প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ সিপিবির রতনের

সরকারি বাড়িতে দলের বৈঠক করে নির্দলীয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে দলের প্রার্থী পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী সিপিবি নেতা আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 10:14 AM
Updated : 28 March 2015, 01:09 PM

গণভবনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভার পরদিন শনিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি।

দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ওই বৈঠককে আচরণবিধির লঙ্ঘন মনে করছেন না ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে তাতে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার অবস্থান ইসির রয়েছে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনা দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে সামনে নিয়ে আসেন।

বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, “দক্ষিণে সাঈদ খোকন এবং উত্তরে আনিসুল হককে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী তাদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।”

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাফি রতন আগারগাঁওয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বড় দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরার সময় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়টিও আনেন।

রতন বলেন, “টাকা ও পেশি শক্তি, সরকারি প্রভিশন ব্যবহার করে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিলবোর্ড, পোস্টার দিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। গতকালও প্রধানমন্ত্রী দুজন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এটা নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থি।”

নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ইসির দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, “স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য এটা ইসির বড় ধরনের সুযোগ।”

কাফি রতন দুপুরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেও ব্যাংক ড্রাফট সংক্রান্ত কাগজপত্র অপূর্ণাঙ্গ থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা সঠিকভাবে তা দেওয়ার পরামর্শ দেন।

সবকিছু ঠিক করে তিনি বিকালে জমা দেন মনোনয়নপত্র। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সিপিবির ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আসলাম খান, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, লুনা নূর ও খান আসাদুজ্জামান মাসুম এবং নাসিমা আক্তার।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মে. শাহ আলমের সঙ্গে এসময় কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

সিপিবি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তো এ রকম [আচরণবিধি ভঙ্গ] কিছু করেন না।”

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “দলীয়ভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। দলীয়ভাবে প্রচারণাও সুযোগ নেই। এটা নির্দলীয় নির্বাচন।”

“তবে নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতি থাকে,” রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন ইসি সচিব।

আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির সক্রিয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কোথাও কোথাও ব্যত্যয় ঘটবে। কিন্তু এরপরও ইসি বসে রয়েছে কি না, তা দেখার বিষয়। আমরা বসে নেই। যারা আচরণবিধি ভাঙছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন আর মুখের কথা নয়, প্রকৃতভাবে কাজে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইসি নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলমও সাংবাদিকদের বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

“ইতোমধ্যে ২৩ জনকে নোটিস দিয়েছি। দুজন নির্বাহী হাকিম ঘুরছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন।”

নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সব প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আর একদিন সময় রয়েছে।