বিসিএসে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পদ পাননি তাদের মধ্য থেকে ‘কল-কারখানা পরিদর্শক’ নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার।
Published : 10 Feb 2014, 04:39 PM
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে শর্ত পূরণের অংশ হিসাবেই ২০০ কারখানা পরিদর্শক নিয়োগের এই উদ্যোগ।
বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর ‘নির্বাহী আদেশে’ এই ২০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জিএসপির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পায়নি তাদের মধ্য থেকে শিগগিরই কল কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
গত ৩১তম বিসিএস থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পদ স্বল্পতায় যারা ক্যাডার পাননি তাদের পর্যায়ক্রমে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিয়ে আসছে পিএসসি।
ওই মন্ত্রী বলেন, “কল কারখানা পরিদর্শকদের পদটি প্রথম শ্রেণির হওয়ায় বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে তা পূরণ করলে কোনো জটিলতা থাকবে না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
কারখানার কর্ম পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তুলে গত বছরের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করা হয়। অবশ্য পরে ১৬টি শর্ত দিয়ে বলা হয়, সেগুলো পূরণ হলে আগামী মে মাসে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দুপুরে সচিবালয়ে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি শর্তের মধ্যে ১৩টি ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে।
যে তিনটি শর্ত এখনো পূরণ হয়নি তার মধ্যে ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়া ও ১৯টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “বিধান অনুযায়ী পিএসসির মাধ্যমে দুই শ’ ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়ার কথা। এতে দুই বছর সময় লাগবে। কিন্তু শর্ত মোতাবেক এপ্রিল-মের মধ্যে এই নিয়োগ দিতে হবে। জুন পর্যন্ত সময় পেলেও পেতে পারি।
“মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, পিএসসির সঙ্গে কথা বলব, শ্রম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অর্ডারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এদের নিয়োগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে।”
৩১তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৫ হাজার ৪৮৯ জন উত্তীর্ণ হলেও ২ হাজার ৭২ জন ক্যাডার পান।
আর ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ২ হাজার ৫৯২ জনের মধ্যে এক হাজার ৬৮০ জন এবং ৩৩তম বিসিএসে ১৫ হাজার ৯৫১ জন উত্তীর্ণ হলেও ৮ হাজার ৫২৯ জন বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
এই হিসাবে গত তিনটি বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৩২ জন উত্তীর্ণ হলেও ১২ হাজার ২৮১ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য সুপারিশ করা হয়।
অর্থাৎ, ১১ হাজার ৭৫২ জন প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। অবশ্য এদের মধ্য থেকে কয়েক দফায় কয়েকশ চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শর্ত অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শকের ৩৯২টি পদ ইতোমধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।
“এখন নিয়োগ বিধি করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে আমরা এ বিষয়ে বলেছি। এছাড়া সৃষ্ট নতুন পদ নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অনুমোদন লাগবে।”
এসব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্ত হিসাবে দুশ’ কল কারখানা পরিদর্শক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে জানান মিকাইল।