ডিসেম্বরে ফোর জি, ১১ হাজার কোটি টাকা আয়ের আশা

আগামী নভেম্বরে নিলাম শেষ করে ডিসেম্বর থেকে দেশের টেলিযোগাযোগে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর জি) সেবা শুরুর আশা করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2017, 10:04 AM
Updated : 20 Sept 2017, 02:54 PM

ফোরজি সেবায় নতুন অপারেটর আসার সুযোগও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার টেলিযোগাযোগ বিভাগে ফোরজি লাইসেন্স বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম বলেন, “আমাদের টার্গেট হচ্ছে, নভেম্বরের মধ্যে আমরা (ফোরজি তরঙ্গের) নিলাম শেষ করব। আর ডিসেম্বরের মধ্যে ফোর জি সুবিধা জনগণকে দিতে পারব।

“এটি আমরা টার্গেট বলছি এ কারণে যে, এর মধ্যে কিছু ইকুইপমেন্ট আমদানির বিষয় আছে, সেটির উপর আমাদের হাত নেই। আমাদের টার্গেট মতো আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করব ডিসেম্বরের মধ্যে।”

ফোর জি তরঙ্গ নিলাম এবং ফোর জি সেবা দিতে অপারেটরদের বিদ্যমান প্রযুক্তি রূপান্তর বাবদ সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা আয় করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

তরঙ্গ বরাদ্দের খসড়া নীতিমালা থেকে চূড়ান্ত নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

“আবেদন করার যোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো অপারেটরের বিদেশি অংশীদারকে বাংলাদেশ থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে বিনিয়োগের যে বিধানটি ছিল, সেটি বাদ দিয়েছি; তারা বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।”

তরঙ্গ নিলাম এবং ‘ফোর জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন্স’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গাইডলাইন্স অনুযায়ী ২১০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং ৯০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম হবে। এই নিলামে যে অপারেটররা আছেন তারা অংশ নিতে পারবেন।

“প্রাক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠান ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবে। এই ব্যান্ডে বিজয়ী হলে পরবর্তী সময়ে তারা ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবে।”

তরঙ্গ নিলামে বরাদ্দ করা তরঙ্গ ‘প্রযুক্তি নিরপেক্ষ’ হবে জানিয়ে তারানা বলেন, “এ তরঙ্গে টু জি, থ্রি জি এবং ফোর জি এলটি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে।”

মোবাইল অপারেটররা তাদেরকে আগে বরাদ্দ দেওয়া তরঙ্গ ‘প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায়’ রূপান্তর করতে পারবে জানিয়ে তারানা বলেন, এজন্য প্রতি মেগা হার্টজে সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ফোর জি লাইসেন্সের জন্য অপারেটরদের আবেদন ফি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। ১০ কোটি টাকায় লাইসেন্স এবং বার্ষিক লাইসেন্স নবায়ন ফি ৫ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

ফোর জি সেবা সর্বস্তরে পৌঁছাতে কাজ শুরুর বাধ্যবাধকতা থ্রি জি লাইসেন্সের মতোই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“কল রেকর্ডের ক্ষেত্রেও আমার তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। অন্যান্য ক্ষেত্রে সে রকম কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, যেমন ছিল তেমনই মোটামুটি রাখা হয়েছে।”

ফোর জির মাধ্যমে সেবার মান উন্নত হবে আশা প্রকাশ করে তারানা বলেন, “২০১৩ সালে স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) অকশনের সময় অপারেটররা স্পেকট্রাম নেননি। তাই আমি মনে করি এই স্পেকট্রাম অকশনের মধ্য দিয়ে শুধু ফোর জি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছাবে সেটিই নয়, সেবার মানও উন্নত হবে।”

তরঙ্গ বরাদ্দের চূড়ান্ত নীতিমালায়, ‌১৮০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামে প্রতি মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলার, থ্রি জির ২১০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ২৭ মিলিয়ন ডলার এবং ৯০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ৩০ মিলিয়ন ডলার ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফোর জি এবং তরঙ্গ নিলাম নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে জানিয়ে তারানা বলেন, “মূল্যে পরিবর্তন করার আর ইচ্ছা নাই। যেমন আছে তেমনই থাকবে।

“ইমপ্লিমেন্টেশন, রোল আউট (বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু)- নিয়ে অপারেটরদের সাথে কথা বলে তাদের জন্য একটু সহজসাধ্য করে না দিলে, ঠিকভাবে রোল আউট করতে পারবে না।”

নিলামে অপারেটররা অংশ নেবে আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “স্পেকট্রাম কেনার ক্ষেত্রে কৃপণতা করার সুযোগ নেই। মার্জারের (রবি-এয়ারটেল) পরে এখন মার্কেটে অনেক প্রতিযোগিতা। কিছু অপারেটরের টিকে থাকার প্রতিযোগিতা, কিছু অপারেটরের নাম্বার ওয়ানে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।

“কাজেই প্ল্যান সময় মতো করেছি, যাতে সবাই কেনেন। অপারেটরের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যও কমিয়েছি। বলেছি, এবার কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ব্যাপারে সরকার কোনো কমপ্রোমাইজ করবে না। টেক নিউট্রালিটি দিয়েছি, এটা তাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা।”

এ বিষয়ে অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফোর জির গাইডলাইন্সে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের পরিবর্তন হয়নি, যা বিনিয়োগের জন্য সহায়ক নয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী- তা খোলাসা না করেই তিনি বলেন, “আমরা আশা করি যে সরকার আমাদের উদ্বেগগুলো পুনর্বিবেচনা করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর পথচলা বাস্তবায়নের জন্য ফোর জি সেবা চালু করতে এমএনওকে সহায়তা করবে।”