মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে বিক্ষোভ

শেষ মুহূর্তে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী বেশ কয়েকজন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 01:29 PM
Updated : 29 March 2015, 04:42 PM

এক পর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভেতরেও ঢুকে কয়েকঘণ্টা অবস্থান করেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রোববার বিকাল ৫টায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল। সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এসেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি ২৫ জনের মতো প্রার্থী।

এদের একজন মাহফুজা রিনা, যিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনে (৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড) প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।

সবুজবাগ থানা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি রিনা সন্ধ্যায় অভিযোগ করেন, বিকাল ৫টার কিছুক্ষণ আগে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে হাজির হয়েছিলেন।

“কিন্তু শেষ মুহূর্তে পুলিশ তাকে ঢুকতে বাধা দেয়। পথে আরও কয়েকজন কর্মকর্তা যাচাই-বাছাইয়ের নামে সময়ক্ষেপণ করে।

“সব বাঁধা পেরিয়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গেলে সময় অতিক্রম হওয়ার কথা বলে আমার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।”

এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে কাঁদতে দেখা গেছে রিনা ও তার কয়েক কর্মীকে।

মহানগরের ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী হতে আবেদনপত্র জমা দিতে এসে ব্যর্থ হন মতিঝিল থানা যুব মহিলা দলের আহ্বায়ক রুমা আখতার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সময় নিয়ে যাত্রা করলেও যানজটের কারণে কমিশন কার্যালয়ে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের (বিকাল ৫টা) পাঁচ মিনিট আগে কমিশন কার্যালয়ে পৌঁছালেও বিলম্বের অভিযোগে আমার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।”

৩৮, ৩৯ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন কানিজ ফাতেমা, যিনি নিজেকে যুব মহিলা লীগ কর্মী পরিচয় দেন।

সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তার মনোনয়নপত্রও গ্রহণ করেননি কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে  তিনি বলেন, তিনি যখন দৌড়ে ভিতরে ঢুকছিলেন তখনও সময় শেষ হতে তিন মিনিট বাকি বলে মাইকে ঘোষণা আসতে থাকে। তারপরেও কর্মকর্তারা তার আবেদন গ্রহণ করেননি।

৪০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে ব্যর্থ হন মতিউর রহমান।

তিনি বলেন, “বিকাল ৫টার আগেই সহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছিলাম। তবে কর্মকর্তারা আমাকে বলেন এখন আর সময় নেই।”

৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে ইয়াহিয়া মাহমুদ খোকন বলেন, বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। তারপরেও দেরি হওয়ার  কথা বলে তার মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়নি।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ারা সন্ধ্যা ৭টার সময়ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদের কার্যালয়ের সামনে ধর্না দিচ্ছিলেন।

তাদের উদ্দেশে মিহির সরওয়ার বলেন, “নির্বাচনী বিধি অনুসারে আমরা এটা নিতে পারি না। ভোট কেন্দ্রের বেলায় আপনারা যদি গেইটের ভিতরে চলে আসেন তাইলে আমরা ভোট নিই।

“কিন্তু মনোনয়নপত্রের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার ডেস্কে যদি ফাইল সাবমিট না করেন, তাহলে আমরা সেটা নিতে পারব না।

“এরপরেও যদি আপনারা কেউ মনে করেন যে, সময়ের মধ্যে সাবমিট করেছিলেন কিন্তু সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নেয়নি, সেক্ষেত্রে আপনারা লিখিতভাবে আবেদন করেন। কিন্তু আমরা এখন এই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবে আর আবেদন গ্রহণ করতে পারব না।”

বিকাল সোয়া ৫টার পরও মনোনয়নপত্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসতে থাকেন প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরা। সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ এসে পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের বের করে দিতে থাকে।

নারী পুলিশ না থাকায় নারীদেরকে বের করা যাচ্ছিল না। পরে নারী পুলিশ এলেও সেখানে থাকা নারী প্রার্থীরা কক্ষ ত্যাগ না করার ঘোষণা দেয়।

পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার পরামর্শে ৮টার পর অনেকেই মনোনয়নপত্র গ্রহণের জন্য দরখাস্ত লিখতে শুরু করেন। আবেদন নেওয়ার পর অনেককে নাট্যমঞ্চ এলাকা ত্যাগ করতে দেখা যায়।

সাড়ে আটটার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ২০-২৫টির মতো আবেদন পেয়েছি। আবেদনকারীরা দাবি করছেন, তারা নির্ধারিত সময়ে এসেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।

“আমরা যে কোনো অভিযোগই রাখি। তাদের অভিযোগগুলো আমরা কমিশনে পাঠিয়ে দেব। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”