লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কোনো ‘গাফিলতি’ খুঁজে পাওয়া যায়নি বাহিনীর নিজস্ব তদন্তে।
Published : 30 Mar 2015, 06:14 PM
তবে একুশের বইমেলার মধ্যে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময়টাতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
লেখালেখির জন্য জঙ্গিবাদীদের হুমকির মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মাস পেরোলেও এখনও কোনো খুনিকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এর মধ্যেই সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে খুন হন ওয়াশিকুর রহমান বাবু নামে এক যুবক, যিনিও ফেইসবুকে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন।
বই মেলার জন্য নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তা তদন্তের উদ্যোগ নেয় এই বাহিনী।
তিন সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এক সপ্তাহ আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা পড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দলের প্রধান ঢাকার মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল করিম এই বিষয়ে কোনো কিছুই বলতে চাননি।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে, এতটুকু বলতে পারি।”
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবেদনে সুনির্দষ্টভাবে কোনো পুলিশ সদস্যের অবহেলার কথা বলা হয়নি। তবে সেই দিন পুলিশের এলাকায় তদারকি ও কাজে সমন্বয়ের অভাবের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।”
‘গাফিলতি’ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল, তার থেকে প্রায় আড়াইশ’ ফুট দূরে ছিল পুলিশের একটি চেক পোস্ট। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছিল তার আশপাশে প্রচুর যান চলাচল করছিল। জায়গাটিও ছিল অন্ধকার। পুলিশের চেকপোস্ট থেকে হামলার জায়গাটি ছিল আড়ালে।”
এদিকে নিহত অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় পুলিশের এই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের তদন্ত পুলিশ দিয়ে করালে সাধারণত তারা তো কোনো অবহেলা পাবেই না। এজন্য পুলিশের গাফিলতি আছে কি না, তা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দিয়ে অথবা জজ সাহেবদের দিয়ে তদন্ত করানো দরকার ছিল।”
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে অজয় রায় তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রথমত, যেখানে অভিজিৎকে কুপিয়ে আহত করা হল, তার কাছেই ছিল পুলিশ। দ্বিতীয়ত, অভিজিৎকে কুপিয়ে খুনিরা চলে যাওয়ার সময় পুলিশের কি কোনো উদ্যোগ ছিল? তৃতীয়ত, অভিজিৎ যখন মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছটফট করছিল, তাকে একজন ফটো সাংবাদিক হাসপাতালে নিয়ে গেল, পুলিশ নিয়ে গেল না কেন?
“সেই সময়ে পুলিশ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল, তবু খুনিদের ধরতে এগিয়ে আসেনি। এমন কয়েকটা ছবিও আছে। এগুলো কি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা নয়,” প্রশ্ন করেন এই অধ্যাপক।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে টিএসসি এলাকায় অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীর চাপাতির আঘাতে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।
ঘটনার দিন শাহবাগ থেকে বইমেলা পর্যন্ত কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাহবাগ এলাকায় সেই সময় তিন দিকের সড়কেই পুলিশের উপস্থিতি ছিল। যে এলাকায় অভিজিতের ওপর হামলা হয়েছে তার দক্ষিণ দিকে টিএসসি সংলগ্ন একুশে বইমেলার গেইটে ছিল পুলিশ।। সড়কের উল্টো দিকে মিলন চত্বরেও ছিল পুলিশের একটি দল। উত্তরে শাহবাগ থানার দিকেও ছিল পুলিশের আরেকটি চেকপোস্ট।