যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন হয়নি দুই বছরেও।
Published : 22 Feb 2015, 04:07 PM
অন্যদিকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর কথা মামলার বাদী রাজীবের বাবাকে জানালেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ ধরনের নির্দেশনা না পাওয়া কথা জানিয়েছেন।
সবমিলিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার শম্বুক গতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন রাজীবের স্বজনরা।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আগামী ৮ মার্চ তৃতীয় দফায় মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য আছে।
শাহবাগ আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মধ্যে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি আনসারুল্লার প্রধান মুফতি মো. জসিমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, জসিমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে ‘নাস্তিক ব্লগারগার’দের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানিকে এই হত্যায় উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পেশায় স্থপতি রাজীব ব্লগ লিখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে, যেখানে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি।
মামলা ও বিচার প্রক্রিয়া
রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ওই বছরের মার্চ থেকে অগাস্টের মধ্যে গ্রেপ্তার হন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ।
এদের মধ্যে সাদমান ছাড়া বাকিরা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার জবানবন্দি দিয়েছেন।
স্বীকারোক্তিতে তারা রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানার নাম প্রকাশ করেন। রানাই তাদের রাজীবকে হত্যার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বলে দাবি করেন তারা ।
মুফতি জসিমের উসকানিমূলক খুতবার বিষয়টিও বেরিয়ে আসে তাদের জবানবন্দিতে। পরে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা তাকে।
তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারন চন্দ্র বর্মণ। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী ৫৫ জন।
অঅসামিদের মধ্যে মুফতি জসিম ছাড়া বাকিরা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ১৪ অক্টোবর তৎকালীন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করতে কার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন।
গতবছরের ২০ নভেম্বর ও এবছরের ২১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন থাকলেও প্রথমবার আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করায় এবং পরেরবার কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির না করায় শুনানি পিছিয়ে যায়।
অন্যদিকে অভিযোগপত্র দাখিলের পর পলাতক আসামি রানার বিরুদ্ধে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশেও দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়।
আশা ছাড়েননি বাবা
রাজীবের বাবা নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে তার দাগনভূইয়ার জয়লস্করের বাড়িতে কয়েকবার গিয়েও তাকে পায়নি পুলিশ। গুলশানের যে অস্থায়ী ঠিকানায়ও তারা নেই।
“গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে জেনেছি রানা বিদেশে পালিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “গত রোববার রাজীবের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি। সেসময় অনেককেই বলেছিলাম, ছেলে হত্যার বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমি তেমন আশাবাদী নই।
“কিন্তু আমার সঙ্গে কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হতে পারে।”
তবে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু।
“এ ধরনের মামলার বিচার অবশ্যই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিত। তবে মামলাটি ট্রাব্যুনালে নেওয়ার ব্যাপারে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো গেজেট এখনও আমার অফিসে আসেনি।”
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর) এবিএম বসিরউদ্দিন মিঞা বলেন, “দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে না গেলেও আমাদের আদালতেই মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করব।”