চট্টগ্রামে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদল ছাত্রের সংঘাতে একজন নিহত হওয়ার পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ থেকে যে ভাংচুর হয়েছে, তার নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
Published : 29 Mar 2016, 10:37 PM
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনাটিকে ক্ষুব্ধ ছাত্রদের ‘নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ’ হিসেবে দেখছেন।
ছাত্রলীগ নেতা নাসিম আহমেদ সোহেলের খুনিদের শাস্তি চেয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উভয়ই।
মঙ্গলবার সকালে বন্দর নগরীর ওয়াসা মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুদল ছাত্রের সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক সোহেল। তিনি নাছিরের অনুসারী ছিলেন বলে ছাত্রলীগ নেতারা জানান।
এরপর নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাংচুর হয়, যাতে ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তা দেখা যায়। পরে নাছিরের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়।
মহিউদ্দিন চৌধুরী এক বিবৃতিতে ছাত্র খুনের ঘটনার নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে দাবি করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক হঠকারী ও ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তির কারণে এই পবিত্র বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হতে পারে না।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মহিউদ্দিন। তখন তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এম মনজুর আলমের সময়েও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিনবিরোধী হিসেবে পরিচিত নাছির গত বছর মেয়র হলে প্রিমিয়ারের পরিচালনা নিয়ে বিরোধের শুরু হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়ায়।
মহিউদ্দিনের রিট আবেদনে হাই কোর্ট প্রিমিয়ারের সব কার্যক্রমে উদ্যোক্তা মহিউদ্দিনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আদেশ দেয়।
মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে শান্ত থাকতে ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে অনুরোধ জানান তিনি।
মহিউদ্দিন বলেন, “যারা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যাম্পাস রক্তাক্ত করেছে, তারা আমার শরীরের রক্ত ঝরিয়েছে। এ ঘটনা সোহেলের বাবা-মা সন্তান হারাননি, আমিই সন্তানহারা হয়েছি। আমি এ সন্তান হত্যার বিচার চাই।”
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় মহিউদ্দিন অনুসারীদের দায়ী করে তার বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়। তাদের বক্তব্য, এমবিএ ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিনকে অতিথি করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
এদিকে নাছির সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে নাসিম আহমেদ সোহেলের লাশ দেখে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র খুনের ঘটনা নিয়ে একটি পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
“গত কিছুদিন ধরে একটি মহল রাজনৈতিক ব্যানারে থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানের বিষয়ে সে আমার কাছে গিয়েছিল। আমি মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে বলে তাদের অডিটোরিয়ামটি ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
খুনিদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে নাছির বলেন, “হত্যাকারীরা কেউ যাতে পদ-পদবী ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে না পারে, সেজন্য আমি পুলিশকে বলেছি।
“হত্যাকারীদের যদি কেউ চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সহায়তা করে, ধরে নেব তারাও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।”
শহরজুড়ে বিক্ষোভ-ভাংচুরের বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, “ছেলেরা ক্ষুব্ধ। তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করেছে।”
“তাদের বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা হত,” দাবি করে তিনি বলেন, “আমি তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে শান্ত করেছি।”
অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানোর পাশাপাশি নাছির দলীয় কর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বানও জানান।