যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে দেশটির প্রশাসনে উদ্বেগ রয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
Published : 14 Mar 2015, 10:04 AM
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কের সিনিয়র অফিসার ক্রিস্টোফার এলমস ও গিলবার্ট মর্টনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা।
ওই বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র ও তার আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রের সংবাদে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
“ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে এবং বিষয়টি প্রশাসন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।”
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ও মদদে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল অভিযোগ করে এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
“মার্কিন নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন,” বলেন সিদ্দিকুর রহমান।
ভার্জিনিয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলেকে গত ৪ মার্চ কারাদণ্ড দিয়েছে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট।
দণ্ডিত রিজভী আহমেদ সিজার (৩৬) বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করছেন মামুন।
তাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলার প্রধান আসামি এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার বিষয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল আদেশ দেওয়া হবে। লাস্টিকের সঙ্গে সিজারের মধ্যস্থতাকারী মার্কিন নাগরিক জোহানেস থালেরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গোপন তথ্য পেতে এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার কথা সিজার আদালতে স্বীকার করেছেন বলে আদালতের নথিতে বলা হয়েছে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত এফবিআই সদস্য লাস্টিকের সঙ্গে সিজারের ঘুষ লেনদেন হয় বলে এতে বলা হয়েছে। লাস্টিক ওই সময় এফবিআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
সিজার দুটি উদ্দেশ্যে জয় সম্পর্কিত তথ্য পেতে তৎরতা চালান জানিয়ে আদালতের নথিতে বলা হয়, “প্রথমত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঠিকানা বের ও তার ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তিনি। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ভর্জিনিয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে অপহরণ ও শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তিনি।
“দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এমন তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচার করতে চেয়েছিলেন তিনি।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং নিজের দল বিএনপির প্রতিপক্ষের একজন হওয়ায় জয়কে তিনি টার্গেট করেছিলেন বলে এতে বলা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ না পাওয়ায় লাস্টিক ও থালের ২০১২ সালের মার্চের দিকে সিজারকে তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে জয় সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে অন্য একজন প্রাইভেট গোয়েন্দার রফা করেন সিজার।
“তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সিজার বলেছেন, তিনি ওই প্রাইভেট গোয়েন্দাকে চার হাজার ডলার দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে ‘ভয় দেখানো’, ‘অপহরণ’ ও ‘ক্ষতি’ করার পরিকল্পনায় সহযোগিতার জন্য তাকে অনুরোধ করেছেন।”
এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দিয়ে জয় সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশি এক সাংবাদিক, এক রাজনৈতিক মিত্র ও একজন প্রাইভেট গোয়েন্দাকে দিয়ে বিনিময়ে সিজার প্রায় ৩০ হাজার ডলার নিয়েছিলেন বলেও এতে বলা হয়েছে।
সিজারের এই ষড়যন্ত্রে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আরো তিন নেতা জড়িত বলে মামলায় বলা হয়েছে।
সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী ও মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভিন এবং ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী বাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিক ও জনগণকেই চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করতে হবে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৈঠকে বিএনপি-জামায়া্ত জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতার বিভিন্ন তথ্য ও চিত্র সম্বলিত একটি স্মারকলিপি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বরাবর দেও্য়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।