ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মুখ চেনানোর পোস্টার-বিলবোর্ড আগামী শুক্রবারের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 18 Mar 2015, 07:30 PM
সিটি নির্বাচন: ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভোট ২৮ এপ্রিল
‘মুখ প্রচারের’ লড়াই ঢাকা দক্ষিণে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে সেগুলো না সরালে কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
বুধবার বিকালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে তফসিল তিনি ঘোষণা করেছেন, তাতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই মহানগরীতে ভোট হবে একই দিনে, আগামী ২৮ এপ্রিল।
নিয়ম অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।
তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “তফসিল ঘোষণা হয়েছে। প্রচারণার জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। ইতোমধ্যে আগাম প্রচারণামূলক যত পোস্টার-বিলবোর্ড রয়েছে তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে।”
কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙলে জেল-জরিমানাসহ প্রার্থিতা বাতিলেরও ক্ষমতা রয়েছে ইসির।
কার কত ব্যয়সীমা
মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়সীমাও ভোটার অনুপাতে নির্ধারণ করে দিয়েছে কমিশন।
২৩ লাখ ভোটারের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং ১৮ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন।
কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন।
১০ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার শুরু হয়ে ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, “আপনারা খুব যত্ন করে আইন দেখে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। কেননা সামান্য ভুলের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। তিন সিটি নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারকে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে ইসির উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ এবং উত্তরে মো. শাহ আলমকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দায়িত্ব পেয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, “সিটি নির্বাচন একটি নির্দলীয় নির্বাচন। প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়া হয়। তাই দলগুলোর কাছে আহ্বান করছি, আপনারা নির্বাচনটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে দিন।”
২০১৩ সালের চার সিটি নির্বাচনের মতো এবারো স্বতঃস্ফূর্ত ভোটের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনের একটা ট্র্যাডিশন গড়ে উঠুক- এটাই আমরা চাই।”
প্রার্থী ও ভোটারদের বিধি লঙ্ঘন না করারও অনুরোধ রাখেন সিইসি।
তিনি বলেন, “প্রার্থীদের কাছে অনুরোধ, যেন তারা এবং তাদের সমর্থকরা আচরণবিধি মেনে চলেন। আপনারা নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। আপনারা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন, যেন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারি।”
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ
চলমান অবরোধ-হরতালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সিইসি বলেন, “হরতাল অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, আরও হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাস নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছি। সে ব্যবস্থা নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনগণসহ সবার সহযোগিতা চান তিনি।
সেনা মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্ত ‘পরে’
সিইসি বলেন, ভোটের আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আবারও বৈঠকে বসবে কমিশন।সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হবে কিনা- সে সিদ্ধান্ত তখনই হবে।
“পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে সবকিছু। ভোটের আগে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
ভোটারদের উদ্দেশে কাজী রকিব বলেন, “সবাই নিঃসংকোচে ভোট দেবেন। আমরা সে ব্যবস্থা নেব, যাতে আপনাদের কোনো সমস্যা না হয়, যেন শৃঙ্খলার সাথে ভোট দিয়ে যেতে পারেন।”
সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এবারও মোবাইলে ভোট সেবা
সিইসি জানান, অন্য নির্বাচনের মতো এবারও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের তথ্য জানা যাবে। এক্ষেত্রে ভোটারকে তার মোবাইল থেকে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্র জেনে নিতে হবে।
তিন সিটির ভোট তথ্য
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
*ভোটার সংখ্যা: মোট ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন ভোটারের মধ্যে নারী ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন; পুরুষ ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন।
*ওয়ার্ড সংখ্যা: সাধারণ ৩৬টি ও সংরক্ষিত ১২টি।
*কেন্দ্র: সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৮৭টি। ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৮২৮টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
*ভোটার সংখ্যা: মোট ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন ভোটারের মধ্যে নারী ৮ লাখ ৬১ হাজার ২৯৩ জন এবং পুরুষ ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০ জন।
*ওয়ার্ড সংখ্যা: সাধারণ ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ১৯টি।
*কেন্দ্র: সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৮৭৩টি, কক্ষ ৪ হাজার ৪৩৯টি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
*ভোটার সংখ্যা: মোট ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন ভোটারের মধ্যে নারী ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯ জন; পুরুষ ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৩ জন।
*ওয়ার্ড সংখ্যা: সাধারণ ৪১টি এবং সংরক্ষিত ১৪টি।
*কেন্দ্র: সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৭৫০টি, কক্ষ ৫ হাজার ২৫০টি।