ্য কিনতে ভিজিট করতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে http://diamondworldltd.com/categories/valentine1
এখানে বিভিন্ন ডিজাইনের আংটি পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৯০ টাকা থেকে। তাছাড়া হার্ট শেইপসহ বিভিন্ন শেইপের লকেটের দাম শুরু ৪ হাজার ৪শ’ থেকে। কানের দুল পাওয়া যাবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। পাশাপাশি বিভিন্ন দাম ও ডিজাইনের চেইন ও কয়েনও পাওয়া যাবে।
আমিন জুয়েলার্সে থাকছে ডায়মন্ডের জুয়েলারির উপর ৩০ শতাংশ ছাড়। এ অফার চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখানে আংটি পাওয়া যাবে ১৫ হাজার থেকে ৭ লাখের মধ্যে। আর লকেট পাওয়া যাবে ১৫ হাজার থেকে ৩ লাখের মধ্যে।
গিফট শপগুলোতেও থাকে উপহার কেনার হিড়িক। এবার মগ, হার্ট শেইপ পিলো, কার্ড ও মেয়েদের ব্রেসলেট বেশি বিক্রি হচ্ছে।
ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে গিফট শপ ‘হলমার্ক’ সেজেছে ভালোবাসার লাল রংয়ে।
এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে’র আয়োজন সম্পর্কে হাতিরপুলে অবস্থিত হলমার্কের ব্যবস্থাপক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের মতো এত বড় পরিসরে আর কোনো গিফট শপে ভ্যালেন্টাইনের আয়োজন করা হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও হলমার্কের নিজস্ব তৈরি ‘হার্ট শেইপ পিলো’সহ থাকছে আমদানি করা কিছু ‘ইউনিক’ পণ্য।”
কার্ড পাওয়া যাবে ১৫০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে। আকার ভেদে হার্ট শেইপ পিলো পাওয়া যাবে ১০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায়। টেডি বিয়ার পাওয়া যাবে ৩২৫ টাকা থেকে ৭ হাজার ৫শ’ টাকায়। মগের দাম পড়বে ২৪৫ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। ভিতরে গোলাপ ও টেডি বিয়ারসহ লাইটেনিং শো-পিস পাওয়া যাবে ৪৭৫ থেকে ৫৭৫ টাকায়। ‘সিঙ্গেল ও কাপল’ টেডি বিয়ারের দাম পড়বে যথাক্রমে ২৭৫ টাকা ও ৫৭৫ টাকা। ছবি রাখার ফ্রেম পাওয়া যাবে ২৭৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়। তাছাড়া রুবি ও নরমাল স্টোনের বিভিন্ন জুয়েলারি
যেমন: আংটি, পায়েল, লকেট সেট পাওয়া যাবে ২৭৫ টাকা থেকে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য গুচি, পোলো, আরমানি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের পারফিউম পাওয়া যাবে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। পাশাপাশি ঘড়ি পাওয়া যাবে ৪৭৫ টাকা থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায়।
গিফট শপ ‘আর্চিজ গ্যালারি’ এনেছে বিশেষ ‘ভ্যালেন্টাইন গিফট সেট’। এক্ষেত্রে মেয়েদের গিফট সেটে থাকছে আয়না, কলম, পার্স, ঘড়ি ও পারফিউম এবং ছেলেদের গিফট সেটে থাকছে মানিব্যাগ, বেল্ট, টাই, কলম ও চাবির রিং।
হাতিরপুলে অবস্থিত ‘আর্চিজ গ্যালারির’ ব্যবস্থাপক সরফুদ্দিন ইকবাল বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও ‘ভ্যালেন্টাইন স্পেশালিটি’ হিসেবে থাকছে ‘ভ্যালেন্টাইন কোটেশন বুক’। দাম পড়বে ১শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।”
তাছাড়া কার্ড পাওয়া যাবে ১৫০ থেকে ১ হাজার ৪শ’ টাকায়। আকার ও মান ভেদে বিভিন্ন টেডি বিয়ার পাওয়া যাবে ১৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
পাশাপাশি ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য পাওয়া যাবে ফার্স্ট ট্র্যাক, অ্যাডিডাস, ফেরারির মতো বিখ্যাত ঘড়ির ব্র্যান্ডের রেপ্লিকা। আর এসব ঘড়ির দাম পড়বে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। তাছাড়া অ্যাডোরা , ফেরেরো, রোচার, ডেইরি মিল্ক ও কয়েন চকলেট পাওয়া যাবে ৭০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়।
গুলশান দুইয়ের ৪৬ নম্বর রোডের তাহের ম্যানশন ভবনের একটি দোকানের নাম পার্পল হেজ। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের মোমবাতি, পারফিউম, জুয়েলারি, পুতুল, শো-পিস এবং কার্ড।
আর্টিস্টি থেকে ১ হাজার টাকার কেনাকাটা করলে পাবেন স্ক্র্যাচ কার্ড এবং কার্ডটি ঘষলে পেতে পারেন শতকরা ৫০ভাগ ছাড় বা বিভিন্ন গিফট। আর ওটু’তেও ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষ্যে থ্রি-পিস, শার্ট, টি শার্ট ইত্যাদি পোশাকের উপর থাকছে ১৪ শতাংশ ছাড়।
ভালোবাসায় ফুল ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না। আর ভ্যালেন্টাইনে ফুল উপহার হিসেবে থাকবেন, তা ভাবাই ভুল।
আর ফুল কেনার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে শাহবাগ।
এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি সম্পর্কে শাহবাগে অবস্থিত ‘শাহজালাল পুষ্প বিতানের’ বিক্রেতা মো. শিমুল বলেন, “বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এই সময়ে ফুল বিক্রি বেশি হয়। তবে এবার হরতাল ও অবরোধের কারণে ক্রেতা তেমন নেই বললেই চলে।”
ফুলের চাহিদা সম্পর্কে ‘ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের’ বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, “ভালোবাসা দিবসে সাধারণত লাল রংয়ের গোলাপের চাহিদাই বেশি থাকে। তবে ফুলের তোড়া সাজাতে বিভিন্ন রংয়ের গোলাপের সঙ্গে রজনীগন্ধা, জারবারা, গ্ল্যাডিওলাস ফুলও ব্যবহার করা হয়।”
বর্তমানে গোলাপ ৮ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ১৫ থেকে ২০ জারবারা ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গাদা ফুলের মালা ২০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ১০ টাকা এবং মাথার রিং পাওয়া যাচ্ছে ১শ’ টাকায়।
তাছাড়া ছোট ফুলের তোড়ার দাম ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা এবং মাঝারি ও বড় আকারের ফুলের তোড়ার পাওয়া যাবে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়। কেউ চাইলে নিজের পছন্দমতো ডিজাইন দিয়ে বিভিন্ন আকারের ফুলের তোড়া বানিয়ে নিতে পারবেন।
দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে ‘শাহজালাল পুষ্প বিতানের’ বিক্রেতা শিমুল আক্ষেপ করে বলেন, “বিক্রির অবস্থা যদি এমনই চলতে থাকে তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিক্রেতারা ভ্যালেন্টাইন ডে’তে ফুলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন।”
সেক্ষেত্রে গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ৩০ টাকা এবং জার্বার ৪০ টাকা হতে পারে।
বর্তমানে, চাহিদা ভেদে একশ গোলাপের দাম ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে দাম বেড়ে গেলে তা ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ হতে পারে।
এছাড়া গুলশান ২’য়ের ১৫/বি রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে নানান ফুলের পসরা সাজিয়ে আছে ‘পুষ্প নীর’ দোকান।
এই এলাকায় ফুলের দরদাম সম্পর্কে ধারনা দিলেন গুলশানের জুঁই পুষ্পকলি দোকানের কর্মী বাবুল হাসান।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবারা, লিলি ইত্যাদি মিলিয়ে সর্বমোট ১০ প্রজাতির ফুল থাকে তাদের। গোলাপ মোট ছয় রংয়ের, প্রতিটি ফুলের দাম পড়বে ১০ থেকে ৫০ টাকা। লিলি পাওয়া যাবে দুটি রংয়ের, প্রতিটির দাম ২শ’ টাকা। গ্লাডিওলাস ৪ রংয়ের দাম ১৫ থেকে ২৫ টাকা। জারবারা ফুলের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
পছন্দমতো ফুলের তোড়াও বানিয়ে নিতে পারবেন দোকানগুলো থেকে। দাম নির্ভর করবে আপনি কি ফুল নিচ্ছেন এবং কতগুলো নিচ্ছেন তার উপর। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য বানিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি ফুলের তোড়া, বুকে এবং ঝুড়ি। ফুলের সংখ্যা ও ধরনের উপর ভিত্তি করে আড়াইশ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত দাম পড়বে।
কথা হল এই দোকানেই উপহার কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই প্রতিবেশী ফারিহা হাসান এবং সুদীপ্তা নন্দীর সঙ্গে।
বললেন, “কার্ড এবং হার্ট শেইপের উপহার খুঁজছি আমরা। সেই সঙ্গে ঘুরে দেখছি কী কী উপহার সামগ্রী আছে”
পছন্দের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সবসময়েই অমূল্য, তা যতই নগণ্য হোক! তাই ভালোবাসা দিবসে ভালোবসাটাই হতে পারে অনেক দামি উপহার।