বিচারককে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলায় আদালত অবমাননার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, আবারও তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 12 Jul 2015, 12:33 PM
আগামী ২২ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে হবে জাফরুল্লাহকে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ রোববার এই আদেশ দেয়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী ও এফ এম শাহীন গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার এই অভিযোগ দায়ের করেন।
গত সোমবার এ বিষয়ে শুনানির পর রোববার ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে আদেশ দেয় বলে আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ জানান।
ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত।
শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
তবে জাফরুল্লাহর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরে ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সে সময় তিনি বলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।
“যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট,কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা,অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস,বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণ্ন করা।”
আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।”
ওই ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়েরের দিন কামাল পাশা বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে এ ধরনের কথা বলেন, তখন ট্রাইব্যুনালের কর্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না।
“আমরা মনে করছি, এটা ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তাই জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছি আমরা, যাতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
এর আগে টকশো’তে মন্তব্যের কারণে আরও একবার অবমাননার অভিযোগে জাফরুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে জবাব দিতে হয়েছিল।