সব প্রার্থীকে এক চোখে দেখার প্রতিশ্রুতি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের

বিএনপি জোটের আন্দোলনের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শেষ করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা সবাই এক সুরে বলেছেন, কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের পক্ষপাত থাকবে না।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 06:12 PM
Updated : 29 March 2015, 06:15 PM

তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু করে রোববার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনেও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিরোধী দল সমর্থক প্রার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা।

আব্দুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে রোববার মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এই বিএনপি নেতার ছেলে তাফসির আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ভোটের পরিবেশের ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। আমরা সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানাচ্ছি।”

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আচরণবিধি মানতে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

ইতোমধ্যে এক মেয়র প্রার্থীকে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।

“আচরণবিধি প্রতিপালনে আমরা আরও কঠোর হবে। এক্ষেত্রে সবার জন্যই সমান ট্রিটমেন্ট হবে। নির্বাচনে হেভিওয়েট বা হালকাওয়েট প্রার্থী বলতে কিছু নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছে সকলেই সমান,” বলেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি নেতা আবদুস সালামের পক্ষে তার স্ত্রী ফাতেমা সালাম মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরও একই অভিযোগ তুলেছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখন নেই। তবে আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন শিগগিরই এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে সব দল-মতের লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।”

ঢাকা দক্ষিণের রির্টানিং অফিসার মিহির সরওয়ার মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তাই করা হবে। মনোনয়ন দাখিলের মাধ্যমে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের ফাইলবন্দি হয়ে গেলেন। এখন আমরা মনিটরিং টিম করব।”

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।

তবে চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনও সব প্রার্থীকে সমানভাবে ‘ট্রিট’ করার আশ্বাস দেন।

“প্রার্থী হতে ইচ্ছুকরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন বলতে পারবেন না যে আমি এখনও প্রার্থী নই। এখন তারা আমাদের আইনের আওতায়।”

২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় তিন সিটিতে ভোটে অংশ নিতে রোববার জমা নেওয়া মনোনয়নপত্রগুলো নিয়ে এখন যাচাই-বাছাইয়ে বসবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

আগামী ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। তারপরই চূড়ান্ত হবে প্রার্থী তালিকা।  

নির্বাচন কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটের ২১ দিন আগে প্রচারণার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ৭ এপ্রিলের আগে কোনো প্রচারণার সুযোগ নেই।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৭ এপ্রিল থেকে প্রার্থীরা চাইলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাতে পারেন। তবে ৯ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর পথসভাসহ আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালানোর আনুষ্ঠানিক সুযোগ রয়েছে।

প্রার্থী ১৮৩৩ জন

ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, তিন নগরে মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলরের তিনটি পদে ১ হাজার ৮৩৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় ৩৩০০ জন, সেই হিসাবে দেড় হাজার জন ভোটের লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।  

ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ২৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৩২ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে মোট প্রার্থী ৮১১ জন।

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ২১ জন, সাধারণ ৪৯৪ জন ও সংরক্ষিত ১৩৫ জন মিলিয়ে ৬৫০ জন প্রার্থী হয়েছেন।

চট্টগ্রামে ১৩ জন মেয়র পদে, সাধারণ ২৮৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭১ জন মিলিয়ে ৩৭২ জন প্রার্থী হয়েছেন।

তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। চট্টগ্রাম একজন প্রার্থী থাকলেও ঢাকার দুই অংশে বিএনপির মধ্য থেকে একাধিক প্রার্থী দেখা গেছে।

সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিএনএফ, বিএনএ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থীর পাশাপাশি নির্দলীয় প্রার্থী নিয়ে তিন নগরে মেয়র পদে ৬০ জন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।