টানা বৃষ্টির পর সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধস, নিহত ৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারি বৃষ্টির পর পাহাড় ধসে তিন শিশুসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2017, 03:35 AM
Updated : 21 July 2017, 12:23 PM

সীতাকুণ্ড থানার এএসআই তাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- স্থানীয় অটো রিকশা চালক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বিবি ফাতেমা ও তার দশ বছর বয়সী ছেলে মো. ইউনূস; রফিকের বোন রাবেয়া এবং তার দুই মেয়ে সাত বছর বয়সী সামিয়া ও দুই বছর বয়সী লামিয়া।

রফিকুল, তার ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন, রফিকের মেয়ে জান্নাত (১৪) ও সালমাকে (১১) মাটি সরিয়ে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, সলিমপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর সলিমপুর ওয়ার্ডের বিরি হাট এলাকায় পাহাড়ের খাস জমিতে বেশ কিছু বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বসতিকে স্থানীয়ভাবে আলাদা আলাদা ‘সমাজ’ নামে ভাগ করা হয়েছে।

মূলত দরিদ্র বিভিন্ন পারিবার সেখানে থাকেন, যাদের একটি অংশ বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন।   

ওই এলাকার তিন নম্বর সমাজের লক্ষণ সাহা শাখায় ভোরে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক আত্মীয় জানান, ভোরের আগে আগে পাহাড় ধসে ঘরের ওপর পড়লে ভেতরে সবাই চাপা পড়েন।

এর মধ্যে একজন ঘরের বেড়া ভেঙে বেরিয়ে এসে স্থানীয়দের খবর দিলে তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসার আগেই মাটি সরিয়েপাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন তারা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খাড়া পাহাড়ের ঢালে টিন দিয়ে ঘর বানিয়েছিলেন রফিক। সিঁড়ির মত ৪০টি ধাপ পেরিয়ে সেই ঘরে উঠতে হত। তিন সন্তান ও স্ত্রী গার্মেন্টসকর্মী ফাতেমাকে নিয়ে সেখানে থাকতেন রফিক।

স্থানীয়রা জানান, রফিকের বোন রাবেয়া তার দুই মেয়েকে নিয়ে গত রোজায় ভাইয়ের বাড়িতে আসার পর আর ফিরে যাননি। পাহাড় ধসে রফিকের স্ত্রী ও এক ছেলের সঙ্গে তাদেরও মৃত্যু হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ট্রেনিং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “পাহাড়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে খাড়া ঢালে টিনের ঘর বানানো হয়েছিল। পাহাড় ধসে ঢাল দিয়ে নামা মাটি সরাসরি ঘরের ওপর পড়েছে।”

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে সীতাকুণ্ডে চলছিল ভারি বর্ষণ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ১১ জুন রাঙামাটির রেকর্ডের চেয়েও বেশি।

ওই দিন রাঙামাটিতে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়; রাঙামাটিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলায় পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

আবহাওয়া অফিস শুক্রবারও ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমি ধসেরশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতও বহাল রাখা হয়েছে।