বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী; সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সেই শহরে নিত্যদিনের যানজট, দখল হওয়া ফুটপাত আর অপরিচ্ছন্নতা ছাপিয়ে আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে জলাবদ্ধতায়।
Published : 04 Apr 2015, 08:22 AM
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১০ সালের ১৭ জুন। তার তিন দিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতাই শেষ পর্যন্ত ফলের নির্ধারক হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অনেকের মত।
আগামী ২৮ এপ্রিলের নির্বাচন সামনে রেখেও মেয়র পদের প্রধান প্রার্থীদের কাছে জলাবদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমস্যা অনুধাবনে অযোগ্যতা, সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ ও সক্ষমতার অভাবই এ সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। আর এ কারণে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে নগরীর অন্য অনেক সমস্যা।
পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৫ সালের সিটি নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল নগরীর পরিচ্ছন্নতা। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করলে এরপর থেকে সিটি নির্বাচনে এটিই আলোচনার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি মনে করেন, এ সমস্যাকে শুরু থেকেই খাটো করে দেখানো বা অস্বীকারের প্রবণতা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ছিল। আর ‘ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব সমস্যাকে প্রকট আকার দিয়েছে।
“আধুনিক নগরী তো দূরের কথা, ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা বা যানজট নিরসনের বিষয়গুলো শুধু প্রতিশ্রুতি আকারেই থেকে গেছে। এক দশক আগে যারা পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম দেখে গেছেন তারা এখন এ শহরে এলে আঁতকে উঠবেন।”
চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের মতে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে নগর পরিচালনার দায়িত্ব যারা নেন, ‘সমস্যা অনুধাবনে তাদের যোগ্যতা ও সমাধানে আন্তরিকতা ও সক্ষমতার অভাব’ রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কারো কারো প্রকৃত কোনো লক্ষ্যই নেই, শুধু রুটিন ওয়ার্ক করে যান। জন প্রতিনিধিদের উদাসীনতা ও নির্লিপ্ততার কারণে সমাধানযোগ্য জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হয়েছে।”
“স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবায় চট্টগ্রামের যে ঐতিহ্য ছিল তার অবনতি হচ্ছে। আমরা যানজট-জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন এবং হাঁটা-চলার উপযোগী বসবাসযোগ্য, গতিশীল ও মানবিক শহর চাই।”
নগরপিতার কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা ‘সামান্য’ মন্তব্য করে দেলোয়ার মজুমদার বলেন, তারা কম ওয়াদা করুক। যা বলবে তা পূরণ করুক।
“দ্রুত বর্ধমান নগরীর উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনা না থাকলে শহর বাসযোগ্যতা হারাবে। সংস্কৃতি চর্চার একটি কেন্দ্র চাই। তা না হলে অনুভূতিহীন ভোঁতা হানাহানিপূর্ণ একটি শহর পাব।”
২০১০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র মনজুর আলমের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতার নিরসন। প্রায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর তিনি বলছেন, খাল-নালার মাটি কেটে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
গত বছরও নগরীতে একটি নতুন খাল খননে প্রায় তিনশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
এবারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন মনজুর আলম এ সমস্যার সিংহভাগ সমাধানের কথা বলে ‘ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
মেয়র পদের আরেক প্রধান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন দাবি করেছেন, চট্টগ্রামের আগের মেয়ররা সুযোগ পেয়েও ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন।
এবার সুযোগ পেলে জলাবদ্ধতার ‘স্থায়ী সমাধান’ করবেন বলেও তিনি ইতোমধ্যে আশ্বাস দিয়েছেন।