রোটি, কাপড়া আওর মাকান— অমিতাভ বচ্চনের এই সিনেমাতে যে রুটির কথা বলা হয়েছে সেটি নয়, বরং বিলেতি রুটির স্বাদে হারিয়ে যেতে পারেন হোলি ব্রেডস’য়ে।
Published : 07 Jan 2015, 05:10 PM
‘ভেতো’ বাঙালির জীবনে সকালের নাস্তায় চলে রুটি। আর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বার্গার বা স্যান্ডউইচের রুটিতে কামড় বসাননি এরকম বাংলাদেশি এখন কমই আছেন।
ভাত যেমন আমাদের প্রধান খাবার, তেমনি পশ্চিমা দুনিয়াসহ বহু দেশেই রুটি প্রধান খাদ্য। এমনকি আমাদের প্রতিবেশি দু’তিনটি দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য খাবার হচ্ছে গম থেকে তৈরি রুটি।
আর পশ্চিমা দেশে যে রুটি বানিয়ে খায়, আমাদের দেশে সেটার পোশাকি নাম পাউরুটি, বা ব্রেড।
হাতে বেলা রুটি ও পরোটারমতো চাহিদা থাকলেও, সমপরিমাণে ব্রেড খাওয়া হয় কিনা তা বলা কঠিন। আর ব্রেডের মানের ব্যাপারেও খুব বেশি খেয়াল থাকে না অনেকেরই।
তাই আমাদের দেশে ভালোমানের ব্রেডের স্বাদ পাইয়ে দিতেই হোলি ব্রেডস’য়ের আগমন।
নাসিরুল আলম এর অন্যতম উদ্যোক্তা। গুলশান দুইয়ের রোড ৭৯ ধরে সোজা চলে গেলে সব শেষে লেইক দেখা যাবে। বাঁদিকে এই ব্রেডের দোকান, আর ডানদিকে একটি ক্লিনিক! ক্লিনিক নিয়ে না ভাবলেও চলবে!
ঢুকলেই চোখ হতে পারে ছানাবড়া! অত্যন্ত সাদামাটা হলেও চমৎকার করে সাজানো বিভিন্ন ধরনের ব্রেড দেখে ‘লোভাতুর’ দৃষ্টি ঠেকান সহজ হবে না। শুধু ব্রেড বললে অবিচার করা হবে, কারণ আছে ব্রেডজাতীয় বহু খাদ্য।
মওরিস চ্যাপলাইস ব্রিটেনের বাসিন্দা। হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন। একসময় ব্রেড বানানোর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ব্যাস সেই থেকেই শুরু! এটাও প্রায় ৩০ বছর আগের কথা।
আর জ্ঞান ও ভালোবাসার পরিমাণ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ব্রিটেনে একটি বেকারি দোকান চালানোর পাশাপাশি পরামর্শক হিসাবে কাজ করেছেন এশিয়া, ইউরোপ আর আমেরিকাতেও। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মাঝে মাঝে পরামর্শ দেন ‘হোলি আর্টিজান বেকারি’কে।
তার ভাষায়, “একশ বছর আগে যেভাবে বানানো হত ঠিক সেইভাবে এখানে ব্রেড বানানো হয়’।
তিনি বিষয়টি খোলাসা করে জানান, এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনের মাধ্যমে যে রুটি বানান হয় তাতে ইস্ট ব্যবহার করা হয়।
তবে হোলি ব্রেডস’যে কোন বাণিজ্যিক ইস্ট ব্যবহার করা হয় না। আলফনসো জাতের আম থেকে এক ধরনের কালচার তৈরি করা হয় আর এই কালচার ব্যবহৃত হয় ব্রেড তৈরিতে।
এমনকি একটি পাউরুটি বানাতে দুই তিনদিন সময় লাগে! ব্রেডের ডো রাখা হয় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়।
চ্যাপলাইস আরও বলেন, “একশ বছর আগে তাপমাত্রা ঠিক রাখার বিষয়টি কঠিন ছিল, এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে এই কাজটি সহজেই করা যাচ্ছে।”
তবে সমস্যা একটাই, দাম! এরকম কারিশমা করে বানানো খাবার, বিরাজমান পুঁজিবাদী জামানায় সস্তায় আশা করা তো ‘অবাস্তব’।
তো দেখা যাক কী পাওয়া যায় এই হোলি আর্টিজান বেকারিতে। পাওয়া যায় তো আসলে অনেক কিছুই, দেখা যাক অল্প কয়েকটি জিনিস।
ফরাসি বাগেট ২১০ টাকা, ইতালীয় চাবাত্তা ১৭০ টাকা, সাওয়ার ডো ২১০ টাকা, ওট ব্রেড ৩৪০ টাকা, ব্যাগেল ১৭০ টাকা।
ইতালীয় ঘরানার টাসকান বাগেট (জলপাই, বাজিল ও রোস্ট করা পেঁয়াজ) একবারে ওভেন থেকে সদ্যই গরম গরম একটু ওলিভ অয়েল দিয়ে প্রতিবেদকের হাতে দেন চ্যাপলাইস। সেটা যেন স্বর্গীয় স্বাদের পরশ বুলিয়ে নেমে গেল পেটে।
ক্রসোন্ত খাবারটি ফরাসি দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়েছে দুনিয়ার বহু জায়গায়।
দামের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অন্যতম কর্ণধার আলম বলেন, “আমরা যেভাবে মান বজায় রেখে বেকারি পণ্য বানাচ্ছি তা বম্বে থেকে শুরু করে সিংগাপুর পর্যন্ত পাবেন না!”
“অবশ্য পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর কথা আলাদা”, যোগ করেন আলম।
মান ধরে রাখতে গিয়ে মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে, আলম বলেন, “সর্বোচ্চ মানের পণ্য বানানোর পাশাপাশি কিছুটা সস্তায় সাধারণের জন্য খাবার তৈরির চিন্তা করছি।”
ব্রেড ছাড়াও মিলবে বহু ধরনের সুস্বাদু কেক ও পেস্ট্রি।
বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ফেইসবুক পেইজ থেকে: www.facebook.com/HoleyBread
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি