‘রাজা-৪২০’, ‘রাজনীতি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২’, ‘মেন্টাল’, ‘লাভ-২০১৪, ‘সত্তা’ - এগুলো ছাড়াও হাতে আছে অনেক সিনেমা। কখনো দেশের আনাচে-কানাচে, কখনো বিদেশ-বিঁভুইয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন শাকিব খান। ঈদ-উল-আযহায় মুক্তি পাচ্ছে তার 'রাজাবাবু' সিনেমাটি। গ্লিটজের সঙ্গে আলাপ করলেন, নতুন সিনেমা, ঢাকাই সিনেমার হাল-হকিকত, যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে।
Published : 25 Sep 2015, 10:32 AM
গ্লিটজ : এবারের ঈদে আপনার ‘রাজাবাবু’ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমাতে আপনার সহ-অভিনেত্রী অপু, ববি। এর আগে এক ঈদে আপনার নিজস্ব প্রযোজনা ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ ছবিতেও তিন তারকাকে একসঙ্গে দেখেছে দর্শক। কি মনে হচ্ছে? ‘রাজাবাবু’ কি ছাপিয়ে যাবে ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’-এর সাফল্যকে ?
শাকিব : গত বছর রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিলো ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’। আমরা দর্শকদের কাছে দারুণ সাড়া পেয়েছিলাম, সিনেমাটি হয়েছিল সুপারহিট। একই শিল্পী-কলাকুশলী নিয়ে এবার কুরবানির ঈদে মুক্তি পাচ্ছে ‘রাজাবাবু’। আমি হলফ করে বলতে পারি, এবার ছবি মুক্তির সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে ছবিটি, সেই ছবি আয়ের দিক থেকে ছাড়িয়ে যাবে ইতিহাসকে।
গ্লিটজ : ‘রাজাবাবু’র গল্পটি আসলে কেমন? আপনার অন্য ছবিগুলো থেকে ভিন্ন কি থাকছে?
শাকিব খান: ‘রাজাবাবু’ নাম শুনলেই কেমন এক কমেডি ভাব মনে হচ্ছে না? আসলে এই ছবিতে দর্শক কমেডির সঙ্গে সুন্দর একটি গল্পও পাবে। গল্পের মধ্যে প্রেম -ভালোবাসা, বিরহ, আনন্দ-বেদনা সবই থাকছে। বাংলা সিনেমার সব ধরনের দর্শকের কথা মাথায় রেখেই নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
গ্লিটজ: শুটিংয়ের কথা বলুন। এই সিনেমার শিডিউল মেলাতে নাকি অনেক হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছে?
শাকিব: শুটিংয়ের সময়ই তো কতো ভেজাল হলো। আমরা টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়িতে ইউনিট নিয়ে শুটিং করতে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি মেরামতের কাজ চলছে। অগত্যা ঢাকা ফিরতে হলো। পরে এফডিসিতে সেট ফেলতে হলো। সেখানেও বৃষ্টির বাধা। আমাকে অন্য ছবি থেকে শিডিউল ম্যানেজ করতে হয়েছে। যখন বুঝতে পারলাম, ঈদে একটি সিনেমাই মুক্তি দেওয়া যাবে, আমি এই ছবিটার জন্য অন্য পরিকল্পনা করেছিলাম।
সিনেমার গানগুলোর শুটিং করেছি থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের এমন সব লোকেশন দেখা যাবে গানগুলোতে, যা আগের কোনো ঢাকাই ছবিতে দেখা যায়নি।
প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে আমাকে। টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত শুটিং করেছি। কোনো শপিং করতে পারিনি।
গ্লিটজ : এবারের ঈদে মুক্তি পাবে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘আশিকি’। আপনার সিনেমার সঙ্গে টক্কর দেবে জাজের এই সিনেমাটি। আপনার কি মনে হচ্ছে?
শাকিব: মাঠে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে বাংলাদেশের দর্শক কিন্তু পুরোদস্তুর বাংলাদেশি সিনেমার দিকেই ঝুঁকবে। শাকিব-অপু-ববির নামেই তো হলে ছুটে আসবে তারা। দর্শকের মধ্যে ভাল লাগা বোধ তৈরি হওয়া একান্তই আল্লাহ প্রদত্ত। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল, দর্শক সমর্থন সব সময়ই আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে নির্ভার।
গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? চলচ্চিত্রাঙ্গনে তো নানা তোড়জোড় চলছে। অনেকেই বলছেন, দুদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে নাকি যৌথ প্রযোজনাই ভরসা?
শাকিব খান: যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে তো আজ থেকে কথা হচ্ছে না। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন তখনই শুনছিলাম যে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কটি দেশের প্রযোজকরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান। ভারতের টালিগঞ্জের অবস্থা তখন শোচনীয়। টালিগঞ্জের ঋতুপর্ণারা এসে ঢাকায় বসে থাকতো, ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য। তবে কথা হচ্ছে, যৌথ প্রযোজনাতে যে খুব লাভ হবে দুদেশের ইন্ডাস্ট্রির, আমি তা মনে করি না। যৌথ প্রযোজনার নিয়মনীতি মেনে যথাযথভাবে ছবি করা হচ্ছে কি না তা ও দেখার বিষয়।
গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে তো প্রচারের শেষ নেই! কদিন আগে প্রসেনজিৎ, দেবও বাংলাদেশে এসে এ নিয়ে অনেক কথা বলে গেলেন...
শাকিব : এখন যেসব ছবি হচ্ছে, সেগুলোকে কি সত্যি যৌথ প্রযোজনার ছবি বলে। আমি তো শুনেছি, ভারতে সেগুলো লোকাল প্রোডাকশন হিসেবেই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশি প্রযোজকরা টাকা দিয়ে সেসব ছবির কপি কিনে এনে সেগুলোকে যৌথ প্রযোজনার ছবি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সিনেমাগুলোর পরিচালকও ভারতীয়। সিনেমাগুলো বাংলাদেশ-ভারতে চলেছে ভিন্ন নামে। তাহলে বলুন তো, লাভ কি হলো? এসব করে আসলে দুদেশের ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে তারা।
গ্লিটজ: তাহলে সমাধান কি?
শাকিব খান: যৌথ প্রযোজনা, ভারতের বাজার দখল এসব করে তো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানো যাবে না। আগে ঠিক করতে হবে নিজের ঘর। ঠিক আছে, আমাদের কারিগরি দিকে অনেক সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আমরা ভারত থেকে প্রশিক্ষক এনে আমাদের কলাকুশলীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি। ভারতীয়রা পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে অনেক টাকা খরচ করে, তো আমরাও তো করতে পারি। আগে নিজেদের কি আছে, নিজেরা কি করতে পারি, সেসব ভাবতে হবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু নাই, আমরা কিছু পারি না এই ভেবে আমরা ভারতে গিয়ে বসে থাকলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের ভাবতে হবে নিজেদের ঘর নিয়ে। আর টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির কথা বললে আমি বলবো, ওদের ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা তো মোটেই ভাল না। ওরা এখন এদেশের বাজার দখল করতে চাইছে, যা আদৌ সম্ভব না। তবে এ দেশের প্রযোজকরা যদি তাদের সুযোগ করে দেয়, তবে তারা কিন্তু ঠিকই ফাঁকফোঁকড় খুঁজে ঢুকে পড়বে। তবে এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বিগ বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করতে হবে।
গ্লিটজ : গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ বলছেন, ঢাকাই সিনেমা পশ্চিমবঙ্গে চললে আমাদের দেশের শিল্পীদের সে দেশের দর্শক চিনবে, আমাদের সিনেমার বিষয়ে জানবে। আপনার কি মনে হয়?
শাকিব খান: আমার মনে হয়, অনেকাংশেই আমরাই দায়ী। আমাদের দেশের অনেক শিল্পীই তো ভারতে গিয়ে বসে থাকে। তারপর সেভাবে সুযোগ না পেয়ে আবার ফিরে আসে। এদের কারণে ইমেজ নষ্ট হচ্ছে আমাদের। আরে বাবা আগে তো নিজের দেশে নিজের অবস্থান ঠিক করো, সম্মান কামাও, টাকা কামাও, তারপর সে দেশে যাও। তার আগেই ভারত-ভারত করে ক্যারিয়ারটাই ডুবাচ্ছে তারা।
প্রসেনজিৎ, দেবরা এখন কত কথাই বলবে! ওদের সিনেমাগুলোই তো হলে চলছে না। তারা এখন মরিয়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থায় যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র যে সমাধান, তা কিন্তু মোটেই না।
গ্লিটজ: তবে যে আপনি একটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ করবেন বলেছিলেন?
শাকিব খান: আমি ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ যে টাকা দিয়ে বানিয়েছিলাম সেই পরিমাণ টাকা লগ্নি করে আমি দুটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা বানাতে পারতাম। কিন্তু আমি নিজের ইন্ডাস্ট্রির কথা ভেবেছি। আমার নিজের প্রোডাকশনের চেয়ে আমি চেয়েছি, আমাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করে অন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো লাভের মুখ দেখুক।
গ্লিটজ : আপনার নিজের প্রোডাকশক এস. কে. ফিল্মসের ব্যানারে বেশ কটি সিনেমা নির্মাণ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নতুন কি পরিকল্পনা করছেন?
শাকিব খান: আমি তো চাইলে আমার হাউজ থেকে নিয়মিতই সিনেমা নির্মাণ করতে পারতাম। কিন্তু আমাকে নিয়ে অন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও সিনেমা নির্মাণ করতে চায়। তাদের এখন আমাকে দরকার। অনেক প্রযোজক এসে বলে, অনেক দিন ধরে তাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তারা সিনেমা নির্মাণ করতে পারছে না। টাকাপয়সা জোগাড় করে তারা বিগ বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। আমিও তখন ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থে নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেই।
গ্লিটজ : আপনার সহ-অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস গ্লিটজকে বলছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির অনেক প্রযোজক না বুঝেই লগ্নি করেন। আপনারও কি একই অভিযোগ?
শাকিব খান : অপু ঠিকই বলেছে। কজন প্রযোজক একেবারেই কম বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করছেন, যা মোটেই ব্যবসা করতে পারছে না।ডিজিটাল সিনেমার মানেই তো বুঝতে পারছে না ওরা। কিন্তু দেখুন, বিগ বাজেটের সিনেমা যেগুলো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হচ্ছে, সেগুলোই কিন্তু হলে চলছে। সেগুলোই টাকা উঠিয়ে আনতে পারছে। আমরা এখন যদি বিগ বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করি, তবে তাতে অনেক বেশি আয়োজন থাকবে, দর্শকের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ থাকবে। বিগ বাজেটের ছবি হলে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপ্তিও বাড়বে।
গ্লিটজ : একটু পেছনে ফিরি আবারো। অনেক প্রযোজক ভরসা করছেন টালিগঞ্জের নবাগত অভিনেতাদের ওপর। আপনার কি মনে হয়, আমাদের দেশে তেমন নায়ক নেই?
শাকিব : আমাদের ইন্ডাস্ট্রির নায়কদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে, সেটাকে বের করে আনতে হবে। ওদের দিয়ে কিছু হবে না - এমন কথাবার্তা আমার কানেও আসে। আরে কেউ তো রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যায় না। তাদের সময় দিতে হবে। তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের জন্য গল্প নির্মাণ করতে হবে। তবেই না তারা যোগ্য হবে। আর অঙ্কুশ-ওম- আর কাদের কথা যেন হচ্ছে! ওদের তো টালিগঞ্জের লোকজনই ঠিকঠাক চেনে না। তাদের উপর ভরসা করছে কিভাবে আমাদের প্রযোজকরা? নতুনদের নিয়ে আমি নিরাশার কিছু দেখি না।
গ্লিটজ: ঈদের প্ল্যান কি? কী করছেন এবারের ঈদে?
শাকিব: ঈদের সকালে নামাজ পড়ে মায়ের হাতে বানানো খাবার খাবো। তারপর ‘রাজাবাবু’র হালহকিকত দেখতে বের হয়ে পড়বো। বেশ কটি হলে যাবো। ফিরে এসে পরিবারের সদস্যদের সময় দেবো।
গ্লিটজ: দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
শাকিব খান: দর্শকের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। তারা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলেই আমি আজ শাকিব খান। তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সবাই হলে আসুন। দেশি সিনেমা দেখুন। আপনাদের সমর্থন পেলেই আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের সিনেমা।